প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “পুণ্যে-পাপে দুখে সুখে পতনে উত্থানে মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
পুণ্যে-পাপে দুখে সুখে পতনে উত্থানে মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে ভাবসম্প্রসারণ
ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়েই মানুষের নিরন্তর পথ চলা। জন্মের পর থেকেই মানুষ শিখতে শুরু করে। পরিবারই মানুষের শিক্ষা অর্জনের সূতিকাগার । প্রতিটি সন্তানই তার মাতাপিতার অনেক যত্নলব্ধ সম্পদ। কোনো পিতামাতাই সন্তানকে কষ্ট কিংবা বাধার সম্মুখীন হতে দিতে চায় না। কিন্তু দুঃখ কষ্ট ব্যতিরেকে কোনো শিশুই শুধু সুখের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে না। প্রতিটি মানুষকে সময়ের বিবর্তনে পরিণত বয়সে এসে সংগ্রামশীল মানবজীবনের জীবনযুদ্ধে অংশ নিতে হয়। তাই প্রতিটি মানুষকে কেবল ভালো দিকে প্রতি আকৃষ্ট হলেই চলবে না, বরং পাশাপাশি এ নেতিবাচক দিককেও গ্রহণ করতে হবে। রোদে পুড়লে কিংবা বৃষ্টিতে ভেজলে কী ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হতে হয় তা একজন মানুষ তখনই বুঝতে পারে, যখন সে রোদে পুড়লে বা বৃষ্টিতে ভেজে। ঘরের চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ থেকে অপরের কষ্ট উপলব্ধি করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই পিতামাতাকে তাদের সন্তানকে সব ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। নিজে খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে শিখতে হবে। কেননা মাতাপিতা যখন থাকবেন না তখন নিজেদেরকেই সকল বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে হবে। মন্দ পথে পা দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হলেই সেঅভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপণে নিজের চিন্তা-চেতনাকে কাজে লাগাতে পারবে। আর প্রতিটি মানুষের এ বৈশিষ্ট্যই তার চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে দিয়েই মানুষ খুঁজে পায় মানবজীবনের প্রকৃত সাথৃকতা। তাই প্রত্যেক বাবামাকে তাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা পাপে পুণ্যে দুঃখে সুখে উত্থানে পতনে নিজেদেরকে তৈরি করতে পারে।
বিকল্প ১
সংগ্রামহীন মানুষের জীবন কোনাে জীবন নয়। প্রকৃত মানুষ হতে গেলে কঠোর পরিশ্রম, সাধনা ও ত্যাগতিতিক্ষার প্রয়ােজন হয়। নানা বাধাবিপত্তি ও সমস্যা-সাথে যুদ্ধ করে জীবনকে সফল ও সমৃদ্ধ করতে হয়। সময়ের ঘাত-প্রতিঘাতের কষ্টিপাথরে নিজেকে উত্তীর্ণ করতে পারলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়। জীবন পরিচালনার জন্য শারীরিক ও মানসিক শক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করা খুবই জরুরি। কেননা জীবন পুষ্প-শয্যা নয়, বরং কণ্টকাকীর্ণ ও সমস্যাময়। চলার পথে পদে পদে নানা প্রতিকূলতার মুখােমুখি হতে হয়। এতে আছে অভাব-অনটন, দুঃখ-দারিদ্র্য, যন্ত্রণা-শােক, উত্থানপতনের নানা পর্যায়। সেসব পর্যায়ের সাথে তাল মিলিয়ে না চলতে পারলে ব্যর্থতা অনিবার্য। এ ব্যর্থতা জীবনকে হতাশা ও নিরাশার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়। ফলে একসময় জীবন হয়ে ওঠে নিরর্থক ও মূল্যহীন। এমন মূলহীন জীবন কারও প্রত্যাশিত নয়। এজন্য যে-কোনাে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সমস্যা-জটিলতা, দুঃখ-শােকের মােকাবিলা করে টিকে থাকতে হবে। কিছুতেই ভেঙে পড়লে চলবে না। প্রয়ােজনে নতুন উদ্যমে বিকল্প উপায় বা কৌশল অবলম্বন করে সমস্যা থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে। কেননা চলমান জীবনে দুঃখকষ্ট আসবেই, বিপদ-আপদ, সমস্যা আসবেই। তাই বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না, বরং শক্তি ও মনােবল অটুট রেখে পাপ, দুঃখ ও পতন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বুদ্ধিদীপ্ত লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তাহলেই আসবে কাক্ষিত বিজয়, উন্নতি ও সমৃদ্ধি। কষ্ট না করলে কিষ্ট মিলে না। আদুরে ধনীর দুলালী হয়ে গড়ে ওঠলে বাস্তব জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তারা মােকাবিলা করতে পারে না। তাই প্রতিটি মা-বাবার উচিত | তাদের সন্তানকে সেভাবে গড়ে তােলা। পৃথিবীতে যারা বড় হয়েছেন- দুঃখ, দারিদ্র, কষ্ট, প্রতিকূল প্রতিবেশকে মােকাবিলা করেই নিজেকে যােগ্য করে গড়ে তুলেছেন। ফলে তারা সফল মানুষে পরিণত হয়েছেন। পক্ষান্তরে দেখা যায়, যাদের জীবনে দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, সংগ্রাম নেই তাদের জীবনে কোনাে সাফল্যও নেই। তারা সমাজ বা রাষ্ট্রের একজন ব্যর্থ মানুষ। সুতরাং জীবনে মানুষ হতে হলে দুঃখকষ্ট সইবার শক্তি অর্জন করতে হবে।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।