আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “সমালোচনা সাহিত্য কি সাহিত্য? বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন শ্রেণির সমালোচনার নাম উল্লেখ করে মার্কসীয় সমালোচনার পদ্ধতির পরিচয় দাও” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।
সমালোচনা সাহিত্য কি সাহিত্য? বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন শ্রেণির সমালোচনার নাম উল্লেখ করে মার্কসীয় সমালোচনার পদ্ধতির পরিচয় দাও
‘সমালোচনা’ কি সাহিত্যের অন্যান্য শ্রেণির মতো সৃজনশীল, অর্থাৎ সমালোচনা কি প্রকৃতই সাহিত্য পদবাচ্য? অনেকেই সমালোচনাকে সাহিত্যকর্ম বলে স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন এবং সমালোচকও স্রষ্টার সম্মান পান না। এ কথা ঠিক যে কাব্য-কবিতা গল্প-উপন্যাস ইত্যাদির যে মৌলিকত্ব তা সমালোচনা সাহিত্য পাওয়া যায় না। তবে একজন কবি বা লেখক যেমন তাঁর কল্পনার সৌন্দর্যে, তাঁর আবেগের উষ্ণতায় জগৎ ও জীবনের সত্যকে রূপদান করেন, একজন সমালোচকও তেমন একটি সাহিত্যকর্মের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে পাঠক সাধারণের কাছে উপস্থাপিত করেন, পাঠকবর্গের মনে বিস্ময় সৃষ্টি করেন, তাদের মনে আনন্দের জোগান দেন। সমলোচনা নিশ্চয়ই মূল সাহিত্যের ওপর নির্ভরশীল ; কিন্তু তিনিই তো আদর্শ সমালোচক যিনি লেখকের মতোই আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে নতুনতর কিছু সৃষ্টি করেন, যা মূল রচনাকে বুঝতে সাহায্য করা ছাড়াও পাঠককে উৎসাহিত করেন রসাস্বাদনে প্রাণিত করে। এই সমালোচনা বা মূল্যায়ন নব সৃষ্টির পর্যায়ে পড়ে মিলটন মারির মন্তব্য থেকে ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে–“If it gives this delight, criticism is creative, for it enables the reader to discover beauties and significances which he had not seen, or to see those which he had himself glimpsed in a new and revealing light.”
একটি সাহিত্যকর্মের সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক পটভূমি লেখকের ব্যক্তি জীবন ও তার সঙ্গে সমকালীন সমাজ জীবনের সম্পর্কের বহু কৌণিকতা, শিল্পরূপ আঙ্গিক, ভাষা ইত্যাদির বৈশিষ্ট্য, সামগ্রিকভাবে তার বিষয়গত তাৎপর্য তথা নান্দনিক সার্থকতা এ সব কিছুই আন্তরিকভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হয় সমালোচককে। তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বা পর্যালোচনা থেকে তিনি যা উপলব্ধি করেন তাকে অন্যের মনে সঞ্চারিত করতে হয় তাঁকে। সার্থক পর্যালোচনাকে তাই সাহিত্য বলতে বাধা কোথায় ? এছাড়া সিডনি, ড্রাইডেন, পোপ, জনসন, থেকে এলিয়ট এবং বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ থেকে বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, শঙ্খ ঘোষ, অলোক রঞ্জন দাশগুপ্ত প্রমুখের সমালোচক সত্তার দিকে তাকালে তাঁদের সমালোচনার আলোকে সৃজনী কবি লেখকদের সাহিত্য সমালোচনার স্থায়ী উজ্জ্বল আলোক স্তম্ভগুলি নজরে পড়লে বোঝা যায়।
বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন শ্রেণির সমালোচনার নাম নিম্নে আলোচনা করা হল—
- i) সনাতন বিধি-সম্মত সমালোচনা।
- ii) বিশ্লেষণাত্মক/আলংকারিক পদ্ধতি।
- iii) ঐতিহাসিক পদ্ধতি।
- iv) লেখক জীবনী ভিত্তিক সমালোচনা।
- v) তুলনামূলক পদ্ধতি।
- vi) মনস্তত্ত্বমূলক পদ্ধতি।
- vii) অনুকরণবাদী পদ্ধতি।
- viii) পরিসংখ্যান পদ্ধতি।
- ix) রূপগত পদ্ধতি।
- x) সংরূপ বিচার পদ্ধতি।
- xi) আদি রূপবাদী সমালোচনা।
- xii) শৈলী বিচার মূলক পদ্ধতি।
- xiii) আঙ্গিক/অবয়ববাদী পদ্ধতি।
- xiv) মার্কসীয় পদ্ধতি।
- xv) প্রকাশবাদী পদ্ধতি।
- xvi) আস্বাদবাদী পদ্ধতি।
- xvii) বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা।
- xviii) ব্যক্তিনিষ্ঠ সমালোচনা।
- xix) তত্ত্ব সন্ধানী পদ্ধতি।
- xx) অনির্মাণবাদী সমালোচনা।
মার্কসীয় সমালোচনা : মার্কসীয় সমালোচনা কেবলমাত্র একটা সাহিত্যর সমাজতত্ত্ব নয়, কী করে উপন্যাস প্রকাশিত হয়, এবং সেগুলিতে শ্রমিক শ্রেণির উল্লেখ আছে কিনা তাই আলোচনা করে। সাহিত্যকর্মকে আরও পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যাখ্যা করাই তার লক্ষ্য এবং তার জন্য আঙ্গিক, শৈলী এবং অর্থের প্রতি আরও সচেতন মনোনিবেশ দাবি করে।
পাশ্চাত্যের লুকাচ, ব্যালফ সা ক্রু, আর্নল ফিসার, রেমন্ড উইলিয়ামস, ব্রেটোল্ড ব্রেসট, পাবলো নেরুদা এবং বাংলা সাহিত্যে ধূর্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, নীরেন্দ্রনাথ দত্ত, গোপাল হালদার প্রমুখ এই ধারার উল্লেখযোগ্য সমালোচক।
আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।