প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “আপনা রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা জনম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
আপনা রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা জনম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : মানুষ তার সামগ্রিক জীবন প্রণালিকে সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু অনেকেই সার্থকতার প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে অনবিজ্ঞতার কারণে জীবন সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। প্রকৃত পক্ষে মানুষের জীবনে সার্থকতা আসে অপরের কল্যাণ ও উপকার সাধনের মাধ্যমে।
সম্প্রসারিত-ভাব : এ পৃথিবীতে মানুষ মরণশীল। আত্মস্বার্থপরতা নয় পরার্থপরতা, আত্মসুখানুভূতি নয় পর-দুঃখানুভূতি, পর-কল্যাণ সাধনা প্রভৃতি শুভ কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত। মানু্ষ্যত্ব অর্জন কোনো সহজ ব্যাপার নয়। এ পথ ক্ষুরধার, বন্ধুর স্বাপদসঙ্কুল, কণ্টকাকীর্ণ পথে বিচরণ করতে হবে। মনুষ্যজীবন আত্মস্বার্থপরতা ও সংকীর্ণতার মধ্যে সঙ্কুচিত করে রাখলে জীবন সাধনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে পড়বে। সুখ দু’প্রকারের- আত্মসুখ এবং পরের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কাজ করার মাধ্যমে সুখ। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই আত্মসুখ পাওয়ার জন্য লালায়িত। আত্মসুখ অর্জনের জন্য তারা সর্বদা ব্যস্ত থাকে। কাজের ফল ভোগ করার মাধ্যমে তারা তৃপ্ত হয়। এ জাতীয় মানুষ কখনো আত্মসুখ ছাড়া অপরের সুখ-শান্তি, কল্যাণের কথা চিন্তা-ভাবনা করে না। এদের কাছে ‘ত্যাগে সুখ নেই, ভোগেই প্রকৃত সুখ’ -এ কথাটিই প্রাধান্য লাভ করে। অপরদিকে পৃথিবীতে স্বল্পসংখ্যক লোক আছেন যাঁরা আত্মস্বার্থপরতা বা আত্মকল্যাণে বিশ্বাসী নয়। তারা নিজের সুখের কথা চিন্তা না করে অপরের কল্যাণ বা সুখের জন্য সর্বদা অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন। এসব লোক আত্মস্বার্থপরতা ও সংকীর্ণতার মধ্যে নিজেকে সঙ্কুচিত না রেখে অন্যের কল্যাণ সাধনায় আত্মনিয়োগ করে থাকে। পরার্থপরতা শ্রেষ্ঠ নিরূপিত হয়ে থাকেন। অপরের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্য দিয়ে তারা সার্থকতা লাভ করেন। অপরের সুখ-শান্তি, কল্যাণের জন্য নিজের সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিতে এঁরা কখনো কুণ্ঠাবোধ করে না। এরা ‘ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’ এ বাণীতে বিশ্বাসী।
মানুষ যদি তার সামান্য সামর্থ নিয়ে পরার্থে বা মানব কল্যাণে এগিয়ে আসে সমাজ ও জগতের কল্যাণ সম্ভব হয় এবং সফল হতে পারে জীবনের উদ্দেশ্য।
বিকল্প ১
মানুষ সামাজিক জীব। তাকে সমাজে বসবাস করতে হয়। কোনো মানুষই অপরের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারে না। মানুষ সমাজ থেকেই প্রাথমিকভাবে এই সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে থাকে। কেউ কেউ পরের কল্যাণে আত্মতৃপ্তি লাভ করে সুখী হয়। কেউবা নিজের স্বার্থলাভে আত্মতৃপ্তি পেয়ে থাকে। এই শ্রেণির লোক সব সময় নিজের সুখের কথা ভাবে। অন্যের সুখ-দুঃখ নিয়ে ভাবার মতো সময় তাদের থাকে না। এভাবে তারা নিজের সুখের কথা ভাবতে ভাবতে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা সমাজের কোনো কাজে আসে না। তাদের মনে স্নেহ, মায়া-মমতা ও ভালোবাসা থাকে না বলে তাদের হৃদয় পাথরের মতো। এই ধরণের মানুষেরা মৃত্যুর পর পরই পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যায়। সমাজে আবার কিছু লোক আছেন, যারা অন্যের উপকারের মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। তারা সমাজের যেকোনো বিপদ-আপদে এগিয়ে আসে। সমাজের মানুষের সাথে তাদের সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই শ্রেণির লোকেরা শুধু সমাজের উন্নয়নই নয় জাতীয় উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তারা মৃত্যুর পর যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকেন। ফুল প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় এবং মানুষকে আনন্দ দেয়, নিজের জন্য কিছু করে না। তেমনি পৃথিবীতে এমন কিছু মহৎ ব্যক্তি আছেন যারা ফুলের মতোই মানব কল্যাণে কাজ করে অমর হয়ে আছেন। হাজী মুহাম্মদ মুহসীন তার বিশাল সম্পদ মানবকল্যাণে দান করেছিলেন। আবার মাদার তেরেসা সারাজীবন মানব সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। যে সমাজে সাহায্য সহযোগিতা থাকে না সে সমাজে নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এতে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। পৃথিবীতে যত দিন বাঁচা যায় ততদিন সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে বেঁচে থাকা প্রয়োজন। আমরা যদি পরস্পরর সুখ-দুঃখ ভাগ করে চলি, তাহলে পৃথিবীকে অনেক সুন্দর ও মনোরম মনে হবে। তাই প্রত্যেকের অবস্থান থেকে মানব সেবায় আত্মনিয়োগ প্রয়োজন।
শিক্ষা: আত্মসুখের পিছনে ছুটে কোনো লাভ নেই। বরং এতে নিজের দুঃখই আরো বাড়ে। তাই মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করা প্রয়োজন।
আরো পড়ুন: আমারে তুমি করিবে ত্রাণ
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।