কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর. মানুষের মাঝে স্বর্গ, নরক মানুষেতে সুরাসুর – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর. মানুষের মাঝে স্বর্গ, নরক মানুষেতে সুরাসুর ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর. মানুষের মাঝে স্বর্গ, নরক মানুষেতে সুরাসুর - ভাবসম্প্রসারণ

কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর. মানুষের মাঝে স্বর্গ, নরক মানুষেতে সুরাসুর ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: মানুষ শুভ ও কল্যাণকর কর্মপ্রচেষ্টা দিয়ে পৃথিবীকে যেমন স্বর্গে পরিণত করতে পারে তেমনই অশুভ ও অমঙ্গলজনক কাজ করে পৃথিবীকে নরকেও পরিণত করতে পারে।

সম্প্রসারিত ভাব: আমরা স্বর্গ ও নরক এবং দেবতা ও দানবের মধ্যে পার্থক্য বিচারে ব্যস্ত। স্বর্গ বলতে আমরা পৃথিবীর ঊর্ধ্বে পবিত্র এক পুণ্যস্থানকে নির্দেশ করি এবং নরক বলতে যন্ত্রণাময় পৃথিবীর নিচের এক অপবিত্র স্থানকে নির্দেশ করি। যারা স্বর্গে বাস করেন আমরা তাদের বলি দেবতা ও নরকবাসীদের বলি দানব। কিন্তু বিজ্ঞানের এই যুগে স্বর্গ-নরক বলে কিছু নেই। আমাদের ভালো-মন্দ কাজের নিরিখে আমরা মর্ত্যলোকেই স্বর্গসুখ ও নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে পারি। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দৈবভাব ও দানবভাব লুকিয়ে আছে।

যেমন সে সৎকর্ম, সৎচিন্তা ও সজীবনে আগ্রহী হয় তখন সে স্বর্গসুখ পায়। তার সৎকর্মই তাকে বৃহত্তর জীবনের পথ দেখায়। মানুষের দ্বারাই পৃথিবীতে স্বর্গ ও নরক তৈরি হতে পারে। মানুষ যখন ভালো কাজ করে তখন পৃথিবীতেই স্বর্গের সুখ ধরা দেয়। আর যখন অস্বস্তিকর পরিবেশ তখন পৃথিবীতে নরকের চেয়েও খারাপ অবস্থা বিরাজ করে। তাই বলা যায়, স্বর্গ-নরক দূরে নয়, মানুষের মাঝেই বিদ্যমান। প্রেম-প্রীতি, সাম্য, সহমর্মিতা, ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই পৃথিবী স্বর্গধামে পরিণত হবে।

মন্তব্য: সুতরাং অলৌকিক স্বর্গ-নরকের কথা চিন্তা না করে, মানুষকে ভালোবেসেই পৃথিবীতে স্বর্গ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় নরলোকের বাসিন্দাদের নরকাগ্নিই ভোগ করতে হবে।

বিকল্প ১

মূলভাব : স্বর্গ এবং নরক মানুষের মনের মধ্যেই বিদ্যমান। পৃথিবীর শুরু থেকে স্বর্গ-নরকের কল্পিত অস্তিত্ব নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেই। কিন্তু আমাদের এ চলমান জীবনেই আমরা স্বর্গ-নরকের অবস্থিতি অনুভব করি।

সম্প্রসারিত ভাব : অপার্থিক জগতে স্বর্গ ও নরক দুইই বিপরীতধর্মী স্থান। যুগ-যুগান্তরের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষ মনে করে-পৃথিবীর বহু ওপরে অনন্ত জ্যোতিপুঞ্জের মাঝে স্বর্গের অবস্থান আর এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার স্থানে নরক বিরাজিত। এ জীবন সাঙ্গ হলেই কেবল সেসব দেখবার সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য তার হবে। হয়ত এসবের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সময়, পাড়ি দিতে হবে যোজন যোজন পথ। সকল ধর্মেই স্বর্গকে এক অপূর্ব সুষমামণ্ডিত স্থানরূপে গণ্য করা হয়েছে। কেবলমাত্র পুণ্যাত্মাগণই এখানে প্রবেশের অধিকার পাবেন। আর যারা দুরাত্মা, যারা পাপাচারী তারা নিক্ষিপ্ত হবে নরকের ভয়ঙ্কর অগ্নিকুণ্ডলির মাঝে। মানুষের এ প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি কবি অনুরক্ত নন। কবি মনে করেন স্বর্গ এবং নরক পারলৌকিক কোনো বস্তু নয়। এ পৃথিবীতেই স্বর্গ এবং নরক বর্তমান। স্নেহ, প্রেম, পারস্পরিক সৌহার্দ এবং সম্প্রীতির বন্ধনে এ ধূলোমাখা মাটির পৃথিবী স্বর্গ হয়ে উঠতে পারে। আবার ক্রোধ, লোভ, মোহ ইত্যাদি রিপু দ্বারা তাড়িত হয়ে মানুষ এ পৃথিবীকে বানাতে পারে নরকের আঁধার। ভালো কাজ করলে মানুষের প্রশান্ত মনে এক অনাবিল শান্তি নেমে আসে। স্বর্গীয় হাসিতে তার মুখমণ্ডল তখন উদ্ভাসিত হয়। আর মন্দ কাজ করলে বিবেকের দ্বারা সে পদে পদে লাঞ্ছিত হয়।

এ জগতে মানুষ ভালো কাজের মাধ্যমে স্বর্গের সুধা এবং খারাপ কাজের মাধ্যমে নরকের যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে। শান্তি আর করুণার ধারা যদি পৃথিবীতে নেমে আসে তাহলে দূরের স্বর্গ আর দূরে থাকে না।

বিকল্প ২

মূলভাব: প্রকৃতপক্ষে স্বর্গ ও নরকের অবস্থান মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। রিপুর তাড়নায় মানুষ বিবেকহীন নরকের যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। প্রেমময় ও কল্যাণময় আচরণ স্বর্গসুখ নিয়ে আসে।

সম্প্রসারিত ভাব: স্বর্গ (Heaven) নরকের (Hell) অস্তিত্ব আছে পরকালে। স্বর্গে বাস করে পুণ্যবানেরা, ভােগ করে অনন্ত সুখ-শান্তি । আর নরকে বাস করে পাপাচারীরা, ভােগ করে কঠিন শাস্তি। কিন্তু এ জগতেই আমরা স্বর্গ-নরকের অস্তিত্ব প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করি। পৃথিবীর (Earth) বুকে মানুষের মাঝেও এ স্বর্গ-নরকের অবস্থান লক্ষণীয়। নিজের কর্মফলের মধ্য দিয়েই মানুষ এখানে স্বর্গ-নরকের ফল ভােগ করে। লােভ-লালসা ইত্যাদি মানুষকে অন্যায়ের পথে ঠেলে দেয়। 

অন্যায় আচরণ ও পাপাচারের ফলে সমাজে নেমে আসে ঘােরতর অন্ধকার ও চরম অশান্তি। ফলে সমাজ নরকের ক্ষুদ্র সংস্করণ হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে হিংসা, দ্বেষ, লােভ-লালসা অন্তর থেকে বিদূরিত করে সরল প্রাণে ঐক্য ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সংসারেই নেমে আসে স্বর্গীয় সুষমা ও শান্তি। মাটির পৃথিবী তখন হয়ে ওঠে স্বর্গীয় লীলা-নিকেতন। পৃথিবীর মানুষ তার কর্মফলের মাধ্যমেই স্বর্গের সুখ ও নরকের যন্ত্রণা ভােগ করে থাকে। মানুষের অপকর্মের ফল নরকযন্ত্রণা আর মহৎ কাজের ফল স্বর্গীয় আনন্দ। 

মন্তব্য: পৃথিবীর সুখ ও দুঃখ সৃষ্টি মানুষের নিজের ওপর নির্ভর করে। মানুষের আপন কর্মের ফলেই এই পৃথিবী হতে পারে স্বর্গ আবার হতে পারে নরক।

বিকল্প ৩

মানুষ পার্থিব জগতের বাইরেও মৃত্যুর পরে এক নতুন জগৎ কল্পনা করে। যা স্বর্গ ও নরকের সমন্বয়ে গঠিত। ধর্মীয় চিন্তা থেকে মানুষ পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়ের হিসাব করে থাকে। আর এই অনুভূতি থেকেই স্বর্গ ও নরক লাভের কথা ভাবে। নরক একটি ভয়ংকর জায়গা যেখানে শাস্তি দেয়া হয়। আর স্বর্গ হচ্ছে অনাবিল সুখ-শান্তির জায়গা। মানুষ পৃথিবীতে কৃতকর্ম অনুসারে স্বর্গ ও নরকে জায়গা করে নিবে। যারা ভালো কাজ করবে তারা স্বর্গে বাস করবে। আর যারা খারাপ কাজ করবে তারা নরকে বাস করবে। মূলত এই স্বর্গ-নরক আর কিছুই নয়, এটা মানুষের কর্মফলের উপর নির্ভর করে। মানুষের প্রতিদিনকার কাজের মাঝেই স্বর্গ-নরক বিরাজমান। লোভ-লালসা, ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা মানুষকে পশুতে পরিণত করে। ফলে সে ন্যায় অন্যায়ের সীমারেখা ভুলে যায়। নিজেকে নানা রকম খারাপ কাজে জড়িয়ে ফেলে। আর এসব কারণেই সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পৃথিবীতে নেমে আসে এক নরক যন্ত্রণা। এ সকল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মানুষকে অন্যায় ছেড়ে ন্যায়ের পথে আসতে হবে। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, সৌহার্দ্য গড়ে তুলতে হবে। একে অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। অন্যের কল্যাণ সাধনের জন্য সর্বদা চেষ্টা করতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে অন্যের ক্ষতি হয়। সকলে যদি সৎ ও ন্যায়ের পথ অবলম্বন করে, তাহলেই কেবল এ পৃথিবীতে স্বর্গীয় সুখ লাভ করা সম্ভব।

শিক্ষা: স্বর্গ ও নরক পৃথিবীর বাইরের কিছু নয়। মানুষের ভালো কাজ এবং আচরণের মাঝেই স্বর্গ থাকে এবং খারাপ কাজের মাঝে থাকে নরক।

বিকল্প ৪

মানুষকে ভালােবাসলে পৃথিবীতেই স্বর্গসুখ অনুভব করা যায় । আদিকাল থেকে স্বর্গ – নরকের কল্পিত অস্তিত্ব নিয়ে আমাদের কৌতুহলেরও শেষ নেই । অপার্থিব জগতে স্বর্গ ও নরক দুই – ই বিপরীতধর্মী স্থান । যুগ – যুগান্তরের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষ মনে করে পৃথিবীর বহু উপরে অনন্ত জ্যোতিপুঞ্জের মাঝে স্বর্গের অবস্থান ; আর এক ভয়ানক অন্ধকার স্থানে নরক বিরাজিত । এ জীবন সাঙ্গ হলেই কেবল সেসব দেখার সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য তার হবে । হয়তাে এসবের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সময় , পাড়ি দিতে হবে যােজন যােজন পথ । সব ধর্মেই স্বর্গকে এক অপূর্ব সুষমামণ্ডিত স্থানরূপে গণ্য করা হয়েছে । কেবল পুণ্যাত্মাগণই সেখানে প্রবেশের অধিকার পাবেন । আর যারা দুরাত্মা , যারা পাপাচারী তারা নিক্ষিপ্ত হবে নরকের ভয়ংকর অগ্নিকুণ্ডলীর মাঝে । মানুষের এ প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি কবি অনুরক্ত নন । কবি মনে করেন স্বর্গ এবং নরক পারলৌকিক কোনাে বস্তু নয় । এ পৃথিবীতেই স্বর্গ এবং নরক বর্তমান । স্নেহ , প্রেম , পারস্পরিক সৌহার্দ্য এবং সম্প্রীতির বন্ধনে এ ধুলােমাখা মাটির পৃথিবী স্বর্গ হয়ে উঠতে পারে । স্বর্গ ও নরক মানুষের হৃদয়ের অভ্যন্তরেই ব্যাপ্ত থাকে । যে ব্যক্তি সৎচিন্তা ও সৎকর্ম করেন , সেই ব্যক্তি এ দুনিয়াতেই এক মহাপ্রশান্তি লাভ করেন । অন্যদিকে কুচিন্তাশীল মন , কুকর্মকারী মানুষ অহর্নিশ নরকরূপ গ্লানিতে দাহ্য হতে থাকে । সৎচিন্তা ও সকর্মের একটি পূত – পবিত্র নির্মল আনন্দ রয়েছে । তা স্বর্গসুখ অপেক্ষা কম সুখদায়ক নয় । তদ্রুপ পাপেরও একটি নিদারুণ ধিক্কার ও গ্লানি আছে । মানুষ সৎ ব্যক্তির সাহচর্যে নির্মল আনন্দ অনুভব করে । এরূপ সঙ্গ মানুষ ত্যাগ করতে চায় না । পক্ষান্তরে পাপীর সাহচর্য মানুষ পেতে চায় না , সেখানে সবাই যেন দুর্গন্ধময় গ্লানি অনুভব করে । সুতরাং বােঝা যায় , এ দুনিয়াতেই মানুষের হৃদয় অভ্যন্তরে স্বর্গসুখ ও নরকজ্বালা উভয়ই বিরাজ করে । তা খোঁজার জন্য আমাদের বহুদূরে কোথাও ছুটতে হবে না । সুন্দর এ পৃথিবীতে নিজেকে প্রতিবন্ধনে জড়াতে পারলেই স্বর্গের সুখ অনুভব করা যায় । মানুষকে ভালােবাসা আমাদের সবার দায়িত্ব । যদি আমরা মানুষকে সম্মান দিই , তাহলে গৌরবময় জাতি হিসেবে আমরা পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব ।

আরো পড়ুন: কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ . উদ্যম বিহনে কার পুরে মনােরথ

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment