আলাে বলে, ‘অন্ধকার, তুই বড় কালাে’ অন্ধকার বলে, ‘ভাই, তাই তুমি আলাে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “আলাে বলে, ‘অন্ধকার, তুই বড় কালাে’ অন্ধকার বলে, ‘ভাই, তাই তুমি আলাে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

আলাে বলে, 'অন্ধকার, তুই বড় কালাে’ অন্ধকার বলে, 'ভাই, তাই তুমি আলাে - ভাবসম্প্রসারণ

আলাে বলে, ‘অন্ধকার, তুই বড় কালাে’ অন্ধকার বলে, ‘ভাই, তাই তুমি আলাে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : কোনাে বস্তুর সত্যিকার মূল্য নির্ধারিত হয় তার বিপরীতধর্মী বস্তুর সাথে তুলনা দ্বারা। বিপরীতধর্মী বস্তুটি না থাকলে তার কোনাে মূল্য বােঝা যেত না।

সম্প্রসারিত ভাব: আলাে-আঁধার, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ও হাসি-কান্না নিয়েই মানব জীবন। শুধু আলাে বা আঁধার যেমন ভাবা যায় না, তেমনি জীবনে শুধু নিরবধি সুখ বা দুঃখ আশা করা অনুচিত। দুই বিপরীতধর্মী স্রোতের সমন্বয়েই প্রবাহিত হয় মানব জীবন। কিন্তু আমরা দুঃখকে অস্বীকার করে শুধু সুখই পেতে চাই। বুঝতে চাই না, দুঃখ আছে বলেই সুখের এত মূল্য। যদিও আলাে অন্ধকারকে বিদ্রুপ করে বলছে, সে এত কালাে বলেই জগৎ নিরানন্দময়। কিন্তু অন্ধকার আছে বলেই আলাে তার প্রকাশ ধর্ম লাভ করছে এবং তার এত মর্যাদা। অন্ধকার না থাকলে আলাে তার দীপ্তি প্রকাশ করতে পারত না। তাই সীমাহীন আলাে মানুষের কামনা থাকলেও পাশাপাশি যদি আঁধার না থাকে তবে সে আলাের
পরিচয় পাওয়া যায় না। সুখের সাথে যদি দুঃখ না থাকে তবে সুখের স্বাদ ভালােভাবে অনুভব করা যায় না। দুঃখ আছে। বলেই সুখ মানুষের কাছে এত প্রিয়। মরণ আছে বলেই মানুষ জীবনকে এত বেশি ভালােবাসে। আর এই পরস্পরবিরােধী বৈশিষ্ট্যের জন্যই জীবন ও জগৎ এত মধুর হয়েছে।

মন্তব্য : মানব জীবনের সর্বত্র আলাে ও আঁধাররূপ বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। একটির অনুপস্থিতিতে অন্যটির অস্তিত্ব অনুভূত হয় না।

বিকল্প ১

ভাবসম্প্রসারণ: পৃথিবীতে কোনাে কিছু এককভাবে উপভােগ করলে সে জিনিসের যথার্থ মূল্য বােঝা যায় না। আলাে ও অন্ধকারের মতাে বিপরীতরাই একে-অন্যের গুরুত্ব অনুধাবনে সহায়তা করে।

পৃথিবীতে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সুন্দর ও কুৎসিতের সহাবস্থান। পৃথিবীতে যদি কখনাে সূর্য অস্ত না যায়, তাহলে আলােময় পৃথিবীকে সুন্দরভাবে অনুভব করা যেত না। অন্ধকার আলাে গ্রাস করে বলেই পরদিনে সূর্যোদয় আমাদের কাছে এত আকর্ষণীয়। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও একই অবস্থা। আমরা সকলেই জীবনে কীভাবে অধিক সুখ লাভ করা যায় তারই সন্ধান করি। কিন্তু দুঃখের স্পর্শ ছাড়া জীবনে নিরবচ্ছিন্ন সুখ লাভ করা যায় না। দুঃখের যন্ত্রণা দেখে আমরা হতাশায় ভেঙে পড়ি, অনেক সময় আক্ষেপ করি, সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিযােগ জানাই। কিন্তু দুঃখ আছে বলেই সুখ এত আদরনীয়। বেদনা-হতাশার পর যখন সুখ ও আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়, তার কোনাে তুলনা নেই। তেমনি অভাব না থাকলে মানুষের প্রগতি থেমে যেত। আবার চাওয়া- পাওয়া বা অতৃপ্তি না থাকলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এত উৎকর্ষ সাধিত হতাে না। জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত বলেই জীবন এত মধুময় ও মূল্যবান। তেমনিভাবে অন্ধকার আছে বলেই আলাের গুরুত্ব বেশি। আলাে অন্ধকারকে যতই হেয় করুক না কেন, অন্ধকার আছে বলেই আলাে উজ্জ্বলভাবে আমাদের নিকট ধরা পড়ে। দুঃখ আছে বলে সুখ এত মধুর। দুঃখের যন্ত্রণা না থাকলে সুখের মূল্য উপলব্ধি করা যায় না। কাটা এড়িয়ে যেমন পদ্মফুল তােলা যায় না তেমনি দুঃখ বাদ দিয়ে সুখ লাভ করা যায় না। আমাদের কঠোর সাধনা ও দৃঢ় মনােবল দ্বারা জীবনের সকল বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করতে হবে। আলাে-অন্ধকার, ভালাে-মন্দ, সুখ-দুঃখ না থাকলে মানুষ কোনাে সাধনাই করত না, দৃঢ় মনােবলের অধিকারীও হতে পারত না। এসব বাধা আছে বলেই মানুষ নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জীবনকে সুন্দর, সার্থক করতে, পৃথিবীকে সুখের আবাস ভূমিতে পরিণত করতে।

বিকল্প ২

মূলভাব: আলো আর আঁধার, সুখ আর দুঃখ, আনন্দ আর বেদনা জীবনে পাশাপাশি আছে বলেই জীবনের আসল বৈশিষ্ট্য অনুবাধন করা যায়। একটিকে ছাড়া অপরটি অস্তিত্ব থাকে না। বরং আধারের জন্য আলো যেমন স্পষ্ট হয়ে ওঠে জীবনের সুখ-দুঃখের পটভূমিকায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

সম্প্রসারিত ভাব: সৃষ্টিকর্তা আলো-অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন। আলো আছে বলে আঁধার আছে । আঁধার আছে বলে আলোর পরিচয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আলো এবং অন্ধকার পরস্পর বিপরীত ধর্মী হলেও একে অপরের পরিপূরক। মানবজীবনের সর্বত্রই আলো আঁধার রূপ সুখ-দুঃখের সমাবেশে দেখতে পাওয়া যায়। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির অস্তিত্ব কল্পনা মাত্র । জীবনে আলো-আঁধার, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার পাশাপাশি আছে বলেই জীবনের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য সহজে অনুবাধন করা যায়। আলো এবং অন্ধকার পরস্পরের পরিপূরক। পৃথিবীতে সুখের অস্তিত্ব আছে বলেই মানুষের দুঃখকে হাসিমুখে বরণ করে। আর দুঃখ আছে বলেই মানুষ সুখে বসবাস করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। তেমনি এ পৃথিবীতে আলো ও অন্ধকারের রয়েছে সহাবস্থান। কেউ কারো অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারে না। অন্ধকার ছাড়া আলো যেমন মূল্যহীন, তেমনি আলো ছাড়াও পৃথিবী অচল। রাত এলেই আমরা অনুধাবন করি উজ্জ্বল সূর্যের গুরুত্ব। পুবের আকাশে ভোরের সূর্য উঁকি দিলেই আমাদের মনে আশার আলো জেগে ওঠে। সৃষ্টি ধ্বংস জন্ম-মৃত্যু আলো-আঁধার সুখ-দুঃখ এসবই পরস্পর বিপরীত ধর্মী হলেও একে অপরের পরিপূরক। নিরবচ্ছিন্ন সবকিছুই অস্তিত্বই মূল্যহীন। মৃত্যু অবধারিত বলেই জীবন এত মূল্যবান। পৃথিবীতে মৃত্যুর উপস্থিতি না থাকলে জীবন মূল্যহীন। ধ্বংসের ভয় আছে বলে মানুষ সৃষ্টিকে সংরক্ষিত করে ভালোবাসে। পৃথিবীতে অসুখের অস্তিত্ব আছে বলেই মানুষ দুঃখকে হাসিমুখে বরণ করে সুখের আশায়। আর দুঃখের অস্তিত্ব আছে বলেই সুখের বৃত্তে বসবাস করার জন্য মানুষের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। আলোর রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য যেমন অন্ধকার একান্ত প্রয়োজন, তেমনি দুঃখ বেদনা ও অভাবের তীব্র জ্বালা আছে বলেই মানুষের জীবনের সুখ-আনন্দ ও সাত সন্দ এত কাম্য তাই বলা হয় দুঃখের মতো এত বড় পরশ পাথর আর নেই।

মন্তব্য: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আলো এবং অন্ধকার আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর। আলো আর আঁধার যদি নাই থাকতো তাহলে পৃথিবীটা এত সুন্দর দেখাতো না। আলোর রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্যে যেমন অন্ধকার একান্ত প্রয়োজন, তেমনি দুঃখবেদনা ও অভাবের তীব্র জ্বালা আছে বলেই আমাদের জীবনে সুখ, আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য এত কাম্য। তাই বলা হয়, ’দুঃখের মত এত বড় পরশপাথর আর নেই’। দুঃখ সয়েই আমরা সুখের আনন্দ ও মহিমাকে উপলব্ধি করি। বস্তুত আলো ও আঁধারের যুগল অস্তিত্ব প্রকৃতি ও জীবনের বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরে।

সহজ ভাবে: আলো বলে অন্ধকার তুই বড় কালাে অন্ধকার বলে ভাই তাই তুমি আলাে

বৈপরীত্য আছে বলেই আমরা বস্তুর স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারি। পৃথিবীতে মন্দ আছে বলেই ভালাের এত কদর। আলাে ও অন্ধকার—আপাতদৃষ্টিতে দুটোকে বিপরীত মনে হলেও আলাের স্বরূপ বুঝতে হলে অন্ধকারের প্রয়ােজন হয়। রাত্রি ও দিনের মধ্যে যদি কোনাে পার্থক্য না থাকত, একটানা আলাে বা একটানা অন্ধকার হলে আমরা রাত্রি ও দিনের কোনাে তফাত বুঝতে পারতাম না। ভালাে-মন্দ, সাদা-কালাে, ইতর-ভদ্র, সুজন-কুজন, পাহাড়-সমতল, মরভূমি-সমুদ্র এসব প্রাকৃতিক বৈপরীত্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এ জগৎসংসার। এই বৈপরীত্যের স্বরূপ উপলদ্ধি করেই মানুষ বেছে নেয় সঠিক পথ ও পন্থা। তৈরি হয় বিবেচনাবােধ। তুলনার মধ্য দিয়ে কোনাে বস্তুর স্বরূপ অনুধাবন করা যায় সহজ। আলাে ও অন্ধকারের এ ঝগড়া অমূলক। আসলে ভালাে-মন্দ, আলাে-অন্ধকার একে অপরের পরিপূরক। অন্ধকার কালাে বলে তাকে নিন্দা করার কিছু নেই। কারণ, অন্ধকার আছে বলেই আলাের এত কদর।

আরো পড়ুন: গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়ােজন

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment