স্বদেশের উপকারে নেই যার মন, কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “স্বদেশের উপকারে নেই যার মন, কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

স্বদেশের উপকারে নেই যার মন, কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : স্বদেশের প্রতি প্রেম, প্রীতি ও হিত সাধনার মধ্যমে মানুষ প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

সম্প্রসারিত ভাব : জন্মভূমি বা স্বদেশ মানব জীবনের জন্য স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত্ব এক মহা নেয়ামত। মানুষ ইচ্ছা করে কোন ভূখণ্ডে জন্ম নিতে পারেনা। আর তাই স্বদেশের প্রতি সকলের বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মানুষ মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে। দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনে আমাদেরকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ইহা মানবের অমৃত রসায়ন। এর মধুরতা কোনদিন নিঃশেষ হয় না। স্বদেশতার আলো, বাতাস, পানি আর শস্য ভাণ্ডার দিয়ে আমাদের যে উপকার করেছে তবে আমরা মানুষ হয়ে কেন দেশের সেবা করতে পারব না। অর্থ, সম্মান ও যশ দিয়ে মানুষ তার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না বরং দেশপ্রেমের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যার নিকট দেশপ্রেম নেই সে ইতিহাসের আস্থাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে বাধ্য। সে মরে যাওয়ার পর মানুষ তাকে ধিক্কার দিতে বাধ্য হবে। রূপ, ধন, আভিজাত্য দিয়ে মানুষের পরিচয় হয় না। মানুষের পরিচয় চরিত্র ও দেশ প্রেমের মধ্য দিয়ে। পশুদের জ্ঞান নেই তাই সে পশু দেশপ্রেম কি জানে না। তেমনি মানুষের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও যদি সে দেশ প্রেমের প্রতি এগিয়ে না আসে তবে সে পশুর সমতুল্য হবে। আমরা পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখি পৃথিবীর সকল মহাপুরুষগণ দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে জগৎ পূজ্য হয়েছিলেন। হিজরতের সময় জন্মভূমিকে লক্ষ্য করে হজরতের (সঃ) বক্তব্যই তার বড় প্রমাণ। দেশের সুখ-দুঃখে মানুষের এগিয়ে আসা উচিত। স্বদেশ ও স্বজাতির কল্যাণে যে নিজেকে কাজে লাগাতে পারে না সে মানুষ নামের অযোগ্য। যে ব্যক্তি স্বদেশ ও স্ব-জাতির কল্যাণে নিজেকে কাজে লাগাতে না পারে তাবে সে মানুষ, মানুষ নামের অযোগ্য।

এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে উপস্থাপন করা হলো

স্বদেশের উপকারে নাই যার মন,

কে বলে মানুষ তারে? পশু সেই জন।

মূলভাব : স্বদেশপ্রেম মানুষের একটি মহৎ আদর্শ। যার মধ্যে স্বদেশপ্রীতি নেই, সে মানুষ হয়েও পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। 

সম্প্রসারিত-ভাব : স্বদেশপ্রেম মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি। এটি মানুষের চরম ও পরম সম্পদ। দেশপ্রেম ছাড়া কারও মধ্যেই মা, মাটি এবং মানুষকে ভালােবাসার মতাে মহৎ মানবিক চেতনা জাগ্রত হয় না। তাই মনীষীকূল জন্মভূমিকে মায়ের মতাে মর্যাদা দিয়েছেন। মায়ের রক্ত, মাংস, মজ্জা,অস্থি, যেমন সন্তানের দেহের অণু-পরমাণুর সাথে মিশে থাকে তেমনি মিশে থাকে জন্মভূমির আলাে, বাতাস, রূপ, রস, গন্ধ তাদের আপাদমস্তকে। স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব বােঝানাের জন্য ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, “স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ”। স্বদেশের প্রতি গভীর ভালােবাসার পরিচয় ফুটে উঠেছে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ কবিতার প্রতিটি ছত্রে-

“ভায়ের মায়ের এমন স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ? 

ওমা তােমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি,

আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি” 

যারা দেশকে ভালােবাসে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত রাখে, প্রকৃতপক্ষে তারাই মানুষ নামের যােগ্য প্রতিনিধি। জগতের মহামানবগণের প্রত্যেকেই ছিলেন স্বদেশভক্ত ও দেশের উপকারে নিবেদিত প্রাণ। বীরপুরুষেরা দেশের জন্য প্রাণ দিতেও কুণ্ঠাবােধ করেন না। যেমন, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশের অগণিত মানুষ মাতৃভূমির টানে তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। নিজ মাতৃভূমিকে যে ভালােবাসে না, স্বদেশের জন্য যার কোনাে টান নেই, মানুষ নামের জীব হয়েও সে বিবেক বুদ্ধিহীন পশুর তুল্য। সমাজের চোখে সে ঘৃণার পাত্র। কবি আবদুল হাকিমের ভাষায়-

যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী। 

 সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।”

মন্তব্য : দেশমাতৃকার কল্যাণে যিনি আত্মােৎসর্গ করেন, তিনিই প্রকৃত মানুষ। পক্ষান্তরে, দেশের ভালােবাসায় যার মন
নেই সে পশুতুল্য।

আরো পড়ুন: অভ্যন্তরীণ শক্তি কাকে বলে

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment