যে সহে সে রহে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “যে সহে সে রহে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

যে সহে সে রহে

যে সহে সে রহে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : এ বিশ্ব-সংসারে যারা সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল তারাই কেবল টিকে থাকে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের জীবন পুষ্প-সজ্জিত নয়, জীবনের পথ কণ্টকাকীর্ণ। মানুষকে সে পথ মাড়িয়ে জীবনের সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে হয়। জীবনে যেমন আছে বাধা-বিপত্তি, তেমনি আছে নানা রকম সংকট। সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে মানুষকে জীবনে প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে হয়। এ জন্য যে মহৎ গুণটির প্রয়ােজন তা হলাে সহ্যগুণ বা সহনশীলতা। সহনশীলতা মনুষ্য জীবনের অন্যতম সাম্য নীতি। মানুষ পরস্পরকে উপলব্ধির মাধ্যমে শ্রেয় প্রাপ্ত হয়। পরস্পরকে বুঝতে হলে সহনশীলতার চর্চা আবশ্যক। সহনশীলতা মানুষকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দিতে পারে। মহামানবদের জীবন ইতিহাস আলােচনা করলে দেখা যায়, তাদের জীবন ধৈর্য ও সহনশীলতায় পরিপূর্ণ। তারা মানুষের মধ্যে যেটুকু মন্দ তা উপেক্ষা করেন। এর মধ্য দিয়ে যা ভাল আছে সাহচর্য, মধুর ব্যবহার ও ভালবাসা দিয়ে তারা তাকেই উৎসাহিত করেন। প্রভু যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার পরও তিনি অসহিষ্ণু হননি। মহানবির জীবনালেখ্য সহনশীলতার এক অসামান্য দলিল। তাঁর অসীম ধৈর্য ও অপার করুণার প্রবৃত্তি পরতন্ত্র মানুষকে কল্যাণের পথে টেনে আনে। এ সব ধৈর্যশীল প্রেমময় মহামানবরাই মানব জাতির মুক্তির দূত।

মন্তব্য : ক্ষমা, দয়া, স্নেহ, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা প্রভৃতি মহৎ গুণের বিকাশ ঘটিয়ে ব্যক্তি।

বিকল্প ১

মূলভাব: জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সহনশীলতার কোনো বিকল্প নেই । প্রত্যেক মানুষের জীবনে জয়-পরাজয় আছে। যে মানুষ পরাজয়কে স্বীকার করে নিয়ে পরবর্তী বিজয়ের জন্যে ব্রতী হয়, সে-ই যথার্থ বিজয় অর্জন করতে পারে ।

সম্প্রসারিত ভাব: জীবন পুষ্প শয্যা নয়। পৃথিবীতে জীবনের চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ। এখানে প্রতি পদেই রয়েছে বাধা-বিপত্তি ও সংঘাত। ধৈর্য ও সহনশীলতা মানবজীবনের বৈশিষ্ট্য। ধৈর্যশীল হতে পারলেই এ সংঘাতময় পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব, নতুবা পতন অনিবার্য । সোনা পুড়ে যেমন খাঁটি হয়— দুঃখ, দুর্দশার আঘাতে আমাদের মনও স্বচ্ছ এবং দৃঢ় হয় । পৃথিবীতে যারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তার মূলে ছিল ধৈর্য আর সহিষ্ণুতা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু তিনি ধৈর্য হারাননি এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। কাজী নজরুল ইসলামের সহনশীলতার বহু উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়। এ কারণেই ঈশ্বরচন্দ্র পেয়েছেন বিদ্যাসাগর অভিধা এবং কাজী নজরুল ইসলাম পেয়েছেন বিদ্রোহী কবির অভিধা । – সহনশীলতার ঐশ্বর্যমণ্ডিত গুণেই পৃথিবীতে বিখ্যাত মনীষীগণ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। বিশ্বনন্দিত বৈজ্ঞানিক ডারউইন প্রাণিজগতের মধ্যে প্রত্যক্ষ করেন যে, এই সংগ্রাময় পৃথিবীতে যোগ্যতম জীবেরাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে। মানুষের জীবনযাত্রা এক নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ইতিহাস। এ পার্থিব জীবন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। যারা ধৈর্যশীল তারাই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং জীবন পথের অগ্রসেনা। জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য তারা সব প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে অপেক্ষায় থাকে বিজয়ের। অবশেষে বিজয়ের মালা সে-ই অর্জন করে। অপরদিকে, যে ব্যক্তি এসব প্রতিকূলতাকে সহ্য করতে পারে না তাদের পক্ষে বিজয় অর্জনও সম্ভব হয় না।

মন্তব্য: জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের পূর্বশর্ত ধৈর্য এবং সহিষ্ণুতা। সহিষ্ণুতাই মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায় পৌঁছে দেয়। সহিষ্ণুতা ছাড়া জীবনের সোনালি রোদ্দুর কল্পনাতীত ।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment