যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে পশ্চাতে রেছে যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে পশ্চাতে রেছে যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে পশ্চাতে রেছে যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে - ভাবসম্প্রসারণ

যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে পশ্চাতে রেছে যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : মানব জাতির সভ্যতার ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশের ধারাবাহিক গতিপথ প্রতিক্রিয়ার অসংখ্য নজির দ্বারা চিহ্নিত। লক্ষ লক্ষ বছর আগে প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ একে অপরের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করত।

সম্প্রসারিত ভাব : বিশ্বের মানব সমাজ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত। এ শ্রেণীবিভক্তি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। ধর্ম, বর্ণ, পরিবেশ, আর্থ-সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব এ শ্রেণীভেদ সৃষ্টি করে থাকে। হিন্দু-মুসলমান, আরব-ইহুদি, সাদা-কালো, আর্য-অনার্য, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ইত্যাদি বর্ণগত ও জাতিগত পার্থক্য ও ভেদাভেদ বিদ্যমান। মানবসমাজের উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় এ জাতিভেদ, শ্রেণীভেদ ঘৃণা ও বিরোধ। উচ্চ শ্রেণী, শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা ও প্রতিপত্তি প্রভৃতি দিক থেকে তথাকথিত নিম্ন শ্রেণীকে বঞ্চিত করতে চায়। এর ফলে মানবসমাজের একটা বৃহৎ অংশে মনুষ্যত্বহীন স্তরে অবমাননায়, লাঞ্ছনায় ও দারিদ্র্যে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। তা সমগ্র সমাজের ও দেশের উন্নতি এবং মানবকল্যাণের পরিপন্থী। দেশের বৃহত্তর জনসংখ্যা যেখানে অশিক্ষার অন্ধকার ও হেয়তায় কুসংস্কারে এবং অমানবোচিত জীবনযাত্রায় অবনমিত, সেখানে স্বল্পসংখ্যক উচ্চবিত্তের সংস্কৃতি-উজ্জ্বল জীবনেও তার মসীচিহ্ন পড়তে বাধ্য। কারণ সমাজ একটা যৌথ-জীবনধারা; একের জীবনচর্চা ও ধারা অপরকে সেখানে প্রভাবিত করবেই। তাছাড়া বঞ্ছিত, অবহেলিত শ্রেণীর মধ্যে ধূমায়িত অসন্তোষ অনেক সময় বিদ্রোহ-বিপ্লবের রূপ গ্রহণ করে থাকে। তাতে সমাজ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পৃথিবীর বহু প্রাচীন সভ্যতা এ কারণে বিনষ্ট হয়েছে।

মূলভাব: পৃথিবীতে কোনো মানুষই তুচ্ছ নয়। সমাজের সকল মানুষই একই পথের সহযাত্রী। কেউ কারো বড় কিংবা ছোট নয়।

বিকল্প ১

সম্প্রসারিত ভাব: বিশ্বে সাদা-কালো, আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, আরব-অনারব ইত্যাদি বর্ণগত ও জাতিগত পার্থক্য ও বৈষম্য বিরাজমান। এসব ভেদাভেদ ও বৈষম্যের কারণে মানবসমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সে সাথে দেখা দিয়েছে জাতিভেদ, শ্রেণিভেন এবং ঘৃণ্য বিরোধ। পৃথিবীর উচ্চস্তরের মানুষগুলো শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবদিক থেকে নিম্নস্তরের মানুষগুলোকে বঞ্চিত রাখতে সদাতৎপর। এর ফলে মানবসমাজের একটা বৃহৎ অংশ মনুষ্যত্ব বিবর্জিত স্তরে অবহেলা, অবমাননা, লাঞ্ছনা, গল্পনা ও দারিদ্র্যের শেষপ্রান্তে উপনীত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। যা সমগ্র দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও মানবকল্যাণের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বিশ্বের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী যেখানে অশিক্ষার অন্ধকার, কুসংস্কার এবং মানবতা বিবর্জিত জীবনযাত্রায় অবদমিত সেখানে মুষ্টিমেয় উচ্চশ্রেণির সংস্কৃতি, উন্নত জীবনযাত্রায়ও কলঙ্কের কালিমাচিহ্ন পড়বে তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকে না। কারণ সমাজ একটা যৌথ পরিবার। সেখানে একের জীবনধারা, জীবনচর্চা অপরকে প্রভাবিত করেই। তাছাড়া বিশ্বের এসব সুবিধা বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষগুলোর মধ্যে দিনে দিনে সজ্জিত অসন্তোষ অনেক সময় বিদ্রোহ ও বিপ্লবের রূপ পরিগ্রহ করে থাকে। তাতে সমাজ হয় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পৃথিবীর এরূপ বহু প্রাচীন সভ্যতা এসব কারণে কালের গর্ভে চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে। যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে পশ্চাতে রেখেছ যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।

মন্তব্য : জগৎ সংসারে জাতি, গোত্র, ধর্ম, শ্রেণি, বর্ণ, উঁচু, নীচু ইত্যাকার সকল শ্রেণির বসবাস। জীবনযাপন প্রণালিতে এদের রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য ও ভিন্নতা।

বিকল্প ২

ভাব-সম্প্রসারণ : জীবনের পরিপূর্ণ সার্থকতার পেছনে রয়েছে সমষ্টিগত সহযোগিতা। জীবনকে সার্থক বিকাশ ও পরিপূর্ণ সফলতার জন্য সকলের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কাউকে পেছনে ঠেলে একা সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা অনুচিত।

মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব, সেহেতু সমাজ জীবনে পরস্পরে একে অপরের ওপর নীর্ভরশীল, ফলে পরস্পরের সহযোগিতা ছাড়া কেউ চলতে পারে না। কিন্তু সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যারা স্বার্থবুদ্ধি, সঙ্কীর্ণতা ও অনুদারতাবশত অন্যদের কেউ চলতে পারে না। কিন্তু সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যারা স্বার্থবুদ্ধি, সঙ্কীর্ণতা ও অনুদারতাবশত অন্যদের কথা না ভেবে, তাদেরকে পেছনে ফেলে রেখেই এগিয়ে যেতে চায়। সে শুধু নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় তখন অপরের ক্ষতি সাধনে তৎপর হয়, অন্যের বড় হওয়ার পথেও বাধার সৃষ্টি করে। ফলে ব্যক্তি ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা জাতির অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে রাখে। তাছাড়া বঞ্চিত ও অবহেলিত শ্রেণীর মধ্যে ধূমায়িত অসন্তোষ অনেক সময় বিদ্রোহ-বিপ্লবে রূপ নেয়। কারণ, যাকে নিচে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় প্রকৃত অর্থে এই এগিয়ে যাওয়াটা নিষ্কণ্টক নয়। বস্তুত কাউকে নিচে ফেললে সে নিচ থেকে আটকে রাখে। তখন উপরে ওঠার সুযোগ থাকে না। তেমনি কাউকে পেছনে ফেললে সে পেছন থেকে টেনে ধরে। তখন সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া যায় না। তাই টানাটানি যদি পরিহার করা যায় তাহলে উভয়ের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। সুতরাং কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এর মধ্যেই প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।

একা বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যায় না। সেজন্য সকলকে সুযোাগ দিতে হবে, সকলের জন্য ভাবতে হবে। ‘আগে-পিছে’র প্রতিযোগিতায় না গিয়ে সবাই মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেননা সকলের সম্মিলিত উদ্যোগের ফলে শক্তি সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়, লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়া যায়।

বিকল্প ৩

মূলভাব: কাউকে নিচে ফেলে উপরে উঠার চেষ্টা অথবা কাউকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কখনই নিষ্কন্টক হয় না। কারণ, ডাকে পেছনে ফেলে, পদদলিত করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় , পেছন থেকে সেই টেনে ধরে পিছিয়ে আসতে বাধ্য করে। সম্প্রসারিত ভাব: জীবনের সার্থক বিকাশ ও পরিপূণ্য সফলতার জন্য সকলের সাথে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালানোই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক। কারণ পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহযোগিতা ও বিশ্বাসই মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। এর মধ্যেই সমাজ ও ব্যক্তির কল্যাণ নিহিত। কিন্তু আমাদের সমাজে এমনি কিছু বিচিত্র লোক আছে যারা অন্যের অনিষ্ট করে নিজের সুখের ঠিকানা গড়তে চায়। উন্নতির স্বর্ণালি সিঁড়িতে আরোহণের স্বপ্নে বিভোর হয়ে এরা অন্যের ক্ষতি করতেও টিছপা হয়না। কিন্তু পরিণামে এরা নিজেরাই ক্ষতির পতিত হয়। তাই কবি বলেন-

“পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন, নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন।”

মূলত মানুষের স্বার্থবুদ্ধি প্রাধান্য পেলে তার পরিণতি শুভ হয় না। অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিজে লাভবান হওয়ার চেষ্টা মনুষ্যত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কারণ নিজের স্বার্থকে যারা বড় করে দেখে তারা মহৎ নয়; বরং সংকীর্ণমনা, অনুদান। আর এই অনুদার মানুষেরা বশ্বি মানবতার অকল্যান বৈ অন্য কিছু আনয়ন করে না। 

মন্তব্য:  To every action there is an equal and opposite reaction” অর্থাৎ প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অর্থাৎ অন্যের যেটুকু ক্ষতি করা হয় তার সমপরিমাণ ক্ষতি নিজেরও হয়ে যায়। তাই অন্যের ক্ষতি করার চিন্তার পরিবর্তে পরোপকারে আত্মনিয়োগ করাই উত্তম।

আরো পড়ুন: তরুলতা সহজেই তরুলতা

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment