প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “যত মত, তত পথ ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
যত মত, তত পথ ভাবসম্প্রসারণ
একই স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষ। কিন্তু সেই মানুষের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। তাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। একই সময়ে জন্ম নেয়া দু’টি জমজ শিশুর মধ্যেও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য বিদ্যমান। পার্থক্য দেখা যায়, তাদের পছন্দ-অপছন্দের, মতামতের। ধর্ম, পরিবেশ, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি মানুষে মানুষে পার্থক্য সৃষ্টি করে। এক ধর্মের অনুসারীদের রীতিনীতি, জীবনাচার ইত্যাদি অন্য ধর্মের অনুসারীদের চেয়ে ভিন্ন হয়। কারণ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আবার উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যেও দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামতের সুবিশাল পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। উচ্চবিত্ত শ্রেণিতে জন্ম নেয়া একটি শিশু যেভাবে গড়ে উঠে, নিম্নবিত্ত শ্রেণিতে জন্ম নেয়া শিশু সেভাবে গড়ে উঠে না। উচ্চবিত্ত শ্রেণিতে শিশুটি যেমন সুযোগ-সুবিধা পায়, নিম্নবিত্ত শ্রেণিতে জন্ম নেয়া শিশুটি তেমন সুযোগ-সুবিধা পায় না। তাই তাদের জীবনধারার মধ্যে বিস্তর অমিল দেখা যায়। সব মানুষ যখন তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস এবং জীবনধারা সুষ্ঠুভাবে মেনে চলে তখন সমাজে শান্তির সুবাতাস বয়ে চলে। সমাজে তখন কোনো অশান্তি দেখা যায় না। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটলেই সমাজে নেমে আসে অশান্তি। এক ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সাথে অন্য ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব ও রেষারেষি, যা সমাজের সুন্দর পরিবেশকে এক মুহূর্তেই নষ্ট করে দেয়। একজনের নিজস্ব মতামত যখন অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তখনই সমাজে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ফলে নষ্ট হয় সম্প্রীতির বন্ধন। মানুষের নিজের মতকে অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়ার হীন মনোবৃত্তি তাকে করে তোলে অহংকারী এবং উগ্র। পৃথিবীতে সমস্যা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সমস্যার সমাধান। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি যতো ভিন্নই হোক না কেন প্রত্যেকেই নিজস্ব পথ অবলম্বন করে লক্ষ্যে পৌছায়।
বিকল্প ১
মূলভাব : পৃথিবীতে বিভিন্ন মত ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে এটা স্বাভাবিক। মত আর দৃষ্টিভঙ্গির এ ভিন্নতাহেতু মানুষের জীবন এবং কর্মের ভিন্নতাও খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
সম্প্রসারিত ভাব : সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষের মধ্যে ভিন্নতার বিষয়টি বিদ্যমান। মানুষ চিন্তা চেতনা আর দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশ্বাসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই পরস্পর থেকে ভিন্ন হতে পারে। এ ভিন্নতা তাদের জীবনাচার, ধর্মকর্ম ও লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতীয়মান হয়। এক ধর্মে বিশ্বাসী বা অনুসারীদের জীবনাচার, চালচলন, রীতি নীতি অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হবে। কেননা, মত ও বিশ্বাসের ভিন্নতার সাথে জীবনের বাহ্যিক ও আত্মিক অনেক বিষয়ই জড়িত। ব্যক্তির জীবনাচার ও কর্মের মাঝে তার মতের প্রতিফলন ঘটতে পারে। মতের ভিন্নতার কারণে যে পথেরও ভিন্নতা হতে পারে এ সত্যটাকে যখন মানুষ উপলব্ধি করতে পারে তখন ভিন্নতার মাঝেও ঐক্যের সুর শোনা যায়; পারস্পরিক সহনশীলতার মাধ্যমে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়। কেননা মানুষ যখন বুঝতে পারে, তার নিজের যেমন একটা মত বা একটা বিশ্বাস আছে এবং সে মত ও বিশ্বাস তাকে একটা নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করে, তেমনি অন্যের ক্ষেত্রেও তা স্বাভাবিক। এবং তখন তার মাঝে এসব কিছু মেনে নেওয়ার মনোবৃত্তি জন্ম নেয়। এমনিভাবে সকল মানুষের মাঝে এরূপ মনোবৃত্তির বিকাশ হলে অনেক ভিন্নতার মাঝেও মানব সমাজে শান্তির ধারা প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু যখনই এর ব্যতিক্রম ঘটে তখনই দেখা যায় এক ধর্ম আর বর্ণের মানুষ অন্যদের সহ্য করতে চায় না। শুরু হয় সাম্প্রদায়িক রেষারেষি, বিনষ্ট হয় মানব সমাজের শান্তি আর সমৃদ্ধি। মানুষের নিজের মতকে অপরের উপর চাপিয়ে দেওয়ার নীচু মনোবৃত্তি তাকে যেমন করে তোলে উগ্র, তেমনি সেও অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মুখোমুখী হয়। যুগে যুগে মানব জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে এবং বর্তমানেও বিশ্বের আনাচে-কানাচে মানুষকে তার মাশুল গুণতে হচ্ছে। শক্তিশালী জাতি, ধর্ম আর বর্ণের মানুষ নিজের মতকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য তৎপরতা আজো থামায়নি, বরং প্রতিনিয়ত এর জন্য নানা ফন্দিফিকির আবিষ্কার করছে।
মানব সমাজ থেকে এ ঘৃণ্য প্রবৃত্তির উচ্ছেদ যতদিন সম্ভব না হবে ততদিন মানবজাতিকে এর মূল্য দিতেই হবে। মনে রাখতে হবে দিন শেষে আমরা সকলেই একই গ্রহের মানুষ।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।