জন্ম হক যথা তথা কর্ম যােক ভালাে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “জন্ম হক যথা তথা কর্ম যােক ভালাে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

জন্ম হক যথা তথা কর্ম যােক ভালাে - ভাবসম্প্রসারণ

জন্ম হক যথা তথা কর্ম যােক ভালাে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : আভিজাত্যে বা বংশ পরিচয়ে মানুষের মর্যাদা বাড়ে না, মহৎ গুণাবলির জন্যই মানুষ প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হয়।

সম্প্রসারিত ভাব : জন্মের ক্ষেত্রে মানুষের নিজের কোনাে ভূমিকা থাকে না। আশরাফ বা আতরাফ, ধনী বা দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়াটা মানুষের নিজের ইচ্ছা বা কর্মের ওপর নির্ভর নয়। কিন্তু কর্মজীবনে তার ভূমিকা ও অবদানের দায়।তার নিজের ওপর বর্তায়। তাই পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত বিচারে বংশ পরিচয় তেমন গুরুত্ব বহন করে না। বরং কর্মঅবদানের মাধ্যমেই মানুষ পায় মর্যাদার আসন, হয় স্মরণীয় ও বরণীয়। আশরাফ বা অভিজাত বলে অনেকে বংশ গৌরব বড়করে দেখে, কিন্তু তার কাজকর্মে যদি কোনাে গুণ প্রকাশ না পায়, তবে সে বংশ গৌরবের কোনাে অর্থ নেই। জন্ম কোথায় হলাে তা দেখার বিষয় নয়। সবংশে জন্মগ্রহণ করেও যদি কেউ অপকর্মে লিপ্ত থাকে তবে কেউ তাকে শ্রদ্ধা করবে না। অপরপক্ষে, একজন লােক নীচ কুলে জন্মগ্রহণ করেও তার কর্তব্যকর্ম ও চারিত্রিক আদর্শের জন্য সকলের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারে। দেশের কাছে, দশের কাছে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে কোনাে একজন মানুষের কর্মই হলাে তার বড় পরিচয়। সরােবরের শ্যাওলা অপেক্ষা গােবরের পদ্মফুলের মর্যাদা অনেক বেশি। মুসলিম জাহানের সর্বপ্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল(রা) একজন ক্রীতদাসের সন্তান হয়েও নিজ কর্মের মাধ্যমে সকলের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছিলেন। শেষ বিচারেরদিন আল্লাহ্ কারাে বংশ দেখবেন না, দেখবেন তার কর্ম।

মন্তব্য : বংশের জন্য নয়, কর্মের জন্যই মানুষ প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হয়।

বিকল্প ১

মূলভাব: মানুষ পৃথিবীতে স্মরণীয় ও বরণীয় হয় তার কর্মগুণে। সেই সাথে জীবনে গৌরব ও মর্যাদার আসন লাভের পেছনেও থাকে কর্মের ভূমিকা। কর্মের দ্বারা মানুষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে । জন্মের বা বংশের তথ্য সেখানে গৌণ।

ভাবসম্প্রসারণঃ কেউ কেউ ভাবেন, মানুষের প্রতিষ্ঠা ও গৌরব লাভের পেছনে বংশপরিচয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে তা সঠিক নয়। কারণ মানুষ কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেছে তা বিবেচনা না করে জীবনে সে কী অবদান রেখে গেছে সেটাই মানুষের মহিমাকে তুলে ধরে। সমাজের নীচু স্তরে জন্ম নিয়েও অনেক মানুষ কর্ম ও অবদানের মাধ্যমে বড় বলে পরিগণিত হয়েছে। মানবসমাজের ইতিহাসে এ রকম অজস্র উদাহরণ আছে। উঁচু বংশ বা নীচু বংশ বড় কথা নয়, মহৎ অবদানেই মানুষ বড় মাপের মানুষ হয়। কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুসহ আরও অনেকে তাদের কর্মের অবদানের জন্যে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। এঁরা কেউ জন্মপরিচয় বা বংশগৌরবের কারণে বড় বলে পরিগণিত নন। পদ্মফুলের জন্মস্থান বড় নয়, এর সৌন্দর্য বড়। তেমনি মানুষের কর্মের সাফল্যই বড়, বংশ ও জন্মপরিচয় নয়। কর্মই জীবন। জীবনে কাজ না থাকলে জীবনই ব্যর্থ হয়। মানুষই বিভিন্ন কর্ম দ্বারা দেশ, সমাজ ও জাতির উন্নতি সাধন করে। বংশ বা জন্মপরিচয় দিয়ে দেশের উন্নতি করা যায় না। মানুষের জীবনের ব্রত হচ্ছে কর্ম কর্মের মধ্যে লুকিয়ে থাকে মানবজীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা। মানুষ কর্মের মাধ্যমে চেষ্টা চালায় জীবনে উন্নতি সাধনে, সাথে সাথে দেশ, জাতি ও সমাজের মঙ্গল সাধনে । মানুষের এ মহৎ কর্মগুণই তাকে অমরত্ব দান করে। জন্মপরিচয় বা বংশগৌরব কখনাে মহৎ গুণের মাপকাঠি নয়।

বিকল্প ২

মূলভাব : জন্ম নয়, কর্মেই মানুষের পরিচয়।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের পরিচয় তার আপন কর্মে- বংশ পরিচয় বা আভিজাত্য নয়। অভিজাত বংশে জন্মগ্রহণ করেও মানুষ যদি ভাল কাজ না করে তবে কারও কাছ থেকে সে শ্রদ্ধা ও গৌরব পায় না। প্রকৃতপক্ষে সাধনা ও কর্মের দ্বারা জীবনে মহত্ত্ব অর্জন করতে হয়। অতি সাধারণ বংশে জন্মগ্রহণ করেও যদি কেউ আপন কর্মসাধনা দ্বারা জীবন-সংসারে মহত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন তবে সে ব্যক্তি সবার আদর ও সম্মান লাভ করে থাকেন। পৃথিবীতে অনেকেই নীচবংশে জন্মগ্রহণ করেও স্বীয় মহৎ আচরণ ও পুণ্যকর্মের দ্বারা ব্যাপক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন এবং গৌরবের অধিকারী হয়েছেন। সুতরাং বলা যেতে পারে কর্মেই মানুষকে মহিমাময় করে- বংশ গৌরব বা আভিজাত্য নয়।

মন্তব্য : তাই জন্ম নয়, কর্ম দিয়েই মানুষকে নিজের প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে হবে। যে তা পারে না, তার কোন গৌরব নেই। কর্মে যে মহৎ সেই প্রকৃত মানুষ।

বিকল্প ৩

আপন জন্মের ব্যাপারে মানুষের নিজের কোনো ভূমিকা থাকে না। উঁচু বা নিচু, ধনী বা দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হওয়াটা তার ইচ্ছা বা কর্মের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু কর্মজীবনে তার ভূমিকা ও অবদানের দায় তার নিজের ওপর বর্তায়। তাই পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত বিচারে তার জন্ম-পরিচয় তেমন গুরুত্ব বহন করে না। বরং কর্ম-অবদানের মাধ্যমেই মানুষ পায় মর্যাদার আসন, হয় বরণীয়-স্মরণীয়।

সমাজে একদল লোক আছেন যারা বংশ আভিজাত্যের নিজেদের সম্ভ্রান্ত মনে করেন। তারা বংশ মর্যাদার অজুহাতে সমাজে বিশেষ মর্যাদা দাবি করেন। কিন্তু তাদের এই প্রয়াস বাস্তবতা বিবর্জিত ও হাস্যকর। সমাজের নিচুতলায় জন্ম নিয়েও মানুষ কর্ম ও অবদানে বড় হতে পারে। মানবসমাজের ইতিহাসে এরকম উদাহরণ অজস্র। পদ্ম ফুলের সৌন্দর্যই বড়। পঙ্কে জন্মেছে বলে তাকে হেয় গণ্য করা হয় না। তেমনি মানুষের কর্মের সাফল্যই বড়, জন্ম-পরিচয়ে মানুষের বিচার হীনম্মন্যতার পরিচয়ক। বস্তুত প্রকৃতির রাজ্যে মানুষে মানুষে কোনো ভেদ নেই। একদল মানুষ মানুষের ওপর আধিপত্য কায়েমের জন্যে সমাজে বড়-ছোট, ধনী-দরিদ্র ইত্যাদি ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। ধর্মীয় ব্যবধান রচনা করেছে মানুষই। ফলে সমাজে মানুষে মানুষে আপাতদৃষ্ট ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়েছে। তাই যে কোনো পেশা, যে কোনো কাজ মানুষ করুক না কেন তা সমাজে গরুত্বহীন নয়। তাকে অপ্রয়োজনীয় ও অবজ্ঞেয় করা সুস্থতার পরিচায়ক নয়। মানুষ যেখানেই জন্মাক, যে কাজই করুক, সে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে কিনা সেটাই বিবেচ্য। মানুষের কল্যাণে, সমাজের অগ্রগতিতে সে যতটা অবদান রাখে তার ভিত্তিতেই তাকে মূল্যায়ন করা হয়। সেই অনুযায়ীই তাকে সমাজে স্বীকৃতি দিতে হয়। বংশ-পরিচয়ের অজুহাতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ, ক্ষমতা ও দম্ভের শক্তিতে মানুষের ওপর জবরদস্তি করে সমাজে মর্যাদার আসন লাভ করা যায় না। তাই জন্ম-পরিচয়ের ঊর্ধ্বে আপন কর্ম-পরিচয় তুলে ধরাই হওয়া উচিত মানুষের জীবন-ব্রত। তহলেই সুকর্মের মাধ্যমে মানুষ গৌরব ও মর্যাদার আসনে আসীন হতে পারে।

বিকল্প ৪

মূলভাব: জন্ম মানুষকে বড়াে করে না, মানুষকে বড় করে তার কাজ। কর্মের মাঝেই মানুষ বেঁচে তাকে আজীবন মানুদের হৃদয়ে।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ নিজের ইচ্ছায় কোনাে উঁচু বা নীচু বংশে জন্মগ্রহণ করে না। কিন্তু কর্মের ওপর রয়েছে তার পূর্ণ ইচ্ছাশক্তি প্রতিফলনের ক্ষমতা। কর্মগুণেই একজন মানুষ সকলের প্রশংসিত বা নিন্দিত হয়ে থাকে। পৃথিবীতে যারা স্মরণীয়বরণীয় তাদের সকলেই কোনাে না কোনাে মহকর্মের কর্মী। এক্ষেত্রে উঁচু বংশমর্যাদা কিংবা নীচু বংশমর্যাদার কোনাে ভূমিকা নেই। উঁচু বংশে জন্মগ্রহণ করে কেউ যদি অপকর্মে লিপ্ত হয়, তাহলে সমাজের সকলেই তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। বংশমর্যাদা তাকে সমাজের নিন্দার কবল থেকে কখনই রক্ষা করতে পারে না। পক্ষান্তরে, নীচু বংশে জন্মগ্রহণ করেও মানুষ তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও চরিত্রগুণে সকলের প্রশংসা অর্জন করতে পারে। ইতিহাসের পাতায় এর অসংখ্য প্রমাণ আছে। শেক্সপীয়র সাধারণ ঘরে জন্মগ্রহণ করেও সাধনা ও প্রতিভা বলে বিশ্বনন্দিত সাহিত্যিকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন প্রথম জীবনে খেয়াঘাটের মাঝি ছিলেন। অধ্যবসায়, সাধনা এবং কর্মগুণে তিনি ইতিহাস খ্যাত হয়ে আছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, “কোনাে খোড়া ক্রীতদাসও যদি নিজ যােগ্যতা বলে আমিরের পদ লাভ করে, তাহলে সকলে সর্বতােভাবে তাকে মেনে চলবে, কোনাে কুলমর্যাদার প্রশ্ন উত্থাপন করবে না। সুতরাং বংশপরিচয়ই মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়, কর্মগুণেই সে পরিচিত হয়ে উঠে।

মন্তব্য: আভিজাত্য বা বংশপরিচয়ই মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি নয়। কর্মই মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি। তাই মানুষকে বিচার করতে হবে তার কাজের উপর ভিত্তি করে, বংশের উপর ভিত্তি করে নয়।

বিকল্প ৫

মূলভাবঃ বংশ পরিচয়ে মানুষের মর্যাদা বাড়ে না, মহৎ গুনাবলির জন্যই মানুষ প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হয়। সম্প্রসারিত ভাবঃ জন্মের ক্ষেত্রে মানুষের নিজের কোনো ভূমিকা থাকে না। আশরাফ বা আতরাফ, ধনী বা দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়াটা মানুষের নিজের ইচ্ছা বা কর্মের ওপর নির্ভর নয়। কিন্তু কর্মজীবনে তার ভূমিকা ও অবদানের দায় তার নিজের ওপর বর্তায়। তাই পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত বিচারে বংশ পরিচয় তেমন গুরুত্ব বহন করে না। বরং কর্ম অবদানের মাধ্যমেই মানুষ পায় মর্যাদার আসন, হয় স্মরনীয় ও বরনীয় । আশরাফ বা অভিজাত বলে অনেকে বংশ গৌরব বড় করে দেখে , কি›তু তার কাজকর্মে যদি কোনো গুন প্রকাশ না পায়, তবে সে বংশ গৌরবের কোনো অর্থ নেই। জন্ম কোথায় হলো তা দেখায় বিষয় নয়। সদবংশে জন্মগ্রহণে করেও যদি কেউ অপকর্মে লিপ্ত থাকে তবে কেউ তাকে শ্রদ্ধা করবে না। অপরপক্ষে, একজন লোক নীচ কুলে জন্মগ্রহন করেও তার কর্তব্যকর্ম ও চারিত্রিক আদর্শের জন্য সকলের অকুন্ঠ শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারে। দেশের কাছে, দশের কাছে এবং সৃষ্টি কর্তার কাছে কোনো একজন মানুষের কর্মই হলো তার বড় পরিচয়। সরোবরের শ্যাওলা অপেক্ষা গোবরের পদ্মফুলো মর্যাদা অনেক বেশি । মুসলিম জাহানের সর্বপ্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল (রা.) একজন ক্রীতদাসের সন্তান হয়েও নিজ কর্মের মাধ্যমে সকলের অকুন্ঠ শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছিলেন। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ কারো বংশ দেখবেন না। দেখবেন তার কর্ম। মন্তব্যঃ বংশের জন্য নয়, কর্মের জন্যই মানুষ প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হয়।

বিকল্প ৬

ভাব-সম্প্রসারণ : জন্ম মানুষের প্রকৃত পরিচয় বহন করে না; বরং কর্মই মুখ্য। উঁচু ঘরে কিংবা সম্রান্ত বংশে জন্ম নিয়েও মানুষ হীন কাজ করতে পারে; অন্যদিকে অতিশয় দরিদ্র পরিবারের সন্তানও তার কর্মে পৃথিবীতে বৃহৎ অবদান রাখতে পারে। সুতরাং কর্মই মানুষের পরিচয়ের একমাত্র মাপকাঠি। পৃথিবীতে একসময় নানা বৈষম্যে বংশগৌরবকে খুবই মর্যাদার বলে চিহ্নিত করা হতাে। কে কোন বংশে জন্মেছে- এ নিয়েও সম্মানের পার্থক্য করা হতাে। বরং নিচু তথা দরিদ্র বংশে যারা জন্মেছে তাদের অপমান-অপদস্তের সীমা ছিল না। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় বংশ পরিচয় প্রায় অচল। বংশ পরিচয় কিংবা বংশ মর্যাদা এখনাে মানুষকে প্রকৃত মর্যাদা দিতে সক্ষম নয়; বরং কর্মময় জীবনের কাছে জন্মগৌরব বা বংশ মর্যাদার কোনাে মূল্যই নেই। কেননা জন্ম বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে স্রষ্টার ওপর; তাই মানুষের করার কিছু নেই। অন্যদিকে, কর্ম মানুষের নিয়ন্ত্রণে। কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেকে বিকশিত করার যথেষ্ট সুযােগ পায়। আর কর্মেই প্রকাশিত হয় মানুষের মনুষ্যত্ব। সুতরাং মানুষের প্রকৃত পরিচয়ে জন্ম গৌণ, কর্মই সেখানে মুখ্য। তাই বলা যায় কর্মই জীবন’। সামন্ততান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থার কারণে মানুষের মধ্যে নানা শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষে মানুষে প্রভেদ থেকে গেলেও কোথাও কর্মকে অবমূল্যায়ন করা হয় না। সুতরাং একনিষ্ঠ শ্রম আর একান্ত কর্ম-সাধনা সর্বত্রই সমাদৃত হয়। আর তাই জন্মের পরিচয় আজ হাস্যকর ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষের দৃষ্টান্ত রয়েছে, যাদের জীবনে জন্ম বড়াে নয়, কর্মই তাদের অবিস্মরণীয় করেছে। জর্জ ওয়াশিংটন সামান্য একজন কৃষকের সন্তান হয়েও আপন যােগ্যতা ও কর্ম-সাধনায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে আরও উল্লেখযােগ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রেসিডেন্ট, প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের জন্ম হয়েছিল একজন পাটনির গৃহে। দরিদ্র পরিবারে জন্মেও কাজী নজরুল ইসলাম হয়েছেন গণমানুষের প্রিয় কবিবিদ্রোহী কবি । আমাদের চারদিকে তাকালে কর্মগুণের প্রাধান্য দেখতে পাওয়া যায়। গােবরে যে পদ্মফুল জন্মে, অথচ এর সৌন্দর্য সকলকে বিমােহিত করে। সুতরাং কর্মই প্রধান। আর মানুষের উচিত জনের জন্য যে গ্লানি কিংবা গৌরব সব পরিহার করে আপন কর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। মানবজীবনে যে যশ, সম্মান, ভালােবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, প্রতিপত্তি এসবই কর্মের ফসল, জন্মের কোনাে ভূমিকা নেই।

পৃথিবীতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার কর্মে; মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে তার কর্মের ওপর, জন্মের ওপর নয়। যারা আজ মহান মানুষ হিসেবে স্মরণীয় তাঁদের পুণ্যকর্মই ছিল একমাত্র ব্রত। সুতরাং মানুষের মহকর্মেই তার প্রকৃত পরিচয়।

আরো পড়ুন: জাল কহে, পঙ্ক আমি উঠাব না আর জেলে কহে, মাছ তবে পাওয়া হত ভার

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment