কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজী – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজী ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজী - ভাবসম্প্রসারণ

কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজী ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : মানবজীবন গতিময়। আর এ গতিময় জীবনে একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসবে এবং প্রতিদানে উপকার গ্রহণকারী ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আমরা অনেক সময় এ নিয়মের ব্যতিক্রম দেখতে পাই।

সম্প্রসারিত-ভাব : মানব জাতি সমাজবদ্ধ জীব। তাই সে একাকী বাস করতে পারে না। মানব সভ্যতার প্রাক্কালে মানুষ যখন বনে জঙ্গলে বাস করত তখন তারা দলবদ্ধভাবে বাস করত। মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা সমাজবদ্ধ হয়ে একত্রে বসবাস করে আসছে এবং দুর্দিনে একে অন্যের কাছে সাহায্যের জন্য ছুটে গেছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো এ উপকারী বন্ধুর কথা মানুষ অনেক সময় ভুলে যায়। মূলত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সমাজে একশ্রেণীর লোক আছে যারা সঙ্গতিসম্পন্ন লোকের সাথে বন্ধুর মত আচরণ করে এবং তাকে অনেক উঁচু আসনে সমাসীন করে কিন্তু, স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলেই সে তার ছায়া পর্যন্ত মাড়ায় না। উপকারী ব্যক্তি যেন তখন তার কাছে অপছন্দের ব্যক্তিতে পরিণত হয়। তার আচরণ দেখে মনে হয় যেন সে উপকারকারী ঐ ব্যক্তিকে চেনেই না। এ ধরনের আচরণ মানবীয় সুপ্রবৃত্তির পরিপন্থী। মানুষ মানুষের উপকার করে প্রতিদানের আশায় নয়, বরং তার মানবীয় সুপ্রবৃত্তি থেকে। আর এ উপকার পাবার পর অনেক সময় আমরা তার যথাযথ মূল্যায়ন করি না। এর ফলে উপকারকারী ব্যক্তির মহৎ হৃদয়ের পরিচয় যেমন ফুটে উঠে তেমনি একই সাথে উপকার করার মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের মানবসমাজে এ ধরনের চিত্র অহরহই দেখতে পাওয়া যায়। এ সমাজেই এক শ্রেণীর লোক আছে যারা তাদের নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্যের কাছে ছুটে যায় এবং তাকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ করে তোলে কিন্তু স্বার্থ উদ্ধার হলেই সে কৃতঘ্ন ব্যক্তিতে পরিণত হয়। মূলত উপকারী বন্ধুকে তার যথাযথ মর্যাদা দেয়াটাই শ্রেয়। উপকার পাবার পূর্বে উপকারী বন্ধুর স্থান যেমন ছিল উপকার পাবার পরও তার স্থান তেমনই থাকা উচিত। উপকার পাবার পর তা ভুলে গেলে উপকারীর কোন ক্ষতি হয় না বরং তার মাধ্যমে উপকার গ্রহণকারী ব্যক্তির বিকৃত মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠে। কথায় বলে, এক মাঘে শীত যায় না। অর্থাৎ, বিপদ বার বার আসতে পারে। আর এ জন্য একই ব্যক্তির কাছে বারবার ছুটে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তাই আমাদের উচিত উপকারী বন্ধুর যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া। তা না হলে পরবর্তীতে তার কাছ থেকে আর উপকার পাবার আশা থাকে না। আর যার মর্যাদা যেমন তাকে তেমন মর্যাদা দানের মাধ্যমে আমরা তাদের সুপ্রবৃত্তিগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে পারি। মানুষের মাঝে আছে একটি সুন্দর মন যা দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে জয় করা যায়। আর এ ধরনের মানসিকতা গড়ে তোলা প্রত্যেক মানুষের সাধনা হওয়া উচিত। উপকারী ব্যক্তির প্রতিদান দিতে হবে উপকার দিয়ে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, অবজ্ঞা বা ঘৃণা দিয়ে নয়।

আরো পড়ুন: গতিই জীবন

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment