প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : কোনাে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তা-চেতনা প্রতিফলিত হয় তার সাহিত্যে।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মনীতি, অনুরাগ-বিরাগ, আশা, নৈরাশ্য, তার অন্তরের সত্য ও স্বপ্ন-এসবই সাহিত্য। দর্পণে যেমন আমাদের পূর্ণাঙ্গ মুখচ্ছবি প্রতিফলিত হয়, তেমনি সাহিত্যেও একটি জাতির পরিপূর্ণ চিত্র ফুটে ওঠে। যে জাতি যত উন্নত সে জাতির সাহিত্য তত সমৃদ্ধ। সাহিত্যের মাধ্যমেই একটি জাতির অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। কেননা প্রত্যেক জাতির কবি সাহিত্যিকগণই তাদের লেখনীর নিপুণ আঁচড়ে সে জাতির নিজস্ব জীবনধারা ও বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তােলেন। জাতীয় জীবনে আমাদের উত্থান-পতন, প্রেম-ভালােবাসা, সুখ-দুঃখের কাহিনী স্বীয় বৈশিষ্ট্যে সাহিত্যে ধরা পড়ে। জাতির অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সাহিত্যের বিষয়বস্তু হিসেবে গৃহীত হয়। জাতি হিসেবে কোনাে দেশের মানুষ বর্তমান বিশ্বে কতটা অগ্রসর তা সে দেশের সাহিত্য পাঠে সহজেই জানা যায়। যেমন- গ্রিক সাহিত্য পাঠে আমরা প্রাচীন গ্রিকদের জীবনযাপন, সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। ফারসি সাহিত্যের মাধ্যমে জানতে পারি প্রাচীন পারস্যের ইতিহাস, তদ্রুপ-বাঙালি জাতি হিসেবে সমগ্র পৃথিবীতে আমাদের যে পরিচিতি তার মূলেও রয়েছে আমাদের বাংলা সাহিত্য। আমাদের হাজার বছরের সাহিত্য ভাণ্ডারে পলে পলে সঞ্চিত হয়ে আছে অনেক কবিতা, গান, গল্প ও উপন্যাস। এসব কালজয়ী সাহিত্য কীর্তির দিকে তাকালে আমরা আমাদের জাতিসত্তাকে খুঁজে পাই। আবহমান বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি সমৃদ্ধ সাহিত্যই আমাদের পরিচয় বহন করছে। জাতীয় উন্নতির মাপকাঠিও এ সাহিত্য। তাই কোনাে জাতিকে জানতে হলে সে জাতির সাহিত্যের সাথে পরিচিত হতে হবে।
মন্তব্য : সাহিত্য কেবল কবির কবিতা ও সাহিত্যিকের রচনা নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতিরও ধারক।
বিকল্প ১
মূলভাব: রচনায় সাহিত্যে বা একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তা-চেতনা প্রতিফলিত হয়। সাহিত্য পাঠ করে সংশ্লিষ্ট জাতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়।
সম্প্রসারিত ভাব: সাহিত্যের সঙ্গে জাতীয় জীবনের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। জাতীয় জীবনের নানা গতিধারা ও ভাঙাগড়ার প্রতিফলন ঘটে সাহিত্যে। তবে জাতীয় চেতনার সঙ্গে সাহিত্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দরকার। কেননা জাতীয় চেতনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ব্যতীত কোনাে দেশের সাহিত্যই জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে পারে না। সাহিত্য ব্যক্তি-হৃদয়ের অনুভূতি জাগ্রত করলেও তার পরিপুষ্টি ঘটে সমাজ-মানসের বিশাল অঙ্গনে। ব্যক্তির জীবনধারা ও ব্যক্তি-মান সমাজ-পরিপুষ্ট বলেই একে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ব্যক্তির জীবনদৃষ্টি ও সৃষ্ট সাহিত্য যদি যুগচেতনা, ইতিহাস-ঐতিহ্য অনুসন্ধানী হয় তবে সে সাহিত্য সমাজ তথা জাতির সামগ্রিক চিন্তা-চেতনায় একটা বিরাট পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে। সৃষ্টি জগতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অনস্বীকার্য হলেও মানুষের মধ্যে বিস্তৃত হয়ে আছে নানা অপূর্ণতা জীবনের সকল বােধ, বৃত্তি ও আকাঙ্ক্ষাকে সমভাবে সে বিকশিত করতে অক্ষম। মানুষ চায় অপূৰ্ণকে পূর্ণ করতে, শ্রেয়কে প্রিয় করতে। মানুষের আবেগ আকাঙ্ক্ষা, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার প্রতিফলন ঘটে সাহিত্যে। তাই কোনাে জাতির পরিচয় পেতে হলে সর্বপ্রথম জানতে হবে সেই জাতির সাহিত্যকে। বিশ্বের প্রতিটি জাতির সাহিত্যে সেই জাতির নিজ নিজ পরিচয় উন্মােচিত হয়েছে। দর্পণ বা আয়নায় যেমন মানুষের চেহারা ফুটে ওঠে বা ছবি দেখা যায়, ঠিক তেমনই সাহিত্যে একটি জাতির চেহারা ফুটে ওঠে বা ছবি দেখা যায়। সংগত কারণেই বাংলা সাহিত্যও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের সাহিত্যের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির আবেগ, জীবনধারা, সংগ্রাম, শৌর্য-বীর্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। অতএব, জাতীয় উন্নয়নে সাহিত্যচর্চা অতীব জরুরি।
মন্তব্য: সাহিত্য শুধু কবির কবিতা বা সাহিত্যিকের রচনা নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। সুতরাং সাহিত্যের প্রতি যত্নবান হওয়া একান্ত আবশ্যক।
বিকল্প ২
মূলভাব: মানুষ এক অতুলনীয় উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। এ শক্তির বলে সে সৃষ্টি করেছে জগদৃব্যাপী আধিপত্য, উন্নত সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং জাতির প্রাণসমতুল্য সাহিত্য। সাহিত্যে একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা, জীবনেতিহাসের প্রতিফলন ঘটে, যেমনটি দর্পণে ঘটে আমাদের অবয়বের। আর তাই সাহিত্যকে জাতির দর্পণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ভাবসম্প্রসারণ: সাহিত্য এমন এক অমূল্য সম্পদ যেখানে মানুষের প্রাণশক্তি ও প্রতিভার উন্মেষ এবং যথার্থ স্ফুরণ ঘটে। মানুষ তার মনের নিগূঢ়তম আবেগ ও মনুষ্যত্বের ছোঁয়ায় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তােলে। একটি জাতি যা কিছু ভালােবাসে, যাকে চিরস্থায়ী বলে মানে, যার আরাধনা করে তার সবকিছুর সম্মিলনে সাহিত্যকে রূপ দান করে। কালের গর্ভে সে জাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, তার চিহ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে কিন্তু তার সাহিত্য থাকে চির অক্ষয়। তখন সেই সাহিত্যের মধ্যে সে জাতির নিদর্শন। খুঁজে পাওয়া যায়। কেননা সাহিত্য অবিনশ্বর ও কালাতীত। কালের ধুলােয় সাহিত্য মলিন হয়ে যায় না বরং জাতির কালিক মহিমা ও ইতিহাস আমাদের সম্মুখে মূর্ত করে তােলে। কোনাে জাতিকে সম্যকভাবে জানতে হলে তাই সে জাতির সাহিত্যকে জানা প্রয়ােজন সাহিত্যের মাধ্যমে জাতির মানুষের জীবনবৈশিষ্ট্য, আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি সবকিছুর যথােপযুক্ত বিবরণ পাওয়া যায় আর তাই সাহিত্যের বিস্তৃতি অত্যন্ত ব্যাপক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা। তাঁর রচিত সাহিত্যকর্মে আমরা তৎকালীন সমাজের জীবনব্যবস্থা, আবেগ, অনুভূতি, আশা, হতাশা, রাগ, দুঃখ, প্রকৃতি সবকিছুর উজ্জ্বল বিবরণ খুঁজে পাই। তৎকালীন সময়ের মানুষের জীবনপ্রণালি তাই আমাদের সম্মুখে স্পষ্ট করে তুলেছে তাঁর রচিত সাহিত্য। গবেষকগণ প্রাচীন ও রেনেসাঁ যুগের বিবরণও খুঁজে পেয়েছেন তঙ্কালীন সাহিত্যে। সেজন্যেই সাহিত্য সদা জাগ্রত, জীবন্ত ও পবিত্র।
কোনাে জাতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হলে সে জাতির সাহিত্য সম্পর্কে জানা প্রয়ােজন। এ যেন এক অমূল্য সােনার কাঠি, যা রূপকথার রাজকুমারীর তন্দ্রাভঙ্গের মতাে মানবমনকে উদ্বোধিত করে আমাদের সামনে সমগ্র জাতির জীবনচিত্র তুলে ধরে। এজন্যেই বিখ্যাত সাহিত্যিক জন কিটস সাহিত্যকে জীবনের সৌন্দর্য বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।