যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি ভাবসম্প্রসারণ

যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: যৌতুক আধুনিক সমাজজীবনের এক মারাত্মক ব্যাধি। বিয়েতে মেয়ের অভিভাবকের ওপর যৌতুকের চাপ সৃষ্টি করা আমাদের সমাজের একটা স্বীকৃত নির্যাতনপন্থা। এ নির্যাতনের মধ্য দিয়ে নর-নারীর জীবনে যে বন্ধন সৃষ্টি হয় তা জীবনে সুখ বয়ে আনতে পারে না। তাই যৌতুক জীবনধারণের পথে বিরাট অভিশাপ।

ভাবসম্প্রসারণ: আধুনিক যুগ নর-নারীর অধিকারের সমতা বিধানের যুগ। কিন্তু আজও সমাজদেহে যৌতুকের দুষ্ট ক্ষত অনেক নারীর স্বপ্নভঙ্গের কারণ। এ নিষ্ঠুর প্রথা যুগ যুগ ধরে মেয়েদের অধিকারকে অস্বীকার করছে, ক্ষুন্ন করছে তাদের মানবিক মর্যাদাকে। একদিকে যৌতুক দিতে গিয়ে মেয়ের পিতা হন নিঃস্ব, অন্যদিকে মেয়ের জীবনে নেমে আসে লাঞ্ছনার আঘাত। যৌতুকের কারণে দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য, পারিবারিক কল্যাণ, সম্পর্কের সৌন্দর্য আর সামাজিক আদর্শবোধ- সবই কলুষিত হয়। পাত্র ও পাত্রপক্ষের মধ্যে যৌতুকের লালসা দেখে কন্যা হারিয়ে ফেলে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ । অন্যদিকে যৌতুকের পরিমাণ মনঃপুত না হলে কন্যাকে পাত্রের পরিবারে হতে হয় নিগৃহীত অনেক অক্ষম পিতা পাত্রপক্ষের দাবি মেটাতে না পারলে স্বামী এবং তার পরিবার নববধূর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এক সময় নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে বধূ বেছে নেয় আত্মহননের পথ । এ যেন অসভ্য যুগের বর্বরতাই প্রকাশ । অনেক সময় সুন্দর জীবনের স্বপ্ন নিয়ে যে মেয়ে প্রবেশ করে শ্বশুরবাড়িতে, মেহেদির রং না মুছতেই সে ফিরে আসে পিতৃগৃহে। অর্থের মূল্যে মেয়েদের এ মূল্য নির্ধারণ আজকের সভ্যসমাজে এক ঘৃণ্য কুপ্রথা। মুখে নারীর অধিকারের বাণী প্রচারিত হলেও আজও মেয়েদের জীবন দরকষাকষির জাতাকলে নিষ্পেষিত, এ লজ্জা গােটা সমাজের। এর হাত থেকে রেহাই পেতে হলে সবাইকে দৃঢ়সংকল্প ও অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। যৌতুক মানবমনের এক বিকৃত প্রকাশ। যার ফলে প্রতিমুহূর্তে নারী হারাচ্ছে মানুষের মর্যাদা। নর ও নারী— এ দুই সত্তা নিয়েই মানবসমাজ। এক পক্ষকে অমর্যাদা করে আরেক পক্ষ কখনােই মর্যাদার আসন পেতে পারে না। তাই যৌতুকের মতাে কঠোর ব্যাধি থেকে মানবসমাজের মুক্তি লাভ অপরিহার্য।

বিকল্প ১

মূলভাব: সমাজগর্হিত কাজসমূহের মধ্যে যৌতুক গ্রহণ অন্যতম। এর প্রভাবে সমাজে নানা অমানবিক ঘটনার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে এটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবেই চিহ্নিত।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের দেহ যেমন নানারকম যোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তারা সাভাবিক বিকাশ, গতি ও প্রাণশক্তি হারায়, তেমনি সমাজকাঠামোর মধ্যে বিভিন্ন রকম গর্হিত কর্মকাণ্ড বাঘি হিসেবে দেখা দিয়ে সমাজকে কলুষিত করে। এমনি একটি সামাজিক ব্যাধি চৌতুক যা সমাজদেহে সংক্রামক ব্যাধির মতোই ছড়িয়ে পড়েছে এবং সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক আগে থেকে হিন্দু সমাজে পৈতৃক সম্পতিতে মেয়েদের অংশীদারিত্ব না থাকায় বিবাহের সময় কন্যার পিতা যতদূর সম্ভব আর্থিক ও বস্তুগত উপঢৌকন নিয়ে কন্যা সম্প্রদান করার প্রথা প্রচলিত ছিল। কিন্তু এ ‘দান’ কালক্রমে অধিকারের রূপ নেয় এবং বিবাহ-পূর্বে বরপক্ষ উষাকষির মাধ্যমে অর্থ বা দ্রব্যসামগ্রী দিতে কন্যাপক্ষকে রাখা করে। এক্ষেত্রের কন্যাপক্ষের আর্থিক ক্ষতি বা ইচ্ছা-অনিহা তেবে দেখা হয়। না। ফলে এটা নির্মম মুসুমের পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে হিন্দু সমাজ থেকে আনেত অনেক এ প্রবণতা মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। কন্যাদয়গ্রস্ত পিতামাতা বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে যৌতুকের টাকা জোগাড় করছে। প্রতিশ্রুত যৌতুক না দিতে পেরে অসংখ্য অসহায় নারী স্থানী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, অনেক নারীকে সংগার ছাড়তে হয়, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনা অহরহ ঘটছে। যৌতুকলোভী নরপশুদের হতে প্রতিদিন কত্রী হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা সংবাদপত্রের পাতায় থাকছে। ধনী-দরিদ্র সব সময়ে নানারূপে যৌতুক প্রথা বিদ্যমান। কিন্তু দৌড়কের ব্যাধি থেকে মুক্ত করতে না পারলে আমাদের সামাজিক প্রগতি অর্জন হয়ে দাড়াবে।

মন্তব্য: যৌতুক একটি ঘৃণ্য প্রথা। এর বিরুদ্ধে সবাইকে জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা অবশ্য। যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment