আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “সুচেতনা কবিতাটির নামকরণে কবির কোন্ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়— আলোচনা করো” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।
সুচেতনা কবিতাটির নামকরণে কবির কোন্ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়
‘কবিতা লেখা’, ‘কবিতা পড়া’ গ্রন্থে একালের কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন, “যে মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে চায় তারই সঙ্গে থাকে তার বাঁচবার আকাঙ্ক্ষা, তীব্রতা, বিক্ষোভ আর বিদ্রোহ। এই সামগ্রিকতার ছবি থেকে আমরা মনে রাখতে পারি যে, সমস্ত রকম খাঁচা ভেঙে কবি যখন তাঁর নিজস্ব সত্য অস্তিত্বের প্রকাশ করে যান তাঁর নিজেরই ভাষায়, যার মধ্যে ধরা পড়ে গোটা জগৎজীবন, তখন সেটা তৈরি করে তোলে আরেকটা, আরও একটা নতুন কোনো আদল।” আসলে এই বক্তব্যের মাধ্যমে কবি বলতে চেয়েছিলেন এভাবেই প্রত্যেক যুগের একটা নিজস্ব প্রবণতা গড়ে ওঠে। এই প্রবণতা আধুনিকতার চিরন্তন মাপকাঠি হতে পারে, আবার ঐতিহাসিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক সংখ্যাতত্ত্বের সচেতন কবির আত্মজিজ্ঞাসাও হতে পারে। রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলাদেশের কাব্যকলায় তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই আর্থ সামাজিক-রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব কখনও নীরবে কখনও সরবে কাজ করে গেছে। সংশয়, হতাশা, ক্লান্তি, অবক্ষয়, বিস্ময়ের নতুন জাগরণ, জীবনের আনন্দে বিশ্ববিধানের প্রতি আস্থাশীল মনোভাব এই সমস্তই কাজ করে গেছে চল্লিশের দশকের কবি শিল্পীদের চেতনায়। তাই সামাজিক দায়বদ্ধতার বেশ কিছু স্বতন্ত্র ধারায় চল্লিশের দশকে কবিতাগুলি চলতে শুরু করেছিল।
পৃথিবী জুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্কর অভিঘাতে চল্লিশের দশকের শুরু হয়েছিল। জার্মানিতে হিটলার তখন ক্ষমতার শীর্ষদেশে অধিষ্ঠিত হয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেছে। দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশেও বদলে গেছে কমিউনিষ্ট পার্টির যুদ্ধ সম্পর্কিত মতামত ও প্রতিক্রিয়া। এমনই একটি সময় ১৯৪২-এর ৮ই মার্চ ঢাকায় ফ্যাসিবিরোধী মিছিলে সোমেন চন্দের মৃত্যু ঘটলে শহর কলকাতাও উত্তাল হয়ে উঠল প্রতিবাদে-প্রতিরোধে। এরই সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সারা বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হল ভয়ঙ্কর মন্বন্তর। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হাত ধরে এল সাতচল্লিশের ডানাভাঙা স্বাধীনতা। পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু মানুষের মিছিলে ভেঙে পড়লো ভারতবর্ষের আর্থ-সামাজিক পটভূমি, শিক্ষা, খাদ্যব্যবস্থা। এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে আর পাঁচজন কবিদের মতো জীবনানন্দও লালন করেছিলেন তার কবিসত্তাকে। জাতীয় ও অন্তির্জাতিক ক্ষেত্রে পালাবদলের পর্যায়গুলি অর্থাৎ বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪২) ভারতছাড় আন্দোলন (১৯৪২) নৌবিদ্রোহ (১৯৪৬), দ্বিখণ্ডিত স্বাধীনতা (১৯৪৭), উদ্বাস্তু সমস্যা রোমান্টিক ও প্রকৃতি প্রেমিক জীবনানন্দকে অনেক ক্ষেত্রেই সমাজসচেতন ও বাস্তবমুখী করে তুলেছে। ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের আরও অনেক কবি তার মতো নারী নামাঙ্কিত বহু কবিতাকেই আপাত দৃষ্টিতে প্রেমচেতনার কবিতা বলে মনে হলেও কবিতাগুলির নিবিড় পাঠে বোঝা যায় কি তীব্র সমাজবিশ্লেষণ এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে রয়েছে।
‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের ‘সুচেতনা’ কবিতাটির সমাজমনস্কতার আঙ্গিকটি কতখানি যথার্থ হয়ে উঠেছে তার বিশ্লেষণেই এ কবিতার নামকরণের ব্যঞ্জনাটি বোঝা যাবে। কবিতাটির প্রথমেই সুচেতনাকে একটি দূরতর দ্বীপের সম্বোধনে রহস্যময় করে তুলেছেন কবি। এই দূরতর দ্বীপের অনুষঙ্গেই আমাদের জীবনের যাবতীয় স্বাভাবিকতা, মূল্যবোধগুলি যে অস্তমিত একথা বুঝিয়েছেন কবি। বিকেলের আকাশের কাছে নাক্ষত্রিক নির্জনতার মতোই সুচেতনা আজ নাগরিকমনস্ক মানুষের কাছে অনতিলভ্য। নাক্ষত্রিক নির্জনতার প্রয়োজন যে অপরিহার্য—একটি সুস্থ সুন্দর মনের মানুষ হয়ে ওঠার জন্য সেই সহজ ব্যাখ্যাটি কবি এখানে এনেছেন ‘দারুচিনি-বনানীর’ অনুষঙ্গে। দারুচিনি বাংলাদেশের একটি সুগন্ধী গাছ। মানুষকে তা নেশার আবিলতায় মগ্ন করে, জীবনের মানবিক প্রবৃত্তি, সুষ্ঠ মূল্যবোধের চেতনাগুলি হয়তো বা সঞ্চারিত হয়ে যেতে পারে দারুচিনি-বনানীর নাক্ষত্রিক নির্জনতায় এমনটাই ভেবেছিলেন কবি। আমাদের পরিচিত পৃথিবীর কর্মব্যস্ততার ইঁদুর-দৌড়ে, আপামর রণ-রক্ত সফলতার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে সু-চেতনার স্পর্শ পাওয়া সম্ভব নয়। একই সঙ্গে সুচেতনার আবাসস্থল যদি নাক্ষত্রিক নির্জনতায়পূর্ণ দারুচিনি বনানীর শান্তিময়ী দ্বীপে হয় তাহলে কবি অর্থাৎ নাগরিক মানুষ যেখানে আছেন সেটি গাঙ্গেয় বদ্বীপের অংশ কলকাতা শহর, এমনটা ভেবে নেওয়া যেতে পারে। যান্ত্রিক মায়ামুগ্ধতার বিলাসী আয়োজনে নিমগ্ন কলকাতা বা শহরকেন্দ্রিক মানুষগুলির লোভ লালসার কোনো শেষ নেই। ক্রমান্বয় বিযুক্তি এই মানুষকে ঠেলে দেয় অবক্ষয়ের চোরাস্রোত ঠেলে ঠেলে অন্ধকারে। মর্ত্য পৃথিবীর এই বিচারশীল মনোভাবের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে জীবনানন্দ দেখলেন, চতুর্দিকে ক্ষয়িত নিসর্গ, মৃত্যু-জরার রাজনীতি, অন্ধ নাগরিকতা, যুদ্ধ পরবর্তী কুটিলতম চক্রব্যুহ। তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশের সামনেই তখন স্বপ্নভঙ্গের কুললক্ষণ বেকারত্ব। অর্থনৈতিক হাহাকার, স্বার্থরক্ষায় অহেতুক রক্তপাত, অস্তিত্বহীন অস্তিত্বের দুর্বল আত্মপ্রক্রিয়া। চেতনাহীন হয়ে মানুষ সমাজ-সভ্যতার অগ্রগতিকে পক্ষপাতদুষ্ট করে চলেছে। ব্যক্তিমানুষ সত্তার অন্তর্লীন আঘাতে আহত হতে হতে নিরন্তর দেখে চলেছে,
“..পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো
ভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু
দেখেছি আমারি হাতে হয়তো নিহত
ভাই বোন বন্ধু পরিজন পড়ে আছে ;
পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;”
পৃথিবীর শাশ্বত শান্তি যেখানে, সেই দারুচিনি-বনানীর ফাঁকে ফাঁকে নির্জন দ্বীপটিতে পৌঁছাতে হলে মানব অন্বেষার প্রত্যয়ে অভিহিত হতে হয়, জানতে হয় মানবের মঙ্গল কীভাবে হতে পারে। কালের সর্বনাশা মারণযজ্ঞে উদ্যত মানুষের হাতে নিহত হয়ে চলেছে তারই আত্মীয়। চিত্তের শুদ্ধির ক্রমস্ফূরণ নয়, তা থেকে বিচ্যুত মানুষ সত্তার গভীরতম অস্তিত্বের স্থির বিশ্বাসে পৌঁছাতে পারছে না। তাই সুচেতনা দূরতর দ্বীপ হয়ে মানবের অনায়ত্ত থেকে যাচ্ছে। সময়ের করাল গ্রাসে ব্যক্তি মনের সহজ আত্মপ্রক্ষেপণকে জীবনানন্দ স্বীকার করেছেন। ব্যক্তিমনের ট্র্যাজিক সত্তায় একীভূত হয়ে কবি বুঝতে পেরেছেন, অন্তর্গত ‘আমি’র ঘাতক সত্তাটিকে। যুগের অপব্যয়ী অক্লান্ত আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে যেতে দেখছেন, পায়ের কাছে পড়ে আছে ভাই-বোন-বন্ধু-পরিজনের মৃতদেহ। এই ভাই আসলে সত্তার অস্তিত্ত্বের বিশ্বাস, বোন অস্তিত্বের শ্রী-সৌন্দর্য, বন্ধু অস্তিত্বের সংযোগসাধনের সহজ পথ, আর পরিজন একটি সফল সুন্দর সুগঠিত জীবনের পরম্পরা। মানবের অস্তিত্বের প্রতিটি ধাপই সেদিন বিনষ্ট হয়েছিল। কারণ প্রতিটি স্তরের মূল ভিত্তি ছুঁয়ে আছে গভীর ও ব্যাপ্ত মানবিক বোধের অভিব্যক্তি, যা সুন্দর যা সুষ্ঠ চেতনা ছাড়া কখনও সম্ভব নয়। কিন্তু সু-চেতনা তো দূরতর দ্বীপের মতো মানবের অস্তিত্বের কাছে অনতিলভ্য। বিশ্বাস-সততা-প্রত্যাশা মমতা দীপ্ত যে জীবন, সে জীবন তো সংকলিত জিনিসের ভিড়ে, বিলাসমদিরতায়, আড়ম্বরে, আতিশয্যে অবলুপ্ত। হৃদয়ের প্রশান্তি এই সঞ্চরণশীল জীবন মানুষকে দিতে পারেনি কখনও, চেতনার উত্তরণে পৌঁছানোও তাই সম্ভব হয়নি মানুষের।
নিজেকে আত্মবিলোপকারীরূপে দেখতে দেখতে কবির সুষ্ঠু চেতনা নির্ভর জীবনকেন্দ্রটিই ভেঙে গেছে। কবি দেখেছেন এই যুগ আধুনিক সভ্যতার রণ-রক্ত-সফলতার যুগ। আর সেই বিরূপ বিশ্বে সবাই কেন্দ্রচ্যুত। এক ধরনের চলমান কুশলতা মানবের অপরিমেয় জীবনে প্রধান হয়ে গেছে। সে জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে পূর্ণ হতে পারে কিন্তু শান্তির খড়কুটোয় জীবনের নীড়বাঁধা সেখানে অসম্ভব। এর কারণ হিসাবে কবি বলেছেন, চেতনার ক্রমমুক্তির পথ মানুষ আজও আবিষ্কার করতে পারেনি। চেতনার স্থির আলোক সম্পাত মানবের জীবনে আজও আসেনি।
কবিতাটিতে জীবনানন্দ ফসল নিয়ে উপনীত জাহাজের চিত্রকল্প এনেছেন। সেই ফসল আসলে অগনন মানুষের মৃতদেহ। মানবসভ্যতার বন্দরে অগণিত মানুষের মৃতদেহ আসতে দেখেছেন কবি। সেগুলি আসলে ফসলের ভার নিয়ে অতিক্রান্ত মানবতার চক্রান্তের বিষময় ফল। যে চক্রান্ত মানুষের সঙ্গে মানুষের বিভেদ তৈরি করে, যুদ্ধবাজ শক্তিকে উৎসাহিত করে। মানুষের সুকোমল বৃত্তিগুলোকে ধ্বংস করে সেখানে হিংস্র পশুত্বের শক্তিকে জাগিয়ে তোলে। মানবতার এই অবক্ষয়ী ও অক্লান্ত প্রত্যক্ষ বাস্তবতাই কবিকে মনীষীদের স্মরণ নিতে বাধ্য করে। কবিতার বুনোটে চলে আসে বুদ্ধ, কনফুশিয়াসের কথা। ফসলের প্রসঙ্গ এবং তার সঙ্গে অন্বিত করে দেওয়া হয়েছে ‘স্বর্ণের বিস্ময়’কে। এই স্বর্ণ আসলে একের পর এক সভ্যতা অগ্রসরমান পথিক সত্তার মৃতদেহ দিয়ে তৈরি। অন্য একটি কবিতা ‘মানুষের মৃত্যু হলে’তেও জাহাজ ভর্তি ফসল প্রসঙ্গটি এনেছেন কবি। তবে ফসল সেখানে গোলাভর্তি শস্যের প্রতীকে নিবদ্ধ। এই ফসলের গোলাটিও যেন নির্মিত হয়েছে, একের পর এক মানুষের মৃতদেহকে কেন্দ্র করে। কবি বলতে চেয়েছিলেন, মানুষই সমাজের জন্ম দিচ্ছে আবার মানুষ নির্মিত এই সমাজ আবদ্ধ হয়ে পড়ে মানবের ক্ষয়েরই বিলয়ে।
নাগরিক মানুষকে সচেতন করবার জন্য কবি খুব প্রসিদ্ধ একটি বাকবিন্যাস ব্যক্ত করেছেন কবিতাটিতে।
“কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে”
আজকের সমাজসভ্যতায় বাক্যবন্ধটি আশাবাদের প্রতীকী ব্যঞ্জনায় জারিত হলেও, কবি কিন্তু নাগরিক মানুষের উদ্দেশ্যে একটি প্রবল ব্যঙ্গই সঞ্চারিত করতে চেয়েছিলেন এই উক্তির মাধ্যমে। প্রবল অবক্ষয়ের বলয়ে আবর্তিত হতে হতে কলকাতা নগরী একদিন ঝকঝকে আধুনিক হয়ে উঠবে কিন্তু হৃদয় শোধনের কোনো মানবিক চিত্তবৃত্তিতে সত্যিকারের সৌন্দর্যপ্রতিমা সে কখনও হতে পারবে না। আসলে নাগরিক সভ্যতায় সত্যিকারের সুধী মানুষদের মৃত্যু হয়ে গেছে অনেকদিনই। এখন এখানে শুধু নিয়মতান্ত্রিক চলমানতার শিকারী মানুষদের ভিড়। যাদের সুষ্ঠু, সুবলয়িত চিন্তা চেতনায় নতুন সভ্যতার সৃষ্টি হয়, অতীতে সমৃদ্ধি আরও প্রসারিত রূপ পরিগ্রহ করে। সেইসব জ্যোতিষ্কমানবের কোনো স্থান আজকের পৃথিবীতে নেই। অথচ শিকারী এই মানুষগুলির হৃদয়ে অনন্ত সাধ রয়েছে কলকাতাকে রূপসী নগরীর মতো করে দেখার। এই সাধ আসলে মানুষকে তথাকথিতভাবে সমাজ সচেতন দেখার অভিপ্রায়জনিত—এমনটাও হতে পারে।
আসলে জীবনানন্দ সুচেতনা কবিতায় নিজের তন্ময় দুটি নাবিক চোখকে অক্লান্ত অন্বেষায় ব্যবহার করেছিলেন। নাবিকের অনুষঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের প্রাচীন ইতিবৃত্ত। কিন্তু বর্তমান সভ্যতার সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস যখন উষ্ম রক্তে ভিজে গিয়ে পৃথিবীর গভীরতম অসুখে পরিণত হয়, তখন সেই জলকে জীবনস্রোতের শুদ্ধতায় অবিনাশী করে তোলবার জন্য একমাত্র যোগ্যতম ব্যক্তি নাবিকের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাঁর নিজস্ব মননলোকের চিন্তায় নাবিক সত্তাকে ধারণ করে প্রায় ততদূর ভালো মানবসমাজ’ তৈরি করার কাজে অগ্রসর হতে চেয়েছিলেন। অন্ধকার বা নিরাশার সংক্রমণে কবির নিজস্ব চৈতন্য, জীবন স্বরূপের বিলয় বা কালচক্রের অসারতাকেই কখনও একমাত্র ভাবেনি, বাস্তব বিস্মৃতিকে রক্তমাংসের চিরকালীন সত্তার সঙ্গে একীভূত করে দেখেছেন। ‘এ বাতাস কি পরম সূর্যকরোজ্জ্বল’-এর মতো পংক্তি পৃথিবীর গভীর অসুখের মাঝখান থেকেই তুলে এনেছিলেন তিনি।
‘সুচেতনা’ কবি জীবনানন্দের কাছে সৌন্দর্য ও সুষ্ঠু জীবন সম্পৃক্ত ইতিবৃত্তের চৈতন্যরূপিণী নারী। বিকেলের নক্ষত্রের কাছে দূরতর দ্বীপের অধিবাসী হলেও তার আলোকোজ্জ্বল বিভায় উদ্ভাসিত হয়েই এই অর্ধগৃধ্ন অনিকেত সভ্যতার বিনাশ সম্ভব হবে। মূলত মানবের অন্তর্লীন সত্তায় যে চেতনার আত্মসমর্পণে নব নব সম্ভাবনার জাগরণ ঘটবে, যুগের কালিমাকে নির্বাসন দিয়ে যে নারী আগামী যুগের দিব্যবিভায় মণ্ডিত হয়ে মুক্তিকামী পথিকের চোখে দারুচিনি দ্বীপের স্নিগ্ধ আশ্রয় রচনা করে দিতে পারবে সেই সুচেতনা। সমসাময়িক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে অন্বেষণক্লান্ত পথিক আত্মাকে সৌরকরোজ্জ্বল নতুন দিনের ক্রমমুক্তি যে দিতে পারবে সেই সু-চেতনা। গভীরতর চেতনার আলোয় মানবের অন্তর্লীন সত্তায় সৌরপ্রেরণা হয়ে যে চিন্ময়ী সত্তা বিরাজমান অনাদিকালের মানবসত্যে কবিকল্পনার সেই আশ্রয়দাত্রী সুচেতনা।
আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।