সুবোধ ঘোষের “ফসিল” গল্পে আদিবাসী জীবনযাত্রার যে ছবি পাওয়া যায় তা লেখো

আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “সুবোধ ঘোষের “ফসিল” গল্পে আদিবাসী জীবনযাত্রার যে ছবি পাওয়া যায় তা লেখো” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।

সুবোধ ঘোষের “ফসিল” গল্পে আদিবাসী জীবনযাত্রার যে ছবি পাওয়া যায় তা লেখো

লেখক ঘোষ তার প্রথম দিকের যাযাবর জীবনে ঘুরেছেন অনেক কাজ করেছেন বিহারী অঞ্চলে, তারই সঞ্চিত অভিজ্ঞতা নিয়ে অঞ্জনগড়ের ‘ফসিল’ এর সৃষ্টি। আদিবাসী জনজীবন কেমন করে নিজেদের মুখতায় পতঙ্গের মতো আগুনে ঝাঁপ দেয়, শিকার হয় ধনতন্ত্রের—তাই নিয়ে ফসিল।

“হাজার হাজার বছর ধরে আর্য-সভ্যতা এবং আদি ভারত একই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে থেকেও একসঙ্গে মিশতে পারেনি। না হয়েছে শোণিত-সমন্বয়, না হয়েছে বাণী সমন্বয়।” (ভারতের আদিবাসী : সুবোধ ঘোষ-সুবর্ণ জয়ন্তী প্রবন্ধ সংকলন = দেশ।)

‘ফসিল’ এ পাই রাজতন্ত্রের অত্যাচারে বিধ্বস্ত আদিবাসী ভীল ও কুর্ম্মিদের জীবন। ভীলরা পালিয়েছে, কুর্ম্মিরা যায়নি।

“বেহায়ার মতো চাষ করে, বিদ্রোহ করে আর মারও খায়। ঋতুচক্রের মতো এই ত্রিদশার আবর্ত নেতাদের দিনসন্ধ্যের সমস্ত মুহূর্তগুলি ঘুরপাক খায়।” ভুট্টা যব জনার দূর পাহাড় থেকে জল এনে চাষ করে, অর্ধেক তার যায় রাজার ঘোড়ার পেটে। মাঝে মাঝে রাজার দানের চিঁড়ে বা রামলীলা জোটে—তবে লাঠি সহযোগে। কাজেই “Living dead body” ছিল তাঁরা। ভাগ্যের চাকা ঘুরল একদিন। শিল্প এল, অভ্রখনিতে কাজ জুটল। কুর্ম্মির দল বেঁধে ধওড়ায় বসল। “নগদ মজুরী পায়, মুর্গি বলি দেয়, হাঁড়িয়া খায় আর নিত্য সন্ধ্যায় মাদক ঢোল পিটিয়ে খনি অঞ্চল সরগরম করে রাখে।” তাদেরও নেতা হয়, দুলাল মাহাতো। ঘোড়ানিমের জঙ্গলে তাদের ঐক্যবদ্ধ করে ‘উৎসাহে কেঁপে কেঁপে আওয়াজ দেয়। কিন্তু এ তাদের অগ্রগতি নয় পতনের সূচনা। কাঁচপাত্রের উত্তোলনেই যেমন তার সর্বনাশ, তেমনি। মাইনিং সিন্ডিকেট মাহাতোকে ব্যবহার করে রাজাকে জব্দ করার জন্য। মাহাতোর নেতৃত্বে কুর্ম্মিরা সে ফাঁদে সহজেই পা দেয়। রাজার কাছে এসে কাঁপে, মুখার্জীর কাছে আনুগত্যের শপথ নেয়—মাহাতো কিন্তু গিবসনের হাতের পুতুল হয়ে পড়ে। সামান্য ‘কয়লা আর কেরোসিন এর বিনিময়ে অথবা ‘যদি ভিটে মাটি উৎখাত করে, তবে আমাদের ধাওড়া খোলা আছে” আশ্বাসে মাহাতো রাজার বিপরীত মেরুতে চলে যায়। মুখ মাহাতো স্বার্থপর সভ্যতাকে ধরতে পারেনি—পূর্বপুরুষদের মতোই, তাই ভুলের মাশুলও দিতে হয় জীবন দিয়ে। রাজা আর খনি-মালিকা উভয়পক্ষই তাদের পশুর মতো মেরেছে, হাত মিলিয়ে সেই হত্যালীলাকে ধামাচাপাও দিয়েছে। তাই তো তাদের “ফসিল”—“অদ্বপশু গঠন, অপরিণত মস্তিষ্ক ও আত্মহত্যাপ্রবণ…. সাবহিউম্যান শ্রেণির…..” আধুনিকা কূটকৌশলী সভ্যতার সাথে প্রস্তরযুগের এই আদিবাসী জনজীবন তাই শেষ হয়ে যায়, নিজেরাই তারা খাল কেটে কুমীর আনে, “ফসিল” তাদের দীর্ঘশ্বাস নয়, আত্মবিনাসের গল্প।

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।

Leave a Comment