নর কহে ধূলিকণা, তাের জন্ম মিছে, চিরকাল পড়ে রইলি, চরণের নিচে ধূলিকণা কহে, ‘ভাই কেন কর ঘৃণা তােমার দেহের আমি পরিণাম কিনা – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “নর কহে ধূলিকণা, তাের জন্ম মিছে, চিরকাল পড়ে রইলি, চরণের নিচে। ধূলিকণা কহে, ‘ভাই কেন কর ঘৃণা তােমার দেহের আমি পরিণাম কিনা ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

নর কহে ধূলিকণা, তাের জন্ম মিছে, চিরকাল পড়ে রইলি, চরণের নিচে ধূলিকণা কহে, 'ভাই কেন কর ঘৃণা তােমার দেহের আমি পরিণাম কিনা - ভাবসম্প্রসারণ

নর কহে ধূলিকণা, তাের জন্ম মিছে, চিরকাল পড়ে রইলি, চরণের নিচে। ধূলিকণা কহে, ‘ভাই কেন কর ঘৃণা তােমার দেহের আমি পরিণাম কিনা ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : অকৃতজ্ঞ লোকেরা সংকীর্ণমনা এবং অতীতকে ভুলে যায়। অথচ উদার পরোপকারী তারা অকৃতজ্ঞদের দ্বারা অপমানে তাদের পথ থেকে সরে আসে না বরং তাদের মহৎ উদ্দেশ্যে অটুট থাকে।

সম্প্রসারিত-ভাব : সমাজে প্রত্যেকটা উপকরণই একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। গাছপালা মাটি থেকে রস নিচ্ছে, সূর্য থেকে আলো নিচ্ছে, প্রকৃতি থেকে বাতাস, পানি নিচ্ছে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে, এক সময় মহিরূহ আকার ধারণ করে ফুলে ফলে সুশোভিত হচ্ছে। তেমনি মানুষও মাটি থেকে, বাতাস থেকে, সূর্য থেকে, তার প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে বেড়ে উঠেছে, শারীরিক বৃদ্ধির সাথে সাথে মানসিক বৃদ্ধি হচ্ছে। মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা সবকিছুর জন্য প্রকৃতির উপর মুখাপেক্ষী। শুধু তাই নয় তার মৌলিক ফুল-ফল, মাটি, জল নিয়ে তার গবেষণা কর্ম সম্পাদন করে নব নব আবিষ্কার সৃষ্টি করছে, মানবের উচ্চতর কল্যাণে তা নিয়োজিত করছে। এ মাটিতেই সে চরণ ফেলে হাটছে, খেলছে, গাইছে, বিশ্রাম নিচ্ছে। এ মাটিরই উপর জন্মানো নানা বৃক্ষলতা, ফুল-ফল, পাখি, নদী জল, সে গ্রহণ করে জীবনধারণ করছে এবং প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তার মৃত্যু পরবর্তী দেহটা এ মাটিতেই মিশে যাবে। সুতরাং আমরা দেখি যে মানবের জন্ম বেড়ে ওঠা, বিকাশ লাভ, তার স্বপ্ন পূরণ, বিলাসিতা নিবৃত্ত এবং পরম ও চরম অর্জন আধিপত্য সবকিছুর জন্য সে প্রকৃতির কাছে ঋণী। ঋণের সামান্যতম অংশ সে সারা জীবন দিয়ে হলেও পরিশোধের সাহস রাখে না। অথচ কিছু মানব চরম পর্যায়ে পৌঁছলে তার পিছনের কথা ভুলে যায় এবং তার পরম উপকারদাতাকেও তাচ্ছিল্য করতে, অপমান করতে দ্বিধাবোধ করে না। এ যেন,


‘শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করি শীর

লিখে রেখ একফোঁটা দিলাম শিশির।’

অথচ সে যখন পিছনে ফিরে তাকায় তখন সে বুঝতে পারে তার আসল পরিচয়। পক্ষাপ্তরে, যারা মহৎ হৃদয়ের মানুষ, উদারতা, দয়া, মায়া-মমতা যাদের অন্তরে ভরপুর, পরোপকার যাদের জীবনের ব্রত তারা এত কিছু মনে করে না। বরং অকৃতজ্ঞকে আবার সে বুকে টেনে নেয়। এক ফোঁটা কাদা ময়লা যেমন বিশাল সাগরের জলরাশিকে কলুষিত করতে পারে না। তেমনি এ সামান্য অকৃতজ্ঞবোধ, মিথ্যা অপবাদ, তাদের হৃদয়কে কলুষিত করতে পারে না। পক্ষান্তরে অপবাদকারী অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই স্বীয় অপবাদ বা অকৃতজ্ঞের শিকার হয়।

তাই আমাদেরকে হৃদয়ের সকল সংকীর্ণতা, মিথ্যা অহংকার পরিহার করে ভালোবাসা, উদারতা ও পরোপকারিতার পরশ পাথরে মনমানসিকতা ছোঁয়াতে হবে। তাহলেই সমাজের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নময় পরিবেশ বিরাজ করবে।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment