যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন - ভাবসম্প্রসারণ

যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : বাইরের চাকচিক্য দেখেই কোনো কিছু সম্পর্কে সম্মক ধারণা লাভ করা যায় না। ভেতরের জগতটাকে দেখা প্রয়োজন। বাইরের জগতটা দেখতে খারাপ হলেও ভিতরে মূল্যবান কিছু থাকতে পারে। এটা পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম।

সম্প্রসারিত ভাব : অসার ছাইয়ের নিম্নদেশে অমূল্য রত্নরাজি লুক্কায়িত থাকতে পারে। কেবল এর উপরিভাগ দেখে এ-কথা মনে করা বাঞ্চনীয় নয় যে, তার সমস্তটাই অসার পদার্থ। আমাদের উদাহরণস্বরূপ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পিতা কট্টর ব্রাহ্মণ ঠাকুর দাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা স্বরণ করা যায়। ঠাকুর দাস ছিলেন অতি সাধারণ ধরনের একজন মানুষ। তৎকালীন বঙ্গীয় সমাজে তাঁর না ছিল কোন প্রতিষ্ঠা, না ছিল আভিজাত্যের গরিমা, তিনি অনেকটাই ছিলেন যেন ছাইয়ের মতো মূল্যহীন পদার্থ কিন্তু তাঁরই পুত্র-সন্তান ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজের মনীষা ও ব্যক্তিত্ব দ্বারা ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গীয় সমাজে যে বিপ্লবাত্মক কর্মকাণ্ডের দ্বারা বিস্ফোরণ ঘটালেন তা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে, একটি অসার সমাজ সংসারের ভিতর হতে বিদ্যাসাগর নামক একটি অমূল্য রত্নের অভ্যুদয় সম্ভবপর হয়েছিল। কেবল বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের মানচিত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে এরূপ ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। কোথাও ছাই-এর গাদা দেখে তাকে অসার পদার্থ বিবেচনা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

মন্তব্য : বাইরের চেহারা দেখে কোনো জিনিসকে অবহেলা করা ‍উচিত নয়, এর মধ্যেই মূল্যবান কিছু থাকতে পারে।

সহজ ভাবে

মূলভাব: জগতের কোনাে বস্তুকেই তুচ্ছজ্ঞান করা উচিত নয়। অতি তুচ্ছ বস্তুর মধ্যেও হয়তাে লুকিয়ে থাকতে পারে বিশাল কোনাে সম্ভাবনা।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ সাধারণত বড় বা মূল্যবান জিনিসের প্রতি মােহাবিষ্ট হয় এবং ছােট বা নগণ্য জিনিসকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, অবহেলা করে। আসলে তা উচিত নয়। কারণ মূল্যহীন ছাইয়ের নিচে অমূল্য রতন পাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। কোনাে কিছুর উপরিভাগের দীনতা কিংবা সৌন্দর্যহীনতা দেখে সম্পূর্ণ জিনিসটাকে তুচ্ছ ভাবা ঠিক নয়।

কারণ অনেক সময় অতি সাধারণ জিনিসের ভেতরেই অসাধারণ বস্তু লুকানাে থাকে। আমাদের জগৎ-সংসারে মানুষ সাধারণত সােনার হরিণ ধরার মতাে মহামূল্যবান জিনিসের পেছনে প্রতিনিয়ত ধাবমান। তারা হাতের কাছের সাধারণ জিনিসকে তুচ্ছজ্ঞান করে। বহিরাবয়বের এ সাধারণ জিনিসগুলাের ভেতরেই অসাধারণ মহামূল্যবান জিনিসের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। যেমন, ঝিনুকের ভেতরে মুক্তা পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কখনাে কখনাে বাহ্যিক অবয়ব, পােশাক-পরিচ্ছদ অতি সাধারণ হলেও অনেক সময় তাদের ভেতরে বসবাস করে অসাধারণ মানুষ।

মন্তব্য: এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ক্ষুদ্র বলে কোনাে জিনিসকে তুচ্ছ করা উচিত নয়। প্রয়ােজনে তার সত্যিকারের রূপ উদঘাটনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা যাচাই-বাছাই করা উচিত।

বিকল্প ১

মূলভাব : কোনাে বস্তুকেই তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়। অতি তুচ্ছ বস্তুর মধ্যেও লুকিয়ে থাকে বিস্ময়কর সম্ভাবনা।

সম্প্রসারিত ভাব : পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সুশােভিত করেছেন। তন্মধ্যে অনেক জিনিস আকারে বড় আবার অনেক জিনিস আকারে খুবই ছােট। অনেক জিনিস মূল্যবান, আবার অনেক জিনিস আছে যার মূল্য কম বা মূল্যহীন বলে তুচ্ছজ্ঞান করা হয়। মানুষ সাধারণত বড় বড় বা মূল্যবান জিনিসের প্রতি মােহাবিষ্ট হয়ে পড়ে এবং ছােট ও নগণ্য জিনিসকে তুচ্ছজ্ঞান করে অবহেলার বস্তুতে পরিণত করে। তাই ঐ সব নগণ্য বা তুচ্ছ জিনিসগুলাে চিরকাল অবহেলায় ও অনাদরে থেকে যায়। আসলে তা উচিত নয়, কারণ অনেক ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ বস্তুর মাঝেও অনেক মূল্যবান বিষয় লুকিয়ে থাকতে পারে। বাইরের অবয়ব বা আকৃতি-প্রকৃতি দেখে কোনাে জিনিসের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। বাহ্যিকভাবে কেউ দেখতে কুৎসিত বা কদাকার হলেও সে অতি সুন্দর মন বা হৃদয়ের অধিকারী হতে পারে। চকচকে বা ঝলমলে পাথর হলেই যে মূল্যবান হবে এমন কোনাে কথা নেই। মাকাল ফলের বাইরের দিকটা যতটা দৃষ্টিনন্দন ভিতরের অংশটা ততটাই অসুন্দর। সুতরাং সঠিকভাবে অনুসন্ধান ও প্রত্যক্ষ করতে পারলে অনেক তুচ্ছ ও নগণ্য জিনিসের মাঝেও মহামূল্যবান রত্রের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।

মন্তব্য : বাইরের চাকচিক্য আর সৌন্দর্যই কোনাে কিছুর আসল পরিচয় নয়। সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণ আর অন্তর্মুখীতথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমেই প্রকৃত পরিচয় পাওয়া সম্ভব।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment