প্রীতিহীন হৃদয় প্রত্যয়হীন কর্ম দুই-ই অসার্থক – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “প্রীতিহীন হৃদয় প্রত্যয়হীন কর্ম দুই-ই অসার্থক ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

প্রীতিহীন হৃদয় প্রত্যয়হীন কর্ম দুই-ই অসার্থক ভাবসম্প্রসারণ

প্রীতিহীন হৃদয় প্রত্যয়হীন কর্ম দুই-ই অসার্থক ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : নিষ্ঠা-আন্তরিকতাশূন্য ধর্মপালন এবং আত্মবিশ্বাস বা দৃঢ়প্রত্যয় ছাড়া কর্তব্য সাধন কখনোই সার্থক হতে পারে না।

সম্প্রসারিত ভাব : দুনিয়াতে শান্তি এবং পারলৌকিক মুক্তির জন্যই মানুষ ধর্ম ও কর্ম করে থাকে। ধর্মপালনের মূল উদ্দেশ্য স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁর নৈকট্য লাভ। আর স্বীয় কর্তব্য সাধনের মাধ্যমে ব্যক্তি পারিবারিক সুখ-শান্তি লাভ করে থাকে। তবে যে ধর্মপালনে নিষ্ঠা বা আন্তরিকতা থাকে না, সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান বকধার্মিকতা মাত্র। ধর্মীয় আবেগ, অনুভূতি ও স্রষ্টার ভয় নিয়ে ধর্মপালন করলে সেটাই স্রষ্টার কাছে গ্রহণীয়। ধর্মের প্রতি যার প্রেম, প্রীতি ও ভালোবাসা নেই সেই ব্যক্তি কখনোই প্রকৃত ধার্মিক হতে পারে না। আন্তরিকতা শূন্য ধর্মপালন করলে মানুষ মানবিক হতে পারে না। অনেক মানুষকে দেখা যায় তারা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেও অন্যায় কর্ম করতে দ্বিধা করে না। আর এর মূল কারণ হলো ধর্মকে না বুঝে, ধর্মের যথার্থ অনুশীলন না করেই সে ধর্ম পালন করে। তাই অনুভূতি বা নিষ্ঠা শূন্য ধর্মপালন কখনোই সার্থক হতে পারে না। নিষ্ঠা ছাড়া যেমন ধর্মপালন হয় না, তেমনি আত্মপ্রত্যয়, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো কর্মই সাধিত হয় না। নিজ কর্মের প্রতি আত্মবিশ্বাস না থাকলে সেই কাজ থেকে কখনোই ভালো ফলাফল আশা করা যায় না। কাজে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ না হলে, যথা নিয়মে এবং যথা সময়ে সেই কাজ পূর্ণতা পায় না। আত্মবিশ্বাস কাজের গতিকে বেগবান করে এবং মনকে রাখে প্রফুল্ল। আর প্রত্যয়হীন কর্মী দ্বিধা, সংকোচ ও আত্মদ্বন্দ্বে ভোগে। তাই প্রত্যয় ও নিষ্ঠাহীন ধর্ম-কর্ম কখনোই সার্থক হতে পারে না।

মন্তব্য : নিষ্ঠা ও আন্তরিক উপস্থিতি ছাড়া কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানই স্রষ্টার কাছে গ্রহণীয় নয়। আবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, আত্মবিশ্বাস ও বলিষ্ঠ চিন্তা ছাড়া কোনো কর্মই সফলতার মুখ দেখতে পারে না। তাই, নিষ্ঠা এবং আত্মবিশ্বাস ছাড়া ধর্ম-কর্ম দুই-ই ব্যর্থ হয়।

সহজ ভাবে

মানুষের হৃদয় তৈরিই হয়েছে একে অপরের মধ্যে প্রীতি ভালোবাসা আদান-প্রদানের জন্য। এ কারণেই দুঃখে, দুর্দিনে, বিপদে-আপদে মানবহৃদয় কেঁদে ওঠে। তাই একে অপরের দুর্দিনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। মানব হৃদয়ে প্রীতি আছে বলে পৃথিবীতে আজ মানুষ টিকে আছে, তার নিজস্ব সৌন্দয্য নিয়ে। যার হৃদয়ে অপরের জন্য প্রেম-ভালোবাসা আছে সে হৃদয় শুধু মানুষের কষ্টেই কাঁদে না, পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জন্য তার হৃদয় কেঁদে ওঠে। আর যে হৃদয়ে প্রীতি নেই, তার কাছে পৃথিবীর কোনো জীবই নিরাপদ নয়। যেকোনো ধরণের অকল্যাণকর কাজ সে নির্দ্বিধায় করতে পারে। প্রীতিও ভালোবাসার অভাবেই জাতিতে জাতিতে হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, প্রাণহানি হয় লক্ষ কোটি মানুষের। মানব হৃদয়ে প্রীতি যত বাড়বে তত সুখ শান্তিতে মানুষ বসবাস করতে পারবে। অন্যদিকে সফলভাবে যেকোনো কাজ সম্পাদনের পূর্বশর্ত হলো কাজের প্রতি প্রত্যয় অর্থঃ াৎ বিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো কাজে সফলতা আসে না। কোনো কাজ শুধু করার জন্য না করে, কাজকে ভালোবেসে আত্মবিশ্বাস নিয়ে করতে হয়। যদি অত্যন্ত কঠিন কাজ করার জন্য কেউ প্রতিজ্ঞা করে এবং ‘আমি পারব’ এই বিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করে, তাহলে সে অবশ্য ঐ কাজে সফল হবে।

বিকল্প ১

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। জ্ঞানকর্মে ও পুণ্য-প্রীতিতে মানুষ তার জীবনকে সার্থক করে তুলছে। বাঁচার জন্য মানুষ নীরবে সংগ্রাম করে। মানুষের বাচা তখনই সার্থক হয়, যখন সে প্রীতির পরশে আপন। আলয়ে স্বর্গ রচনা করতে পারে। ভােগ, ঐশ্বর্য, ক্ষমতা মানুষের কাম্য হতে পারে কিন্তু এসবে প্রকৃত সুখ নেই। মানুষ সুখ পায় প্রীতিময় সংসারে মমতাময় অনুভবে। তাই কবি বলেন‘প্রীতি-প্রেমের পুণ্য বাধনে/ যবে মিলি পরস্পরে, স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন/ আমাদেরি কুঁড়ে ঘরে। প্রতি মানুষের জীবনে স্বর্গসুখ এনে দেয়। যে হৃদয়ে প্রীতি নেই, প্রেম নেই সে হৃদয় নিষ্ঠুর, নির্মম। বিধাতা মানুষকে বিবেক দিয়েছেন ভালােবাসার মাঝে এক সুন্দর জীবন গড়ে তােলার জন্য। মানুষ জীবনে ও কর্মে সার্থক হয় তখনই, যখন প্রীতিপ্রেমের পুণ্য বাঁধনে সে জীবনকে উপভােগ করতে গেলে প্রীতিহীন যে হৃদয় সে হৃদয়ে শান্তি ও সুখ থাকতে পারে না। শান্তি ও সুখের জন্য তথা সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য কর্ম করতে হয় এবং প্রতিটি কর্মই করতে হয় দৃঢ়প্রত্যয়ে। কারণ কোনাে কাজ যদি অর্ধপথে পরিত্যক্ত হয়, তাহলে শ্রম, অর্থ, সময় সবই নষ্ট হয়। একনিষ্ঠভাবে সফল হবার প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় হয়ে কোনাে কাজে হাত দিলে সে কাজ সুষ্ঠুভাবে সমাধা হয়। লক্ষ্যহীন পরিণামহীন কর্ম মানুষকে গৌরব বা কৃতিত্ব কোনােটিই এনে দিতে পারে না। তাই লক্ষ্য স্থির করে অধিক মনােবল নিয়ে কর্ম সম্পাদনে অগ্রসর হতে হবে। তাহলেই সফলতা আসবে, জীবন সার্থক হবে।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment