‘আমার মন’ প্রবন্ধ হইতে হাস্যরসিক বঙ্কিমচন্দ্র সম্বন্ধে তোমার ধারণা লিপিবদ্ধ করো

আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “‘আমার মন’ প্রবন্ধ হইতে হাস্যরসিক বঙ্কিমচন্দ্র সম্বন্ধে তোমার ধারণা লিপিবদ্ধ করো” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।

‘আমার মন’ প্রবন্ধ হইতে হাস্যরসিক বঙ্কিমচন্দ্র সম্বন্ধে তোমার ধারণা লিপিবদ্ধ করো

বঙ্কিমচন্দ্রের হাস্যরস পরিবেষণের কৃতিত্বের পরিচয় দিতে গিয়া রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—“নিৰ্ম্মল শুভ্র সংযত হাস্য বঙ্কিমই সৰ্ব্বপ্রথম বঙ্গসাহিত্যে আনয়ন করেন। তৎপূর্ব্বে বঙ্গসাহিত্যে হাস্যরসকে অন্য রসের সহিত এক পঙ্ক্তিতে বসিতে দেওয়া হইত না। সে নিম্নাসনে বসিয়া শ্রাব্য অশ্রাব্য ভাষায় ভাঁড়ামি করিয়া সত্যজনের মনোরঞ্জন করিত। এই প্রগলভ বিদূষটি যতই প্রিয়পাত্র থাক কখনও সম্মানের অধিকারী ছিল না। যেখানে গম্ভীরভাবে কোনো বিষয়ে আলোচনা হত, সেখানে হাস্যের চপলতা সর্বপ্রথমে পরিহার করা হইত। বঙ্কিম সর্ব্বপ্রথমে হাস্যরসকে উচ্চশ্রেণিতে উন্নীত করেন। তিনিই প্রথম দেখাইয়া দেন যে, কেবল প্রহসনের সীমার মধ্যে হাস্যরস বন্ধ নহে; উজ্জ্বল শুভ্র হাস্য সকল বিষয়কে আলোড়িত করিতে পারে। তিনিই প্রথম দৃষ্টাস্তের দ্বারা প্রমাণ করিয়াছেন যে, হাস্যজ্যোতির সংস্পর্শেই কোনো বিষয়ের গভীরতার গৌরব হ্রাস হয় না, কেবল তাহার সৌন্দর্য এবং রমণীয়তার বৃদ্ধি হয়, তাহার সর্ব্বাংশের প্রাণ এবং গতি যেন সুস্পষ্টরূপে দীপ্যমান হইয়া উঠে।”

‘আমার মন’ প্রবন্ধেও বঙ্কিমচন্দ্রের এ শুভ্র সমুজ্জ্বল অনাবিল হাস্যের প্রকাশ। প্রবন্ধটির সূচনা হতে শেষ পর্যন্ত হাস্যরসের অবতরণার ফলে রচনাটি সরস ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। প্রবন্ধের আরম্ভেই আমরা শুনিতে পাই একটি অদ্ভুত ও কৌতুকাবাহ প্রশ্ন- “আমার মন কোথায় গেল ? কে লইল ?” তারপর এই প্রশ্নেরই সমাধান খুঁজতে খুঁজতে দেখা দিয়েছে একের পর এক হাস্যরসের হিল্লোল। প্রথমে হারানো মনের সন্ধান চলল রন্ধনশালায়। কেননা ইলিশ মাছের লোভে, সদ্যঃকর্তিত ছাগমাংসের সুরভিত ব্যঞ্জনের লোভে, লুচি কোপ্তা-কোম্মা-সন্দেশের লোভে মনের পাকশালায় গমন অসম্ভব নয়। কিন্তু অনুসন্ধান করে দেখা গেল সেখানে মন যায়নি। তবে কি মন প্রসন্ন গোয়ালিনী চুরি করেছে ? তাও বিচিত্র নয়। কেননা তার সঙ্গে কমলাকান্তের যে রসের সম্বন্ধ, সে কথাও সকলে বলাবলি করে। প্রসন্নের সঙ্গে কমলাকান্তের যে গদ্যরস ও কাব্যরসঘটিত নিবিড় সম্পর্ক আছে, তাও কমলাকান্ত অস্বীকার করে না। কিন্তু হারানো মনকে প্রসন্নের নিকটেও পাওয়া গেল না। তার পর সন্দেহ হল পথচারিণী কোনো সুন্দরী যুবতী হয়তো তার মনটি চুরি করে থাকবে। কিন্তু যুবতীর মুখনাড়া খেয়ে কমলাকান্তের সে ভুল ভাঙল। অতঃপর কমলাকান্ত গভীর দার্শনিক চিন্তার জগতে যাওয়াই কমলাকান্তের আসল উদ্দেশ্য। তার এতক্ষণের রসিকতা এই গভীর চিন্তার প্রস্তাবনাস্বরূপ। হাল্কা রমণীর পরিসমাপ্তিতেই তিনি জমিয়ে তুলতে চান গম্ভীর রাগের গুঞ্জন। এই সুগভীর তত্ত্বের আসল কথা এই যে সুখ আত্মসুখকাঙ্ক্ষাতে নয়, পরসুখবর্ধনেই প্রকৃত সুখ। নিজেকে না ভালোবেসে, যে অপরকে ভালোবাসতে শেখে সে ই ভালোবাসার প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করে। এই ভালোবাসার কথাতেই প্রবন্ধের পরিসমাপ্তি। কিন্তু সেখানেও পুনরায় মধুর হাস্যরসের অবতারণা। ভালোবাসার প্রয়োজনেই বিবাহ। কমলাকান্তও বিবাহ করে সুখি হতে চান। তাই বৃদ্ধ কমলাকান্ত যুক্ত করে সকলের নিকট নিবেদন করেছেন—“তোমরা কেহ কমলাকান্তের বিবাহ দিতে পার।”

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।

Leave a Comment