প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “বিদ্যার সাধনা শিষ্যকে নিজে অর্জন করতে হয়, গুরু উত্তরসাধক মাত্র ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
বিদ্যার সাধনা শিষ্যকে নিজে অর্জন করতে হয়, গুরু উত্তরসাধক মাত্র ভাবসম্প্রসারণ
বিদ্যা অমূল্য সম্পদ। প্রত্যেকটি মানুষেরই আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান আছে আর সেটা চর্চার মাধ্যমে উৎকর্ষ হয়। শিক্ষক শুধু দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। ‘Knowledge is power.’ কিন্তু এটা আপনা আপনি হয় না। কষ্ট করে অর্জন করতে হয়। জীবন পুষ্পশয্যা নয়। এ পঙ্কিল জগতের সবকিছুই কণ্টকাকীর্ণ। বেহেস্তের ফলের মতো সবকিছুই হাতে এসে পৌঁছায় না। দীর্ঘ সাধনা করে সেটা পেতে হয়। টাকা পয়সা, মান-সম্মান, যাই বল না কেন সাধনা ছাড়া অর্জন করা যায় না। এক্ষেত্রে শুধু সাধনাই নয় অপরের সাহায্য-সহযোগিতা, আদেশ, উপদেশ তাকে অনুসরণ করতে হয়। কেউ একা কোনো কাজে লক্ষ্যে পৌছাতে পারে না। তাকে কিছু দিকনির্দেশনা পেতে হয়, তা না হলে সাফল্য অর্জন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অপরের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই সে নিজ সাধনায় ব্রতী হয় এবং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত হয়। তাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের সাথে উপদেশ, বিদ্যা এবং সাধনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এগুলো ঠিকমতো একত্রিত না হলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বিদ্যা অর্জন করতে হলে সাধনার প্রয়োজন হয়, এটা সর্বসত্য।
এ সাধনা কীভাবে করতে হবে তা গুরুজনের মাধ্যমেই জানতে হয়। গুরুর দ্বারস্থ হয়েই একজন মানুষ পায় সঠিক সাধনার পথসন্ধান। মানুষের পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার পথের সন্ধান দেখান গুরু। গুরু এক্ষেত্রে শুধু সন্ধানদাতা; কিন্তু ফলপ্রাপ্তি করতে হলে নিজেকে সাধনা করতে হয়। নিজ সাধনাই মানুষকে বিকশিত করে। গুরু প্রতিভাকে বিকশিত করতে পারেন না। গুরু হলেন আলোকবর্তিকা আর শিষ্য হলেন আলোকিত জগৎ; সদ্যফোটা ফুলের মতো। কোনো কিছু সাধনা করতে গেলে একটা মাধ্যম দরকার। গুরু হলেন সে মাধ্যম। পৃথিবীতে অজস্র দৃষ্টান্ত আছে যাঁরা গুরুর উপদেশ পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে নিজ সাধনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সক্রেটিস, প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের কথা। গুরু সক্রেটিসের উপদেশ অনুসরণ করে প্লেটো এবং গুরু প্লেটোর উপদেশ অনুসরণ করে অ্যারিস্টটল জগৎখ্যাত হয়েছেন। মূলত পরিশ্রমই সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। গুরু চালিকাশক্তি মাত্র। এক্ষেত্রে তিনি উত্তরসাধক। দিগ্দর্শন যন্ত্রের মতো, দিগ্নির্ণয় করাই গুরুর কাজ; কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় নিজ ক্ষমতাবলে।
বিকল্প ১
মূলভাব: বিদ্যা অমূল্য সম্পদ। তাকে লাভ করার জন্য সবার মনে থাকে অব্যক্ত বাসনা। মানুষের জীবন ও বিদ্যার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। মানুষের জীবনে বিদ্যা বা জ্ঞানের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠা ছাড়া একে অর্জন করা মোটেই সম্ভব নয়। এতে অন্যের উপদেশ পাথেয় মাত্র।
সম্প্রসারিত ভাব: সমস্যাসঙ্কুল পৃথিবীতে কোন কিছু বিনা পরিশ্রমে লাভ করা যায় না। অর্থ-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, নাম- যশ, শক্তি কোন কিছুই মানুষ বিনা সাধনে অর্জন করতে পারে না। এক্ষেত্রে শুধু নিজ প্রচেষ্টায় যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন হয় অপরের সহযোগিতা এবং উপদেশ। অপরের উপদেশ, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা ছাড়া সাফল্য লাভ খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এটি চিরন্তন সত্য যে, সাধনা কিভাবে করতে হয় তার গুরুর মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। উপযুক্ত গুরুই হলেন সত্তিকারের মানুষ গড়ার কারিগর। শিষ্যকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হওয়ার পথ নির্দেশনা দেন গুরু। একে ফলপ্রসূ করতে হলে শিষ্যের নিজ প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। ঐকান্তিক সাধনার বলেই মানুষ বিদ্যা- বুদ্ধি অর্জন করে নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশিত করে।
গুরুর উপদেশকে পাথেয় করে আপন সাধনা বলে শিষ্য পৌঁছে যায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। গুরু হলেন পথের দিশারী আর শিষ্য হলো আলোর অভিযাত্রী। গুরু উপদেশ এবং অন্যের দৃষ্টান্ত অনুসরণ না করে কোন কাজ কারো পক্ষে সঠিকভাবে সমাধা করা সম্ভব নয়। এমন ভূরি ভূরি প্রমাণ মেলে যারা গুরুর উপদেশকে পাথেয় করে নিজ সাধনার বলে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ ও জাতি এমনকি সমগ্র বিশ্বের কল্যাণ সাধন করে গেছেন। ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা লাভের সময়’,। তাই যথেষ্ট জ্ঞান অনুশীলন ব্যতীত কেউ সুশিক্ষিত হতে পারে না। অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও দেশ ও জাতি তথা বিশ্ব মানবের কল্যাণের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন। দৃষ্টান্ত স্বরূপ– সক্রেটিস, প্লেটো ও অ্যারিস্টোটলের কথা এখানে বিশেষভাবে স্মরণ করা যায়। গুরু সক্রেটিসের উপদেশ গ্রহণ করে প্লেটো এবং প্লেটোর উপদেশকে পাথেয় করে এরিস্টোটল পৃথিবীখ্যাত হয় যুগ যুগ ধরে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। একজন ছাত্র তার শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষকের কাছ থেকে। একজন ছাত্রের গুরু হচ্ছে তার শিক্ষক। কারন সে নিজে নিজেই শিক্ষিত হয় না তার পেছনে শিক্ষকের অনেক পরিশ্রম এবং সাধনা রয়েছে।
মন্তব্য: সঠিক পথের নির্দেশনা দেওয়াই উত্তর সাধক এর মূল কাজ আর শিষ্যকে নিজ সাধনাবলে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। সুশিক্ষার জন্য নিজের উদ্যোগে প্রয়োজন হয়। সে জন্য সারা জীবন ধরে মানুষের জ্ঞান সাধনা চলে।
বিকল্প ২
শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জন হলো সাধনার ব্যাপার। তবে এই সাধনার সাধক হতে হবে শিষ্যের নিজেকেই। একজনের সাধনা কখনও অন্য কেউ করে দিতে পারে না। যার সাধনা তাকেই সাধন করতে হয়। অন্যথায় সাধনার ফলাফল কখনই আশানুরূপ হয় না। আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি বিশেষ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, তা হলো গুরু বা শিক্ষকের উপর সম্পূর্ণ ভরসা করে বসে থাকা।
আমাদের এই প্রবণতার কারণেই আমাদের শিক্ষা শতভাগ পরিপূর্ণ হয় না। গুরু কিংবা শিক্ষক নিঃসন্দেহে একজন ছাত্রের নিকট ভরসার পাত্র হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, গুরুই তার শিক্ষাকে অন্তরে গেঁথে দেবেন। অন্তরে গেঁথে দেওয়ার দায়িত্ব গুরুর নয়। গেঁথে নেওয়ার দায়িত্ব শিষ্যের। গুরু বড়জোর পথ দেখিয়ে দিতে পারেন। গুরু শুধুমাত্র শিষ্যকে বলে দিতে পারেন কোন পথ তার জন্য উত্তম, কোন পথে, কিভাবে হেটে গেলে সে তার কাঙ্ক্ষিত বস্তুর দেখা পেতে পারে।
কিন্তু এরপরের সব দায়িত্বই শিষ্যের। গুরুর দেখানো পথে, গুরুর নির্দেশিত পন্থায় হেটে যেতে হবে শিষ্যের নিজেকেই। সঠিকভাবে সে পথ পাড়ি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি অর্জন করে আনা শিষ্যেরই দায়িত্ব। আমরা প্রায়ই ছাত্রের খারাপ ফলাফলের জন্যই শিক্ষককেই দোষারোপ করি। কিন্তু খারাপ ফলাফলের জন্য কখনও শিক্ষক দায়ী নয়, বরং ছাত্ররাই দায়ী। কিন্তু শিক্ষকের দেখানো পথে ছাত্র যদি হাঁটতে না পারে সে অযোগ্যতা শুধুমাত্র ছাত্রের।শিষ্য পথভ্রষ্ট হলে সে ত্রুটির ভার শিষ্যকেই বহন করতে হয়। সে ভার গুরুর উপর চাপিয়ে দিলে তা কখনও সুবিচার হয় না। গুরু সর্বদাই শিষ্যের মঙ্গল কামনা করেন এবং কল্যাণের পথই দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই কল্যাণ সাধনে যদি শিষ্যের সাধনায় ত্রুটি থাকে, তবে তা একান্তই শিষ্যের অপারগতা।
শিক্ষা: বিদ্যা অর্জনের জিনিস। আর অর্জন করতে হলে চাই সাধনা। সে সাধনায় গুরু উত্তরসাধক হতে পারেন বটে। তবে তার বেশি কিছু নয়। নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে, এবং নিজের শিক্ষাকে চিরস্থায়ী করতে, যে সাধনার প্রয়োজন তা শিষ্যকেই সঠিকভাবে করতে হয়।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।