৩টি অহংকার নিয়ে গল্প যা আপনার জীবন পাল্টে দেবে: The story of arrogance

আমারা আমাদের এই জীবনে কতই না অহংকার করে থাকি। অহংকার না করতে চাইলেও অনেক সময় আমরা অহংকার করে ফেলি। অহংকার পতনের মূল। আজকে আপনাদের শোনাবো অহংকার নিয়ে গল্প কিছু আমাদের সবার উচিত অহংকার থেকে দূরে থাকা। অহংকার বলতে বোঝায় অতিমাত্রায় গর্ব করা বা নিজেকে চরমভাবে অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদান করার আচরণ। আরও সুস্পষ্টভাবে, এটি হল বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীনতা আর নিজের প্রতিদ্ধন্দিতা বা সক্ষমতাকে অতিমূল্যায়ন করা। কারও প্রতি ভদ্রতা ও ভালোবাসার ওভাবের ফলেও অহংকার তৈরি হয়ে থাকে।

৩টি অহংকার নিয়ে গল্প যা আপনার জীবন পাল্টে দেবে
অহংকার নিয়ে গল্প

১ম গল্প অহংকার নিয়ে:

পিঁপড়া ও অহংকারী রাজা: এক দেশে ছিলেন এক অহংকারী রাজা। প্রতি সপ্তাহে তিনি বনে যেতেন পশু-পাখি শিকার করতে। একদিন একটা পিঁপড়া এসে বলল, রাজামশাই, আপনি এ বনে শিকার করতে এসে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করছেন। আমরা কী অপরাধ করেছি? রাজা নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন, কে? কে তুই? পিঁপড়া: রাজামশাই, আমি পিঁপড়া কথা বলছি। রাজা: ও, তুই পিঁপড়া বলছিস? তা কী ক্ষতি করছি আমি? পিঁপড়া: আপনি যখন এ বনে শিকার করতে আসেন, তখন আপনার ও আপনার সঙ্গীদের পায়ের নিচে পড়ে অসংখ্য পিঁপড়া মারা পড়ে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বাঁচব কীভাবে, রাজামশাই? রাজা: আমি হলাম রাজা। শিকার করা আমার শখ। তোর মতো ছোট পিঁপড়ার জন্য কি আমি শিকার করা বন্ধ করে দেব? পিঁপড়া: আমরা ছোট্ট বলে এত অবহেলা করবেন না, রাজামশাই।

আমরা তো আপনার কোনো উপকারেও আসতে পারি। একথা শুনে রাজা হো-হো করে হাসতে শুরু করলেন। হাসতে হাসতেই বললেন, তোরা করবি আমার উপকার? হা-হা-হা। পিঁপড়া: তাহলে আপনার এত বড় রাজ্যে কি আমাদের একটুও দাম নেই? রাজা: তোদের আবার কীসের দাম! তোরা এত ছোট যে, আমার কোনো উপকার কিংবা ক্ষতি কিছুই করতে পারিস না। তোরা পায়ের নিচে পড়ে মরলে আমাদের কিছুই যায়-আসে না। পিঁপড়া: উপকার না করতে পারি, তবে ক্ষতি কিন্তু ঠিকই করতে পারি। এ কথা বলেই পিঁপড়াটি পটাপট রাজার পায়ে কুট্টুস করে বসিয়ে দিল কামড়। রাজা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে বললেন, রাজা: এত বড় সাহস তোর। আমার পায়ে কামড় বসিয়ে দিলি? আমি কোনো শত্রুকে বাঁচিয়ে রাখি না। এই নে তোর পুরস্কার।” এই বলে রাজা পা দিয়ে পিষে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেললেন পিঁপড়াটিকে।

ওই পিঁপড়ার মৃত্যুতে অন্য পিঁপড়ারা খুব কষ্ট পেল। তারা রাজাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে মিটিং ডাকল। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হলো- রাজাকে শক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে যে, পিঁপড়া ছোট হলেও তারা হেলাফেলা করার মতো জীব নয়। যেমন কথা তেমন কাজ। দল বেঁধে পিঁপড়ারা চলল রাজপ্রাসাদের দিকে। গভীর রাত। রাজা-রানি ঘুমিয়ে আছেন।

রাজা ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে হাতে- পায়ে চুলকাতে লাগলেন। অসহ্য হয়ে বাতি জ্বাললেন। দেখেন, পিঁপড়ারা দলবেধে তাঁকেই আক্রমণ করছে। সহ্য না করতে পেরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলেন রাজা।(অহংকার নিয়ে গল্প) রানি লাফিয়ে উঠে বললেন, কী হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন, রাজামশাই? রাজা আঙুলে পিঁপড়ার দল দেখিয়ে বললেন, দেখ, দেখ আমার হাত-পায়ের অবস্থা! ছোট ছোট পিঁপড়ারা কত ভয়ংকরভাবে কামড়াচ্ছে। উফ! কী যন্ত্রণারে বাবা! আমাকে বাঁচাও।

রানি দুহাতে সমানে পিঁপড়া মারতে লাগলেন। একটা মারেন তো দশটা এসে কুট্টুস কুট্টুস করে কামড়ায়। রাজার সঙ্গে সঙ্গে রানিও লাফালাফি শুরু করে দিলেন। তারপর ডাকতে লাগলেন চাকর-বাকরদের। দৌড়ে এল সবাই। এসে দেখে, রাজা লাফাচ্ছেন আর সমস্ত শরীর চুলকাচ্ছেন। রানি ভয়ে পালঙ্কে পা তুলে বসে আছেন। মন্ত্রী, পাইক-পেয়াদা সবাই ছুটে এল। রাজা তাদেরকে দেখে বললেন- আমার সমস্ত শরীরে পিঁপড়ারা সমানে কামড়াচ্ছে। কুট-কুট-কুট। জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে শরীর। উফ্, আহ্।” তারা রাজার পিঠ-পেট চুলকে দিতে লাগলেন। কিন্তু রাজা আর থামেন না। লাফ দিতে দিতে নিজের জামা খুলে ফেললেন। একটু পর পর বলতে লাগলেন, “আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সামান্য পিঁপড়ার কামড়ে এত জ্বালা, এত যন্ত্রণা! ওরে,তোরা আমাকে বাঁচা। আমাকে খেয়ে ফেলল পিঁপড়াগুলো।”(অহংকার পতনের মূল গল্প)

এভাবে চিৎকার-চেঁচামেচি করে রাজার রাত কাটল। পরের দিন রাজদরবারে বৈঠকে বসলেন রাজা। হঠাৎ করে তিনি লাফিয়ে উঠলেন। এরপর মুখ বাঁকিয়ে, পিঠ বাঁকিয়ে, এঁকেবেঁকে চুলকাতে লাগলেন রাজা। কোনো আলাপই করতে পারছেন না। পিঁপড়ারা রাজার পকেটে, হাত ও পায়ে, কানের নিচে, জুতোর ভেতরে ছোটাছুটি করে এমনভাবে কামড়াতে লাগল যে, আর বসে থাকার উপায় নেই। চুলকাতে চুলকাতে রাজা দৌড়ে গিয়ে লাফ দিলেন বাড়ির সামনের পুকুরে। এরপর একই ধরনের ঘটনা ঘটতে লাগল বারবার। পিঁপড়ারা কেবল রাজাকেই কামড়ায়। আর কাউকে না।

See More: সঠিক জানাযার নামাজের নিয়ম বা বিধান

রাজার এ বিপদ দেখে ডাকা হলো কবিরাজকে। কবিরাজ পরামর্শ দিল, “রাজার পোশাক পুড়িয়ে ফেলতে হবে।” কবিরাজের হুকুমে পুড়িয়ে ফেলা হল পোশাক। নতুন পোশাক এল। কিন্তু এ পোশাক পরেও শান্তি নেই। অসংখ্য পিঁপড়া বসে আছে সব পোশাকের পরতে পরতে। পোশাক পরলেই কামড়ায় কুটুরকুটুর করে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। অবশেষে মন্ত্রীদের পরামর্শে রাজপ্রাসাদে আগুন লাগিয়ে দেয়া হল। হাফ ছেড়ে বাঁচলেন রাজা। আর ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন,পিঁপড়া মশাইরা এবার কামড়াবে কীভাবে? সব তো পুড়িয়ে ছাই করে দিলাম। রাজার সঙ্গে মশকরা। পিঁপড়ারা আবার আলোচনায় বসল।

রাজপ্রাসাদের আগুন দেয়ার সময় কয়েক হাজার পিঁপড়া মারা যাওয়ায় তারা দুঃখ প্রকাশ করল। একই সঙ্গে তারা সিদ্ধান্ত নিল রাজার নতুন বাড়িতে গিয়ে আবার তাকে আঘাত করবে। পিঁপড়ারা সব মরে গেছে মনে করে রাজা তার নতুন প্রাসাদে নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে আছেন। এমন সময় শুরু হল পিঁপড়াদের হামলা। রাজা পিঁপড়ার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে কাপড়-জুতো খুলে পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে লাগলেন। রাজ্যে প্রচার হয়ে গেল, “রাজা পাগল হয়ে গেছেন। উদোম হয়ে পথেঘাটে ছোটাছুটি করছেন। এ পাগলরাজা দিয়ে রাজ্য চলবে না।” রাজা বললেন, সামান্য পিঁপড়ার জন্য আমার এত বড় বদনাম?

রাজাগিরি চলে যাবে আমার? আমি পাগল? এই কে আছিস- বনে আগুন ধরিয়ে দে। পিঁপড়ার বংশ ধ্বংস করে দেব আজ। রাজারা হুকুমে কর্মচারিরা বনে আগুন ধরিয়ে দিল। মুহূর্তের পুরো বন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। কিছু পশুপাখি, পিঁপড়া মারা গেল। বাকিরা বন থেকে পালিয়ে চলে লোকালয়ে। হিংস্র পশুপাখিদের দেখে রাজ্যের মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি করতে লাগল।

রাজার পাগলামি দেখে সবাই বলল, “এবার নিশ্চিত, রাজা পাগল হয়ে গেছেন। রাজ্য বাঁচাতে হলে পাগলা-রাজাকে নির্বাসনে পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।” এরপর রাজাকে এক বনে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হলো। রাজ্য আর ক্ষমতা হারিয়ে রাজা মনের দুঃখে বনে বনে ঘোরেন আর কাঁদেন। পেটে খাবার নেই, মনটাও ভালো না। একটা গাছের নিচে বসে আছেন তিনি। এমন সময় দেখতে পেলেন, তার সামনে দিয়ে পিঁপড়ারা লাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছে।

ওদের মুখে খাবার। রাজা পিঁপড়া দেখে ভয়ে পা তুলে বসলেন। বললেন, “হে পিঁপড়ার দল, তোরা আমাকে রাজা থেকে পথের ভিখারি করেছিস। আর আবার এখানে কেন এসেছিস? পিঁপড়ার রানি মুখ তুলে বলল, “আমরা তো বনেই থাকি। আপনি কি সেই রাজা, যে পিঁপড়াকে ছোট বলে অবহেলা করত, আর বিনা কারণে পিঁপড়াদের পায়ে পিষে মেরে আনন্দ করত? তারপর বনে আগুন ধরিয়ে সবাইকে মারতে চেয়েছিল?” এ কথা শুনে রাজা চুপ করে রইলেন।

এ সময় পিপড়েদের রানি বলল: “আমরা তো আপনার অনেক বড় ক্ষতি করেছি। এবার করব উপকার।” অবাক হয়ে রাজা বললেন, তোমরা আমার কী উপকার করবে, পিঁপড়া ভাই? পিঁপড়ারা গাছ থেকে টাটকা ফল এনে দিল রাজার হাতে। ক্ষুধার্ত রাজা ফল খেলেন। আর লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বললেন, “দুনিয়াতে কেউই অপ্রয়োজনে আসেনি। ছোট বলেই কেউ খাটো নয়।” রাজা তার ভুল বুঝতে পেরে আফসোস করতে লাগলেন। বন্ধুরা,এ গল্প থেকে তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ যে, আল্লাহর সৃষ্ট কোনো জীবই ছোট কিংবা শক্তিহীন নয়।তাই কাউকেই অবহেলা করা উচিত হবে না।

source: https://www.facebook.com/688551101219615/posts/1052163418191713/

অহংকার নিয়ে ২ম গল্প:

আমি জার্মানীতে আছি অনেক দিন। যে কোম্পানিতে চাকরি করি, সেখানেই ৩০ বছর হয়ে গেল । কোনো একটি অকেশনে আমাদের কোম্পানির সব কর্মচারী একসাথে বসে খাচ্ছিলাম। কথায় কথায় প্রসঙ্গ এল, কে বছরে কত দিন অসুস্থ থাকে । কেউ বললেন এক সপ্তাহ, কেউ বললেন শুধু ক্রিসমাসের সময়। জার্মানিতে ক্রিসমাসে কয়েক দিন অফিশিয়ালি বন্ধ। তার সাথে যদি কয়েক দিন সিক রিপোর্ট নেয়া যায়, তাহলে তো পোয়াবারো। অনেকে তা-ই করেন। আমি হঠাৎ বোকার মতো বলে ফেললাম, ‘আমি কোনো দিনই অসুস্থ হইনি।’

অনেকটা বজ্রপাতের মতো। কেউ বিশ্বাস করলেন না আমার কথা। কোম্পানির মালিক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি ৩০ বছরে কোনো দিন অসুস্থ হননি, এটা অবিশ্বাস্য।’ আমি বললাম, ‘এটা সত্যি।’ কয়েকজন কলিগ বাজি ধরা শুরু করলেন। এটা কোনো দিনই সম্ভব নয়। আমাদের অ্যাকাউন্টস বিভাগের কম্পিউটারে খোঁজা হলো। উত্তর বের হলো, সত্যিই তাই। আমি গর্ব করে সবার দিকে তাকালাম। এটাই আমার কাল হয়েছিল। এর দু’দিন পর হঠাৎ করে আমার পায়ে ব্যথা শুরু হলো। একটানা আটটি মাস আমি অসম্ভব কষ্ট পেয়েছি। পাঠক, এবার বুঝুন, অহংকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন না।

বাইবেলে যে সাতটি চরম পাপ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ, তার প্রথমটি হলো অহংকার । (অহংকার নিয়ে গল্প) অহংকার এমন একটি জিনিস, শুধু এই কারণে রোমান সভ্যতা গুঁড়িয়ে গেছে । জার্মানরা দু’দুবার মহাযুদ্ধে হেরেছে। হিটলারকে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল। পাঠক, আমি আপনাকে হাজার হাজার ঘটনার উল্লেখ করতে পারি, অহংকার মানুষকে কোন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে। যদি আপনার মনে কোনো কারণে অহংকার হয়, সাথে সাথে বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করবেন। যাঁরা বিনয়ী, সবাই তাঁদের ভালোবাসে। নাক উঁচু মানুষদের কেউ পছন্দ করে না।চলুন, আমরা একটি পরীক্ষা করি। প্রতিটি প্রশ্নের পরে আপনি হ্যাঁ বা না বলে উত্তর দেবেন।

১. আপনি কি নিজেকে অন্যের চেয়ে বেশি বড় মনে করেন? হ্যাঁ বা না

২. নিজেকে নত হতে আপনার কি অসুবিধা হয়? হ্যাঁ বা না

৩. আপনি কি খুব তাড়াতাড়ি রেগে যান? হ্যাঁ বা না

৪. আপনি কি অন্যকে অপমান করেন? হ্যাঁ বা না

৫. আপনি কি আপনার জীবন নিয়ে অসন্তষ্ট বা সব সময় অভিযোগ করেন? হ্যাঁ বা না

৬. অন্য মানুষকে সহ্য করতে আপনার কি অসুবিধা হয়? হ্যাঁ বা না

৭. আপনি কি অন্যদের সাথে মাঝে মাঝে নিষ্ঠুর ব্যবহার করেন? হ্যাঁ বা না

৮. আপনি কি সব সময়ই তর্কে জেতার চেষ্টা করেন? হ্যাঁ বা না

৯. আপনি কি খুব তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে পড়েন? হ্যাঁ বা না

১০. আপনি কি অন্যদের সাথে মারামারি করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকেন? হ্যাঁ বা না আপনি যতবারই হ্যাঁ বলবেন, বোঝা যাবে আপনি অহংকারী।

আমি জার্মানীতে আছি অনেক দিন। যে কোম্পানিতে চাকরি করি, সেখানেই ৩০ বছর হয়ে গেল । কোনো একটি অকেশনে আমাদের কোম্পানির সব কর্মচারী একসাথে বসে খাচ্ছিলাম। কথায় কথায় প্রসঙ্গ এল, কে বছরে কত দিন অসুস্থ থাকে । কেউ বললেন এক সপ্তাহ, কেউ বললেন শুধু ক্রিসমাসের সময়। জার্মানিতে ক্রিসমাসে কয়েক দিন অফিশিয়ালি বন্ধ। তার সাথে যদি কয়েক দিন সিক রিপোর্ট নেয়া যায়, তাহলে তো পোয়াবারো। অনেকে তা-ই করেন। আমি হঠাৎ বোকার মতো বলে ফেললাম, ‘আমি কোনো দিনই অসুস্থ হইনি।’

অনেকটা বজ্রপাতের মতো। কেউ বিশ্বাস করলেন না আমার কথা। কোম্পানির মালিক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি ৩০ বছরে কোনো দিন অসুস্থ হননি, এটা অবিশ্বাস্য।’ আমি বললাম, ‘এটা সত্যি।’ কয়েকজন কলিগ বাজি ধরা শুরু করলেন। এটা কোনো দিনই সম্ভব নয়। আমাদের অ্যাকাউন্টস বিভাগের কম্পিউটারে খোঁজা হলো। উত্তর বের হলো, সত্যিই তাই। আমি গর্ব করে সবার দিকে তাকালাম। এটাই আমার কাল হয়েছিল। এর দু’দিন পর হঠাৎ করে আমার পায়ে ব্যথা শুরু হলো। একটানা আটটি মাস আমি অসম্ভব কষ্ট পেয়েছি। পাঠক, এবার বুঝুন, অহংকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন না।

বাইবেলে যে সাতটি চরম পাপ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ, তার প্রথমটি হলো অহংকার । অহংকার এমন একটি জিনিস, শুধু এই কারণে রোমান সভ্যতা গুঁড়িয়ে গেছে । জার্মানরা দু’দুবার মহাযুদ্ধে হেরেছে। হিটলারকে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল। পাঠক, আমি আপনাকে হাজার হাজার ঘটনার উল্লেখ করতে পারি, অহংকার মানুষকে কোন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে। যদি আপনার মনে কোনো কারণে অহংকার হয়, সাথে সাথে বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করবেন। যাঁরা বিনয়ী, সবাই তাঁদের ভালোবাসে। নাক উঁচু মানুষদের কেউ পছন্দ করে না।চলুন, আমরা একটি পরীক্ষা করি। প্রতিটি প্রশ্নের পরে আপনি হ্যাঁ বা না বলে উত্তর দেবেন।

See More:

1. আপনি কি নিজেকে অন্যের চেয়ে বেশি বড় মনে করেন? হ্যাঁ বা না

2. নিজেকে নত হতে আপনার কি অসুবিধা হয়? হ্যাঁ বা না

3. আপনি কি খুব তাড়াতাড়ি রেগে যান? হ্যাঁ বা না

4. আপনি কি অন্যকে অপমান করেন? হ্যাঁ বা না

5. আপনি কি আপনার জীবন নিয়ে অসন্তষ্ট বা সব সময় অভিযোগ করেন? হ্যাঁ বা না

6. অন্য মানুষকে সহ্য করতে আপনার কি অসুবিধা হয়? হ্যাঁ বা না

7. আপনি কি অন্যদের সাথে মাঝে মাঝে নিষ্ঠুর ব্যবহার করেন? হ্যাঁ বা না

8. আপনি কি সব সময়ই তর্কে জেতার চেষ্টা করেন? হ্যাঁ বা না

9. আপনি কি খুব তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে পড়েন? হ্যাঁ বা না

10. আপনি কি অন্যদের সাথে মারামারি করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকেন? হ্যাঁ বা না আপনি যতবারই হ্যাঁ বলবেন, বোঝা যাবে আপনি অহংকারী।

প্রাইড অ্যান্ড প্রিজুডিস’-এর লেখিকা জেন অস্টেন বলেছেন, ‘গর্ব আর অহংকার দুটি ভিন্ন জিনিস, যদিও অনেকে এটা গুলিয়ে ফেলে। যে কোনো মানুষই অহংকারী না হয়ে গর্বিত হতে পারে। গর্ব যেটা আমি আমার নিজের সম্পর্কে ভাবি, আর অহংকার যেটা অন্যরা আমার সম্পর্কে ভাবে।’ ছোট্ট ছেলে প্রচুর পড়াশোনা করে বৃত্তি পেল। মা-বাবাকে বলল, ‘আমি বৃত্তি পেয়েছি।’ এটা হলো গর্ব। মা-বাবা যখন ঢাক পিটিয়ে প্রতিবেশীকে জানান, ‘আমার ছেলে পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে, ওর চেয়ে মেধাবী ক্লাসে আর নেই।’ এটা হলো অহংকার।

গর্ব আর অহংকারের এটাই পার্থক্য। বিষয়টি শেষ করছি ছোট্ট একটি প্রচলিত জোক দিয়ে। মা রান্নাঘরে রাঁধছেন, ছোট্ট মেয়ে হঠাৎ তাঁর কালো চুলের মধ্যে কয়েকটি সাদা চুল দেখতে পেল। ‘মা মা, দেখেছ তোমার মাথায় সাদা চুল!’ মা মেয়েকে বললেন, ‘আমি যখনই অহংকার করি, আল্লাহ আমার একটি করে চুল পাকিয়ে দেন।’ সুতরাং এ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? ছোট্ট মেয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করল, তারপর বলল, ‘নানির মাথা ভর্তি সাদা চুল, উনি কি খুবই অহংকারী ছিলেন?’

Leave a Comment