আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “সাহিত্য সমালোচনা কখন নিজেই সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়ে ওঠে? নিদর্শন স্বরূপ একটি সাধারণ সমালোচনার সঙ্গে একটি দৃষ্টিমূলক সমালোচনার তুলন” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।
সাহিত্য সমালোচনা কখন নিজেই সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়ে ওঠে? নিদর্শন স্বরূপ একটি সাধারণ সমালোচনার সঙ্গে একটি দৃষ্টিমূলক সমালোচনার তুলন
‘সমালোচনা’ কি সাহিত্যের অন্যান্য শ্রেণির মতো সৃজনশীল? অনেকেই সমালোচনাকে সাহিত্যকর্ম বলে স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন এবং সমালোচকও স্রষ্টার সম্মান পান না। একথা ঠিক যে কাব্য-কবিতা গল্প উপন্যাস ইত্যাদির যে মৌলিকত্ত্ব তা সমালোচনা সাহিত্যে পাওয়া যায় না। তবে একজন কবি বা লেখক যেমন তাঁর কল্পনার সৌন্দর্যে তাঁর আবেগের উষ্ণতায় জগৎ ও জীবনের সত্যকে রূপদান করেন একজন সমালোচকও তেমন একটি সাহিত্যকর্মের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে পাঠক সাধারণের কাছে উপস্থিত করেন। পাঠকবর্গের মনে বিস্ময় সৃষ্টি করেন, তাদের আনন্দের জোগান দেন। সমালোচনা নিশ্চয়ই মূল সাহিত্যের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু তিনিই তো আদর্শ সমালোচক যিনি লেখকের আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে নতুনতর কিছু সৃষ্টি করেন, যা মূল রচনাকে বুঝতে সাহায্য করা ছাড়াও পাঠককে উৎসাহিত করে, রসাস্বাদনে প্রাণিত করে। এই সমালোচনা বা মূল্যায়ন সৃষ্টি পর্যায়ে পড়ে। মিডলটন মারির মন্তব্য থেকে ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে If it gives this delight. criticism is creative for it enables the reader to discover beauties and significances which he had not seen, or to see. There which he had himself glimpsed in a new and revealing light.
বিশেষ কোনো সৃজনী আবেগ উদ্দীপনা, মন ও মননের কোনো গূঢ় বিন্যাস থেকে একটি সাহিত্য কর্মের উৎপত্তি। সেই মানসিক আবেগ উদ্দীপনার জন্মকথা তথা ক্রিয়াশীলতার স্বরূপটি সম্যকভাবে বুঝতে গেলে শিল্প কর্মটির রূপ ও আঙ্গিকের রহস্যটি উন্মোচন করতে গেলে একজন সতর্ক, সচেতন, বোদ্ধা পাঠকের প্রয়োজন। সমালোচক জনরুচির স্রষ্টা, পাঠক সাধারণের বুদ্ধি-বৃত্তি ও শৃঙ্খলার পরিচালক। নিছক পাণ্ডিত্য প্রদর্শন বা মুরুব্বিয়ানা তাঁর কাজ নয়। একটি সাহিত্যকর্মের সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক পটভূমি লেখকের ব্যক্তিজীবন ও তার সঙ্গে সমকালীন সমাজজীবনের সম্পর্কের বহু কৌণিকতা, শিল্পরূপ আঙ্গিক, ভাষা ইত্যাদির বৈশিষ্ট্য, এই সব কিছু আন্তরিকভাবে পরীক্ষা করে দেখাতে হয় সমালোচককে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বা পর্যালোচনা থেকে তিনি নিজে যা উপলব্ধি করেন অন্যের মনে সঞ্চারিত করতে হয় তাকে। সার্থক পর্যালোচনাকে তাই সাহিত্য বলতে বাধা কোথায়?
এছাড়া সিডনি, ড্রাইডেন, পোপ, জনসন থেকে এলিয়ট এবং বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ থেকে বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, শঙ্খ ঘোষ, অলোক রঞ্জন দাশগুপ্ত প্রমুখ সমালোচক সত্তার দিকে তাকালে তাঁদের সমালোচনার আলোকে তাঁদের সমলোচনার স্থায়ী উজ্জ্বল আলোকস্তম্ভগুলি নজরে পড়ে। তবেই সাহিত্য সমালোচনা সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়ে ওঠে।
আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।