বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সঙ্গে গাঁথা নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সঙ্গে গাঁথা নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সঙ্গে গাঁথা নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা - ভাবসম্প্রসারণ

বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সঙ্গে গাঁথা নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : কাজ এবং বিশ্রাম একে অন্যের পরিপূরক। কাজ আনে জীবনে সমৃদ্ধি আর বিশ্রাম আনে কাজের শক্তি ওপ্রেরণা।

সম্প্রসারিত ভাব : কাজ ও বিশ্রাম আপাতদৃষ্টিতে বিপরীত বলে মনে হলেও প্রকৃত অর্থে তা একই প্রক্রিয়ার দুটি দিক।কাজের পাশাপাশি বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অনস্বীকার্য। চোখের পাতা যেমন চোখেরই একটা অংশ, তেমনি বিশ্রামওকাজের একটা অংশ। চোখের কাজ দেখা। কিন্তু চোখের পাতা সেই দেখার কাজ কখনও কখনও বন্ধ রেখে চোখকে অবদেয়। এতে চোখকে আরও বেশি কাজ করার সুযােগ দেওয়া হয়। আমরা যদি কিছু সময় একটানা কাজ করি, তবেআমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কর্মক্ষমতা লােপ পায়, একঘেয়েমির ফলে আসে গভীর অবসাদ ও ক্লান্তি। এ ধরনেরপরিস্থিতি উত্তরণের জন্য আমরা বিশ্রামের প্রয়ােজন অনুভব করি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে আমাদের ক্লান্তি দূর হয়, মন প্রশান্তহয় এবং আমাদের কর্মশক্তি ফিরে আসে। আমরা তখন নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজে আত্মনিয়ােগ করতে সক্ষমহই। আর বিশ্রাম ছাড়া যদি আমরা ক্রমাগত কাজ করতে থাকি, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাইকাজের সফলতার জন্য এবং বেশি শক্তি অর্জনের জন্য কাজের সাথে উপযুক্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।

মন্তব্য : কাজ ও বিশ্রাম একে অপরের সাথে জড়িত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে ভাবা যায় না। তাই কাজের সাথেসাথে বিশ্রামের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বিকল্প ১

ভাবসম্প্রসারণ: সুন্দর পৃথিবীতে কর্মমুখর জীবনের জন্যে পরিশ্রম ও বিশ্রাম দুটোই অপরিহার্য। এ যেন চোখ আর চোখের পাতার মতাে একটি অন্যটির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। পরিশ্রমের মাধ্যমেই জীবনে সফলতা আসে আর বিশ্রাম কাজের শক্তি জোগায়। জীবনে সাফল্য পেতে হলে মানুষকে বহুবিধ কাজ করতে হয়। কঠোর পরিশ্রম ও কর্মসাধনাই একমাত্র পথ, যা মানুষের জীবনকে সার্থক করে তুলতে পারে। আর পরিশ্রম করার শক্তি ও প্রেরণা আসে বিশ্রামের অবকাশ থেকে। জীবনকে সার্থক করে তুলতে পারে। ফুলের পাপড়ি ছুঁয়ে উড়ে বেড়ায় যে প্রজাপতি, সে এক সময় ডানা গুটিয়ে নিশ্চল হয়ে বসে। অন্তহীন নীলিমায় উড়ে বেড়ানাে অবাধ বিহঙ্গা নেমে আসে মাটির বুকে, খানিকটা জিরিয়ে নেয়। যে মানুষটি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে গাঁইতি চালিয়ে পাথর ভাঙে, সে হাতিয়ার ফেলে দু দণ্ড দাঁড়ায়। এ যে ক্ষণিক বিরতি। এ যে এতটুকু বিশ্রাম, এ তাে শুধু ক্লান্তি উপশম নয়, নতুন কর্মপ্রেরণায়, নবউদ্যমে উজ্জীবিত হয়ে পরবর্তী কাজের জন্যে প্রস্তুত হওয়া। পরিশ্রম ব্যতীত সময়টুকু হলাে অবকাশ । কাজ জীবনে আনে সমৃদ্ধি। আর বিশ্রাম আনে কাজে উদ্যম, শক্তি ও প্রেরণা। পরিশ্রমের পর শ্রান্ত ও ক্লান্ত দেহকে সুস্থ করে মৃত উদ্যম ফিরিয়ে আনার জন্যে যেমন বিশ্রামের প্রয়ােজন, তেমনি বিশ্রামের পর দেহের কর্মস্পৃহাকে সচল সজীব রাখার জন্যে নিয়মিত শ্রমেরও প্রয়োজন। দেহের পক্ষে একটানা পরিশ্রম যেমন ক্ষতিকর তেমনি একটানা বিশ্রাম মােটেও সুখকর নয়। একটানা বিশ্রাম জীবনকে করে তােলে অলস, অচল ও কর্মবিমুখ। পক্ষান্তরে, একটানা পরিশ্রমের ফলে দেহমনে ভর করে অবসাদ, লুপ্ত হয় দেহের কর্মক্ষমতা বিশ্রাম কোনাে বিলাসিতা কিংবা কর্মঘণ্টার অপচয় নয়। চোখের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ যেমন চোখের পাতা তেমনি কাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বিশ্রাম । পরিশ্রম ছাড়া বিশ্রামের কোনাে সার্থকতা নেই। কাজে আত্মনিবেদিত থাকার অজুহাতে বিশ্রামকে অস্বীকার করাও বিবেচনাপ্রসূত নয়।

তাই একতরফা কাজ অথবা একতরফা বিশ্রাম কোনােটাই জীবনের জন্যে কল্যাণকর নয়। কাজের পাশাপাশি বিশ্রাম, বিশ্রামের পাশাপাশি কাজ— এমন ছন্দই জীবনে এনে দেয় সার্থকতা।

বিকল্প ২

চোখকে নিরোগ সুস্থ রাখতে চোখের পাতার যেমন বিকল্প নেই। তেমনি কাজকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে বিশ্রামের প্রয়োজন। কারণ বিশ্রামে শরীরে যে উদ্যম আসে, তা দিয়েই কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

কর্মময় এ পৃথিবী। এখানে প্রতিটি প্রাণীই শ্রম দিয়ে জীবন বাঁচিয়ে রাখে। পৃথিবীর মানুষ আপন শ্রমের বিনিময়েই পৃথিবীকে নতুন রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। আজকের নতুন সভ্যতা মানুষের বুদ্ধি, কৌশল ও শ্রমের ফসল। কিন্তু শ্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে দেখা যায় না। জীবনে যেমন কর্মের প্রয়োজন আছে তেমনি আছে বিশ্রামের। চোখের পাতা যেমন চোখের অংশ, বিশ্রামও তেমনি কাজের অংশ। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে কর্মের জন্যে দিন ও বিশ্রামের জন্য রাত দান করেছেন। পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। কাজেই দেশ, দশ ও বিশ্বকে উন্নত করার জন্যে কঠোর পরিশ্রম করা আশু দরকার। আজ বিজ্ঞানের চরম ও পরম উন্নতির যুগে জাপানিরা পরিশ্রমী হবার কারণেই টেকনোলজির দিক থেকে আমেরিকা ও রাশিয়ারকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তাদের পরিমিতবিশ্রাম করার প্রবণতা না থাকায় আজ তাঁরা অনিদ্রায় ভুগছে। এমন অনিদ্রা মানুষকে এক সময় অসুস্থ করে তুলতে পারে। পরে স্লিপিং টেবলেট খেয়েও ঘুম আনতে পারে না। উন্নত দেশগুলো এ রোগে ভুগছে। তাই ইসলামও বলে “তোমাদের উচিত দৈনিক ছয় ঘণ্টা ঘুম দেওয়া” পাখি, জীব-জানোয়ার, কীট-পতঙ্গ খাদ্যের অন্বেষণে বাসা থেকে বের হয় ও পেট ভরে গেলে পুনরায় ফিরে আসে বাসায় বিশ্রাম নিতে। বিশ্রামে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়, মানুষ নবশক্তি লাভ করে, মন সতেজ ও প্রফুল্ল হয়। তাই শুধু কর্ম নয়, বিশ্রাম বা ছুটিও জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক। মানুষের জীবনে কর্মশক্তি বাড়াবার জন্যই ছুটির দরকার।

বিশ্রাম ও পরিশ্রম একে অপরের পরিপুরক। যেমন দিন ও রাত। তাই পরিশ্রমের পর বিশ্রাম অতঃপর পরিশ্রম এ ধারায় কাজের অগ্রগতি হয়।

বিকল্প ৩

মূলভাব :পৃথিবীতে উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে মানুষের পরিশ্রম বা কাজের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এই কঠিন পরিশ্রম মানুষ একটানা করতে পারে না। কাজ বা পরিশ্রমের পাশাপাশি বিশ্রাম গ্রহণ প্রয়োজন। একটি আরেকটির পরিপূরক।

ভাব সম্প্রসারণ : কাজ এবং বিশ্রাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কাজ বা পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি। পরিশ্রমের ফলেই জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে। আর পরিশ্রমের শেষে বিশ্রাম ফিরিয়ে আনে উদ্যম ও শক্তি। বিশ্রাম সমস্ত ক্লান্তি ও অবসাদকে নাশ করে এবং দেহ ও মনকে কাজের জন্য নতুনভাবে সতেজ করে। পরিশ্রমের পর শ্রান্ত ও ক্লান্ত দেহে উদ্যম ফিরিয়ে আনার জন্য যেমন বিশ্রামের প্রয়োজন, তেমনি বিশ্রামের পরে দেহের কর্মস্পৃহাকে সচল ও সজীব রাখার জন্য নিয়মিত শ্রমেরও প্রয়োজন। দেহের জন্য একটানা পরিশ্রম যেমন ক্ষতিকর, তেমনি একটানা বিশ্রামও সুখকর নয়। একটানা বিশ্রাম জীবনকে অলস, অচল ও কর্মবিমুখ করে তোলে। পক্ষান্তরে, একটানা পরিশ্রমের ফলে দেহ-মনে ভর করে অবসাদ, এর ফলে লুপ্ত হয় দেহের কর্মক্ষমতা। চোখের পাতা যেমন চোখের জন্য অপরিহার্য অঙ্গ, তেমনি বিশ্রামও পরিশ্রমের জন্য অপরিহার্য। শুধু পরিশ্রমী ব্যক্তিই বিশ্রামের আনন্দ অনুভব করতে পারে। এ আনন্দ তার কাছে স্বর্গের সুধার মতো। যারা পরিশ্রম করে না তারা বিশ্রামের আনন্দও অনুভব করতে পারে না। সুতরাং বিশ্রাম ছাড়া কাজ এবং কাজ ছাড়া বিশ্রামের কোনো সার্থকতা নেই।

মন্তব্য : বিশ্রামকে তাই কাজের অঙ্গ বলা হয়েছে। একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন; কেননা শুধু কাজ কিংবা শুধু বিশ্রাম কোনোটাই জীবনের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। তাই কাজের পাশাপাশি বিশ্রাম ও বিশ্রামের পাশাপাশি কাজ অপরিহার্য। এই অভ্যাসের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবন সার্থকতার দিকে এগিয়ে যায়।

Also Read: সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment