চন্দ্র কহে, বিশ্বে আলাে দিয়েছি ছড়ায়ে কলঙ্ক যা আছে তা আছে মাের গায়ে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “চন্দ্র কহে, বিশ্বে আলাে দিয়েছি ছড়ায়ে কলঙ্ক যা আছে তা আছে মাের গায়ে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

চন্দ্র কহে, বিশ্বে আলাে দিয়েছি ছড়ায়ে কলঙ্ক যা আছে তা আছে মাের গায়ে - ভাবসম্প্রসারণ

চন্দ্র কহে, বিশ্বে আলাে দিয়েছি ছড়ায়ে কলঙ্ক যা আছে তা আছে মাের গায়ে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : চাঁদ যেমন তার আলাে দিয়ে পৃথিবীকে আলােকিত করে, তেমনি মহৎ ব্যক্তিগণ মানব সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেন।

সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীর এক বিস্ময়কর উপগ্রহ চাঁদ। চাঁদ নিঃস্বার্থভাবে পৃথিবীতে আলাে বিলায়। আর সে আলােয় আলােকিত হয় গােটা পৃথিবী, সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয় চারদিক। চাঁদের এ উজাড় করা আলাে বিকিরণ যেন ত্যাগেরই মহান শিক্ষা, আর চাদ যেন সে ত্যাগেরই মূর্ত প্রতীক। পৃথিবীর মহৎ ব্যক্তিদেরকে চাদের সাথে তুলনা করা যায়। চাদের আলাের ন্যায় তারা তাদের গুণ মাধুর্যে বিমােহিত করেন বিশ্ববাসীকে। তারা কখনাে নিজের স্বার্থের কথা ভাবেন না। তারা সবসময় উদারচিত্তে অপরের হিত সাধনে ব্রতী থাকেন। আর এ পরহিত সাধনেই তারা প্রকৃত সুখ খুঁজে পান। তাদের ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ, যন্ত্রণা, নিন্দা ও কালিমা যদি কিছু থাকে তার বিন্দুমাত্রও তারা অন্যকে স্পর্শ করতে দেন না। তাঁরা জ্ঞানের আলাে ছড়িয়ে দিয়ে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করেন এবং মহৎ সাধনায় অনুপ্রাণিত করেন বিশ্বজনকে। হৃদয়ের বিশালতা দিয়ে এঁরা সকল ক্ষুদ্রতা, সকল সংকীর্ণতা জয় করেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হযরত মুহাম্মদ (স), শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধদেব, যিশুখ্রিস্ট, চৈতন্যদেব।

মন্তব্য : মহৎ ব্যক্তিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সকলেরই নিঃস্বার্থভাবে মানব সেবায় আত্মনিয়ােগ করা উচিত।

বিকল্প ১

ভাবসম্প্রসারণ: প্রত্যেক মানুষের জীবনেই ব্যক্তিগত দুঃখ-যন্ত্রণা থাকে। কিন্তু এ পৃথিবীতে যারা সত্যিকার অর্থে মহৎ তাঁরা অপরের সেবায়, জগতের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ব্যক্তিগত বেদনা কিংবা কালিমা তাঁদের কাছে একান্তই নিজের। তাই এর ভার একাকী বহন করে অন্যকে কল্যাণের আলােয় আলােকিত করেন মহজনেরা।

মনীষীদের জীবন তাই চাঁদের সাথেই তুলনীয়। চাদ তার অনুপম সৌন্দর্যের আড়ালে নিজ দেহে ধারণ করে ঊষর-ধূসর-গজর, যাকে আমরা বলি চাদের কলঙ্ক। কিন্তু চাঁদ যখন তার রজতশুভ্র জ্যোৎস্নাধারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয় তখন তাতে কলঙ্কের কোনাে ছায়া থাকে না। কলঙ্কের দাগ অন্তরালে লুকিয়ে রেখে চাঁদ শুভ্র আর সুন্দর নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দেয় পৃথিবীতে। চাঁদের আলােয় ঘুচে যায় পৃথিবীর অন্ধকার । চাঁদের এ উজাড় করা আলাের প্লাবন যেন ত্যাগেরই মূর্ত প্রতীক। মহামনীষীদের জীবনে যা লক্ষ করা যায়। ব্যক্তিগত জীবনে হয়তাে তাদের অপরিসীম দুঃখ-বঞ্চনা বয়ে বেড়াতে হয়, কিছুটা ত্রুটিতেও জড়িয়ে যান অনেকে, সহ্য করতে হয় অপমান-লাঞ্ছনা । কিন্তু তাঁদের ব্যক্তিজীবনের এ অসুন্দর কখনােই অন্যকে স্পর্শ করে না। কেননা নিজের অসীম গুণাবলি দিয়ে তাঁরা সেসব আড়াল করে রাখেন। অপরের বিপদে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে, দুস্থ মানবতাকে সেবা দিতে পিছপা হন না। অপরিসীম মমতা আর আন্তরিকতা দিয়ে জয় করে নেন সকল সংকীর্ণতা, হীনতা আর জরাকে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘কবিরে পাবে না তার জীবনচরিতে।’ কথাটি শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী, রাষ্ট্রনায়কসহ সকল মহৎ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য। এ পৃথিবীতে মহৎ মনীষী হিসেবে যারা স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন তাঁদের অনেকেই ব্যক্তিজীবনে দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হয়েছেন। কিন্তু আপন আপন ক্ষেত্রে রেখে গেছেন মহৎ অবদান। অপরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতেই তাদের আনন্দ। আর এ কল্যাণ আলাের স্পর্শেই আলােকিত হয় মানুষ, আলােকিত হয় বিশ্ব।

আরো পড়ুন: চক চক করলেই সোনা হয় না

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment