আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “সুলতানি আমলে ভারত মহাসাগরে পোর্তুগীজদের আবির্ভাব” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।
সুলতানি আমলে ভারত মহাসাগরে পোর্তুগীজদের আবির্ভাব
ভারতে পোর্তুগীজদের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন দেখা দেয়। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের গোড়া থেকে পোর্তুগালের রাজা হেনরী ভারতে আসার জন্য জলপথ অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেন। সমুদ্র-অভিযানে তাঁর এই উৎসাহের কারণে তিনি নাবিক হেনরী’ নামে পরিচিত। ভারতে আসার পথ অনুসন্ধানের পেছনে তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল- (১) প্রাচ্যের সমৃদ্ধ ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশ নেওয়া এবং (২) এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করা। লক্ষণীয় যে, পোর্তুগালের দুটি লক্ষ্যের পেছনে ছিল আরব তথা মুসলমানদের উচ্ছেদ ঘটানোর অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় প্রেরণা। ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টান ধর্মগুরু পোপ পঞ্চম নিকোলাস এক নির্দেশনামা (Papal Bulls) জারি করে পোর্তুগালের কর্মসূচি ও অধিকারকে বৈধতা দান করেন। এতে বলা হয় যে, আফ্রিকার নতুন অন্তরীপ অতিক্রম করে ভারত পর্যন্ত যে সকল দেশ পোর্তুগীজরা আবিষ্কার করবে, সেই সকল দেশের অধিবাসীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার শর্তে ওই সকল ভূখণ্ডের ওপর চিরকালের জন্য পোর্তুগালের অধিকার ও কর্তৃত্ব থাকবে (the right total and absolute)। তিন বছর পর পোপ তৃতীয় ক্যালিক্সটাস আর এক ‘পেপেল বুল’ দ্বারা এই অধিকারকে স্বীকৃতি দেন। এইভাবে ভারত মহাসাগরের ওপর পোর্তুগীজদের দখলদারী একটা ‘বৈধ অধিকারে’ রূপান্তরিত হয়।
১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে বার্থোলোমিউ দিয়াজ উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে ইউরোপ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রপথে যোগাযোগের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেন। ইতিমধ্যে নবজাগরণ ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন আবিষ্কারের ফলে নৌ-অভিযানের কাজ নিরাপদ ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। দিক্নির্ণয় যন্ত্র, দূরবিন, বারুদ ইত্যাদির আবিষ্কার দুঃসাহসিক কাজে নাবিকদের নতুন উন্মাদনা ও প্রেরণা দেয়। অবশেষে ভাস্কো ডা-গামা ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে দুটি জাহাজ নিয়ে কালিকট বন্দরে পৌঁছালে ভারত ও ইউরোপের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। কালিকটের শাসকের (জামোরিন) সাথে আরবদের সুসম্পর্ক ছিল না। তাই জামোরিন পোর্তুগীজদের সাদরে গ্রহণ করেন এবং এদেশ থেকে বাণিজ্যপণ্য ক্রয় করে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। পোর্তুগীজ সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে ভারত ও ইউরোপের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পোর্তুগীজরা ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যের চরিত্র পাল্টে দিতে উদ্যত হয়। তারা ভারত মহাসাগরে জাহাজ চালানোর নতুন নিয়মবিধি চালু করে। ভারত মহাসাগরের ওপর তারা সার্বভৌম কর্তৃত্ব দাবি করে। তাদের অনুমতি ছাড়া ভারত মহাসাগরে যে কোনো দেশের, এমনকি ভারতের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়। তাদের কাছ থেকে ‘কাজে’ (Cartazes) নামক এক ধরনের ছাড়পত্র নিয়ে অন্যান্য বণিকদের জাহাজ পরিবহণ বাধ্যতামূলক করে। কয়েকটি নির্দিষ্ট পথে এবং বিশেষ কয়েকটি পণ্যের ওপর পোর্তুগীজ বণিকদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব স্থাপন করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রাচ্যের বাণিজ্যে পোর্তুগীজ শাসকরা অন্যান্য দেশের বণিকদের পাশাপাশি বেসরকারি পোর্তুগীজদেরও ক্ষমতাচ্যুত করতে দ্বিধা করেননি।
মুসলমান বণিকদের বিরুদ্ধে পোর্তুগীজদের জেহাদ মুসলমানদেরও শঙ্কিত করে। এমতাবস্থায় মিশরের সুলতান ষোড়শ শতকের গোড়ায় পোর্তুগীজ বণিকদের বিরুদ্ধে এক নৌ-অভিযান পাঠান। এই সংঘর্ষে পোর্তুগালের যুবরাজ ডন আলমাইদা নিহত হন। তবে ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগাল মিশর ও গুজরাটের যৌথ বাহিনীকে পরাজিত ও বিধ্বস্ত করে। অতঃপর ভারত মহাসাগরে পোর্তুগীজদের সর্বময় কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়। পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের বাণিজ্যেও পোর্তুগীজদের কর্তৃত্ব সুদৃঢ় হয়। এই ঘটনার অল্পকাল পরে প্রাচ্যের পোর্তুগীজ অধিকারভুক্ত অঞ্চলগুলির গভর্নর পদে যোগ দেন আলফানসো আলবুকার্ক। তিনি মনে করতেন যে, কেবল নৌবাহিনীর ওপর নির্ভর করে কোনো রাজ্য টিকে থাকতে পারে না। দুর্গ না থাকলে শাসকের পক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি এশিয়া ও আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে দুর্গ নির্মাণ করেন। এর সঙ্গে গড়ে তোলেন শক্তিশালী নৌবাহিনী। এইভাবে প্রাচ্যের বাণিজ্য তথা ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যের ওপর পোর্তুগীজদের কর্তৃত্ব ও খবরদারি সুদৃঢ় করেন।
বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আলবুকার্ক ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে বিজাপুরের কাছ থেকে গোয়া বন্দর দখল করেন। সামরিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে গোয়ার বিশেষ গুরুত্ব ছিল। এখান থেকে মালাবারের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সহজ ছিল এবং দাক্ষিণাত্যের রাজাদের ওপর নজর রাখা যেত। অন্যদিকে গুজরাটের বন্দরগুলি সন্নিকটে হওয়ায় গোয়া থেকে পোর্তুগীজদের পক্ষে ওই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করা যেত। এইভাবে পোর্তুগীজরা গোয়াকে তাদের প্রাচ্যের প্রধান বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। বিজাপুরের সুলতান ইউসুফ আদিল শাহ এক আকস্মিক অভিযান চালিয়ে গোয়া পুনর্দখল করেন এবং সাময়িকভাবে গোয়া থেকে পোর্তুগীজদের বিতাড়িত করেন। কিন্তু সুলতান সেই বছরে (১৫১০ খ্রিঃ) মারা গেলে আলবুকার্ক গোয়া পুনরাধিকার করেন। বিজাপুরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর দন্দারাজৌর ও দাভোল অবরোধ ও লুণ্ঠন করে নিজেদের হাত শক্ত করে। গোয়াকে ঘাঁটি করে পোর্তুগীজরা সিংহল, কলম্বো, সুমাত্রার আকিন ও মালাক্কা বন্দরে দুর্গ নির্মাণ করে সমুদ্র- বাণিজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় করে। এই সময় থেকে পোর্তুগীজরা ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে। তাদের অনুমতি বা ছাড়পত্র ব্যতিরেকে ভারতীয় বা আরব বণিকদের মাল পরিবহণ নিষিদ্ধ করে। গোলমরিচ ও সামরিক সম্ভার বহনের ওপর তাদের একচেটিয়া অধিকার কায়েম করে। ভারতীয় ও আরব বণিকদের বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে পোর্তুগীজদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সন্দেহবশত অন্যান্য বণিকদের জাহাজ তল্লাশি করা কিংবা যে-কোনো জাহাজকে শত্রুভাবাপন্ন ভেবে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কাজ দ্বারা পোর্তুগীজরা কার্যত ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যে তাদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। দক্ষিণ-ভারতীয় রাজ্যগুলি ভালো জাতের ঘোড়া আমদানির জন্য গোয়া বন্দরের ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল ছিল। স্বভাবতই গোয়া বন্দর পোর্তুগীজদের দখলে থাকায় দক্ষিণী রাজ্যগুলি পোর্তুগীজদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বাধ্য হয়। পোর্তুগীজদের সাথে মিত্রতা থাকলে ভালো জাতের ঘোড়া আমদানি করে অশ্বারোহী বাহিনীকে দক্ষ করে তোলা সম্ভব হত। এইভাবে কূটনৈতিক ভাবে পোর্তুগীজরা দক্ষিণ-ভারতীয় রাজনীতির ওপর পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। সেই সঙ্গে পোর্তুগীজরা লোহিত সাগরের প্রবেশমুখে সকোত্র দ্বীপে একটি ঘাঁটি নির্মাণ করে এডেন অবরোধ করে। ওরমুজের শাসক সেখানে একটি পোর্তুগীজ দুর্গ নির্মাণের অনুমতি দিতে বাধ্য হন। ওরমুজে দুর্গ নির্মাণের ফলে পারস্য উপসাগরের প্রবেশপথও পোর্তুগীজদের নিয়ন্ত্রণে আসে।
পঞ্চদশ শতকে অটোমান তুর্কিজাতির উত্থান ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের সম্প্রসারণ ঘটলে সমুদ্র বাণিজ্যে পোর্তুগীজদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। গুজরাটের উপকূল বন্দরসমূহ এবং আবর উপসাগরের ওপর আধিপত্যের বাসনা থেকে দীর্ঘ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ইউরোপ ও প্রাচ্যের অধিকাংশ বাণিজ্য চলত তুর্কি অধিকৃত ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে। ফলে এই বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা তুর্কিরাই বেশি ভোগ করত। পোর্তুগীজদের ক্ষমতা বৃদ্ধি অটোমান তুর্কিদের অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রতিকূল ছিল। তাই গুজরাটের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে জাহাজ নির্মাণের উপযোগী কাঠ সংগ্রহ এবং ভারতের পশ্চিম উপকূলে তুর্কি-নৌবাহিনীর জন্য পোতাশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে তুর্কি শাসকরা আগ্রহী হন। গুজরাটের সুলতানের আমন্ত্রণ ক্রমে অটোমান শাসক আবর সাগর থেকে পোর্তুগীজদের বিতাড়নের জন্য যুদ্ধে নামার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি সুলেমান রাই-এর নেতৃত্বে একটি নৌবহর গুজরাটে এসে উপস্থিত হয়। দুজন উচ্চপদস্থ তুর্কি কর্মচারীকে ভারতীয় নাম দিয়ে সুরাট ও দিউর শাসক নিয়োগ করা হয়। এদের অন্যতম ছিলেন রুমীখান্ যিনি পরবর্তীকালে শ্রেষ্ঠ গোলন্দাজ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
তুর্কিদের সাথে মিত্রতা সুদৃঢ় হওয়ার আগে পরিস্থিতির চাপে পড়ে গুজরাটের সুলতান পোর্তুগীজদের সাথে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। মোগল সম্রাট হুমায়ুনের আক্রমণের বিরুদ্ধে সাহায্যের বিনিময়ে সুলতান পোর্তুগীজদের বেসিন দ্বীপটি অর্পণ করেন। দিউতে পোর্তুগীজরা একটি দুর্গ নির্মাণের অনুমতি পায়। তবে এই সমঝোতা গুজরাটের পক্ষে আদৌ সুফলপ্রসু হয়নি। পরন্ত পোর্তুগীজদের উত্তরোত্তর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে পুনরায় তুর্কিদের সাহায্যপ্রার্থী হন। তবে পোর্তুগীজদের চূড়ান্ত পতনের আগেই সুলতান জলে ডুবে মারা যান (১৫৩৬ খ্রিঃ)। পরবর্তী গুজরাট-সুলতানের আমলে বিশাল তুর্কিবাহিনী পোর্তুগীজদের উৎখাত করতে অগ্রসর হয়। কিন্তু পোর্তুগীজদের অপরাজেয় নৌ শক্তি তুর্কিবাহিনীকে বিফল হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করে। ১৫৫১ থেকে ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলিকে পোর্তুগীজদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার জন্য তুর্কিরা কয়েকটি ছোটো সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ষাটের দশকের গোড়ায় তুর্কি সম্রাট ও পোর্তুগীজদের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়। স্থির হয় যে, প্রাচ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যে তুর্কিও পোর্তুগীজরা আপসে অংশগ্রহণ করবে।
তালিকোটার যুদ্ধে (১৫৬৫ খ্রিঃ) বিজয়নগরের পরাজয়ের পর দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলি নিরন্তর সংঘর্ষের অবসান ঘটে এবং বিজাপুরের নেতৃত্বে দক্ষিণী রাজ্যগুলি দাক্ষিণাত্য উপকূল থেকে পোর্তুগীজদের বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে যৌথভাবে প্রয়াসী হয়। ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে বিজাপুর ও আহমদনগর এক মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে। কালিকটের জামোরিনও এই মৈত্রীর শরিক হন। এই রাজ্যত্রয় পোর্তুগীজদের ঘাঁটিগুলি আক্রমণ ও ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পোর্তুগীজদের নৌ-শক্তির কাছে দাক্ষিণাত্যের মিলিত বাহিনী পরাজিত হয়। ফলে ভারত মহাসাগর ও দাক্ষিণাত্য উপকূলে পোর্তুগীজদের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকে।
পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ভারত মহাসাগর ও পূর্ব উপকূলে পোর্তুগীজদের একাধিপত্যের ফল সুদুরপ্রসারী ছিল বলে ড. সতীশচন্দ্র মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে পোর্তুগীজদের ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং বিজ্ঞানে অনীহার ফলে সম্ভবত ভারতে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রভাব বিলম্বিত হয়েছিল। তবে পোর্তুগীজদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল বাণিজ্যকেন্দ্রিক। তাই দীর্ঘ একশো বছর ভারত মহাসাগরে আধিপত্য করলেও ভারতের অভ্যন্তরে ঢোকার চেষ্টা তারা করেনি। প্রধানত সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে দুর্গ ও ঘাঁটি তৈরি করে বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব রক্ষার কাজেই তাদের সম্পূর্ণ উদ্যম নিয়োজিত ছিল। কীর্তিনারায়ণ চৌধুরীর মতে, পোর্তুগীজদের উদ্যোগে কোচিনে আধুনিক জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপিত হয়। ফলে ভারতে উন্নতমানের জাহাজ তৈরির সূচনা ঘটে। পোর্তুগীজদের মাধ্যমে দক্ষিণ আমেরিকার আলু, আনারস প্রভৃতি ভারতে প্রবেশ করে। ভারতীয় কৃষকেরা উন্নতমানের পণ্য গ্রহণ করে আর্থিক ক্ষেত্রে লাভবান হন। পোর্তুগীজদের লাভজনক ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্য ক্রমে অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকদেরও ভারতে বাণিজ্যকর্মে লিপ্ত হতে প্ররোচিত করে। এইভাবে ওলন্দাজ, ইংরেজ, ফরাসি ইত্যাদি ইউরোপীয় বণিকগোষ্ঠী ভারত মহাসাগরে উপস্থিত হয়। শেষ পর্যন্ত ইংরেজ বণিকদের ‘মানদণ্ড’ রাজদণ্ডে রূপান্তরিত হলে ভারত-ইতিহাসে এক নতুন যুগের সুচনা ঘটে।
আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।