পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা সকল শ্রেণির জন্য (৭,৮,৯,১০ম শ্রেণি)

রচনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পড়াশোনার জীবনে। তার মধ্যে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা। মানুষের সৃজনশীল শক্তি বাড়িয়ে দেয় রচনা। আমাদের উচিত অনেক বেশি বেশি করে রচনা পড়া। এতে আমাদের সৃজনশীল শক্তি অনেকগুণ বেড়ে যাবে। তো চলুন আজকে আপনাদের জন্য আমদের নিয়ে আসা পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।

সংকেত: ভূমিকা, পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা, বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া, পরিবেশ দূষণের প্রতিকার ও প্রতিরােধ, উপসংহার। 

ভূমিকা :

মানুষের চারপাশে যে পানি, বায়ু, তাপ, আলাে, শব্দ, বৃক্ষরাজি, পাহাড়-পর্বত, খাল-বিল, পুকুর, নদী-নালা, সমুদ্র এবং এই প্রকৃতিতে টিকে থাকা প্রাণিকুল সবকিছুই পরিবেশের অপরিহার্য উপাদান। মানুষ এই প্রাণিকুলেরই শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে এই পরিবেশকে যেমন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে আবার ক্ষুদ্র গােষ্ঠীস্বার্থে এবং অতি ভােগবিলাসিতার প্রয়ােজনে পরিবেশকে দূষিত করে মানবজাতির বিপর্যয়ও ডেকে আনে। 

পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা :

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন তথা পরিবেশ দূষণের জন্য এককভাবে কোনাে দেশ দায়ী নয়। এটি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব উন্নত বিশ্বের চেয়ে দরিদ্র দেশগুলােতেই বেশি পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র দেশ, বিশেষ করে উপকূলীয় দেশগুলাে। জাতিসংঘের আইপিসির (ইন্টার গর্ভনমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভয়ানক হারে বাড়বে।

এ শতাব্দীতে জীব-জগতের বেশিরভাগ প্রজাতির জন্য চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে। গ্রীন হাউস গ্যাসের কারণে জলবায়ুর ধরনের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। বৃষ্টির ধরন পাল্টে যাবে। ঝড়, খরা, বন্যায় নাকাল হবে প্রাণিকুল। দেখা যাবে খাদ্যাভাব । ছড়িয়ে পড়বে রােগব্যাধি। সমুদ্রে তলিয়ে যাবে বিরাট বিরাট। উপকূলীয় অঞ্চল।

সেখানে এও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ওই সম্ভাব্য বিপর্যয়-তালিকার শীর্ষে রয়েছে। ১৪০০ পৃষ্ঠার ঐ প্রতিবেদনটি ২০০৭ সালের ৬ এপ্রিল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জাতিসংঘের ডাকে ১৮০টি সদস্য দেশের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ১০০ কোটিরও বেশি লােক ২০৫০ সালের মধ্যে ব্যাপক ক্ষতির মুখােমুখি হবে।

See More: অধ্যবসায় রচনা

 বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া :

দেশীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি বাড়লে বাংলাদেশ সংলগ্ন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। এতে আমাদের উপকূলীয় ১৫ ভাগ ভূমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। মােট ৭৫০ কিলােমিটার এই উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে গেলে এ অঞ্চলের ২ কোটি অধিবাসী উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। অনেকের আশঙ্কা, প্লাবিত এলাকার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। ফলে সমানভাবে উদ্বাস্তুর সংখ্যাও বাড়বে।

এমনিতেই দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ১১টি জেলার দেড় কোটি মানুষ লবণাক্ত পানির সঙ্গে বসবাস করছে। সুপেয় পানির সংকট সেখানে নিত্যদিন। নতুন করে আরও এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করলে সংকটের তীব্রতা আরও বাড়বে। সুন্দরবনে লবণাক্ত পানি বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরী, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ মারা যাচ্ছে। প্রাণিকুলও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। সামনের দিনে ঘন ঘন বন্যা হবে, ক্ষতির পরিমাণও বাড়তে থাকবে। সব মিলিয়ে একদা সমুদ্র থেকে জেগে ওঠা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল আবার সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার মুখে পড়বে। বাংলাদেশে জলবায়ু তথা পরিবেশ দূষণের কুফল এরই মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে। 

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার ও প্রতিরােধ :

বিশ্বের সকল বিজ্ঞানী একমত যে, পরিবেশ দূষণ তথা জলবায়ু দূষণের বেশিরভাগই মানুষের দ্বারা সৃষ্ট এবং এর জন্য শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলােই বেশি দায়ী। দরিদ্র দেশগুলাের দায় অনেক কম কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক বেশি। দরিদ্র দেশগুলােকে রক্ষার জন্য উন্নত দেশগুলােকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে সাহায্য দিতে হবে। তা দিয়ে দরিদ্র দেশগুলাে সমুদ্র উপকূলে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করে এবং বাঁধের ওপর ব্যাপক বনায়ন করে অনেকটা প্রতিরােধ গড়ে তুলতে পারে।(পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা)

এজন্য সারা বিশ্ব থেকে শিল্পোন্নত দেশগুলাের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর সব দেশ বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলাে যদি সমঝােতার মাধ্যমে অন্তত ১০ থেকে ১৫ বছর গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। গ্রীন হাউস গ্যাস কমাতে হলে জ্বালানি পােড়ানাে কমাতে হবে। 

উপসংহার :

পরিবেশ দূষণ তথা জলবায়ু দূষণ সারা বিশ্বের মানবজাতির জন্য এক মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তবে আমাদের মতাে উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশগুলােতে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ। তাই পরিবেশ দূষণ রােধে সারা বিশ্বকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশীয় নানা সংস্থাও কাজ করছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করলেও অধিকাংশ জনগণ এখনাে সচেতন নয়। তাই ব্যাপক জনসচেতনতা প্রয়ােজন এবং সারা বিশ্বে পরিবেশ দূষণ রােধে প্রতিরােধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা কেন পড়বেন বা পড়া উচিত?

মানুষের সৃজনশীল শক্তি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয় রচনা। পরীক্ষার জন্য আমাদের এই বিশেষ রচনাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ । তাই ছাত্র বা ছাত্রীদের উচিত এই পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনাটি ভালোভাবে মুখস্ত করা এবং পড়া। এতে করে তারা পরীক্ষায় অনেক ভালো করবে আশা করা যায়।

শেষ কথা রচনা নিয়ে?

আশা করি আপনারা কোনো রকম ভুল চোখে পড়ে নি ।আমাদের এই রচনাই যদি কোনো ভুল পান তা হলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টে যানাবেন। মানুষ মাত্রই ভুল করে। তাই দয়া করে মাফ করে দেবেন।সবাই ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু।

রিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

Leave a Comment