সাধু ও চলিত ভাষার মধ্যে পার্থক্য: আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আপনারা নিশ্চয় সাধু ও চলিত ভাষার মধ্যে পার্থক্য খোজার চেষ্টা করছেন। তাহলে আপনার একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। এখানে আপনারা পেয়ে যাবেন সঠিক সাধু ও চলিত ভাষার মধ্যে পার্থক্য। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
সাধু ও চলিত ভাষার মধ্যে পার্থক্য কি?
| সাধু ভাষা | চলিত ভাষা |
|---|---|
| যে ভাষায় সাধারণত সাহিত্য রচিত হয় এবং যা মার্জিত ও সর্বজনস্বীকৃত, তাই সাধু ভাষা। | শিক্ষিত লোক সাধারণ কথাবার্তায় যে ভাষা ব্যবহার করে থাকে, তা – ই চলিত ভাষা। |
| সাধু ভাষা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত নিয়মের অনুসারী। | চলিত ভাষার সুনির্ধারিত ব্যাকরণ আজও তৈরি হয়নি। |
| সাধু ভাষা গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের অধিকারী। | চলিত ভাষা সহজ ও স্বাভাবিক। এ ভাষা মানুষের মনোভাব প্রকাশে উপযোগী। |
| সাধু ভাষার কাঠামো সাধারণত অপরিবর্তনীয়। | চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল। |
| সাধু ভাষা কৃত্রিম। | চলিত ভাষা কৃত্রিমতা – বর্জিত। |
| সাধু ভাষা নাটকের সংলাপ, আলাপ – আলোচনা ও বক্তৃতায় তেমন উপযোগী নয়। | চলিত ভাষা নাটকের সংলাপ, আলাপ – আলোচনা ও বক্তৃতায় বেশ উপযোগী। |
| সাধু ভাষায় ক্রিয়া ও সর্বনাম পদগুলো সাধারণত দীর্ঘ হয়ে থাকে। যেমন—খাইতেছি, তাহারা ইত্যাদি। | চলিত ভাষায় ক্রিয়া এবং সর্বনাম পদগুলো সংক্ষিপ্ত। যেমন—খাচ্ছি, তারা ইত্যাদি। |
| সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ বেশি। | চলিত ভাষায় অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রয়োগ বেশি। |
| এ ভাষা প্রাচীন। | এটি আধুনিক। |
| সাধু ভাষায় অপনিহিত ও অভিশ্রুতির ব্যবহার নেই। | চলিত ভাষায় এদের প্রয়োগ লক্ষণীয়। |
সাধু ভাষা
সাধু ভাষা হলো বাংলা লেখ্য গদ্যের অপেক্ষাকৃত প্রাচীন রূপ। এর নবীন ও বর্তমানে বহুল প্রচলিত রূপটি হলো চলিত। সাধু ভাষা অনেকটা ধ্রুপদী বৈশিষ্ট্যের এবং চলিত ভাষা অপেক্ষা স্বল্প প্রাঞ্জল। “সাধু” শব্দের এক অর্থ শিষ্ট, মার্জিত বা ভদ্ররীতি সঙ্গত। রাজা রামমোহন রায় তাঁর “বেদান্ত গ্রন্থ” রচনাটিতে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। সাধু ভাষার সঙ্গে প্রমিত বা চলিত ভাষার মিশ্রণকে দূষণীয় গণ্য করা হয়। লেখার সময় যেকোনো একটি রীতিকে গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। নচেৎ একে “গুরুচণ্ডালী” দোষে দুষ্ট আখ্যা দেওয়া হয়। তবে কবিতার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়। অথাৎ বলা যায় যে, বাংলা ভাষার সংস্কৃত শব্দ-সম্পন্ন ক্রিয়া ও সর্বনাম পদের পূর্ণরূপ ও ব্যকরণসিদ্ধ উপাদান ব্যবহার করিয়া ইংরেজি গদ্য-সাহিত্যের পদবিন্যাসের প্রণালি অনুসরণে পরিকল্পিত যে সর্বজনীন গদ্যরীতি বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তিত হয়, তাহাকে বাংলা সাধু ভাষা বলে ।
চলিত ভাষা
তদ্ভব শব্দ, ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষিপ্ত রূপ এবং লেখকের মনোভাব অনুযায়ী পদবিন্যাস প্রণালির ব্যবহারসহ যে স্বচ্ছন্দ, চটুল ও সর্বজনীন সাহিত্যিক গদ্যরীতি মুখের ভাষার আদলে গড়ে উঠেছে, তার নাম চলিত ভাষা। বাংলাদেশের উত্তরাংশসহ কলকাতা ও ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের শিক্ষিত জনগণের মুখের ভাষার আদলে যে শক্তিশালী সাহিত্যিক গদ্য প্রবর্তিত হয়, তাই চলিত ভাষা বা চলিত গদ্য বলে খ্যাত। প্রমথ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ চলিত গদ্যের সার্থক রূপকার।
আজকে আমরা দেখলাম কিছু পার্থক্য সাধু ও চলিত ভাষার মধ্যে। এইসব পার্থক্য আপনারা যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। এই সব সাধু ও চলিত ভাষার মধ্যে পার্থক্য, বই থেকে সংগ্রহ করা। আশা করি এই পোস্টটি থেকে অনেক উপকারিত হয়েছেন। অনুগ্রহ করে আমাদের পোস্টগুলো আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আসসালামু আলাইকুম:)