মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে - ভাবসম্প্রসারণ

মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে ভাবসম্প্রসারণ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ শ্রেণী SSC HSC JSC PSC

ভাব-সম্প্রসারণ : ঐশ্বর্য দ্বারা মানব কল্যাণ ও মঙ্গল সাধন করা সম্ভব। কিন্তু দেখিতে পাওয়া যায় যে, অধিকাংশ ধনী ব্যক্তি মানব কল্যাণে অর্থ ব্যয় না করিয়া নিজেদের বাবুগিরি ও বিলাসিতায় অর্থ ব্যয় করেন। প্রকৃত প্রস্তাবে ইহা গৌরবদীপ্ত কর্ম বলিয়া গণ্য হইতে পারে না। ইহা অর্থের অপচয়। কোন ব্যক্তি অর্থ দ্বারা বিলাসিতার স্রোতে গা ভাসাইয়া দিতে পারে কিন্তু তাহা দ্বারা মানুষের উপকার সাধিত হইবে না। অর্থ যদি মানব কল্যাণে ব্যয়িত হয় তবেই উহার সার্থকতা। নিজের ও পরিবারের বাবুগিরি ও আরাম-আয়াসের জন্য অর্থ ব্যয় করার মানে স্বার্থপরতা। ইহা সবার জানা আছে যে, কাহারও উপার্জিত অর্থের উপর কেবল তাহার নিজেরই অধিকার থাকে না, সমাজের অন্যেরও কিঞ্চিৎ অধিকার আছে। কাজেই, কোন ব্যক্তি যদি সমাজ তথা সমাজের দরিদ্রদের বঞ্চিত করিয়া কেবল আত্মসুখে অর্থ ব্যয় করে তবে উহা সমর্থনযোগ্য হইতে পারে না। মানব হিতে ব্যয়িত অর্থ সম্পদই যথার্থ ধন। ধনীর বিলাসিতায় ব্যয়িত অর্থ প্রকৃত ধন বলিয়া গণনীয় নহে।

বিকল্প ১

ভাব-সম্প্রসারণ : ধনসম্পদের কল্যাণকর দিকটিই তার প্রকৃত পরিচয় বহন করে। ঐশ্বর্যের সমারোহের মধ্যে বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিলে ঐশ্বর্যের প্রদর্শনী হয় বটে, কিন্তু তাতে ধনসম্পদের মর্যাদা প্রমাণিত হয় না। ধনসম্পদকে বিলাসিতায় অপব্যয় না করে, পরোপকারে নিয়োজিত করলে তার অর্জন ও ব্যয়ের সার্থকতা প্রমাণিত হয়।

জগতের যাবতীয় কাজের নেপথ্যে রয়েছে অর্থ। অর্থ ছাড়া কোনো কাজই সম্পন্ন হয় না। আবার উপার্জিত অর্থ বিলাসিতায় ভাসিয়ে দিলে সমাজ বা জগতের যেমন কল্যাণ সাধিত হয় না, তেমনি বিপুল অর্থের পাহাড় শুধু ধন-ভাণ্ডারে জমা রাখলেও সে অর্থ কারও কোনো কাজে আসে না। ধন-সম্পদের প্রকৃত গুরুত্ব নির্ভর করে মানবকল্যাণে ও সামাজিক অগ্রগতিতে তা কাজে লাগানোর ওপর। সুতরাং বিশেষ বিবেচনা করে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করা উচিত। সঞ্চয়, মিতব্যয়, কৃপণতা কোনোটার মাঝেই অর্থ বা ধনসম্পদের সার্থকতা লুক্কায়িত নেই, সদ্ব্যবহারের মাঝেই রয়েছে এর পরিপূর্ণ সার্থকতা। অপব্যয়ী ও বিলাসীরা ভুলে যান যে, তাঁরা যে বিত্ত-সম্পদের মালিক হয়েছেন তাতে রয়েছে গরিবের হক। তাই বিলাসিতায় গা-ভাসানোর আগে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা স্মরণ রাখতে হবে। যে ধনসম্পদ সমাজের সাধারণ মানুষের কোনো উপকারে আসে না, শুধু বিলাসিতায় ব্যয়িত হয় কিংবা কৃপণতার বসে ধনভাণ্ডারে জমা রাখা হয়- সে ধনসম্পদ নিতান্তই মূল্যহীন। মানবকল্যাণ ও সামাজিক-মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যেই ধনসম্পদ বা অর্থের জন্ম। কাজেই মানুষ ও সমাজের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে অর্জিত অর্থই সম্পদ। বিলাসিতা কিংবা অপব্যয়ের উদ্দেশ্যে সঞ্চিত অর্থ প্রকৃতপক্ষে ধন হিসেবে বিবেচ্য নয়। মানবকল্যাণে ও সামাজিক অগ্রগতিতে ব্যয় করতে পারলেই ধন-সম্পদের প্রকৃত মূল্যায়ন হয়।

যে অর্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয়িত হয় না, সে অর্থের কোনো সার্থকতা নেই। মানবকল্যাণে ব্যয়িত সম্পদই প্রকৃত ধন। তাই ধনসম্পদ নিজস্ব মর্যাদা তখনই পাবে যখন তা মহৎ কাজে ব্যয়িত হবে।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment