দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য - ভাবসম্প্রসারণ

দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : বিদ্যা অমূল্য সম্পদ হলেও চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তির সঙ্গ ত্যাগ করা মঙ্গলজনক।

সম্প্রসারিত ভাব : চরিত্র বিদ্যার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান- সে বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। সমাজে চরিত্রহীন ব্যক্তিকে সকলেই ঘৃণা করে, সে বিদ্বান হোক অথাব মূর্খই হোক। চরিত্রহীন ব্যক্তির সঙ্গ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। প্রবাদ আছে, কোন কোন বিষধর সাপের মাথায় মূল্যবান মণি থাকে। তাই বলে কোন ব্যক্তি মণি লাভের আশায় বিষধর সাপের সাহচর্য লাভ করতে চায় তাহলে সেটি হবে বোকার কাজ। কারণ এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিটাই বেশি হবে। কারণ এতে মৃত্যুর আশংকা থাকে। তাই দুর্জন বিদ্বান ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরাও মঙ্গলজনক নয়। এতে জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ অর্থাৎ নিষ্কলুষ চরিত্রও কলুষিত হতে পারে। তাই দুর্জন ব্যক্তি অর্থাৎ চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত।

চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ আর সে চরিত্র একবার নষ্ট হয়ে গেলে সে আর মানুষ থাকে না, সে পশু বলে পরিগণিত হয়। তাই চরিত্রহীন বিদ্বান হলেও তার সাহচর্য ত্যাগ করাই শ্রেয়।

বিকল্প ১

মূলভাবঃ দুর্জন শব্দের আভিধানিক অর্থ দুষ্ট, দুরাত্মা, দুর্বৃত্ত, খারাপ লোক ইত্যাদি। আর বিদ্বান হল পন্ডিত, শুশিক্ষিত, জ্ঞানী ইত্যাদি। দুর্জন বিদ্বান হলেও নিন্দনীয় এবং এরূপ ব্যক্তির সঙ্গ বর্জনীয়।

সম্প্রসারিত-ভাবঃ মানুষ যে সমাজের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করে সে সমাজে আছে নানা ধরনের লোক-জ্ঞানি-মূর্খ, ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ নানা রকম সমাবেশ সেখানে । সঙ্গ নির্বাচনে একমাত্র বিবেচনার ‍দিক হল গুণবানের  বৈশিষ্ট্য- যার সহায়তায় জীবন হয়ে উঠে উজ্জ্বল। সেখানে দুর্জন বা চরিত্রহীন লোকের অনুপ্রবেশের কোন সুযোগ নেই। মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ তার চরিত্র। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,- the crown and glory of life is character.

চরিত্রের গুণেই মানুষ শ্রেষ্ট আর্দশের মর্যাদা পায়। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে অপরাপর বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটানো আবশ্যক। অপরপক্ষে, বিদ্যা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ । বিদ্যার হিরন্ময় দীপ্তিচ্ছটায় মানুষ হয়ে উঠে মহীয়ান। বিদ্বান সর্বত্র মর্যাদাবান ও মহাসম্মানের পাত্র । কিন্তুূ এ বিদ্বান যদি চরিত্রবান না হন, তাহলে সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় । কারন মন্দস্বভাব তার সব গুণকে ম্লান করে দেয়।

চরিত্র বিদ্যা অপেক্ষা অধিক মূল্যবান। তাই সচ্চরিত্র ব্যক্তি মূর্খ হলেও জ্ঞানার্জনের জন্যে চরিত্রহীন জ্ঞানী ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া কোন ক্রমেই ঠিক নয় । কারণ দুর্জনের সাহচর্যে নিষ্কলুষ চরিত্রও কলুষিত হতে পারে। দুর্জন ব্যক্তি বিদ্যায় বুদ্বিতে মহাপন্ডিত বলে খ্যাতিমান হলেও সবার উচিত তার সঙ্গ পরিহার করা। কারন চরিত্রহীনের বিদ্যা-বুদ্ধি চরিত্রবানের কোন কাজে আসে না।

কোন কোন বিষধর সাপের মাথায় অতিমূলবান মনি আছে বলে প্রবাদ আছে। বিষধর সাপের মূলবান মনি সংগ্রহ করতে পারলে বিপুল সম্পদের অধিকারী হওয়া যায়। কিন্তুূ তাই বলে মনি লাভের আশায় কেউ বিষধর সাপের সান্নিধ্যে যায় না। অনুরুূপ, বিদ্যা মহামূলবান বস্তুূ হলেও তা লাভেল জন্যে চরিত্রহীন-বিদ্বানের কাছে যাওয়া বিধেয় নয়। দুর্জনের বিদ্যা আর বিষধর সাপের মণি উভয়ই বিপদের কারণ হতে পারে। তাই সুন্দর জীবনের জন্যে, দুর্জনকে পরিহার করতে হবে- তার বিদ্যাবত্তা বিবেচনার যোগ নয়। চরিত্র মানুষের মূলবান সম্পদ তা আমরা জানি। তাই সব সময় আমরা চাই চরিত্রবান ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকতে তার থেকে কিভাবে সুন্দর চরিত্রবান হওয়া যায় ভাল ও মন্দের তপাত যাতে বুঝা যায়। অসৎ ও চরিত্রহীন মানুষকে সবাই ঘৃণা করে। সামনা সামনি যদিও তাকে সম্মান করা হয় কিন্তুূ পিচনে সবাই তাকে অবহেলা করে। চরিত্র মানব জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ন্য চাবিকাঠি।

মন্তব্যঃ চরিত্র মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। চরিত্র নষ্ট হলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, পশুতে পরিণত হয়। তাই চরিত্রহীন-বিদ্বানের সাহচর্য অবশ্যই পরিত্যাজ্য। চরিত্রহীন মানুষ থেকে সবাই সব সময় দূরে থাকতে চায় তাকে সবাই ঘৃণা করে। চরিত্রবান মানুষ শিক্ষিত মানুষ অপেক্ষায় অধিক উত্তম তা সকলে জানে। তাই সবাই উচিত সহচরিত্রের অধিকারী হওয়া।

বিকল্প ২

মূলভাব : দুর্জনের স্বভাব-ধর্ম অন্যের ক্ষতি করা। তাই কোনো শিক্ষিত লোক যদি চরিত্রহীন হয়, তবে অবশ্যই তার সঙ্গ পরিহার করা উচিত। কারণ, তার কাছ থেকে উপকার পাওয়ার চেয়ে বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ভাব সম্প্রসারণ : মানুষ্যত্ববিরোধী কৃপ্রবৃত্তিগুলো দুর্জন লোকের নিত্যসঙ্গী। এই ধরনের ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র দুর্বল। সমাজ, দেশ বা জাতি কেউ এদের দ্বারা উপকৃত হয় না। এরা সমাজের কলঙ্ক। এরা আত্মকেন্দ্রিক, লোভী এবং স্বার্থপর। কোনো কোনো দুর্জন লোক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয় বটে, কিন্তু বাস্তবে হয় না জ্ঞানী। তাদের শিক্ষার সার্টিফিকেট একটি কাগজ ছাড়া অন্য কিছু নয়। সার্টিফিকেট-সর্বস্ব শিক্ষা এদের চরিত্র ও মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। এরা শিক্ষিত হয়ে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। চাতুরি ও ছলনায় আরও ক‚টকৈৗশলী হয়ে এরা সহজ-সরল মানুষকে প্রতারিত করে। এদের সাহচর্যে সততার অপমৃত্যু ঘটে। মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ তার চরিত্র। মানুষের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে অপরাপর বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটানো আবশ্যক। তেমনি, বিদ্বান হওয়াও একটি গুণ। বিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ যথার্থ মানুষ হয়ে ওঠে। বিদ্বানের সংস্পর্শে এলে জ্ঞানের আলোয় মন আলোকিত হয়। কিন্তু বিদ্বান ব্যক্তি যদি চরিত্রহীন হয়, তবে তার বিদ্যার কোনো মূল্য থাকে না। সে তার বিদ্যাকে অন্যায় কাজে লাগায়। এরা নিজের স্বার্থ বা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য যেকোনো কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে। চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তির কাছ থেকে বিদ্যা লাভ করে জীবনে কোনো কল্যাণ সাধন করা যায় না। তাই দুর্জন যদি বিদ্বানও হয়, তবু তার সান্নিধ্য ও সংশ্রব ত্যাগ করাই মঙ্গলজনক।

মন্তব্য : বিদ্যা অমূল্য ধন। কিন্তু এ ধন অর্জনকারী ব্যক্তি চরিত্রহীন হলে তা অসৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারে। তাই তার সঙ্গ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।

আরো পড়ুন: জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment