আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “আমাদের ঘাটে একটি নৌকা…..শীর্ষক পত্রটি রবীন্দ্রজীবন ও সৃষ্টির ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করেছে আলোচনা করো” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।
আমাদের ঘাটে একটি নৌকা…..শীর্ষক পত্রটি রবীন্দ্রজীবন ও সৃষ্টির ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করেছে আলোচনা করো
আলোচ্য পত্রাংশটি ছিন্নপত্রের ৩০ সংখ্যক পত্রের অন্তর্গত। এই পত্রে রবীন্দ্রনাথ তাঁদের ঘাটে একটি নৌকা লেগে থাকতে দেখেছেন, যার সামনে জনবধূরা ভিড় করেছে। এছাড়াও ছেলে, ও বয়স্ক মানুষও কিছু আছেন। এরই মধ্যে তেরো বছরের একটি চঞ্চল স্বভাব মেয়ের প্রতি রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। দেখা গেল মেয়েটিকে নৌকায় তুলে বিদায় দেওয়া হল। তার বিদায়ের পর জনপদবধূদের আলাপ থেকে বোঝা যায় এটি গোপাল সাহার মেয়ে। জামাই ভালো না হওয়ায় মেয়েটি স্বামীগৃহে যেতে চায়নি। এই কথোপকথন থেকে রবীন্দ্রনাথ অনুমান করে নিয়েছেন, যে মেয়েটিকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হচ্ছে। মেয়েটির জীবন বৃত্তান্ত, তার কষ্ট ইত্যাদি সামগ্রিক ইতিহাসই যেন কল্পনাপ্রবণ রবীন্দ্রনাথ অনুমান করতে পেরেছেন। এই বেদনাবোধ থেকেই রবীন্দ্রনাথের মনে হয়েছে। এই বেদনার অনুভূতিটা হৃদয়ের প্রধান সুর বলেই তা ‘চিরকালের মানুষের পক্ষে।
আমরা জানি ছিন্নপত্রের বহু পত্রই রবীন্দ্রনাথের পরবর্তীকালে রচিত বহু ছোটোগল্পেরই জন্মদাত্রী। বহু ছোটোগল্পের বীজ লুক্কায়িত ছিল ‘এসব পত্রে’। আলোচ্য পত্রটিও তার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হতে পারেনি। এই চিঠিতে উল্লিখিত তেরো বছরের মেয়েটিই পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের সমাপ্তি গল্পের নায়িকা মৃন্ময়ীতে রূপান্তরিত হয়। চিঠিতে মেয়েটির দৈহিক গঠনের সাথে মৃন্ময়ীর দেহের গঠন মিলে যায়। যেমন চিঠিতে মেয়েটির দেহের গঠন সম্বন্ধে বলা হয়েছে—“বোধ হয় বয়স বারো তেরো হবে, কিন্তু একটু হৃষ্টপুষ্ট হওয়াতে চৌদ্দ পনেরো দেখাচ্ছে। মুখখানি বড়ো। বেশ কালো, অথচ বেশ দেখতে। ছেলেদের মতো চুল ছাঁটা, তাতে মুখটি বেশ দেখাচ্ছে। এমন বুদ্ধিমান এবং সপ্রতিভ এবং সরল।” গল্পের মৃন্ময়ীর বর্ণনা ছিল এমন—“মৃন্ময়ী দেখিতে শ্যামবর্ণ, ছোটো কোঁকড়া চুল পিঠ পর্যন্ত পড়িয়াছে। ঠিক যেন বালকের মতো মুখের ভাব। মস্ত মস্ত দুটি কালো চক্ষুতে না আছে লজ্জা না আছে ভয়। পত্রের মতো গল্পেও দেখি সমবয়সী মেয়ে নয়, ছেলেদের সাথেই তার যত রকমের খেলাধুলা। পত্রে দেখি মেয়েটির জন্য মায়ের দুশ্চিন্তার চিত্র—তার জামাই ভালো নয় বলে মেয়ে তার কাছে যেতে চায় না। গল্পে দেখি মায়ের অমতে অপূর্বকে বিবাহ করতে সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে বসে। সুতরাং গল্প ও পত্র পাশাপাশি রেখে বিচার করে বলাই যাচ্ছে যে এই পত্রের প্রভাব সমাপ্তি গল্পে পড়েছিল। আর মৈত্রেয়ী দেবীকে তো রবীন্দ্রনাথ নিজেই জানিয়েছেন যে “ওর কথা (পত্রের মেয়েটির কথা) মনে করেই এই গল্পই (সমাপ্তি) লিখেছিলুম।” (মংপুতে রবীন্দ্রনাথ)। —এইভাবেই আলোচ্য পত্রটি রবীন্দ্রসৃষ্টির ক্ষেত্রে বৃহৎ ভূমিকা নিয়েছিল।
আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।