নীচ যদি উচ্চ ভাবে, সুবুদ্ধি উড়ায় হেসে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “নীচ যদি উচ্চ ভাবে, সুবুদ্ধি উড়ায় হেসে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

নীচ যদি উচ্চ ভাবে, সুবুদ্ধি উড়ায় হেসে - ভাবসম্প্রসারণ

নীচ যদি উচ্চ ভাবে, সুবুদ্ধি উড়ায় হেসে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : সব জিনিসের মর্যাদা সবাই বোঝে না। তাই যথাযথ স্থানে যথাযোগ্য ব্যক্তি অধিষ্ঠিত না হলে সত্য, সুন্দর, মঙ্গল ধূলিষ্মাৎ হয়। সেখানে স্থান করে নেয় অত্যাচার, জুলুম ও দুর্নীতি।

সম্প্রসারিত-ভাব : সমাজে ভালো মন্দ উভয়ের অবস্থান পাশাপাশি রাত ও দিনের মত। তাই দেখা যায় একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি ভাবা যায় না। আলো অবস্থান হলে যেমন অন্ধকার থাকে না। তেমনি অন্ধকার প্রবল হয় আলোর অভাবে, তখন পথিক পথ হারায়, ভুবনের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। তেমনি সমাজে উঁচু-নীচু, ভালো-মন্দ, মান-অপমান বিদ্যমান। যারা উঁচু সম্মান, গৌরবের অধিকারী তারা সমাজের সকল কলুষতা দূর করে, পঙ্কিলতা মুঝে দিয়ে আবিলতা দূর করে সমাজকে সত্য, সুন্দরের পরশ পাথরে শোভিত করে তোলে। মানুষের প্রতাশা ও স্বপ্নের চাহিদানুযায়ী স্বর্গীয় সমাজ গড়ে তোলে। আর এর জন্য প্রয়োজনে তারা জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিতেও দ্বিধা করে না। তারা মহৎ সুতরাং তারা বোঝে মহত্ত্বের মূল্য, কল্যাণোর প্রয়োজন, মানবতার মুক্তি। তাই তারা যেমন প্রাণপন চেষ্টা করে তা প্রতিষ্ঠা করে আবার তা টিকিয়ে রাখার জন্য তেমনি জীবন বাজী রাখে। অন্যদিকে যারা হীন নিচু, মানবতাহীন, সংকীর্ণমনা, তারা সৎ, ন্যায়, কল্যাণ আদর্শের মর্ম বোঝে না বরং এগুলো শুনলে তাদের যেন গায়ে ঝালাফালা করে, তারা তাদের কলুষ মনোবৃত্তি বাস্তবায়নে হীন প্রবৃত্তিকে লাগানমহীন ঘোড়ার মত ছেড়ে দেয়, শুধু স্বার্থপরতা, সংকীর্ণমনা মনোভাব তাদেরকে পরিচালিত করে। আর যা ভালো ঐশ্বরিক গুণাবলী, মানবীয় গুণাবলী তাদের চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তারা তখন সেগুলোকে পদদলিত মথিত ও সমূলে উৎপাটনে ব্রতী হয় এবং বাস্তবায়নের জন্য নীতিহীন একটি দানবে পরিণত হয়। ফলে সমাজ সভ্যতা এক চরম সংকটে নিপতিত হয়। যেমন হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনী তখন শত শত লাইব্রেরি পুড়িয়ে উল্লাস করত, জ্ঞানী-গুণীদেরকে বিনা কারণে হত্যা করতো। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যেমন একাত্তরের ২৫ মার্চে চরম উল্লাস ও উৎসাহে নিধন চালিয়েছিল আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজের। আর তারই প্রতিবাদে যুগে যুগে মানব-মানবতা ও আদর্শ প্রেমিকরা রুখে দাঁড়িয়েছে, জীবন বাজী রেখেছে যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সভ্যতা আজও টিকে আছে এবং টিকে থাকবে।

তাই আমাদের উচিৎ সৎ, যোগ্য উপযুক্ত লোককে যথাযথ স্থানে বসানো।

বিকল্প ১

মূলভাব: সমাজে যাদের গুরুত্ব ও মর্যাদা কম, তারা যদি গুরুত্বপূর্ণ বা মর্যাদাবান ব্যক্তির মতাে কথা বলেন তাহলে তা একেবারেই নির্বুদ্ধিতা। সুবুদ্ধিসম্পন্ন লোক এ নির্বুদ্ধিতাকে মােটেও গুরুত্ব দেন না।

সম্প্রসারিত ভাব: (Allah) স্রষ্টার সৃষ্ট সব মানুষ সমান। কুল, মান, ধন বা সৌন্দর্যের নীচতার জন্য কাউকে ছােট ভাবা কিংবা অবহেলা করা উচিত নয়। এ কথা সর্বাংশে সত্য। কিন্তু একথাও সত্য যে, স্রষ্টার বিভিন্ন সৃষ্টির মধ্যে আকৃতিগত, পরিমাণগত, মাত্রাগত এবং তাৎপর্য, গুরুত্ব ও সৌন্দর্যের দিক থেকে নানা বৈচিত্র্য বিদ্যমান। স্রষ্টার কোনাে সৃষ্টিই গুরুত্বহীন না হলেও কোনাে সৃষ্টি বৃহৎ, আবার কোনােটি ক্ষুদ্র, কোনােটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কোনােটি কম গুরুত্বপূর্ণ। তাই ক্ষুদ্র কিংবা কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিজেদেরকে উচ্চস্তরের সৃষ্টির সমকক্ষ ভাবা একেবারেই অর্থহীন।
নিজেদের অনেক উপরে তুলে ধরার এ মানসিকতা একদিকে যেমন নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে, অন্যদিকে প্রকৃতির রাজ্যে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সমাজে কেউ শিক্ষাদীক্ষায় বেশ উন্নত, কেউ আবার একেবারেই অনুন্নত, কারাে সামর্থ্য ও ক্ষমতা অনেক বেশি, কারাে আবার কম। কিন্তু কম যােগ্যতাসম্পন্ন কিংবা কম শিক্ষিতদের অধিক যােগ্যতার আসন দাবি করা অনুচিত। তাদের এ দাবি সমাজের অধিক যােগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা সহজে মেনে নিতে পারে না। আর এ কারণে সমাজে নানারকম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পৃথিবীর সব সমাজেই এ দিকটি কম-বেশি লক্ষ করা যায়। কিন্তু যারা বুদ্ধিমান তারা অযােগ্যদের এ আস্ফালনকে বােকামি কিংবা নির্বুদ্ধিতা ভেবে তাকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়ােজন মনে করেন না।

মন্তব্য: অযােগ্যদের আস্ফালনকে বিবেচনা না করে বরং তাকে বােকামি কিংবা নির্বুদ্ধিতা রূপেই বিবেচনা করা সুবুদ্ধির পরিচায়ক।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment