প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “আলাে ও অন্ধকার পাশাপাশি অবস্থান করে, একটিকে বাদ দিলে অন্যটি মূল্যহীন ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
আলাে ও অন্ধকার পাশাপাশি অবস্থান করে, একটিকে বাদ দিলে অন্যটি মূল্যহীন ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : আলো আর আঁধার তথা ভালো আর মন্দ জীবনে পাশাপাশি বিরাজ করে। একটিকে ছেড়ে অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাই জীবনে উভয়কেই সমানভাবে মেনে নেওয়া একান্ত আবশ্যক।
সম্প্রসারিত-ভাব : আলো ও আঁধার অস্তিত্বের দিক থেকে পরস্পর সাপেক্ষ বলে বিবেচনা করতে হবে। একটির অস্তিত্বের জন্য অপরটির উপস্থিতি অপরিহার্য। বরং একটি অপরটিকে স্বরূপ প্রকাশে সহায়তা করে। আলোর পরিচয় পাওয়া যায় আঁধার আছে বলেই। আঁধার না থাকলে আলো কি জিনিস তা জানা মোটেই সম্ভব নয়। তেমনি আলোর পরে আসে আঁধার। আলো নিজে চলে গিয়ে আঁধারের উপস্থিতি ঘোষণার সুযোগ দেয়। সেজন্য একটিকে বাদ দিয়ে অপরটির অস্তিত্ব রক্ষা করা মোটেই সম্ভব নয়। আলো আঁধারের সহঅবস্থানের মত মানবজীবনে ভালোমন্দ বা সুখ ও দুঃখ পাশাপাশি বিরাজ করে। ভালোকে চিনতে হলে মন্দের দরকার। তেমনি ভালো থাকলেই মন্দকে জানা যায়। মানুষের জীবনে সুখ বা দুঃখও একই বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিরাজ করে। শুধু সুখ দিয়ে জীবন চলে না। দুঃখ থাকলে সুখ ভালোভাবে উপভোগ্য হয়। তেমনি দুঃখ কোথাও চিরস্থায়ী নয়। তারও পরিবর্তন ঘটবে সুখের সাহায্যে। একটানা সুখ বা একটানা দুঃখ কোথাও চিরস্থায়ী থাকলে জীবন হয়ে উঠে বৈচিত্র্যহীন। তখন জীবনে কোন আকর্ষণ থাকে না।
তাই জীবনে সুখ-দুঃখ ভালোমন্দ বা আলো আঁধার পাশাপাশি থাকবে এবং তাতেই জীবন হয়ে উঠে আকর্ষণীয় ও তাৎপর্যমণ্ডিত।
বিকল্প ১
আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে সব কিছুরই একটা বিপরীতধর্মী উপাদান রয়েছে। সুখ, আলো, আনন্দ, হাসি ইত্যাদি মানুষের জীবনকে আলোড়িত করে তোলে। আর অন্ধকার, দুঃখ, বেদনা, কান্না ইত্যাদি মানুষের জীবনকে বিষাদে ভরিয়ে তোলে। কল্যাণকর বস্তুর পাশেই অকল্যাণকর বস্তুর অবস্থান। এদের একটিকে ছাড়া অন্যটি মূল্যহীন। দুঃখ আছে বলেই সুখ এমন মহিমান্বিত। সুখ আছে বলেই মানুষ দুঃখকে মর্মে মর্মে বুঝতে পারে। জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত বলেই জীবন এতো মূল্যবান। অন্ধকার আছে বলেই আমরা আলোর গুরুত্ব বুঝতে পারি। কেবল আলোর মধ্যে শুধু বসবাস করলে আমরা আলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারতাম না। অতৃপ্তি না থাকলে মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন হতে পারত না। আবার মহৎ বেদনা না থাকলে মহৎ কাব্য কখনো সৃষ্টি হতো না। এটাই সবচেয়ে বড় সত্য। ধ্বংসের ভয় আছে বলেই মানুষ সৃষ্টিকে সংরক্ষিত করে। পৃথিবীতে সুখের পরশ আছে বলেই মানুষ দুঃখকে হাসিমুখে বরণ করে। আর দুঃখের অস্তিত্ব আছে বলেই মানুষ সুখের আশায় আজীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। বাধা বিপত্তি অতিক্রম করলে জীবন সুখী ও সার্থক হবে। দুঃখ দেখে বিচলিত হলে চলবে না। কারণ সুখ দুঃখ জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। অন্ধকার শেষে যেমন আলো উদয় হয়, তেমনি দুঃখের শেষে জীবনে এক সময় সুখের সূর্য উদিত হয়। আলো ছাড়া অন্ধকার যেমন মূল্যহীন তেমনি অন্ধকার ছাড়া আলোও মূল্যহীন।
শিক্ষা: সুখ পেতে হলে যেমন দুঃখকে অতিক্রম করতে হয়, তেমিন অন্ধকার অতিক্রম করলেই আলোর পথে আসা যায়। দুঃখ না থাকলে সুখ মধুর হয় না, আবার সুখ আছে বলে আমরা বিষাদের মুহূর্তে দুঃখিত হই।
আরো পড়ুন: কেরােসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে, ভাই বলে ডাক যদি দেব গলা টিপে
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।