প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “নিরক্ষরতা দুর্ভাগ্যের প্রসূতি ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
নিরক্ষরতা দুর্ভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : নিরক্ষরতা মানুষের জীবনের অভিশাপ, যা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে না। যাদের মাঝে এ জরাগ্রস্ত রােগ বাসা বাধে তাদের ভাগ্য সত্যিই খারাপ। অশিক্ষিত মানুষ সমাজের জন্য, জাতির উন্নয়নের জন্য অন্তরায়। তাদের দ্বারা ভাগ্যের সুপ্রসন্ন কোন কাজ হয় না। জীবনে অশিক্ষার ছোঁয়ায় মননশীল কোন ধারায় স্বীয় সত্তাকে মূল্যায়ন করা যায় না।
সম্প্রসারিত-ভাব : মানুষের সাথে সমভাবে মেলামেশা, চলাফেরা সকল দিক দিয়ে সৌভাগ্যের পরিবর্তে দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়। একজন মানুষ নিরক্ষর হলে সে সমাজে মূল্যায়িত হয় না। অশিক্ষিত মানুষ জাতীয় জীবনেও উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সকল বিষয়ে কোন মৌলিক ধারণাও তার থাকে না। ফলে এসব বিষয়ে সে থাকে একদম অন্ধ। চক্ষু থেকেও আলােকের দুনিয়ায় ব্যথার মুকুট মাথায় পরে তারা জীবন অতিবাহিত করে। জীবনের স্বাদ আহলাদ সম্পর্কে তাদের কোন রকম কৌতূহলও হয় না। জীবন চলার পথে শুধু বাধা আর বাধায় ভরা। সৌভাগ্যের পরিবর্তে আসে দুর্ভাগ্যের নানান গঞ্জনা। নিরক্ষর ব্যক্তি জীবন প্রভাতে ব্যথার মুকুট পরেই বড় হতে শুরু করেছে। এরা মানুষের কাছ থেকে ভালাে ব্যবহারের পরিবর্তে পায় ধিক্কার। নিরক্ষর ব্যক্তি সাধারণত ভালাে, মন্দ, সাদা, কালাে চিনে চলতে পারে না। এসব দিক দিয়ে তার জীবন অনেকটা ব্যতিক্রমী। তাই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, নিরক্ষরতা জীবনের জন্য মারাত্মক অভিশাপ। এর ছোয়া যে পেয়েছে সে সত্যিই দুর্ভাগ্যের সাগরে ভাসছে। নিরক্ষর ব্যক্তি সমাজ ও জাতির কাছে অপাংক্তেয়। জাতীয় জীবনে তারা উন্নয়নের অন্তরায়ষরূপ। সামাজিক জীবনে তারা ধিকৃত ও ঘৃণিত।
বিকল্প ১
নিরক্ষরতা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় । এটা মানবজীবনের চরম অভিশাপম্বরূপ । যার মধ্যে এ জরাজীর্ণ রােগ বিদ্যমান তার জীবন সত্যিই অন্ধকারাচ্ছন্ন । যে ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষার আলাে নেই তার মনুষ্যত্বের বিকাশ রুদ্ধ । নিরক্ষতা সমাজের উঁচু পর্যায়ে উঠতে বাধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়ায় । নিরক্ষর ব্যক্তি কখনােই সমাজে মূল্যায়িত হয় না । অশিক্ষিত মানুষের সামাজিক , রাজনৈতিক , শিক্ষা , সাংস্কৃতিক সব বিষয়ে কোনাে মৌলিক ধারণা থাকে না । ফলে এসব বিষয়ে সে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে । চোখ থাকার পরও আলােকের দুনিয়ায় ব্যথার মুকুট মাথায় পরে তারা জীবন অতিবাহিত করে । জীবনের সাধ – আহ্লাদ , উত্থান – পতন সম্পর্কে তাদের কোনাে রকম উদ্বেগ প্রকাশ পায় না । নিরক্ষর ব্যক্তি কখনাে সৌভাগ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছাতে পারে না । সবসময় তারা দুর্ভাগ্যের দ্বারে মাথা ঠোকে । যে সমস্ত – দেশে নিরক্ষর লােকের সংখ্যা একটু বেশি তাদের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পারি যে , তারা বর্তমান উন্নত বিশ্বে অনেক পিছে পড়ে আছে । নিরক্ষর ব্যক্তি বা জাতির দ্বারা কখনােই উন্নত কিছু আশা করা যায় না । তাই আমরা দেখতে পাই যে , যে দেশ যত উন্নত সেই দেশ তত নিরক্ষরতামুক্ত । সুতরাং নিরক্ষর ব্যক্তিরা সমাজের বােঝাস্বরূপ । এরা মানুষের কাছ থেকে ভালাে ব্যবহারের পরিবর্তে অপবাদ ও বঞনা পেয়ে থাকে । নিরক্ষর ব্যক্তিরা কখনাে ভালাে – মন্দ , সাদা – কালাে নির্ণয় করতে পারে না । তাই বলা হয়েছে যে , “ সুশিক্ষিত লােক মাত্রই স্বশিক্ষিত । ” বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে , নিরক্ষরতা জীবনের জন্য মারাত্মক অভিশাপ । এর ছোঁয়া যে পেয়েছে সে দুর্ভাগ্যের সাগরে ভাসছে । নিরক্ষর ব্যক্তিরা সমাজে প্রতিটি মানুষের কাছে সর্বদা নিচু হয়ে থাকতে বাধ্য থাকে । নিরক্ষর ব্যক্তিরা সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে ধিকৃত বা ঘৃণিত ব্যক্তি বলে বিবেচিত । সুতরাং নিরক্ষরতা সমাজের চরম একটি অভিশাপ ।
বিকল্প ২
শিক্ষা হচ্ছে সেই মহামূল্যবান রত্ন, যা মানুষের সাথে পশুর পার্থক্যকে তুলে ধরে। শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে একজন মানুষ, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। শিক্ষা বা জ্ঞান ছাড়া যথার্থ মানুষ হওয়া যায় না। আত্মা ছাড়া যেমন দেহের কোনো মূল্য নেই, তেমন শিক্ষা ছাড়া মানুষের জীবনেরও কোনো মূল্য নেই।
শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত একজন চোখ থাকতেও অন্ধ হিসেবে বিবেচিত হয়। একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ থেকে বঞ্চিত হয়। জীবনের প্রতিটি পদে পদে সে হয় প্রতারিত। তার জীবনটাই হয় ব্যর্থ ও অভিশপ্ত। উন্নত জীবনের সাথে তার কোনো পরিচয় থাকে না। দরিদ্রতা হয় তার নিত্য সঙ্গী। দারিদ্রতা এবং দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির পথ সে জানে না। এই ধরণের মানুষ ধুকে ধুকে মৃত্যুবরণ করে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত নয় বলে, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সে চোখে অন্ধকার দেখে। উন্নত তথ্য প্রযুক্তি থেকে সে হয় বঞ্চিত। আধুনিক বিশ্বে একজন অক্ষরজ্ঞানহীন ব্যক্তি অচল।
শুধু ব্যক্তি জীবনেই নয়, জাতীয় জীবনেও নিরক্ষরতা চরম দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী নিয়ে একটি দেশ কখনো উন্নতি করতে পারে না। পদে পদে সেই দেশের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের প্রায় ১০০% জনগোষ্ঠীই শিক্ষিত। ফলে তারা এতো উন্নত। তাই একটি উন্নত দেশের জন্য চাই শিক্ষিত জনগোষ্ঠী।
আরো পড়ুন: নাচতে না জানলে উঠানের দোষ
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।