প্রকৃত বীর একবারই মরে, ভীরুরা মরে বার বার – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “প্রকৃত বীর একবারই মরে, ভীরুরা মরে বার বার ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

প্রকৃত বীর একবারই মরে, ভীরুরা মরে বার বার - ভাবসম্প্রসারণ

প্রকৃত বীর একবারই মরে, ভীরুরা মরে বার বার ভাবসম্প্রসারণ

ভাব-সম্প্রসারণ : প্রকৃত বীর কর্তব্যের খাতিরে মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। কিন্তু কাপুরুষেরা সর্বদাই মৃত্যুভয়ে ভীত থাকে বলে কর্তব্য থেকে পিছিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের বারবার মৃত্যু ঘটে। 

কর্মই জীবন, কর্মের মধ্যেই মানুষ বেঁচে থাকে। পৃথিবী এক বিশাল কর্মক্ষেত্র। এখানে কর্তব্যের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মানুষকে নানাবিধ বাধা-বিপত্তি ও ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি এতে তাদের মৃত্যু ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু প্রকৃত বীর সে মৃত্যুভয়ে আদৌ ভীত নয়। কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রয়োজনে তারা সে মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়। কেননা কর্তব্য থেকে পিছপা হওয়া বা পরাজয় মেনে নেয়া প্রকৃত বীরের ধর্ম নয়। তাই প্রকৃত বীরের মৃত্যু একবারই হয় এবং এ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁরা পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। কিন্তু কাপুরুষেরা সর্বদা মৃত্যুভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। মৃত্যুর ঝুঁকি তো দূরের কথা, সাধারণ বাধা-বিপত্তি এলেই তারা কর্তব্য থেকে পিছিয়ে যায়। আর এই পিছিয়ে যাওয়া বা ব্যর্থতার গ্লানি বহন করাই একপ্রকার মৃত্যু। জীবনের কোনো কাজেই তারা সফলতা অর্জন করতে পারে না, সামান্য দুঃখকষ্টে তারা ভেঙে পড়ে। তাদের মুখে প্রায়শই শোনা যায় ব্যর্থতার বাণী, ‘আর পারলাম না, মরে গেছি! ধুঁকে ধুঁকে জীবনটাই গেল’, ‘হে স্রষ্টা তুমি আমাকে মৃত্যু দাও। বাঁচতে চাই না’– এ ধরনের মৃত্যু তাদের জীবনে বহুবার ঘটে। তাই এদের জীবনটাই ব্যর্থ- দেশ ও দশের উপকার তো দূরের কথা, তাদের তো মরার-ই শেষ নেই। সুতরাং তাদের একেবারে মরে যাওয়াই উত্তম। 

মৃত্যুভয়ে ভীত না হয়ে কর্তব্য পালন করে যাওয়াই প্রতিটি মানুষের ধর্ম হওয়া উচিত।

বিকল্প ১

এই পৃথিবীটা বিশাল এক কর্মক্ষেত্র বলে এখানে রয়েছে অনেক কর্তব্য। জীবনে চলার পথে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। এসব বাধা বিপত্তিকে ভয় পেলে চলবে না। জীবনে প্রকৃতভাবে বেঁচে থাকতে হলে সংগ্রাম করেই বাচঁতে হবে। একজন প্রকৃত বীর কখনো বিপদ দেখে ভয় পায় না। তারা বিপদকে তুচ্ছ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। দেশের যেকোনো প্রয়োজনে তারা জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়ে। মৃত্যুকে তারা তুচ্ছ জ্ঞান করে যুদ্ধে, সংগ্রামে, জাতীয় উন্নয়নে জীবন উৎর্সগ করে। পরাজয় মেনে নিতে তারা কখনও রাজী নয়, তা মেনে নেয়া প্রকৃত বীরের র্ধমও নয়। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাদের জীবনকে দেশের ইতিহাসে সার্থক করে তোলে। কেননা তারা জানে, শৃগালের ন্যায় হাজার বছর বেঁচে থাকার চেয়ে সিংহের ন্যায় একদিন বেঁচে থাকাটাই শ্রেয়। অপরপক্ষে যারা কাপুরুষ তারা নিজের জীবনের বিপদ-আপদ এমনকি দেশের প্রয়োজনের সময়ও কখনো কাজে আসে না। তারা দেশের দুর্যোগময় অবস্থার সময় ঘরের কোণে চুপ করে বসে থাকে। বিপদের আভাস পেলেই ভয়ে একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। তারা মনে করে বিপদের সময় সামনে এগিয়ে গেলেই মৃত্যু নিশ্চিত। তাই তারা সামনে এগোতে চরমভাবে ভয় পায়। জীবনে চলার পথে সামান্য বাধাটুকুও অতিক্রম করতে চায় না। এ ধরণের মানুষ জাতির কাছে কলঙ্ক। নিজ দেশে বাস করেও যারা দেশের প্রয়োজনের সময় কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না, তাই তারা বেঁচে থেকেও মৃত। কিন্তু যারা দেশের প্রকৃত বীর সন্তান তারা দেশের যেকোনো প্রয়োজনে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। ‘হয় করব, না হয় মরব’- এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়। মৃতুকে তারা হাসি মুখে বরণ করে নিয়ে জাতির কাছে অমর হয়ে থাকে যুগ যুগ ধরে। মৃত্যু তাদের একবারই আসে, আর ভীতু কাপুরুষের জীবনে মৃত্যু এসে হানা দেয় বার বার।

সহজ ভাবে

মানব জীবন বড়ই সংগ্রামী। এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে সংগ্রাম। সংগ্রামী এ জীবনে মানুষকে টিকে থাকতে হলে ভীষণ সাহসী হতে হয়। ভীরু মনমানসিকতা কখনও সেই সংগ্রামী জীবনকে জয় করতে দেয় না। প্রতিটা মুহূর্তেই যেখানে সংগ্রাম সেখানে মৃত্যু ভয়ে ভীত হওয়ার কোন অর্থই হয় না। আর মৃত্যু তাে এক সময় আসবেই। সেই মৃত্যু ভয় যদি সব সময় পিছু পিছু তাড়া করে তাহলে জীবনের সুখ ও আনন্দ উপভােগ করা যায় না। জীবনকে সত্যিকারভাবে সফল ও উপভােগ্য বিবেচনা করা হবে তখনই যখন মৃত্যু ভয় থাকবে না। মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে যদি কেউ ঘরের কোণে থাকে তাহলে সেখানেও মৃত্যু আসবে। তার চেয়ে মৃত্যুর কথা চিন্তা না করে জীবন সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়লে মৃত্যু নিজেই ভয় পেয়ে যাবে। মৃত্যু মানুষের জীবনের নিশ্চিত পরিণতি। প্রত্যেক মানুষকে একদিন -না- একদিন নিজেকে মৃত্যুর হাতে সমর্পণ করতে হবে। সুতরাং, মৃত্যুকে ভয় পাওয়ায় সার্থকতা নেই। বরং মৃত্যুকে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। কারণ, যখন মৃত্যু আসবে তখন তাকে সহজভাবে বরণ করে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। যারা মৃত্যুকে সহজভাবে বরণ করে নেয় তারাই এ বিশ্বজগতের প্রকৃত বীর। প্রকৃত বীরেরা মৃত্যু ভয়ে ভীত নয়। মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত সে কখনও পিছু হটে না বা দমে যায় না। প্রতিনিয়ত সংগ্রামই তার ব্রত। এ ধরনের মহান সাহসী ব্যক্তিরা পৃথিবীতে চিরকাল স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকে। এসব ব্যক্তির মনে মৃত্যু ভয় থাকে না বলে এরাই প্রকৃত অর্থ জীবনকে উপভােগ করতে পারে। জীবনের সার্থকতা তারাই অর্জন করতে পারে। আর ভীরু কাপুরুষেরা সেই সব সফলতাকে চেয়ে চেয়ে দেখে। অন্তঃপুরে যাদের আবাস, তাদের দিয়ে এর চেয়ে বড় আর কি ছুই আশা করা যায় না। তাই ভীরুরা তাদের সত্যিকারের মৃত্যুর আগে বহুবার তাদের পরাজয়কে স্বীকার করে নেয়। আর প্রকৃত বীরেরা সকল বাধা অতিক্রম করে চলত অভ্যস্ত, মৃত্যুভয় তাদের সেই মনাবলে চির ধরাতে পারে না। মৃত্যুর প্রতি ভয় দেখিয়ে যদি মৃত্যুকে জয় করা যেত তাহলে সেই ভয়ের সার্থকতা থাকত। কিন্তু সেই ভয় জীবনকে মর্যাদাহীন করে তােলে। মৃত্যু ভয়ে ভীত না হয়ে সর্বদা তার জন্য প্রস্তুত থেকে সামনে অগ্রসর হতে ইবে। কারণ, জীবনের প্রকৃত সার্থকতা সেখানেই নিহিত।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment