প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক ভাবসম্প্রসারণ

প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক ভাবসম্প্রসারণ

বিশ্ব সভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে প্রয়ােজনীয়তা। মানুষ এক এক সময় তার এক এক জিনিসের প্রয়ােজনীয়তা উপলদ্ধি করে। প্রয়ােজন মেটানাে বা অভাব পূরণের নিমিত্তেই মানুষ বিচিত্র জিনিস উদ্ভাবন শুরু করেছে। তবে মানুষের এ উদ্ভাবন নাটকীয়ভাবে নয়। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মানুষ নানা প্রয়ােজনে নানা জিনিস উদ্ভাবন করে আসছে। আদিম গুহাবাসী শিকারের প্রয়ােজনে তীর ধনুক আবিষ্কার করে, কাঁচা মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য আগুন জ্বালাতে শিখে। এমনিভাবে প্রয়ােজনীয়তা ও আবিষ্কারের ধারাবাহিক স্তর পেরিয়ে মানুষ পদার্পণ করেছে আধুনিক সভ্যতায়। অন্ধকার থেকে আলােয় যাওয়ার প্রয়ােজন উপলদ্ধি করে মানুষ বিদ্যুৎ উদ্ভাবন করেছে। সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থার প্রয়ােজনে লঞ্চ, স্টিমার, বাস, ট্রাক, রেলগাড়ি, বিমান ও রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করেছে। শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা উপলদ্ধি করে স্কুল-কলেজ; চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, ওষুধ ও বিভিন্ন রােগ নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে, আল্টাসনােগ্রাফি ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে। যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স; চিত্তবিনােদনের জন্য সিনেমা, রেডিও, টেলিভিশন এবং চাষাবাদের জন্য উন্নত ধরনের আধুনিক কৃষিসরঞ্জাম আবিষ্কার করা হয়েছে। এক কথায় প্রয়ােজনের তাগিদেই সবকিছুর সৃষ্টি হয়েছে।

সহজ ভাবে

সম্প্রসারণ : নতুন নতুন দ্রব্য আবিষ্কার করে মানুষ কানায় কানায় তার চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে। প্রয়োজন থেকেই জন্ম নিচ্ছে আবিষ্কারের চিন্তা। একসময় মানুষ গুহায় বাস করতো। তারা ধাতুর ব্যবহার জানতো না, আগুনের ব্যবহার জানতো না। খাদ্যের জন্য তারা যখন পশু শিকার করতে গেল তখন ধারাল অস্ত্রের প্রয়োজন হলো। তাই তারা পাথরখন্ডদিয়ে অস্ত্র বানানো শিখল। একসময় মানুষ কাঁচা গোশত খেত। কিন্তু তারা যখন তা সিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল, তখন তারা পাথরে পাথরে ঘর্ষণ দিয়ে আগুনের উদ্ভাবন করল। এভাবে সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় মানুষ কত কিছুই না উদ্ভাবন করেছে। মানব সভ্যতার সে ঊষালগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যত আবিষ্কার হয়েছে যদি তার একটি খতিয়ান তুলে ধরা হয়, তা হবে অনেক দীর্ঘ। তবু মানুষ বসে নেই। নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য, আরাম-আয়েশের জন্য, সময়কে বাচানোর জন্য, শ্রম বাঁচানোর জন্য, বিনোদনের জন্য একের পর এক নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করে চলেছে। পথের দূরত্বকে অতিক্রম করার জন্য মানুষ ঘোড়া, হাতি, উট, ইত্যাদির ওপর নির্ভর করতো। এরপরচাকা আবিষ্কার করলো যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে।  অধিকতর সুবিধার কথা ভেবে আবিষ্কার করলো বাষ্পীয় ইঞ্জিন। তারপর একে একে আবিষ্কার করল-বিদ্যুৎ, উড়োজাহাজ, রেডিও, চলচ্চিত্র, গ্রামোফোন, পেনিসিলিন, টিলিফোর, টিলিভিশন, ভিসিপি, স্যাটেলাইট আরো কত কি। প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনেই কাজ করেছে মানুষের ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত প্রয়োজনীয়তা। প্রাচীনকালের রাজা-বাদশারা যুদ্ধে ঢাল তলোয়ার হাতি-ঘোড়া ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন তা হয় না। এখন ব্যবহার হয়- কামান, বন্দুক, ট্যাঙ্ক, সাবেমেরিন, রকেট শেল, মিসাইল ইত্যাদি। মানুষের জীবনযাপনের ধরন যেমন দ্রুত পাল্টাচ্ছে তেমনি মানুষ নতুন নতুন জিনিসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। আর এ থেকেই সে উদ্ভাবন করে নিচ্ছে চাহিদামতো নতুন জিনিস। এ চাহিদা কখনো শেষ হবে না। তাই উদ্ভাবনের এ ধারা অব্যাহত থাকবে আজীবন।

বিকল্প ১

মূলভাব : পৃথিবীতে কোনো কিছুই হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের কাজের প্রয়োজনে সভ্যতার বিকাশ লাভ করেছে। প্রসার ঘটেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির।

সম্প্রসারিত ভাব : এ জগতে কোন কছুই আকস্মিকতায় সৃষ্টি নয়। একদিন আমাদের পূর্বপুরুষেরা বনে-জঙ্গলে বাস করত। চকমকি দিয়ে আগুন জ্বালাত। বৈজ্ঞানিকের চমকপ্রদ উদ্ভাবন তখন অজ্ঞাত ছিল। মানুষের-দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছে। তার চিন্তা-ভাবনা বেড়েছে। মানুষের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার বা উদ্ভাবন ঘটেছে।

মানুষ এক এক সময় এক এক জিনিসের অভাবের কথা বুঝতে পেরেছে। প্রয়োজনের কথা গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করেছে। অন্ধকার দূর করা প্রয়োজন, বিদ্যুৎ উদ্ভাবন করেছে। যাতায়াতের সুষ্ঠু ব্যবস্থঅ ছিল না, বাহন ছিল না। রাস্তা-ঘাট তৈরি করেছে, স্টীমার ইঞ্জিন, রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, এরোপ্লেন এবং আও অনেক যন্ত্রযান উদ্ভাবন করেছে। দূরাঞ্চলের মানুষের কথা শোনা দরকার। পর্দায় ছবি দেখা দরকার। তাই উদ্ভাবন হল চলচ্চিত্র, টেলিফোন, টেলিস্কোপ, টেলিগ্রাপ, টেলিভিশন, ভি,সি,আর, ইত্যাদি। প্রয়োজনীয়তা না থাকলে এগুলো উদ্ভাবনের কথা-চিন্তাও করা যেত না।

আলো জ্বালানো দরকার। তাই দেয়াশলাই, লাইটার উদ্ভাবন করেছে। আবার রোগ, শোক জরা-ব্যাধিতে দূরে নিক্ষেপ করার জন্য X-Ray, আলট্রাসনোগ্রাফীর উদ্ভাবন করেছে। নানা দূরারোগ্য ব্যাধির ঔষধ আবিষ্কার করার প্রয়োজনের কথাও তার মনে হয়েছে। সে আবিষ্কার করেছে পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন ইত্যাদি। এভাবে একটার পর একটার প্রয়োজনীতাই মানুষের আজকের সুখপ্রদ জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে।

প্রয়োজনই মানুষের চলার পথকে সহজ করছে। অর্থাৎ প্রয়োজনই উদ্ভাবকের জনক।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment