প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “দুনীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপ স্বরূপ ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
দুনীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপ স্বরূপ ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : জাতি, উন্নতি, দুর্নীতি-এই ত্রয়ীর উচ্চারণের শেষান্তে মিল থাকলেও প্রথমটির জন্য দ্বিতীয়টি যতটা প্রয়ােজনীয়, দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে তৃতীয়টি ততােধিক ক্ষতিকর এবং বর্জনীয়।
সম্প্রসারিত ভাব : অসৎ বা অবৈধ সুবিধা লাভের জন্য মানুষের পরিচালিত কার্যক্রমের নামই দুর্নীতি। অপরদিকে,উন্নতি হচ্ছে পরিকল্পিত কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অবাঞ্ছিত অবস্থা থেকে বাতি অবস্থায় উত্তরণ। সাধারণভাবে সারাবিশ্বেই এটি বিশ্বাস করা হয় যে, দুর্নীতি জাতীয় উন্নতির অন্তরায়। দুর্নীতি ও উন্নতির সম্পর্ক আপাত বিরােধী। একদিকেব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দুর্নীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে, অপরদিকে ব্যাপক দুর্নীতির ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। দুর্নীতিঅর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে দুর্নীতি বিষয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, “বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা রােধ করা গেলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২-৩ শতাংশ বেড়ে যেত এবং মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হত।” দুর্নীতি দেশি-বিদেশি বিনিয়ােগের ক্ষেত্রেও একটি অন্যতম বাধা। অপরদিকে, দুর্নীতি এবং দারিদ্র্য আমাদেরজাতীয় জীবনের দু’টি সমবর্তী সমস্যা। দারিদ্র্য অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে সহায়তা করছে, আবার দুর্নীতির ফলে আমরাদারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। সম্প্রতি প্যারিসে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে বিশ্বব্যাংক যে।নিবন্ধ উপস্থাপন করে তাতে বলা হয়, বাংলাদেশকে দারিদ্র্য অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুশাসন ও দুনীতিবিরােধী অভিযানে অবশই সফলতা অর্জন করতে হবে। সর্বোপরি স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মানব উন্নয়নের বিভিন্ন খাতেসরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের ৭৫ ভাগই দুর্নীতিবাজরা আত্মসাৎ করছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালকর্তৃক প্রণীত রিপাের্টে দেখা যায়।
মক্তব্য : দুনীতি উন্নতির প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি মূর্তিমান অভিশাপ হিসেবে বিরাজ করে উন্নতির ক্ষেত্রে মারাত্মক অন্তরায়সৃষ্টি করছে। তাই যে কোনাে মূল্যে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এদেশ থেকে দুর্নীতির মূলােৎপাটনকরতে হবে। তবেই এদেশে সােনালি ও সুখী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে।
বিকল্প ১
নীতির বিরুদ্ধাচরন-ই দুর্নীতি। অর্থাৎ প্রচলিত আইন ও নীতি-নৈতিকতাবিরোধী কাজকে দুর্নীতি বলে। জাতীয় জীবনে এ দুর্নীতি বিরাজ করলে তা জাতিয় সর্বনাশ ডেকে আনে। এর প্রভাবে একটি জাতির স্বপ্ন ও সম্ভাবনা অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যেতে পারে; হারিয়ে যেতে পারে অতীত ঐতিহ্য।
সত্য ও ন্যায় পথ একটি জাতির জন্য একান্ত অপরিহার্য। কেননা, সত্য ও ন্যায়ের পথে অগ্রসর হলে অবশ্যই সে জাতির উন্নতি সহজ হয়। তাই সত্যের সাধনা জাতির প্রধান কাজ। ন্যায়নীতির পথে চলে একটি জাতি উন্নতির শীর্ষে উঠতে পারে। পৃথিবীর ইতহাসে যেসব জাতি উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছে, তার পেছনে কাজ করেছে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা। অন্যদিকে জাতীয় জীবনে যদি দুর্নীতির প্রবেশ ঘটে তবে সে জাতির উন্নতির পথে হয়ে যায় বুদ্ধ। তখন জাতির সামনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। অন্যায় বা দুর্নীতি যে জাতির মধ্যে বিরাজ করে সে জাতি নানা অনাচারে মগ্ন হয়। ফলে লোকে জাতির উন্নতির কথা ভুলে গিয়ে নিজের সুখ, সুবিধা ও স্বার্থের কথা ভাবতে থাকে। কীভাবে অন্যকে ঠকিয়ে নিজের লাভের পরিমাণ বাড়ানো যায় দুর্নীতিবাজ মানুষ সে চিন্তাই করে। এক্ষেত্রে নিজের লোভই বড় হয়ে দেখা দেয়; অন্যের মঙ্গলের কথা লোকের ভাবনায় আসে না। আমরা দেখি পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব জাতি নানাবিধ দিকে অগ্রসর হতে পেরেছে তার পেছনে কাজ করেছে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা। অন্যায় বা দুর্নীতি যে জাতির মধ্যে বিরাজ করে সে জাতি নানাবিধ অনাচারে লিপ্ত হয। যেসব জাতি দুর্নীতিতে আক্রান্ত হয়েছে সেব জাতি কোনো দিনও উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে পারবে না। দুর্নীতি প্রত্যেকটি জাতির বিশেষ করে মানবজাতির জীবনে অভিশাপস্বরূপ। কোনো জাতির জীবনে যদি দুর্নীতি প্রবেশ করে তবে সেখানে স্বার্থের যে খেলা চলে তাতে জাতির উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে দুর্নীতিকে জাতীয় জীবনে অভিশাপ বিবেচনা করা হয়। এ অভিশাপ জাতির সর্বনাশ ঘটায়। মানুষের জীবনে তখন নেমে আসে চরম দুঃখ-দুর্দশা।
কোনো জাতির জীবনে যদি দুর্নীতি প্রবেশ করে তবে সেখানে স্বার্থের যে লীলা চলে, তাতে জাতির উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। সে কারণে দুর্নীতিকে জাতীয় জীবনে অভিশাপ বলে থাকে। সমস্যার সমাধান তাই অত্যন্ত জরুরি।
বিকল্প ২
ভাবসম্প্রসারণ: যেকোনাে প্রকার নীতিহীন তথা নীতিবিবর্জিত কাজকে এক কথায় বলা হয় দুর্নীতি। দুনীতি জাতির জীবনে মহামারি অপেক্ষাও অধিক ভয়ানক এক অভিশাপ। দুর্নীতির বিষাক্ত ছােবল দেশ ও জাতির উন্নতির পথে বিরাট বাধা সৃষ্টি করে। দুনীতি জাতির উন্নতির গতিকে মন্থর করে।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। অন্যান্য জীব হতে মানুষের পার্থক্য তার মনুষ্যত্ব। আর মনুষ্যত্বই মানুষের মধ্যে বিকেবােধ, ভালো-মন্দ বােঝার ক্ষমতা, পাপ-পুণ্যের ভেদাভেদ সর্বোপরি উদারতা জাগিয়ে তােলে। মনুষ্যত্বই মানুষের মধ্যে নীতিবােধ জাগ্রত করে। যার দ্বারা মানুষ নীতিবিরুদ্ধ নানা কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজ মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে দুনীতিযুক্ত কাজে লিপ্ত হয়। এদের কাছে কেবল নিজ স্বার্থই বড়। এরা দেশ ও জাতির কথা কখনাে ভাবে না। আমাদের দেশে আজ এ দুর্নীতির প্রবলভাবে বিস্তার ঘটেছে। দেশের সকল ক্ষেত্রই এ ব্যাধিতে আক্রান্ত। সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান অর্থ, প্রতিপত্তি ও লােভের মােহে আক্রান্ত। নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্যে ন্যায় অন্যায় আজ অনেকের চোখে সমান। দুর্নীতির কারণে দেশ আজ ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অর্থনীতি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে। নিজ স্বার্থে দুর্নীতিবাজ মানুষ দেশের ধ্বংস ডেকে আনতেও বিন্দুমাত্র কুষ্ঠিত হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে উন্নতির পরিবর্তে অবনতি ঘটছে আমাদের দেশের। এ থেকে পরিত্রাণ দরকার। মনে রাখতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত দেশই উন্নতির শীর্ষে অবস্থান করছে। দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণের কথা ভেবে নিজ অন্যায্য স্বার্থকে সকলের বিসর্জন দেওয়া উচিত। ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যে সুন্দর দেশ গড়তে হলে সকলকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। কারণ দুর্নীতি জাতির উন্নয়নের গতিরােধ করে, সৎ ও ন্যায় পথে চলাকে বাধাগ্রস্ত করে।
দেশ ও জাতির কল্যাণে দুর্নীতি নামক পথটি আমাদের সকলেরই পরিহার করা উচিত। ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত। কর্তব্য ও দায়িত্বে যদি আমরা নিষ্ঠাবান, সৎ ও ন্যায়বান হতে পারি তাহলেই সকলের মঙ্গল হবে। দেশ ও জাতি দুনীতির অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
বিকল্প ৩
মূলভাব : জাতীয় জীবনে দুর্নীতির ফলে জাতীয় উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং কোন জাতি কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়।
সম্প্রসারিত ভাব : দুর্নীতি জাতীয় জীবনের এক বিরাট অভিশাপ। একটি জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। সত্য ও ন্যায়ের পথই হচ্ছে আসল পথ। কিন্তু সেই পথকে পরিহার করে কোনো দেশের মানুষ যদি মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে, যদি দুর্নীতির গভীরে নিমজ্জিত হয় তাহলে জাতীয় উন্নয়নের আর কোন সম্ভাবনা থাকে না। দুর্নীতির মাধ্যমে সেখানে স্বার্থের যে লীলা চলে তাতে জাতীয় উন্নতির সকল দুয়ার রুদ্ধ হয়ে যায়। তখন জাতির সামনে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। দুর্নীতির ফলে বিরাজ করে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ। পরস্পর পরস্পরের প্রতি মিথ্যাচার, অনাচার, ব্যভিচার ইত্যাদি অশুভ তৎপরতা বেড়ে যায় বহুগুণ। চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস ইত্যাদির ফলে সৃষ্টি হয় এক নারকীয় পরিবেশ। লোভ ও লালসার বাহ্নিতে সারাদেশ দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। সমস্ত জাতি তখন পরিত্রাণের রাস্তা খোঁজে। কিন্তু কোন বাতিঘর সহজে দেখাতে পারে না সঠিক পথের ঠিকানা। দুর্নীতিমুক্ত জাতিই উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। দুর্নীতির কদাকার রূপ অনুন্নত বিশ্বেই বেশি লক্ষ্য করা যায়।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।