‘টৌপ’ মূল বক্তব্য আলোচনা করো | ‘টোপ’ সম্বন্ধে লেখক “এক আরণ্যক ইতিহাস, এক বিচিত্র শিকার কাহিনী” বললেও এর তাৎপর্য বহুদূর বিস্তৃত

আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “‘টৌপ’ মূল বক্তব্য আলোচনা করো | ‘টোপ’ সম্বন্ধে লেখক “এক আরণ্যক ইতিহাস, এক বিচিত্র শিকার কাহিনী” বললেও এর তাৎপর্য বহুদূর বিস্তৃত” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।

‘টৌপ’ মূল বক্তব্য আলোচনা করো | ‘টোপ’ সম্বন্ধে লেখক “এক আরণ্যক ইতিহাস, এক বিচিত্র শিকার কাহিনী” বললেও এর তাৎপর্য বহুদূর বিস্তৃত

সৃষ্টিধর্মী সাহিত্য সর্বদা তার বর্ণনার সীমা অতিক্রম করে বহুতর ব্যঞ্জনায় দ্যোতিত হয়। নদী যেমন শুধু প্রবাহের স্থানে নয়, বিস্তীর্ণ অববাহিকায় তার পলির স্বাক্ষর দেয়। তরাই অঞ্চলের অরণ্য পরিবেশে সঞ্চারিত আতঙ্ক-বীভৎসতা শিহরিত “টোপ” তাই “আরণ্যক ইতিহাস” ও “বিচিত্র শিকার কাহিনি”র এলাকা ছাড়িয়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করে শিকারি মানুষের অমানবিকতায় বর্বরতায়। ইতিহাস ও কাহিনির অতিরিক্ত এই ‘টোপ’ তাই থ্রিলার আর এলিয়ট কথিত “Nauseating reality” (ঘৃণাকর বাস্তবতা)র উপন্যাস।

বোদলেয়ার জীবনকে দেখেছেন এভাবে— “an oasis of horror in a desert of ennui” অন্য দৃষ্টিতে হলেও বলা দরকার ‘টোপ’ এ ভয়ংকর সুন্দর অরণ্য ও শিকার কাহিনি আসলে মানবাত্মার সমাধি ও ক্লান্তির (ennui) মরুভূমিতে মিশেছে। প্রথম লেখক গেলেন রামগঙ্গা এস্টেটে—দেখলেন সবুজে মোড়া প্রকৃতিকে—চারশো ফিটের নীচের নদীকে।–“ফরেস্টই বটে। পথের ওপর থেকে সূর্যের আলো সরে গেছে, এখন শুধু শান্ত আর বিষণ্ণ ছায়া।…. মাঝে মাঝে ভয়ও যে হচ্ছিল না তা নয়, এই ঘন জঙ্গলের মধ্যে হঠাৎ যদি গাড়ির ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যায়, আর তাক বুঝে যদি লাফ মারে একটা বুনো জানোয়ার—“থ্রিলারের শুরু এখান থেকেই। এর আরণ্যক জীবনের মাঝে শুধু পাঁচতারা হোটেলের বিলাসিতাই নেই, আছে রাজার শিকারের বীরকীর্তির নিদর্শন। বাস্তবিক জঙ্গল ও জঙ্গলের রাজ সর্বত্রই—“প্রাগৈতিহাসিক হিংস্রতার রাজত্ব।” মানবিকতার শত কবির ভাষায়—“Lovecomes and the beast dies” এখানে তার উলটোরথ—পশুত্ব ভালোবাসাকে মেরে ফেলে। এ যে আরণ্যক ইতিহাস—“Fearnest Forest”।

জঙ্গলে খাদ্য-খাদকের পশুর শর্তই বলীয়ান। শিকারের প্রথম রাতে লেখক অনুভব করেছেন—“কোনো একটা খাদের ভেতরে জ্বলজ্বল করছে ক্ষুধার্ত বাঘের চোখ। কালো রাত্রিতে জেগে আছে কালো অরণ্যের প্রাথমিক জীবন”। “মনে হচ্ছে এই গভীর ভয়ংকর অরণ্যের ভয়ংকর প্রাণীগুলো যেন নিশ্বাস বন্ধ করে একটা নিশ্চিত কোনো মুহূর্তের প্রতীক্ষা করে আছে।” রাজার মনেও হুইস্কির জের আর রাজরক্তের জোর যেন শিকারি কুকুরের মতো ডেকে উঠে হয়ে উঠল “Devil’s workshop”। অযথা হায়না মারেন, দু’রাত এরপরও শিকার না মেলায় অস্থির হয়ে ওঠেন। ভেতরের “relentless cruel beast” জেগে ওঠে তিন শিকার-রাতের ব্যর্থতায়। মাথায় শত শয়তানি বুদ্ধি খেলা করে “চোখে মুখে একটা চাপা আক্রোশ–ঠোঁট দুটোয় নিষ্ঠুর কঠিনতা…..আবার কখনো বা জানালার সামনে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন জলটার দিকে। আজ তিনদিন থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু শিকার করতে পারেন নি–ক্ষোভে তাঁর দাঁতগুলো কড়মড় করতে থাকে।” এখান থেকেই “টোপ”-এর জন্ম, বিচিত্র শিকার কাহিনির পরিকল্পনা। হিন্দুস্থানি কীপারের ৭-৮ বছরের একটা ছেলেকে টোপ হিসাবে ব্যবহার। কিন্তু গোড়াতেই তা বলেননি, তাই ‘টোপে’—মাছের টোপে-suspense থেকে যায় রহস্য কাহিনির মতো। তাই সেই নৈশ অভিযান—’কী টোপ’ এই রহস্য—এক শিরশিরে টানটান পরিবেশ সৃষ্টি করে—“সেই গভীর রাতে এমনি নিঃশব্দ আহ্বান সবটা মিলিয়ে একটা রোমাঞ্চকর উপন্যাসের পটভূমি তৈরি হয়েছে যেন। কেমন একটা অস্বস্তি, একটা অনিশ্চিত ভয়ে গা ছমছম করতে লাগল আমার।” রাজাবাহাদুরের সঙ্গী লেখক। আড়াইশো ফুট নীচে সাদা পুঁটলিতে কী একটা জিনিস। উত্তর এল “মাছের টোপ”। তার বেশি ব্যাখ্যা নেই, বরং ধমক মেলে। অপ্রকৃতিস্থ রাজা আর “দুর্বোধ্য নাটকের নির্বাক দ্রষ্টার মতো রাজাবাহাদুরের পাশ চেয়ারটাতে বসে রইলাম আমি।” তারপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা—মিনিট ঘণ্টা মরে যায় ঘড়িতে। তারপর বন্দুকের শব্দ— মরল বাঘ। রায়বাহাদুর বললেন ‘ফতে’। এরপর কপিকলে সেই বাঘ আর বাঘের টোপ উঠে এল। এখানেই গল্পটির শেষ দৃশ্য—শেষ suspense—শেষ পর্দা উঠল থ্রিলারের।—“কীপারের একটা ছেলে যদি জঙ্গলে হারিয়ে গিয়ে থাকে, তা অস্বাভাবিক নয়, তাতে কারো ক্ষতি নেই। কিন্তু প্রকাণ্ড রয়াল বেঙ্গলটা মেরেছিলেন রাজাবাহাদুর—লোককে ডেকে দেখানোর মতো।” গল্পকথা শেষ, আসল কথার শুরুও এখান থেকেই।

মানুষ মানুষকে পণ্য করে, মানুষ মানুষকে জীবিকা করে। ম্যাকবেথ ডাইনিদের বলেছে—“Fair is Foul. Foul is fare” “টোপ”-এ রাজা মানুষকে পণ্য করেছে সামান্য লোকের ‘বাহবা’র জন্য, লোককে দেখানোর জন্য তার টোপের আয়োজন—বাইরের ‘গুণবান মহীয়ান’ ‘Fair’ রূপের ভেতরটা ‘Foul’-এর। “টোপ” তরাইয়ের ঝোপে সেই নরপিশাচকে ধরিয়ে দিয়েছে। যার বর্ণনা শিকারের সাসপেন্স— অরণ্যের শিহরণ—নিশীথের শীতল অনুভূতি আর শেষাবধি কৌতূহলকে ধরে রেখে পাঠককে “টোপ” দেখিয়ে যাকে বলা হয়—“On theedge of theirshit”-এ নিয়ে যাওয়া। পরিবেশ সৃষ্টি ও তার উপযোগী শব্দবৃষ্টি—সব মিলিয়ে “টোপ” এক নূতন সাম্রাজ্য গড়েছে। ‘টোপ’ তাই আরণ্যক বর্ণনা, বিচিত্র শিকারেরই নয়—থ্রিলার; মানবসত্তার অন্তরে বসবাসকারী প্রেতলোকের আবিষ্কারের আশ্চর্য সৃষ্টি।

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।

Leave a Comment