প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “কাঁটা বনের গােলাপই সত্যিকারের গােলাপ ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
কাঁটা বনের গােলাপই সত্যিকারের গােলাপ ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : বিনা কষ্টে প্রাপ্ত কোনো জিনিজের চেয়ে কষ্টলব্ধ জিনিসের মূল্য অনেক বেশি। যে বন্ধুর পথ পাড়ি দিযে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে উঠতে পারে সেই পায় প্রকৃত জীবনের আস্বাদ।
সম্প্রসারিত-ভাব : কাঁটার আঘাতে রক্ত ঝরিয়ে কাঁটাবন থেকে গোলাপ ফুল সংগ্রহ করে যে আনন্দ, তার তুলনা নেই। কিন্তু যে হাতের নাগালের কাছেই ফুটে থাকে, যাকে যখন তখন হাত বাড়ালেই ছেঁড়া যায় তা অতটা আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। তেমনি খুব সহজেই যা লাভ করা যায় তা পেয়ে আনন্দ নেই। কিন্তু প্রচুর পরিশ্রমের মাধ্যমে যা অর্জন করা যায় তা পেয়ে মানুষ দারুণ আনন্দ উপভোগ করে। আমাদের এ জীবন সংগ্রামে ভরপুর। সাহসী যোদ্ধার মতো জীবন সংগ্রামে যারা অবতীর্ণ হয় তারাই সফলতা অর্জন করতে পারে। তাদের গলায় শোভা পায় বিজয়ের মালা। তারাই হাসতে পারে সাফল্যের হাসি। আর যারা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যারা উত্তরাধিকার সূত্রেই প্রচুর সম্পদের অধিকারী, যারা না চাইতেই অনেক কিছু পায় তারা জীবনের আসল অর্থ বুঝতে পারে না। সুখ ও দুঃখের মিশ্রণে যে জীবন, সে জীবনের স্বাদ থেকে তারা পুরোপুরি বঞ্চিত। প্রাচুর্যের দম্ভে যারা চারদিকে কেবল সুখের পসরা সাজিয়ে রাখে, যারা কেবল ভোগ-বিলাসের মাঝেই আনন্দের উপাদন খোঁজে তাদের কাছে সত্যিকারের জীবন কখনো ধরা দেয় না। পরগাছার মতো তারা সমাজে বেড়ে ওঠে। জীবনে তাদের গৌরব করার কিছু নেই। আর যারা বহু তরাই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে, বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করে জীবনের লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে পারে তারাই আদর্শ মানুষ। গর্ব করার অধিকার কেবল তাদের। তারা পরগাছা নয়। তাদের শিকড় অনেক গভীরে। অস্তিত্বের সংগ্রামে তারাই টিকে থাকবে।
আরামপ্রিয়, শ্রমবিমুখ এবং পরনির্ভরশীল লোকেরা জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পায় না। পরিশ্রমী, সাহসী এবং আত্মমর্যাদাশীল মানুষ জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়। তাঁরা খুঁজে পায় প্রকৃত আনন্দ।
বিকল্প ১
মূলভাব: সুখ লাভের পথে একটি বিষয় থাকে, তা হলাে দুঃখ। সুখ লাভ করতে হলে দুঃখকে বরণ করে নেওয়ার কোনাে বিকল্প নেই।
সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীর যেকোনাে কাজেই কমবেশি ঝুঁকি রয়েছে। আর এটি মনে নিয়েই কাজ করতে হয়। এটি জগতের অমােঘ নিয়ম। কাজের ঝুঁকিকে ভয় পেয়ে কাজে অংশগ্রহণ না করার কোনাে অবকাশ নেই। কেউ যদি কাজের ঝুঁকিকে ভয় পেয়ে কাজে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তার জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। আসলে সাধনা ব্যতিরেকে সিদ্ধি লাভ কখনই সম্ভব নয়। পথিক যদি দীর্ঘ পথের দিকে চেয়ে নিরাশ হয়ে বসে পড়ে, তাহলে তার পক্ষে সে পথ অতিক্রম করা কখনই সম্ভব হয় না। গােলাপের ডাল কাটায় পরিপূর্ণ থাকে। তাই ফুল নিতে গেলে কাঁটার আঘাতে হাত ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাটার আঘাতে রক্তাক্ত হওয়ার ভয়ে পিছিয়ে গেলে সুন্দর ফুল প্রাপ্তির আনন্দলাভ করা করাে পক্ষে সম্ভব হবে না। এ পৃথিবীতে বিনা ক্লেশে বা বিনা বাধায় কোনাে সৎকার্য সম্পন্ন করা যায় না। কঠোর সাধনা আর অধ্যবসায় থাকলে কোনাে বাধাবিপত্তিই লক্ষ্যচ্যুত করতে পারে না। একবার না পারলে বারবার চেষ্টা করতে হবে।
বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়, তারা ছােটোবেলা থেকেই অশেষ দুঃখকষ্ট, যন্ত্রণা ও ব্যর্থতা বরণ করে সফলতার মুখ দেখেছেন এবং বিখ্যাত হয়েছেন। দুঃখের চেয়ে বড় পরশপাথর পৃথিবীতে আর নেই। জীবনে বড়াে হওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে দুঃখের সময় ধৈর্যধারণ করা বা দুঃখকে মেনে নেওয়া। চেষ্টা-চরিত্রের সাহায্যে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়। মুখ বুজে ধৈর্য ধরে কাজ করে গেলে একদিন সেই কাজের সুফল অবশ্যই লাভ করা যায়। কৃষ্ণচন্দ্রের উল্লিখিত পঙক্তিমালার ভাব-সম্প্রসারণের উপসংহারে এ কথা যথার্থই বলা যায় যে, কাঁটার আঘাত সহ্য করা ছাড়া যেমনি ফুল সংগ্রহ করা যায় না; তেমনই দুঃখভােগ ছাড়া সুখ লাভ করা যায় না।
মন্তব্য: জীবনে সাফল্য অর্জনে সকল বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে অগ্রসর হতে হবে। দুঃখকে সুখের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
বিকল্প ২
ভাব-সম্প্রসারণ : জীবন সংগ্রামময়। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে, দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জীবনে পূর্ণতা আসে। তদ্রূপ যে গোলাপ সহজে হাতে এসে ধরা দেয়; তার চেয়ে কাঁটার আঘাত সয়ে গোলাপ অর্জন করার মধ্যেই এর প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ বিশ্বসংসারে নানা প্রতিকূলতা সয়েই মানুষকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। নিরবচ্ছিন্ন সুখ মানবজীবনে পাওয়া যায় না। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনাকে গ্রহণ করেই জীবন পথে এগিয়ে যেতে হয়। জীবনের প্রতি পদেই আছে আপদ- বিপদ, বিপ্লব-বিদ্রোহ, ব্যর্থতার গ্লানি; আছে ভয়ের চোখ-রাঙানি; কিন্তু তারপরেও জীবনতরী বেয়ে যেতে হয়। কাপুরুষের মতো জীবন সংগ্রামে ভীত হয়ে বসে থাকার জন্য জীবন নয়, বরং নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমেই এ পৃথিবীতে গড়তে হয় সাফল্যের ভিত্তি। ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক সর্বক্ষেত্রেই পরিশ্রমই উন্নতির মূল চাবিকাঠি । একান্ত সাধনা আর নিরন্তর পরিশ্রমে যা অর্জিত তা দেহ-মনে অপার আনন্দ সঞ্চার করে। আর এখানেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, যশ-সুনাম, মর্যাদা এসবের জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম আর কঠোর সাধনা। পক্ষান্তরে, জীবনের কঠিন কঠোর গদ্যে যারা দিশাহারা, বাস্তবতার চরম কশাঘাতকে দূর থেকেই ভয় করে; এর মুখোমুখি না দাঁড়িয়ে বরং পালানোর পথ খুঁজতেই যারা বেশি ব্যস্ত— তারাই কাপুরুষ, ব্যর্থ আর এই বৃহৎ জগতে এদের বাঁচার মতো কোনো যোগ্যতা থাকে না। অথচ ‘মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব’ চিরসত্যটিও এ ধরনের মানুষের কাছে কলঙ্কের কালিমা ছড়ায়। বস্তুত এরা জীবনের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে বরাবরই ব্যর্থ। বরং সীমাহীন হীনম্মন্যতায় এদের জীবন অতিবাহিত হয়। ব্যক্তিজীবনে চরম অসুখী এবং সামাজিকক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবদান না থাকায় মূল্যহীন। সুতরাং নিরলস পরিশ্রম আর সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জীবনকে পূর্ণতা দিতে হবে। বহুবিধ ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও যারা জীবনকে পরিচালিত করে তাদের কাছে সুখ নামের সোনার পাখিটি একদিন ধরা দেবেই; আর এরাই জীবনকে তৃপ্তি ভরে উপভোগ করে। পৃথিবীতে এ ধরনের দৃষ্টান্ত খুব কম নেই। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করে আব্রাহাম লিংকন হয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট; গরিবের সন্তান এপিজে আবদুল কালাম হয়েছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট। আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম দরিদ্রতার কশাঘাতকে সহ্য করেই হয়েছেন চিরস্মরণীয়। কাজেই বাধা-বিঘ্নের বন্ধুর পথ না পাড়ি দিয়ে কোনো মানুষই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা খুঁজে পায় না।
মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঝুঁকি আছে। আর গোলাপের সৌরভ উপভোগের জন্য যেমন কাঁটার আঘাত উপেক্ষা করতে হয় তেমনি দৃঢ়চিত্ত সাহসীরা জীবনের ঝুঁকি নিতে কখনোই পিছ-পা হয় না। তাই জীবন সংগ্রামে তারা জয়ী। আর তারাই জীবনে খুঁজে পায় অনাবিল আনন্দ।
আরো পড়ুন: কার্পণ্য ও মিতব্যয়িতা এক কথা নয় এই দুইকে এক মনে করা নিতান্তই ভ্রম
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।