প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “সুশিক্ষিত লােকমাত্রই স্বশিক্ষিত ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
সুশিক্ষিত লােকমাত্রই স্বশিক্ষিত
ভাব-সম্প্রসারণ : প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি থেকে অর্জিত শিক্ষা-এ দুয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। কারণ সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হয়ে যায়, কিন্তু শিক্ষার কোনো পরিসীমা বা সীমা নেই। শিক্ষার পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে হলে মানুষকে নিজস্ব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এবং সুশিক্ষিত হওয়ার জন্যে স্বশিক্ষা বা নিজে নিজে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল জ্ঞানশক্তি অর্জন করা।
শিক্ষা সম্পূর্ণভাবেই অর্জনসাপেক্ষ। শিক্ষালাভের জন্যে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ধাপে ধাপে এগিয়ে শিক্ষার্থীগণ যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি অর্জন করে এবং শিক্ষিত হিসেবে পরিচিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। নির্দিষ্ট ডিগ্রি প্রদানের মধ্যেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে জ্ঞানের পূর্ণতা আসে না। জ্ঞানকে আত্মস্থ করার জন্যে আত্মপ্রয়াসের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার পরিধি অনেক বড়। ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষালাভের সময়।’ তাই যথেষ্ট জ্ঞান অনুশীলন ব্যতীত কেউ সুশিক্ষিত হতে পারে না। আমাদের সমাজে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁদের উচ্চতর ডিগ্রি আছে, কিন্তু দেশ ও জাতির কল্যাণে তারা কিছুই করতে পারেন নি। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চতর ডিগ্রি থাকলেও তাঁরা স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত না হওয়ায় তাদের মধ্যে কখনোই মুক্তচিন্তার বহিপ্রকাশ ঘটে নি, যা দিয়ে তাঁরা দেশ ও দশের উপকার করতে পারে। পক্ষান্তরে, অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও দেশ ও জাতি তথা বিশ্বমাববের কল্যাণের জন্যে অনেক কিছু করে গেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ- সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো, নিউটন, গ্যালিলিও, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। তাঁরা স্ব-শিক্ষায় সুশিক্ষিত ছিলেন বলেই মরেও অমর হয়ে আছেন। সুশিক্ষিত লোকের মন মুক্তবুদ্ধির আলোকে উদ্ভাসিত হয়, তিনি বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হন। পরিশীলিত রুচিবোধে তিনি হন উদার ও বিনম্র। সব মিলিয়ে সুশিক্ষিত মানুষ নিঃসন্দেহে হন আলোকিত মানুষ। তাই একটি দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতিকল্পে স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত লোকের কোনো বিকল্প নেই।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে উপস্থাপন করা হলো
মূলভাব: একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই কাউকে সুশিক্ষিত বলা যায় না। সুশিক্ষিত হতে হলে সৃজনশীল জ্ঞান এবং প্রয়ােগ দক্ষতা অর্জন করতে হয়।
সম্প্রসারিত ভাব: শিক্ষা মানুষকে আলােকিত করে তোলে। তার চেতনাকে শানিত করে, ন্যায়-অন্যায়বােধ সৃষ্টি করে। আর এ সবকিছুই মানুষকে মনুষ্যত্বসম্পন্ন ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে সাহায্য করে। সাধারণভাবে শিক্ষা বলতে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেই বুঝি। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই মানবজীবনের একমাত্র শিক্ষা নয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের আচার-আচরণ ও কর্মপ্রণালি অনেক সময় বুদ্ধি-বিবেকহীন সাধারণ মানুষের চেয়েও হীন, ক্ষেত্রবিশেষে পশুর মতাে হয়ে থাকে। এজন্য মানুষমাত্রেরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে হয়। আর এজন্য প্রয়ােজন হয় স্বীয় উদ্যোগ, প্রচেষ্টা ও নিরলস সাধনা। কেননা নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেক প্রয়ােগ করে প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করতে না পারলে কেউ সুশিক্ষিত হতে পারে না। একথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমান সময়ের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মূলত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এ ধরনের শিক্ষায় পরীক্ষা পাশ কিংবা কতকগুলাে সনদ লাভ করা গেলেও আলােকিত মানুষ হওয়া যায় না। এ ধরনের শিক্ষা প্রকৃত অর্থে জ্ঞানার্জনের জন্য নয় বরং জীবিকা অর্জনের জন্যে। তাই প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় উচ্চ ডিগ্রি লাভ করলেই সুশিক্ষিত হওয়া যায় না। আমাদের সমাজে এমন অনেকে আছেন যারা প্রাতিষ্ঠানিক কোনাে শিক্ষা লাভ না করেই প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং সংগ্রামময় জীবন থেকে অনেক কিছু শিখে স্বশিক্ষিত হয়েছেন। তাঁদের জ্ঞান, দর্শন, আচার-আচরণ ও শিক্ষা মানুষকে মুগ্ধ করে। তারা তাদের জ্ঞানের আলােয় চারিদিক আলােকিত করে তােলেন। তাই আমাদের সকলের উচিত সার্টিফিকেট লাভের শিক্ষায় পরিণত না হয়ে জ্ঞানার্জনের শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া।
মন্তব্য: জীবনের পরিপূর্ণ সত্য উপলব্ধি করার জন্য দরকার সুশিক্ষা। সুশিক্ষাই পারে মানুষের আত্মিক উন্নতি সাধন করতে।
আরো পড়ুন: স্বদেশের উপকারে নেই যার মন, কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।