নাম মানুষকে বড় করে না, মানুষই নামকে জাঁকাইয়া তােলে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “নাম মানুষকে বড় করে না, মানুষই নামকে জাঁকাইয়া তােলে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

নাম মানুষকে বড় করে না, মানুষই নামকে জাঁকাইয়া তােলে - ভাবসম্প্রসারণ

নাম মানুষকে বড় করে না, মানুষই নামকে জাঁকাইয়া তােলে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : নাম মানুষের প্রধান বিচার্য বিষয় নয়, গুণই মানুষের, প্রধান বিচার্য বিষয়।

সম্প্রসারিত-ভাব : পিতা-মাতা যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করে পুত্র কন্যার নাম রাখেন। নামের প্রতিই তাদের সবচেয়ে বেশি ঝোক দেখা যায়। সন্তানের জীবনে নামের মর্যাদা রক্ষিত হােক-এমনটি কামনা করে তারা বিভিন্ন মহাপুরুষদের নামের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণ করেন। কিন্তু পিতা-মাতা বা গুরুজনদের এ বাসনা সবসময় পূর্ণ হয় না। অনেক সময় এ নাম কানা ছেলের নাম “পদ্মলােচন” এর মতই অর্থহীন হয়ে পড়ে। আবার মাঝে মধ্যে এমনও দেখা যায় যে, চেষ্টা ও চরিত্রগুণে মানুষ অনেক সময় তার অনুত্তম নামকেও গৌরবান্বিত ও মর্যাদাশীল করে তুলেন। তখন ঐ নামই পরবর্তীকালে শুতিমধুর এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়ে মাতা-পিতার মুখ উজ্জ্বল করে। বস্তুত গুণই মানুষের প্রধান আলােচ্য বিষয়। গুণের দ্বারাই মানুষ পৃথিবীতে অমর হয়ে বেঁচে থাকেন। তাদের কর্ম এবং নাম হয় মানুষের কাছে স্মরণীয় এবং বরণীয়। গােলাপকে যে নামেই ডাকা হােক না কেন তা ঠিক মত গন্ধ বিতরণ করে মানব চিত্তকে বিমুগ্ধ করবেই। নাম কিংবা বংশ পরিচয়ই বড় নয়। কর্মফলই নামকে স্মরণীয় করে রাখে‌।

বিকল্প ১

মহাকালের অনন্ত প্রবাহে মানুষ পায় সীমাবদ্ধ এক জীবন। সেখানে Life is a vision between a sleep and a sleep- অনন্ত ঘুমের মধ্যে ক্ষণিকের জন্যে চোখ মেলে তাকানো। এই ক্ষণিক সময়ে প্রত্যেক মানুষই তার পরিচয় চিহ্নিত করার জন্যে পায় নিজস্ব একটি নাম। কালের প্রবাহে তাদের অনেকের নামই হারিয়ে যায়। কিন্তু কর্মকৃতির জন্যে কারো কারো নাম পায় মহিমা, উত্তর-পুরুষের কাছে হয় স্মরণীয়।

জীবন অবসান হলেও যে সব মানুষের নাম স্বরণীয় হয়ে থাকে তাঁরা তাঁদের নামের কারণে স্মরণীয় হন না, স্মরণীয় বরণীয় মহিমা পান তাঁদের কর্মের জন্যে। মহৎ সাধনা ও অসামান্য কর্ম-অবদানের জন্যে মানুষের নাম মানুষ মনে রাখে। কোনো কীর্তি না থাকলে কারো নাম মানুষ স্মরণ করে না। যতই চিত্ত-বৈভব, প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকুক, নাম যতই জৌলুসপূর্ণ হোক কর্মসাধনায় নির্বেতি প্রাণ না হলে সে নাম মুছে না যেয়ে পারে না। রবীন্দ্রনাথ বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু ঐ পরিবারের সকলকে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের নাম। নজরুল সাধারণ পরিবারে জন্মেছিলেন। কিন্তু অসামান্য অবদানের জন্য তাঁর নাম চির জাগরুক হয়ে আছে আমাদের মধ্যে।

মানুষ ক্ষণস্থায়ী জীবনকে মহিমান্বিত করতে পারে তাঁর কর্ম-অবদানের মধ্য দিয়ে। মহৎ কীর্তির বলে মানুষের নাম দেশ কালের সীমারেখা ছাড়িয়ে যায়।

বিকল্প ২

মূলভাব: মানব শিশু জন্মের পরে তার একটি নাম দেওয়া হয়, সে যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন। আবার প্রতিটি মানুষের ভেতরেই রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতিভাবান মানুষ সেই অমিত সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে হতে পারেন স্মরণীয়, বরণীয়। ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্বাক্ষরিত করতে পারেন স্বর্ণাক্ষরে।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের একটি সুন্দর নাম থাকে। কিন্তু সুন্দর নামই যে মানুষকে সুন্দর করবে, তার কোনাে নিশ্চয়তা নেই। অথবা, সুন্দর একটি নামই যে মানুষকে খ্যাতিমান করে তুলবে তারও কোনাে নিশ্চয়তা নেই। বরং সৎকর্মের জন্যই মানুষের নাম ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে। কারণ, মানুষের চূড়ান্ত পরিচয় ও ভূমিকা মূল্যায়িত হয় তার কৃতকর্মের দ্বারা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিখ্যাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই তিনি স্মরণীয় নন, পারিবারিক পরিচয় ছাপিয়ে রবীন্দ্রনাথ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তাঁর অনন্য সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে।

অনুরূপভাবে কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন একটি সাধারণ দরিদ্র পরিবারে, কিন্তু অসামান্য অবদানের জন্য নজরুলের নাম আজ ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। আমরা এ থেকে বুঝতে পারি যে, মানুষ তার নামকে মহিমান্বিত করতে পারে মহৎ সাধনা কিংবা কীর্তিময় কাজের দ্বারা। তাই প্রতিটি বুদ্ধিমান মানুষ মহৎ কাজের প্রতি নিজেকে ধাবিত করে। শুধু নামকে কেন্দ্র করে খ্যাতি অর্জন করার জন্য বসে থাকে না।

মন্তব্য:ভালাে নাম রাখার ক্ষেত্রে কোনাে নিষেধ নেই। কিন্তু এটিও মনে রাখতে হবে যে, ভালাে নাম রাখলেই মানুষ ভালাে হয় না, বরং ভালাে কাজের মধ্য দিয়ে মানুষকে ভালাে মানুষ হতে হয়।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment