প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “পড়িলে বই আলােকিত হই না পড়িলে বই অন্ধকারে রই ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
পড়িলে বই আলােকিত হই না পড়িলে বই অন্ধকারে রই ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : মানুষের জ্ঞান আহরণের প্রধান উৎস বই। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ যেমন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়। তেমনিই বই বিমুখ মানুষ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।
সম্প্রসারিত ভাব : বই হলো জ্ঞানের আধার। বই পড়লে মানুষের জ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হয়। মানুষ অজানাকে জানতে পারে। অচেনা জগৎ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। বই মানুষের বিবেককে জাগ্রত করে। তবে পঠিত বই হতে হবে অবশ্যই মানসম্মত। কেননা মানহীন বই পাঠ করলে পাঠক পথভ্রষ্ট হতে পারে। তাই ভালো বই যেমন পাঠ করা দরকার তেমনই মন্দ বই পড়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। মানসম্মত বই-ই পারে মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে জীবনকে বদলে দিতে। তাই জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে অবশ্যই বই পড়তে হবে। প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী বই পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয়।’ পাঠ্যসূচির কয়েকটি বই পড়ে জ্ঞানের পূর্ণতা অর্জন হয় না। বহুমুখী প্রতিভা অর্জন ও বিচিত্র জ্ঞানের জন্য বিভিন্ন বই পড়তে হয়। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ বিশাল জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করে। জ্ঞানের রাজ্যের ক্ষুধা মেটাবার প্রধান মাধ্যম হলো বই। বই আত্মার খোরাক জোগায়। অন্ধকার যেমন আলো ছাড়া দূরীভূত করা যায় না, তেমনই বই পড়া ছাড়া অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করা যায় না। যে জাতি যত বেশি বই পড়ে, সে জাতি তত বেশি উন্নত।
বই পড়ার অভ্যাস আলোকিত করে মানুষের ব্যক্তিমন। আর যাদের বই পড়া অভ্যাস নেই তারা জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত। তাই ব্যক্তি ও সমাজ আলোকিত করতে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
বিকল্প ১
মূলভাব : বই জ্ঞানের আলো বিতরণ করে, হৃদয়কে আলোকিত করে, দূর করে মনের সব অন্ধকার। মনের অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার জন্য আমাদেরকে প্রয়োজনীয় বহুসংখ্যক বই পড়তে হবে।
সম্প্রসারিত ভাব : পাঠ্যবই বাধ্য হয়ে পড়তে হয়। কিন্তু এ পড়া একবিন্দু শিশিরের সমতুল্য। পাঠ্যবইয়ের বাইরে রয়েছে অজস্র বিষয়ের অসংখ্য বই। এসব বইতে শুধু তত্ত্ব বা তথ্য নয়, বহু বিচিত্র বিষয়ের বর্ণনা, আলোচনা, তুলনা, কল্পনার বিষয় রয়েছে। ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, ভূগোল, ধর্ম, জ্যোতির্বিদ্য নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, কল্পকাহিনি, কল্পবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ের বিস্তর উৎকৃষ্টমানের বই রয়েছে। এসব বই পড়ে আমরা নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি, নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। এসব অভিজ্ঞতা শুধু আমাদের আনন্দই দেবে না, জীবন চলার পথে পাথেয়ও জোগাবে। আমরা আমাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারব, দেশ ও জনগণের কল্যাণে গঠনমূলক কাজ করতে পারব। বই পড়ে এভাবেই আমরা নিজেরা আলোকিত হব এবং অন্যদেরও আলোকিত করতে সমর্থ হব। যারা বই পড়তে জানে না তাদের শিক্ষিত করে তুলতে পারব। আর যারা বই পড়ে না তাদেরকেও আগ্রহী করে তুলতে সক্রিয় হতে পারব। লেখাপড়া যারা জানে না তারা যেমন অন্ধকারে থাকে, তেমনি যারা লেখাপড়া জানে অথচ জ্ঞানের বই পড়ে না তাদের জীবনও অন্ধকারাচ্ছন্ন। অন্ধকার থেকে আলোকিত জীবনে আসতে হলে তাদেরকে অবশ্যই পছন্দের বই পড়তে হবে। তাতে তারা লাভ করবে নতুন আনন্দময় আলোকিত জীবন। যে জীবন অভীষ্ট লাভে সফল হবে এবং অপরের জন্য উৎসর্গীকৃত হবে। এমন আলোকিত সফল জীবনই প্রশংসা ও মর্যাদায় অভিষিক্ত হতে পারে। অজ্ঞান অন্ধকার জীবন কখনো প্রশংসা, মর্যাদা ও সাফল্য লাভ করতে পারে না।
সিদ্ধান্ত : সুতরাং বই না পড়ে অন্ধকারে থাকার চেয়ে বই পড়ে আলোকিত জীবন গ্রহণই শ্রেয়।
বিকল্প ২
মূলভাব : আমাদের জ্ঞানের আধার হচ্ছে বই। বইপড়া আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে সম্প্রসারি করে। অন্যদিকে, বই পড়ার অভ্যাস না থাকলে মানুষের মন অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে।
সম্প্রসারিত ভাব : বই আমাদের জ্ঞানের বিস্তৃতি ঘটায়। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা নানা অজানাকে জানতে পারি। বই আমাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করে তােলে। শিক্ষিত জাতির মেরুদণ্ড হচ্ছে বই। আবার সেই বইকে হতে হবে রুচিসম্পন্ন। কেননা অরুচিশীল বই পাঠে পাঠকের মেরুদণ্ড ভেঙে ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই ভালাে বই যেমন পাঠ করা দরকার, তেমনি মন্দ বই বর্জন করা দরকার। মানসম্মত বই-ই পারে মানুষের জীবনকে বদলে দিতে। জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হলে বই অবশ্যই পড়তে হবে। কেননা বই যতই পড়া যাবে বিচিত্র জ্ঞানের ভাণ্ডার ততই বৃদ্ধি পাবে। এ বিশ্বের বড় বড় জ্ঞানী ব্যক্তিরাই ছিলেন বই-প্রেমিক। কবি ওমর খৈয়াম তার কল্পিত স্বর্গভূমিতেও বইয়ের প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। “তিনি বলেছেন রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালাে চোখ ঘােলাটে হয়ে আসবে…. কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা যদি তেমন বই হয়।” পল্লিকবি জসীমউদ্দীন বলেন, বই-ই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। প্রমথ চৌধুরী বই পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁর ‘বই পড়া প্রবন্ধে বলেছেন “আমাদের মনে হয় এ দেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয়।” এ লাইব্রেরিতেই থাকে বই যা জ্ঞানের দ্বার খুলে দেয়। শুধু পাঠ্যসূচির কয়েকটি বই পড়ে জ্ঞানের পূর্ণতা অর্জন করা যায় না। এ জন্য বহুমুখী প্রতিভা অর্জন ও বিচিত্র জ্ঞানের জন্য নানা ধরনের বই পড়তে হবে। জ্ঞানার্জনের নির্দিষ্ট বই এবং নির্ধারিত কোনাে সীমা নেই। বই পড়ার মধ্য দিয়ে মানুষ বিশাল জ্ঞানরাজ্যে প্রবেশ করে এবং অজানা দিগন্তে উদ্ভাসিত হয়। বই মানুষের মনকে সরল, সচল ও সমৃদ্ধ করে তােলে। মানুষের দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মনীতি, অনুরাগ-বিরাগ, আশা-নৈরাশ্য, অন্তরের সত্য ও স্বপ্ন এই সকলের সমবায়ে বই এর জন্ম। দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস বইয়ের ভেতরেই সােল্লাসে সবেগে বয়ে চলেছে। বিশ্বসাহিত্যের অনেক বই আছে যা আমাদের জ্ঞানের দ্বার খুলে দেয় যেমন- হােমার-এর ইলিয়ড ও ওডিসি’, ফিয়ােদর দস্তয়ভস্কির ক্রাইম এ্যান্ড পানিশমেন্ট’ (অপরাধ ও শাস্তি) যা পড়ে বশ সমাজ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। শিশুদের জন্য অনেক শিশুতােষ বই আছে যেমন- সুকুমার রায় এর ছড়া ও গল্পের বই প্রভৃতি। কারণ শিশু বয়স থেকেই আমাদের পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মানুষের ক্ষুধা দুধরনের। একটা হলে দৈহিক ক্ষুধা, অন্যটি মানসিক ক্ষুধা। দৈহিক ক্ষুধার চাহিদা সাময়িক ও সহজলভ্য। কিন্তু মানসিক ক্ষুধা পূরণ করা কঠিন। এ ক্ষুধা হলাে জ্ঞানের ক্ষুধা, আর জ্ঞানরাজ্যের ক্ষুধা মেটানাের প্রধান মাধ্যম হলাে বই। বই আত্মার খােরাক জোগায়। অন্ধকার যেমন আলাে ছাড়া দূরীভূত করা যায় না, তেমনি বই ছাড়া কেউ জ্ঞানী হতে পারে না। যে জাতি যত বেশি বই পড়ে সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাই আমাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
মন্তব্য: বই পড়ার অভ্যাস মানুষকে ব্যক্তি হিসেবেও উন্নত করে তােলে। আর যাদের বই পড়ার অভ্যাস নেই তার জ্ঞানের আলাে থেকে বঞ্চিত হয়ে অন্ধকারেই পড়ে থাকে। তাই ব্যক্তিমনকে আলােকিত করতে এবং সমাজকে উন্নত করতে বই পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরো পড়ুন: দুনীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপ স্বরূপ
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।