প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “দুর্নীতি জাতির সকল উন্নতির অন্তরায় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
দুর্নীতি জাতির সকল উন্নতির অন্তরায় ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: দুর্নীতি ঘৃণ্য অপরাধ এবং বর্তমানে তার সমাজের সর্বত্র বিরাজমান। দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে জাতি মুক্ত না হলে জাতির উন্নতি হবে সুদূর পরাহত। জাতির উন্নতির একমাত্র বাধাগ্রস্ত হলো দুর্নীতি।
সম্প্রসারিত ভাব: দুর্নীতি বলতে বোঝায় নীতিহীন অবস্থা। এ নীতিহীনতা ব্যক্তিজীবন থেকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সর্বত্র আজ প্রসারিত। আর নীতিহীনতার সয়লাবে সুনীতি ও শুভ চেতনা পদে-পদে মার খাচ্ছে। দুর্নীতিই আজ নীতি, অশুভই আজ শুভ বলে স্বীকৃত। সামাজিক অবক্ষয়ের চরম সীমায় পৌঁছেছে আজ আমাদের গোটা জাতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। অফিস-আদালতে ঘুষ, সর্বত্র মিথ্যাচার, স্বার্থপরতা ও যেনতেনভাবে স্বার্থোদ্ধারের সীমাহীন লালসা। পরীক্ষায় নকল বাজি, শিক্ষকের দায়িত্ব ও অর্থলিপ্সা এবং সন্ত্রাস শিক্ষাঙ্গনের দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গেছে। রাজনীতির নামে ক্ষমতার সিঁড়ি মারানো এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের তসরূপ দুর্নীতির রাষ্ট্রীয়করণ সম্পন্ন করেছে। কাজে ও কর্মে ভাষণেও তোষণে কোথায় নেই দুর্নীতি! যারা রক্ষক তারাই আজ ভক্ষক। ধর্মের নামে চলে অনাচার অধর্ম। সামাজিক সম্পর্ক ও প্রতিষ্ঠানসমূহ আজ ধসে পড়েছে। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কবলে পড়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতিপরায়ন দেশ হবার উপহাস কুড়িয়েছে। দুর্নীতির কারণেই দেশ কাঙ্ক্ষিত উন্নতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুর্নীতি আমাদের দেশের একটি জাতীয় সমস্যা। রাষ্ট্রীয় স্তর থেকে শুরু করে পারিবারিক স্তর এমনকি ব্যক্তি জীবনে ঢুকে পড়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতিবাজদের কালো থাবায় সমাজজীবন আজ অতিষ্ঠ। প্রতিবছর দুর্নীতির কারণে খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবগুলো খাত থেকে ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এর ফলে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের বিদেশের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়, এর পেছনের প্রধান কারণ হচ্ছে আইনের শাসন ও জবাবদিহির অভাব। দুর্নীতিবাজেরা জনগণের টাকা মেরে পকেট ভরলেও তাদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না এবং শাস্তিও পেতে হয় না। দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত বিষয়টি বিবেচনায় এনে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত।
মন্তব্য: দুর্নীতি আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। দুর্নীতি থেকে মুক্তি পাওয়ার আশু কোন লক্ষণ আজও পরিলক্ষিত হয়নি। সরকারের একার পক্ষে দুর্নীতি রোধ করা কখনোই সম্ভব নয়। আমাদের সকলেরই উচিত দুর্নীতিকে না বলা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। যেখানেই দুর্নীতি দেখা যাবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশকে সামনের কাতারে নিয়ে যেতে হলে এখনই দুর্নীতিকে না বলতে হবে। দুর্নীতিকে রুখে দিতে হবে। তাহলেই দেশ এবং জাতি আরও উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যাবে।
বিকল্প ১
মূলভাবঃ জাতি, উন্নতি, দুর্নীতি- এ তিনটি শব্দের উচ্চারণের শেষে মিল থাকলেও প্রথমটির জন্য দ্বিতীয়টির যতটা প্রয়োজনীয়, দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে তৃতীয়টি ততোধিক ক্ষতিকর এবং বর্জনীয়।
সম্প্রসারিত ভাবঃ অসৎ বা অবৈধ সুবিধা লাভের জন্য মানুষের পরিচালিত কার্যক্রমের নামই দুর্নীতি। অপরদিকে, উন্নতি হচ্ছে পরিকল্পিত কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অবাঞ্ছিত অবস্থায় উত্তরণ। সাধারণভাবে সারাবিশ্বেই এটি বিশ্বাস করা হয় যে,দুর্নীতির জাতীয় উন্নতির অন্তরায়। দুর্নীতি ও উন্নতির সম্পর্ক আপাত বিরোধী। একদিকে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড দুর্নীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে, অপরদিকে ব্যাপকে দুর্নীতির ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। দুর্নীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে দুর্নীতি বিষয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ‘বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা রোধ করা গেলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২-৩ শতাংশ বেড়ে যেত এবং মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হতো।” দুর্নীতি দেশি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একটি অন্যতম বাধা। অপরদিকে , দুর্নীতি এবং দারিদ্র আমাদের জাতীয় জীবনের দুটি সমতী সমস্যা। দারিদ্র্য অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে সহায়তা করছে, আবার দুর্নীতির ফলে আমার দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। সম্প্রতি প্যারিসে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে বিশ্বব্যাংক যে নিবন্ধ উপস্থাপন করে তাতে বলা হয়, বাংলাদেশকে দারিদ্র্য অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুশাসন ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অবশ্যই সফরতা অর্জন করতে হবে। সর্বোপরি স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মানব উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের ৭৫ ভাগই দুর্নীতিবাজরা আত্মসাৎ করছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রণীত রিপোর্ট দেখা যায়।
মন্তব্যঃ দুর্নীতি উন্নতির প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি মূর্তিমান অভিশাপ হিসেবে বিরাজ করে উন্নতির ক্ষেত্রে মারত্মিক অন্তরায় সৃষ্টি করছে। তাই যে কোনো মূল্যে সরকার ও জনগনের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এদেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে। তবেই এদেশে সোনালি ও সুখী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে।
বিকল্প ৩
মূলভাব: দুর্নীতি একটি জাতির জন্য অভিশাপস্বরূপ। জাতির সুন্দর ভবিষ্যৎকে দুর্নীতি নষ্ট করে দেয়। একটি জাতির যাবতীয় মহোত্তম অর্জন কেবল দুর্নীতির কারণে বিফলে যেতে পারে ।
সম্প্রসারিত ভাব: দুর্নীতি একটি জাতির সামগ্রিক উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দুর্নীতির দ্বারা মুষ্ঠিমেয় সুবিধাবাদী লোক উপকৃত হলেও সমগ্র জাতির জন্যে তা বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন কোনো দিক নেই যেখানে দুর্নীতি প্রবেশের সুযোগ কম। সর্বত্রই দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সর্বনাশ করে দিতে পারে একটি দেশের, একটি জাতির সামগ্রিক অগ্রগতির। দেশে দুর্নীতির এ ভয়াবহ আগ্রাসী চরিত্রের কারণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। ব্যক্তিগত ও জাতীয়ভাবে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতি কেবল বর্তমানকে নয়, আমাদের ভবিষ্যৎকেও অমানিশার কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে— এ সত্য সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। জাতিকে উন্নতির শীর্ষস্থানে নিতে হলে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ব্যক্তি ও জাতীয় অর্জন যেন দুর্নীতির রাহুগ্রাসে বিনষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে দুর্নীতির কারণে আমাদের জাতীয় ভাবমূর্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাজেই ধর্ম-বর্ণ, দল-সম্প্রদায় নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে এ সত্য গভীর ও আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, দুর্নীতি ও শোষণহীন সমাজ গড়ার মধ্য দিয়েই একটি জাতির প্রকৃত অগ্রগতি সম্ভব।
মন্তব্য: দুর্নীতির মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। সুতরাং, দুর্নীতি প্রতিরোধ করে জাতীয় উন্নতির অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুন: দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।