প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “মিত্রত্ব সর্বত্রই সুলভ মিত্রত্ব রক্ষা করাই কঠিন ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
মিত্রত্ব সর্বত্রই সুলভ মিত্রত্ব রক্ষা করাই কঠিন ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব-প্রত্যাশী। কিন্তু বন্ধুত্ব গড়া সহজ হলেও তা রক্ষা করা কঠিন।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক জীব হিসেবে সবার সঙ্গে সখ্য তথা বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। একে অপরের কাছ থেকে প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা-লাভের আকাঙ্ক্ষা থেকেই মূলত এ সখ্যভাব গড়ে ওঠে। কিন্তু সম্পর্ক শুধু একতরফা স্থাপিত হয় না। একতরফা স্থাপিত হলে সে সম্পর্ক বেশিদিন টিকে না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হয়। একে অপরের সুখ-দুঃখগুলো বুঝতে হয়। কিন্তু বাস্তবে মানুষ আত্মকেন্দ্রিক। আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষকে মৈত্রীর বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ক্ষুদ্র স্বার্থ-চিন্তা ও মানবীয় কু-প্রবৃত্তির অনুশাসন পারস্পরিক সম্প্রীতির ভিতে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। আত্মচিন্তায় নিমগ্ন ব্যক্তি সহজেই নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিতে পারে। পশুপ্রবৃত্তি দ্বারা জগৎ-সংসার বিচার করা তার স্বভাবে পরিণত হয়। নিজের কল্যাণের জন্যে অন্যের অকল্যাণ সাধন করা তার নিকট নীতিবিরুদ্ধ বলে মনে হয় না। স্বাভাবিকভাবেই অপরের সঙ্গে সদ্ভাব ও মিত্রতা রক্ষা করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে এটা মানুষের মানবীয় আচরণের পরিপন্থী। প্রত্যেকের প্রয়োজনকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে মনুষ্যত্বের যথাযথ প্রয়োগ ঘটলেই মিত্রতা রক্ষা- মিত্রতা গড়ার মতোই সহজ হয়ে যাবে।
মন্তব্য : মিত্রত্ব মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মিত্রত্ব মানুষের মনুষ্যত্বের উৎকৃষ্ট পরিচায়ক। সকলেরই মিত্রত্ব রক্ষায় সচেতন হওয়া উচিত।
বিকল্প ১
মূলভাব : চলমান জীবনে মিত্রত্ব অপরিহার্য। যথার্থ মিত্রত্বই কোন জাতিকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দেয়। কিন্তু সেই মিত্রত্ব ধরে রাখাটাই অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
সম্প্রসারিত ভাব : রক্তের বন্ধনের বাইরে মানুষে-মানুষে সৌহার্দ্য গড়ে ওঠে প্রীতির বন্ধনে, বন্ধুত্বের বন্ধনে। নানা কাজে নানা পরিস্থিতিতে অনেকের সঙ্গেই মানুষের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানুষের জীবনে বন্ধু পাওয়া যায় অনেক, এবং খুব সহজেই। কিন্তু তার মধ্যে প্রকৃত বন্ধু যেমন অনেক কম তেমনি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে আরো কম।
মানুষের জীবনে প্রায় সময়ই বন্ধুত্ব হয় ক্ষণস্থায়ী ও উদ্দেশ্যনির্ভর। একই সমস্যায় ভারাক্রান্ত মানুষ সমস্যা উত্তরণে একে অন্যের বন্ধু হয়ে উঠে। সে বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে সমস্যা কেটে গেলেই। কখনো কখনো মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্য থেকে। উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলেই সে বন্ধুত্বে চির ধরে। এক ধরনের স্বার্থপর মানুষ আছে যারা বিত্তবান লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে বৈষয়িক সুবিধা প্রাপ্তির আশায়। যতদিন স্বার্থপূরণের আশা থাকে ততদিন টেকে এ বন্ধুত্ব। বত্তবানের দুঃখ ও বিপদের দিনে এসব সুবিধাবাদী বন্ধুর দেখা মেলে না। এ ধরনের বন্ধুত্ব বা মিত্রতা একতরফা ও স্বার্থপরতা-নির্ভর। পক্ষান্তরে যে বন্ধুত্ব সাময়িক তা সার্থপরতা চিহ্নিত নয়। আত্মিক বন্ধন ও পারস্পরিক প্রীতি যে বন্ধুত্বের ভিত্তি সে বন্ধুত্বই প্রকৃত বন্ধুত্ব। এ ধরনের বন্ধুত্ব সুসময়ে গড়া দুঃসময়ে ভাঙা বন্ধুত্ব নয়। সময়ের ঘাত-প্রতিঘাতের কষ্টিপাথরে নিখাদ হতে পারলেই গড়ে উঠতে পারে এ ধরনের প্রকৃত বন্ধুত্ব।
সময়ের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই কেবল এ ধরনের বন্ধুত্ব পায় প্রকৃত বন্ধুত্বের মর্যাদা। এ ধরনের বন্ধুত্ব রক্ষা করা খুব সহজ কাজ নয়। এ ধরনের বন্ধুত্ব রক্ষা করতে হলে পরস্পরকে হতে হয় একান্তভাবে সহমর্মী। পরস্পরের প্রতি থাকা চাই গভীর আস্থাও বিশ্বাস। তা না হলে ভুল বোঝাবুঝির কারণে বন্ধুত্বে ফাটল বা ভাঙন ধরতে পারে। এ ধরনের বন্ধুত্বে দু পক্ষকেই হতে হয় স্বার্থত্যাগী পরার্থপর। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসই রচনা করে এ ধরনের বন্ধুত্বের সেতুবন্ধুন। প্রতিটি অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই প্রকৃত বন্ধু টিকে থাকে এবং মহিমা পায়। প্রচেষ্টার দ্বারা মানুষ এক সময় তার গন্তব্যস্থানে পৌঁছাবেই।
বিকল্প ২
সামাজিক জীব হিসেবেই একজন মানুষ আর একজন মানুষের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। এ সম্পর্ক বন্ধুত্বের, আত্মীয়তার, রক্তের, পারস্পরিক নির্ভরশীলতার। পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল মানুষের মধ্যে থাকে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, সহমর্তিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও আস্থা। এগুলোর সমন্বয়ে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে বন্ধুত্বের ভূমিকা অনেক। একজন সত্যিকারের বন্ধু পারে কারো জীবন বদলে দিতে এবং সুন্দও ও সমৃদ্ধ করতে। কিন্তু পৃথিবীতে এই সত্যিকারের বন্ধু পাওয়া সহজ কথা নয়। আমাদের চারপাশে যে শত শত বন্ধুরা ঘোরাফেরা করে তাদের বেশিরভাগই প্রয়োজনের তাড়নায়, স্বার্থ সিদ্ধি কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বন্ধুত্ব করে। উদ্দেশ্যপ্রবণ মানুষেরা কখনো ব্যক্তির অধিকারে থাকা অর্থের জন্য, কখনো খ্যাতির জন্য, শক্তির জন্য আবার কখনো বা ক্ষমতার জন্য বন্ধুত্ব করে। বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে তারা ব্যক্তির সেই অর্থ-বিত্ত, খ্যাতি, ক্ষমতা ও শক্তিকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। বন্ধুর সুসময়ে সে সারাক্ষণ বন্ধুর পাশে থাকে। চাটুকারিতায় বন্ধুকে মুগ্ধ করে তার কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে। একই সাথে তারা বন্ধুর সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়, পরশ্রীকাতর হয়ে পড়ে। বন্ধুর বিনাশ চায়। নিজের স্বার্থসিদ্ধি হওয়া মাত্রই তারা বন্ধুত্বে ফাটল ধরায়, অস্বীকার করে। তাই এত দিনের বন্ধুটি যখন কোনো বিপদে পড়ে বা কোনো সাহায্য প্রয়োজন হয় তখন উদ্দেশ্যপ্রবণ বন্ধুকে আর কোথাও পাওয়া যায় না। অন্যদিকে প্রকৃত বন্ধুরা কখনোই বন্ধুর বিপদে তাকে এড়িয়ে চলে না, কিংবা সুসময়ে তার থেকে কোনো সুবিধাও নেয় না। বরং সকল পরিস্থিতিতে তারা বন্ধুর পাশে থাকে। কোনো রকম স্বার্থ ছাড়াই, কেবলমাত্র নিখাঁদ বন্ধুত্বের টানে তারা সবার আগে বন্ধুর বিপদে ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু এমন বন্ধুদের সংখ্যা নিতান্তই কম। তাছাড়া হাজারো স্বার্থপরের ভিড়ে আমরা প্রকৃত বন্ধুকে চিনতে পারি না। ভুল মানুষের প্ররোচনায় তাদেরকেই সত্যিকারের বন্ধু ভেবে আস্থা রাখি। বিনিময়ে তারা প্রয়োজন মিটিয়ে বন্ধুত্ব বিনষ্ট করে। ফলে বন্ধুত্ব রক্ষা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।