প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন, আপন অভাব ক্ষোভ থাকে কতক্ষণ? ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন, আপন অভাব ক্ষোভ থাকে কতক্ষণ? ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : কোনাে মানুষই চরমভাবে তুষ্ট নয়। সকলের মনে অভাববােধের সীমাহীন ক্ষোভ বিদ্যমান। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেকেই আছেন যারা তুলনামূলকভাবে অধিক বঞ্চনার জীবনযাপন করে। তাদের অপ্রাপ্তির দিকে নজর দিলেই নিজের অভাবের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায়।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের আকাঙক্ষার শেষ নেই। তার চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। একটি অভাবের পরিতৃপ্তি নতুনঅভাবের জন্ম দেয়। সেই অভাব পূর্ণ হলেও তৃপ্ত হয় না মানুষের মন। সব সময়েই অতুষ্টি আর অপ্রাপ্তির জ্বালা মানুষকেতাড়িয়ে বেড়ায়। সে সব পেয়েছির দলে অন্তর্ভুক্ত হতে চায়। এ অসম্ভব প্রচেষ্টা মানুষের মনে চরম ক্ষোভ ও যন্ত্রণার জন্মদেয়। আর এ অপ্রত্যাশিত প্রচেষ্টা মানুষের সুকুমার বৃত্তিসমূহকে ধ্বংস করে তাকে স্বার্থপরতার দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিষিক্তকরে। কিন্তু এ অবস্থা কারাে কাম্য নয়। তা থেকে মুক্তি পেতে হলে তুলনামূলকভাবে যারা দরিদ্র, বঞ্চিত জীবনযাপন করেতাদের দিকে নজর দিতে হবে। নিজের অভাবের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে, অপরের বঞ্চনার দিকে তাকালে নিজের অপরিতৃপ্তিরক্ষোভ অনেকাংশে হ্রাস পায়। পায়ে জুতা না থাকলে দুঃখ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু পা নেই এমন লােকের কথা চিন্তা করলেজুতা না থাকার ক্ষোভ ঘুচে যেতে বাধ্য। দুঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করেও যদি একজন অন্যের তুলনায় কতটা সুখে রয়েছেতা বিবেচনা করে তবে তার মনে আর দুঃখ থাকে না। পরের দুঃখ ও অপ্রাপ্তির কথা চিন্তা করলে নিজেকে অধিকতর সুখী মনে হয়। তাতে অপ্রাপ্তির ক্ষোভ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মন্তব্য : তৃপ্ত জীবনযাপন করতে হলে আত্মতুষ্টির কোনাে বিকল্প নেই। আর আত্মতুষ্টি লাভ ও অপ্রাপ্তির জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে হলে অন্যের অপ্রাপ্তিকে বিবেচনায় আনতে হবে।
বিকল্প ১
ভাবসম্প্রসারণ: পৃথিবীতে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনাে শেষ নেই। সেই কারণে অভাবেরও শেষ নেই। যার যত আছে,তার চাহিদা তত বেশি। কিন্তু মানুষ যদি দুঃখকষ্টে জর্জরিত অন্যের কথা ভাবে তাহলে তার না পাওয়ার দুঃখ লাঘব হয়। অন্যের দুঃখকষ্টকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারলেই নিজের দুঃখকষ্ট তখন তুচ্ছ বা সামান্য হয়ে যায়।
অভাব ও জীবন একটি আরেকটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জীবন চলার পথে মানুষকে নানা অভাবের মুখােমুখি হতে হয়। মানুষ নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে নানা অভাবের সাথে লড়াই করে চলেছে। আবার অস্তিত্বের এ সংগ্রামে টিকে থাকার প্রয়ােজন থেকেই অভাবের সৃষ্টি। কারণ মানুষ যত পায় তত চায়। মানুষের মধ্যে সর্বদাই চাই চাই মনােভাব বিরাজমান। একটি অভাব পূরণ হলে আরেকটির অভাব দেখা দেয়। অর্থাৎ অনেকগুলাে জামাকাপড় থাকার পরও নতুন বা আধুনিক ডিজাইনের কোনাে পােশাক দেখলে তা কেনার প্রবল ইচ্ছা জাগে, সামর্থ্য থাকলে ক্রয় করা হয় আর না হলে মন হাহাকারে ভরে ওঠে। কিন্তু যার সামান্য লজ্জা নিবারণের কাপড়ও নেই বা একমাত্র সন্তানকে একটি ভালাে জামাও ক্রয় করে দিতে পারে না তার কথা ভাবলে নিজের মনের অভাবের ক্ষোভ তখন সামান্য হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশে অসংখ্য মানুষ দরিদ্র। এরা থাকা-খাওয়ার প্রচণ্ড কষ্টে ভােগে। এরা পারে না সন্তানের কোনাে চাহিদা পূরণ করতে, পারে না দিতে সামান্য আনন্দ। আমরা এদের কথা না ভেবে নিজের অভাব ও চাহিদা পূরণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। নিজের প্রয়ােজনকেই বড় করে দেখি। ফলে অভাববােধ আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। আমাদের সকলেরই উচিত দেশ ও সমাজের দুঃখকষ্টে জড়িত মানুষের কথা ভাবা। তাহলেই নিজের অভাববােধ মন হতে দূর হয়ে যাবে।
নিজের অভাবের কথা না ভেবে ভুক্তভােগী মানুষের অভাবের কথা সকলেরই ভাবা উচিত। মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে এবং হৃদয় দিয়ে যদি অন্যের অভাবকে আমরা দেখি তাহলে নিজের অভাব তখন অতি তুচ্ছ বলে মনে হবে।
বিকল্প ২
মূলভাব : জীবন ও অভাব যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মানবজীবনে অভাববের শেষ নেই। এটা মানবজীবনের এক ভয়ানক রোগ। কিন্তু অন্যের অভাবের কথা ভাবলে নিজের অভাবের চিন্তা অনেকটা কমে আসে।
সম্প্রসারিত ভাব : জীবন সংগ্রামে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। অন্যকে নিয়ে ভাবার সুযোগ তার আর হয়ে ওঠে না। অস্তিত্বের সংগ্রামে টিকে থাকার প্রয়োজনবোধ থেকেই অভাবের জন্ম। অর্থাৎ বাসস্থানের জোগান হলো এবার প্রয়োজন তা সাজানোর। সার্ণিচার কেনা হলো কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আসবাবপত্র সময়োপযোগী করে তোলার জন্য তার পরিবর্তন চাই। এ পরিবর্তনের মানসিকতাই অভাবের জন্ম দিচ্ছে। আর অভাবের তাড়নায় মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যার যত আছে তার আরও চাই। এ মানসিকতার ওপর ভর করেই সে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য অর্থের পিছু ছুটছে। একবারও অন্যের কথা চিন্তা করছে না। অথচ অভাবের তাড়নায় কত মানুষ না খেয়ে মরছে। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে দু মুঠো ভাতের জোগান দিতে পারছে না। সন্তান, মা-বাবা, প্রিয়জনকে নিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। তাদের বাসস্থান, আহার, নিরাপদ পানীয় জল কিংবা সামাজিক মর্যাদা কিছুই নেই। আমরা এসবের দিকে খেয়াল রি না। নিজের প্রয়োজনকেই বড় অভাব মনে করি। যদি নিজের অভাবকে বড় মনে করে দুঃখ করা হয় তাহলে সুখী হওয়া যায় না। নিজের অভাবকে না দেখে সমাজের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার দিকে তাকালেই কেবল নিজের অভাববোধ অনেকাংশ লাঘব হবে।
মন্তব্য : অভাব মূলত প্রয়োজনবোধের অনুভূতি। আত্মতৃপ্ত থেকে অন্যের অভাবকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করলে নিজের অভাব অনেকাংশে হালকা হয়।
আরো পড়ুন: বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সঙ্গে গাঁথা নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।