প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, চাই প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীয় সম্বন্ধ ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, চাই প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীয় সম্বন্ধ ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: আধিপত্য বিস্তার নয় বরং মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধই বেশি বাঞ্ছনীয়। মানুষকে প্রকৃতির সাথে সখ্য গড়ে তুলতে হবে ।
সম্প্রসারিত ভাব: জীব জগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রাণী হচ্ছে মানুষ। সর্বশ্রেষ্ঠ বলেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেছে এবং প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারে প্রয়াসী হয়েছে। মানুষ প্রথম দিকে একান্তই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল হলেও যখন সে সভ্য হতে শুরু করল তখন থেকেই পৃথিবীকে নিজেদের উপযোগী করে তোলার সর্বাঙ্গীণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। দেশ ও জনপদ গড়ে তোলার জন্য বন উজাড় করেছে, বন্যপ্রাণী ধ্বংস করেছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। প্রথমদিকে এর প্রভাব ব্যাপকভাবে লক্ষণীয় না হলেও শিল্পযুগের আবির্ভাবের পর থেকে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিগত শতাব্দীতে বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নয়নের ফলে মানুষ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারেই মনোযোগী হয়েছে বেশি। ফলে বন উজাড়, সাগর- নদ-নদী ভরাট, অত্যধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ নিয়মিত, ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতির ওপর মানুষের এ সর্বগ্রাসী আধিপত্যের বিরূপ প্রতিক্রিয়া যে প্রকৃতি দেয়নি এমনটি নয়। | বিশ্বে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে — ফলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাচ্ছে জনপথ। আবার অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সাইক্লোন, টর্নেডো প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসছে মানুষের ওপর। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সমগ্র পৃথিবী একদিন মরুভূমিতে পরিণত হবে, নয়তো সমুদ্রের অতল জলে ডুবে যাবে। তবে এসব থেকে পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার একটিই উপায়, প্রকৃতির ওপর আধিপত্যের পরিবর্তে প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়া। পরিবেশের জন্য যা কিছু হুমকিস্বরূপ তার ব্যবহার সীমিত করে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন সংরক্ষণ, বনায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম শুরু করে মানুষ চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ গড়ে তুলতে।
মন্তব্য: প্রকৃতি তার অপার উপকরণ দিয়ে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তুলেছে তাই নিজের স্বার্থেই মানুষকে প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারের পরিবর্তে মৈত্রীর সম্বন্ধ স্থাপন করতে হবে।
বিকল্প ১
মূলভাব : জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ প্রকৃতি ও জীবজগতের মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্কের বন্ধন। তাই আধুনিক মানুষ চেষ্টা করছে প্রকৃতির সাথে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তুলতে।
সম্প্রসারিত-ভাব : আদিম যুগে মানুষ অরণ্যে বাস করত এবং . অরণ্যকে অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করত। অরণ্য থেকে প্রাপ্ত ফলমূল এবং অরণ্যে পালিত পশু শিকার করে সেই পশুর মাংস খেয়ে তারা বেঁচে থাকত। অরণ্যের শুকনাে গাছের ডালে ডালে ঘর্ষণ লেগে যখন আগুন জ্বলে উঠল, তখন মানুষ প্রথম আগুন জ্বালানাের কৌশল শিখল এবং মাংস কাঁচা না খেয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে খাওয়া শিখল। ক্রমান্বয়ে মানুষ সভ্য হলাে, সমাজ গড়ল, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাে, ঘর-বাড়ি তৈরি করতে শিখল। সংঘবদ্ধভাবে বাস করার ফলে গ্রাম ও নগর তৈরি হলাে। এভাবে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটতে লাগল এবং একইভাবে প্রকৃতির সাথে মানুষের শুরু হলাে বিচ্ছেদ। ইট-কাঠ, লােহা কংক্রিটের সমন্বয়ে গড়ে উঠা নাগরিক সভ্যতায় প্রকৃতির কোনাে উপাদান আর রইল না। জ্ঞান-বিজ্ঞানের কল্যাণে, সময়ের বিবর্তনে মানুষ পৃথিবী ছাড়িয়ে আজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে মহাশূন্যে। প্রকৃতিকে করেছে পদানত, পৃথিবীকে এনেছে হাতের মুঠোয়। কিন্তু অতীতের শান্ত আরণ্য পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ সুখের জন্য যে নগর সভ্যতা গড়েছিল, তাতে আজ আর সুখ নেই। নানা সংকটে মানুষ আজ দিশেহারা। মানুষ এখন বুঝতে পারছে প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করলে প্রকৃতি আমাদের উপর চরম প্রতিশােধ নেবে। মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে যে কোনাে সময় প্রকৃতিতে ঘটে যেতে পারে চরম বিপর্যয়। তাই প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যসহ প্রকৃতির পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছে। উত্তরমেরুরর বরফ গলতে শুরু করেছে অস্বাভাাবক ভাবে ফলে বছরের বিভিন্ন সময়ে বন্যা দেখো দিচ্ছে। বৃষ্টির সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না। প্রচণ্ড দাবদাহে খরার সৃষ্টি হয়ে ফসল নষ্ট হচ্ছে। অস্বাভাবিক ভাবে বৃক্ষ নিধনের ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রকৃতির সাথে বৈরি সনম্পর্ক রেখে প্রাণিকূল কোনদিন স্বাভাবিক ভাবে টিকে থাকতে পারবে না। তাই আমাদের পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সার ব্যবহার, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বনায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম শুরু করে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ বা সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে।
মন্তব্য: সকলের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলার্থে প্রকৃতি বরাবরই অনাবিল আনন্দের ডালি নিয়ে আমাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। এখন শুধু প্রকৃতির সে ডাকে সাড়া দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আমাদের চলতে হবে।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।