ধনের মানুষ অপেক্ষা মনের মানুষই বড় – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “ধনের মানুষ অপেক্ষা মনের মানুষই বড় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

ধনের মানুষ অপেক্ষা মনের মানুষই বড় - ভাবসম্প্রসারণ

ধনের মানুষ অপেক্ষা মনের মানুষই বড় ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : যার ধন-দৌলত আছে তিনি ধনী। কিন্তু ধনীর যদি মন ছোট হয় তাহলে সে ধনী হয়েও প্রকৃত মানুষ বলে গণ্য হবে না। যে ব্যক্তির মন উদার ও প্রশস্ত তিনিই প্রকৃত মানুষ।

সম্প্রসারিত ভাব : পার্থিব ঐশ্বর্যের অধিকারীকে সাধারণ মানুষের ওপর সাময়িক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেয় বটে, কিন্তু তা কখনো তাদের অন্তরে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তার মূর্খতা নিয়ে আড়ালে থেকে সবাই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে এবং তার মন্দ কাজের জন্য অভিশাপ দিয়ে থাকে। আবার অনেকেই তাকে মানুষ না বলে, পশু বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। কিন্তু যেসব ব্যক্তি জ্ঞানী, প্রতিভাবান, চরিত্রবান এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী তাঁদের দেখলে মানুষের মাথা আপনিই নত হয়ে আসে এবং তাঁদের অন্তর অপূর্ব ভক্তিরসে সিক্ত হয়ে যায়। এসব মহৎ ব্যক্তি কখনো মানুষের কাছে সমাদর প্রত্যাশা করেন না, কিন্তু মানুষ তাঁদের ভক্তি ও সমাদর করে এবং চিরকাল তাঁদের স্মরণ করে থাকে। তাই মরেও তাঁরা এ জড় পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে, ঐশ্বর্যশালীর সমাদর ক্ষণস্থায়ী। মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে তার নাম চিরতরে লুপ্ত হয়ে যায়। নিজের আত্মীয়স্বজনরাও কখনো তাদের মনের রাজ্যে তাকে আর ঠাঁই দিয়ে রাখে না। মরার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নামেরও মৃত্যু হয়। আবার কেউ যদি পার্থিব ধন ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েও তা মানবকল্যাণে ব্যয় না করে, তাহলে তাকে বলতে হবে সে নিতান্তই ছোট মনের অধিকারী। তার দ্বারা সমাজ, দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণ হতে পারে না। তাই জীবদ্দশায় যেমন তাকে কেউ ভালোবাসে না, তেমনি মৃত্যুর পরও কেউ তাকে স্মরণ করে না। সুতরাং ধনসম্পত্তি, অর্থকড়ি যার আছে সে বড় নয়। তার চেয়ে বরং যে বড় মনের অধিকারী সেই আসল মানুষ। বড় মনের মানুষ ভালোবাসে উদারভাবে, সুন্দরভাবে এবং সে ভালোবাসা নির্মল ও পবিত্র। কেবল ধন-দৌলতের মাপকাঠিতে কোনো মানুষকে বিচার করা যায় না। দেখতে হবে ধনী ব্যক্তিটির মন কিরূপ— তার মন প্রশস্ত এবং উদার কিনা।

মন্তব্য : যদি ধনী ব্যক্তির মন ছোট হয় তাহলে সে প্রকৃতপক্ষে মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তির প্রচুর ধন-সম্পদ নেই, কিন্তু মন প্রশস্ত তিনিই প্রকৃত মানুষ।

বিকল্প ১

মূলভাব : ধন থাকলেই ধনী হওয়া যায় না। ঐ ব্যক্তিই ধনী যার হৃদয় প্রশস্ত।

সম্প্রসারিত ভাব : পাথির্ব ঐশ্বর্যের অধিকারীকে সাধারণ মানুষের উপর সাময়িক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেয় বটে; কিন্তু তা কখনও তাদের অন্তরে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। মুর্খ ব্যক্তি ধনী হলেও সে শুধু মৌখিক সমাদরই পায়, সম্মান পায় না। তার মুর্খতা নিয়ে সবাই হাসি-তামাসা করে। কিন্তু যে সকল ব্যক্তি জ্ঞানী, প্রতিভাবান, চরিত্রবান এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী, তাদের দেখলে মানুষের মাথা আপনিই নত হয়ে আসে এবং তাদের অন্তর অপূর্ব ভক্তিরসে সিক্ত হয়ে যায়। তাই মরেও তারা এ পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে, ঐশ্বর্যশালীর সমাদর ক্ষণস্থায়ী। মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ পৃথিবী হতে তার নাম চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। নিজের লোকেরাও তার নাম স্মরণ করে না।

মন্তব্য : ধনাঢ্য ব্যক্তির চেয়ে মহৎ হৃদয়ের অধিকারী প্রকৃত মানুষ।

বিকল্প ২

ভাব-সম্প্রসারণ : ধনসম্পদের অধিকারী হলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্যে প্রয়োজন মনের উদারতা ও বিশ্বাস। তাই ধন থাকলেই ধনী হওয়া যায় না। ধনী হওয়ার জন্যে প্রয়োজন প্রশস্ত মন। 

একদিকে ঐশ্বর্য-আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে ত্যাগ-মহিমা; একদিকে আত্মসুখ, অন্যদিকে মানব কল্যাণ- মানব- জীবনের এই দুই দিগন্ত। এক দিগন্ত তাকে ডাকে আত্ম-পরিধির মধ্যে, অন্য দিগন্ত ডাকে বিশ্বের পরিধিহীনতার মধ্যে। বিত্ত এবং চিত্তের মধ্যে স্থাপন করতে হবে সুষম সংগতি। ‘বিত্ত’ যেন বিষয়-বিষ-বিকারে পরিণত না হয় এবং ‘চিত্ত’-ও যেন কেবল স্বপ্ন-বিলাসিতার প্রতীক মাত্র না হয়। বিত্ত-বাসনা এবং চিত্ত-বিলাসের মধ্যে সংগতি স্থাপিত না হলে জীবনের সার্থকতা নেই। আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান ব্যক্তি রয়েছে। কিন্তু এসব বিত্তবানের সমাদর ক্ষণস্থায়ী। তারা সমাজে সাময়িকভাবে সমাদৃত হলেও মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিতে পারে না। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই পৃথিবী থেকে তাদের নাম চিরতরে বিলীন হয়ে যায়, এমনকি আপন জনেরাও তাদের নাম স্মরণ করে না। মূর্খ ব্যক্তি ধনী হলে সে শুধু মৌখিক সমাদরই পায়, সম্মান পায় না। তার মূর্খতা নিয়ে সবাই হাসি-তামাসা করে। কিন্তু যাঁরা জ্ঞানী, প্রতিভাবান, চরিত্রবান এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী, তাঁদের দেখলে মাথা আপনিই নত হয়ে আসে। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। তাই মৃত্যুর পরেও তাঁরা পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। 

অর্থ মানবজীবনে যে সর্বনাশ ডেকে আনে, হৃদয়বত্তাই মানুষকে সেই সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এ ছাড়া চিত্তের নির্দেশে বিত্তের সদ্ব্যবহার হলে মানুষ আর আত্মসুখ-সর্বস্ব হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাসের সামগ্রী ধন নহে।’ যিনি উদারচেতা মহাপুরুষ, তিনি বিত্তের দাস না হয়ে বিত্তকেই নিজের দাসে পরিণত করেন। এটাই মনুষের আদর্শ হওয়া উচিত।

বিকল্প ৩

ভাব-সম্প্রসারণ : হৃদয়হীন ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিরা মানুষের ওপর দৃশ্যত প্রভাব ফেললেও তারা মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে পারে না। অন্যদিকে, মানুষের প্রতি যাদের রয়েছে অসীম সহানুভূতি ও মমত্ব, যাদের হৃদয় সমুদ্রের মতাে বিশাল তারাই প্রকৃত মানুষ । অতএব, মানবজীবনে ধন-সম্পদের চেয়ে মনুষ্যত্বের মূল্যই অধিক। পার্থিব ধন ও মনের ধন— এই দুধরনের ধনে মানুষ ধনী হতে পারে । একদিকে ঐশ্বর্য আকাক্ষা, অন্যদিকে ত্যাগ-মহিমা; একদিকে আত্মসুখ, অন্যদিকে মানবকল্যাণ- মানবজীবনের এই দুই দিগন্ত । এক দিগন্ত তাকে ডাকে আত্ম-পরিধির মধ্যে, অন্য দিগন্ত ডাকে পরহিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে । মানুষকে এই দ্বৈত ডাক শুনে ধন ও মনের মধ্যে সুসংগতি স্থাপন করে নিতে হয় । বিত্ত যেন চিত্তহীন না হয় এবং চিত্ত যেন শুধু স্বপ্ন-বিলাসিতায় ডুবে না থাকে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা বিত্ত-বাসনা। ও চিত্ত-বিলাসের মধ্যে সুসংগতি স্থাপিত না হলে জীবনের সার্থকতা নেই। আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে মনে হয়, যাদের প্রচুর টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত আছে তারাই বড়াে। বস্তুত তা নয়। পৃথিবীতে ধনের মানুষের চেয়ে মনের মানুষই বড়াে । মানবসমাজের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, অনেক মানুষ রয়েছে যারা অর্থ-সম্পদহীন, দরিদ্র । কিন্তু মানুষের কাছে তারা প্রচুর সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা পায়। এর কারণ তারা মনের দিক থেকে অনেক বড়াে। ক্ষুদ্র স্বার্থ বা নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকা তাদের স্বভাব নয়, বরঞ্চ তারা পরােপকারী এবং মানুষের বিপদের বন্ধু। তারা সমাজের ছায়া, জাতির আদর্শ। ফলে মানুষ তাদের ভুলে যায় না। পক্ষান্তরে, কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা সবসময় নিজেদের স্বার্থ চিন্তায় মশগুল থাকে। ন্যায়অন্যায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে এসব মানুষ নানাভাবে অর্থ কামিয়ে সম্পদের পাহাড় বানায়। তারা সাময়িকভাবে সমাজে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে এবং চাটুকারদের কাছ থেকে আন্তরিকতাহীন সম্মানও লাভ করে থাকে। অথচ সম্পদের দাপট ফুরালে তাদের আসল চরিত্র উন্মােচিত হয় এবং সমাজে অপাংক্তেয় বলে নিন্দিত হয়ে থাকে। এসব মনুষ্যত্বহীন লােক জীবিত অবস্থায় নগণ্য এবং মৃত্যর পর পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন তথা মানুষের মন থেকে চির-বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যায় । কিন্তু যারা হৃদয়বান, মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, জীবিত অবস্থায় তারা যেমন মানুষের ভালােবাসায় সিক্ত তেমনি মৃত্যুর পরেও মানুষ তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে । তাই তারা পৃথিবীতে মরেও অমর; সবার কাছে চিরদিন স্মরণীয় ও বরণীয় । অঢেল ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও যার মন ক্ষুদ্র, আত্মা দরিদ্র, মানুষ হয়েও সে পশুর চেয়ে অধম । প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়ােজন মনের উদারতা এবং মনুষ্যত্ব অর্জন । অতএব, হৃদয়হীন ধনী ব্যক্তির সামাজিক প্রতিপত্তি থাকলেও মানবিক কোনাে শ্রদ্ধা তার প্রাপ্য নয়। তাই আমাদের বিত্তের চাইতে চিত্তের উৎকর্ষ অর্জনেই অধিক যত্নবান হতে হবে ।

বিকল্প ৪

মূলভাব : অপরিসীম সম্পদের অধিকারীকে সাধারণ মানুষের ওপর সাময়িক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেয় বটে, কিন্তু তা কখনো তাদের অন্তরে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

সম্প্রসারিত-ভাব : মানবতাবোধ ও মনুষ্যত্বচেতনা মানব চরিত্রের ভূষণ। জাগতিক কামন, বাসনা, ষড়রিপু অবিরত হাতছানি দেয় যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতাব্যাপ্ত ইচ্ছেগুলোকে। পরিহাসপূর্বক মানবতার সেবায় জনহিতৈষণায় আত্মনিয়োগ করাই সমীচীন। ধনসম্পদ বলে মানুষ ধনী হয় কিন্তু প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। বরং অগাধ বিত্ত বৈভব আরও লোভের জন্ম দেয় আর লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। ধন মানুষকে সমাচ্ছন্ন-মোহচ্ছন্ন করে রাখে। জীবন জীবিকার তাড়নায় ও তাগিদে ইহলোককে সার্থক করে নরলোকে জাহান্নামবাসী হওয়া কোনো বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন মনুষ্য সন্তানের জন্য কাম্য হতে পারে না। তাই ধনের পরিবর্তে মনুষ্যত্বের চর্চা করাই বিধিসম্মত। যে ব্যক্তি মূর্খ, কোনো প্রকার জ্ঞানের অধিকারী নয়, সে যদি ঐশ্বর্যশালী হয় তবে মানুষ তাকে মৌখিক সমাদর করলেও সম্মান করে না। সম্মুখে তাকে কিছু না বললেও পশ্চাতে তার মূর্খতা নিয়ে তারা উপহাস করে। কিন্তু যে সকল ব্যক্তি জ্ঞানী, প্রতিভাবান, চরিত্রবান এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী, তাঁদের দেখলে মানুষের মাথা অনায়াসে অবনত হয়ে আসে এবং তাদের অন্তর ভক্তিরসে সিক্ত হয়ে যায়। এ সকল মহৎ মনুষ্যসন্তান মানুষের কাছে কখনো সমাদর প্রকাশ করেন না। কিন্তু জাগতিক মানুষ তাঁদের ভক্তিভরে স্মরণ করে এবং চিরকালের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নাম লিখে রাখে। পক্ষান্তরে, ঐশ্বর্যশালীর প্রতিপত্তি ক্ষণস্থায়ী মৃত্যুর সাথে সাথে তার নাম নশ্বর পৃথিবী হতে মুছে যাবে। এমনকি স্বজনদের স্বরণেও তিনি হন চিরতরে লুপ্ত। মোটকথা, ঐশ্বর্যসমৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গ মানুষের উপর বাহ্য প্রভাব বিস্তার করলেও, তাঁদের হৃদয়ভাণ্ডারে প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হন। মৃত্যুর অমোঘ পরশের সাথে সাথে তাঁদের নামের চিরপ্রস্থান ঘটে। তাই তারা ধনের মানুষ হলেও মনের মানুষ নন। তারা ধনী হলেও প্রকৃতপক্ষে মহৎ ও সচ্চরিত্রবান নয়, বড় মানুষদের সঙ্গে তুলনা করলে তারা নিতান্তই দরিদ্র, হীনবল।

অগাধ সম্পত্তির অধিকারী হলেই মানুষ বড় হয় না। কারণ অর্থ-সম্পদ মানুষের মনের মুক্তি আনয়ন করে না। মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমেই কেবল মনের মুক্তি সম্ভব। তাই অর্থ নয় মনের মানুষই বড়।

বিকল্প ৫

মূলভাব: প্রচলিত ধারণা অনুসারে যার ধনসম্পদ বেশি, সে বড়াে বলে বিবেচিত। অর্থসম্পদ মানুষকে সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে সাহায্য করে, নিজেকে বড়াে বলে ভাবার সুযােগ তৈরি করে দেয়। কিন্তু অর্থসম্পদ বেশি হলেই যে কেউ বড়াে বলে বিবেচিত হবে, তা নয়। যার মন বড়াে অর্থাৎ যিনি উদার, পরােপকারী, সৎ, তিনিই যথার্থ বড় মাপের মানুষ ।

ভাবসম্প্রসারণ: পার্থিব জীবনে জীবনধারণের জন্যে সম্পদের প্রয়ােজন সকলেরই। বিশেষ করে সাংসারিক জীবনে অর্থের প্রয়ােজন অনেক বেশি। কিন্তু অর্থ দিয়ে মন ক্রয় করা যায় না। স্নেহ, ভালােবাসা, মমতা, সেবা, পরােপকার ইত্যাদি টাকাপয়সার অনেক ওপরে। বড় মনের মানুষ অনেক মহৎ। ধনের মানুষ আর মনের মানুষের মধ্যে বিস্তর তফাত রয়েছে। ধনের মানুষকে অনেকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তােষামােদ করে। ধনের মানুষ নিজেকে নিজে বড়াে বলে জাহির করে। এ ধরনের মানুষ মরে যাওয়ার সাথে সাথে পৃথিবী থেকে তাদের নাম মুছে যায়। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি জ্ঞানী, পরােপকারী, চরিত্রবান ও মহৎ হৃদয়ের অধিকারী তাঁর ধনসম্পদ না থাকলেও মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে, ভালােবাসে। এ ধরনের মানুষ কোনাে কিছু প্রত্যাশা করেন না। তাই মরে গিয়েও এঁরা অমর হয়ে থাকেন। পৃথিবীর অনেক মহৎ ব্যক্তি আজও স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন তাঁদের মহৎ গুণের জন্যে। এঁদের অনেকেই অঢেল বিত্ত-বৈভবের অধিকারী ছিলেন না। কিন্তু ছিলেন উদার, মহৎ ও পরােপকারী মানুষ। এ গুণই তাদের বড়াে মানুষে পরিণত করেছে। ধনবান ব্যক্তিকে মানুষ শ্রদ্ধা করে স্বার্থের জন্য, কিন্তু হৃদয়বান মানুষকে শ্রদ্ধা করে ভালােবেসে। তাই হৃদয়বান মানুষ চিরদিন। মানুষের মনে অমর হয়ে থাকেন।

বিকল্প ৬

মানুষ জন্ম থেকেই দুটি পরিধির মধ্যে বাস করে। একটি আত্মপরিধি অন্যটি বিশ্বপরিধি। একদিকে থাকে আত্মসুখ ও ঐশ্বর্য আকাক্সক্ষা অন্যদিকে থাকে ত্যাগ ও মানবকল্যাণের চিন্তা। আত্মপরিধি সম্পন্ন মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। কারণ প্রকৃত মানুষ যারা তারা অপরের হিতকামনা করেন। সহানুভূতি, পরার্থপরতা ও সমষ্টিগত কল্যাণবোধ ছাড়া মনুষ্যত্ব থাকে না। এ গুণগুলো মানুষকে সুন্দর মনের অধিকারী করে তোলে। পরোপকারী ও ত্যাগী মনের মানুষই প্রকৃত মানুষ। জনসাধারণের কাছে সংকীর্ণ মনসম্পন্ন প্রবল অর্থঃ শালী লোকের কোনো মূল্য নেই। তারা আপাত সম্মান পেলেও হৃদয়ের শ্রদ্ধাবোধ পায় না কখনই। মৃত্যুর সাথে সাথে তার নামও বিলীন হয়ে যায় পৃথিবী থেকে। মৃত্যুর পর মানুষ আর তাকে স্মরণ করে না কখনই। একমাত্র পরোপকারী মনের অধিকারী বিত্তবান মানুষ সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কথায় বলে ‘বিত্তের চেয়ে চিত্ত বড়।’ সুন্দর মনের মানুষ সম্পদহীন হলেও অপরের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পায়। মানুষ তাকে মৃত্যুর পরেও অনন্তকাল মনে রাখে। মৃত্যুর পরও সে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় হয় সিক্ত।

শিক্ষা: ধন-ঐশ্বর্য নয়, মানবকল্যাণকামী সহানুভূতিশীল মনই মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করতে পারে। এ ধরণের মানুষই প্রকৃত মানুষ।

বিকল্প ৭

ধন থাকলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। ঐ ব্যক্তিই প্রকৃত মানুষ যার মন উদার।

সম্প্রসারিত ভাব: মানব জীবনে অর্থ-সম্পদের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। কিন্তু এ অর্থ-সম্পদ যদি মানব কল্যাণে ব্যয়িত না হয়, তবে এ কোনো মূল্য নেই। এ জন্য সংকীর্ণমনা ব্যক্তিরা মহা সম্পদশালী হলেও স্মরণীয় বা বরনীয় হতে পারে না। আর্থের সেবা, দুঃখীর দুঃখ মোচন তথা মানব কল্যাণে তাদের অর্থ ব্যয় হয় না বলে সমাজে তাদের সমাদর ক্ষণস্থায়ী। বিত্তের বৈভাবে তারা সমাজে মাসয়িকভাবে সমাবৃত হলেও মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিতে পারে না । তাদের সয়কীর্নতা ও অনুদারতা নিয়ে সবাই হাসি তামাশা করে। মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই এ পৃথিবী থেকে তাদের নাম চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। নিজের লোকেরাও তাদের নাম স্মরণ করে না। পক্ষান্তরে, মানুষের মন এমন এক বস্তু যা মানুষকে অতি উচ্চাসনে নিয়ে যেতে পারে। যে হৃদয় মানব দরদি ও মানব হিতৈষী সেই হৃদয়অধিকারীকে দখেলে মানুষের মাথা আপনিই নত হয়ে আসে এবং তাদের অন্তর অপূর্ব ভক্তিরসে সিক্ত হয়। মানব কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হযরত মোহাম্মদ (সা.), বেগম রোকেয়, মাদার তেরেসার মতো আরও অনেকে মৃত্যুর পরও এই পৃথিবীতে অমর ও অনুকরণীয় হয়ে আছেন তাদের উদার মনমানসিকতার কারণেই। মন্তব্য: ধর্নাঢ্য ব্যক্তির চেয়ে মহৎ হৃদয়ের অধিকারীই প্রকৃত মানুষ

আরো পড়ুন: Speech On Climate Change

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment