প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “যত বড় হোক ইন্দ্রধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
যত বড় হোক ইন্দ্রধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা ভাবসম্প্রসারণ
অধরার সৌন্দর্যে মানুষ অধিক মোহমুগ্ধ হয়। তাকে পেতে চায় হাতের মুঠোয়। সে নিয়ে তার আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই, কল্পনাবিলাসের অন্ত নেই। নাগাল-বহির্ভূত বস্তু মানুষের কল্পনার সামগ্রী -যা ঠিক নয়। কেননা বাস্তব আর কল্পনা এক নয়।
বাস্তক আর কল্পনার মধ্যে দুস্তর ব্যবধান। মানুষ মাটির পৃথিবীর সন্তান। প্রকৃতির লতা-পাতা, গাছ, ফুল, পাখি এসব নিয়েই তার পরেবেশ। এই মাটির পৃথিবীকে নিয়েই তার অভ্যস্ত জীবনযাত্রা অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলছে। তথাপি মানুষ স্বপ্নবিলাসী। দূরের আকাশের সাতরঙা ইন্দ্রধনুর বিচিত্র বর্ণচ্ছটা মানুষের স্বপনচারী মনকে হাতছানি দেয়। কিন্তু যা ক্ষণস্থায়ী, যা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে তা যত বড় বা যত সুন্দরই হোক না কেন তার চেয়ে আকর্ষণীয় চির পরিচিত নিত্যদিনের ধূলিমাখা এই পৃথিবী। কেননা বর্ণসুষমায় ইন্দ্রধনু যতই মনোমুগ্ধকর ও নয়নরঞ্জক হোক না, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই, জীবনের বাস্তবক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন। বাস্তবের কঠিন মাটিতে পা ফেলে মানুষকে জীবন চালাতে হয়। বাস্তবকে উপেক্ষা করা মোটেই সম্ভবপর নয়। সেজন্য দূরের রঙধনুর চেয়ে নাগালের মধ্যে যে ছোট্ট প্রজাপতিটি তার রঙিন পাখায় ভর করে ওড়ে বেড়ায় তার মধ্যেই বিমূর্ত সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করা যায়। সুতরাং বহু দূরের সৌন্দর্য যা হাতের নাগালে নয়, এমন সৌন্দর্যের চেয়ে জীবনের সুখ কাছাকাছি সহজ উপভোগ্য সাধারণ সৌন্দর্যের মূল্যযে অনেক বেশি, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তাই সীমার বাহিরে কোনো বস্তুই উপভোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না। কল্পনার ভাবালুতা অর্মত্যচারী করে, অনৈসর্গিক স্বপ্নলোকে বিচরণ করায়, তাতে রোমান্টিক ভাবনার হয়ত কিছু খোরাক হতে পারে, কিন্তু বাস্তবজীবনে তার প্রয়োজনীয়তা কতখানি তা ভেবে দেখা দরকার। যেখানে ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’, সেখানে রামধনুর বর্ণসুষমা নিয়ে ভাবালুতা পরিহাসতুল্য।
আকাশকুসুম পরিকল্পনা না করে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলা উচিত। দুষ্প্রাপ্য অলীক কোনো কিছু পাওয়ার দুরাশা না করে যা হাতের কাছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাই উত্তম।
সহজ ভাবে
অলীক কল্পনায় গা ভাসিয়ে না দিয়ে তুচ্ছ বাস্তবের মাঝে স্বস্তির নীড় রচনা করাই শ্রেয়। মানষ সহজাত প্রবৃত্তির বশে অজানাতে জানতে চায়, অজেয়কে জয় করতে চায় আর অধরাকে ধরতে চায়। তাই অধরা সৌন্দর্যের মাধুরী মানুষকে চিরকাল আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করেছে। প্রতিনিয়ত সে অধরাকে নিয়ে কল্পনা ও স্বপ্ন বিলাসে মত্ত থেকেছে, বিভোর হয়েছে প্রত্যাশা আর আকাক্সক্ষায়। সুদূর আকাশের সুবিশাল ক্যানভাসে মেঘ – বৃষ্টি ও আলো-ছায়ার খেলায় সৃষ্টি ইন্দ্রধনুর অনুপম ও অনবদ্য বর্ণচ্ছাটা মর্তেও মানুষকে বিমোহিত করেছে। কিন্তু নিরন্তর প্রাণান্ত প্রচেষ্টার পরও সেই অপার সৌন্দর্য মানুষের ধারছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। আকাশের ইন্দ্রধনু বা রংধনুর সৌন্দর্য যত মনোমুগ্ধ করই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তা সুদূরের ক্ষণস্থয়ী এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । বাস্তবের পৃতিবীতে তা চির অধরা। সুতরাং দেখা যায়, অপার্থিব বস্তুর সৌন্দর্য ও বর্ণিলতা যত হৃদয়গ্রাহী ও মনোলোভাই হোক না কেন, পার্থিব মানুষের জীবন বস্তবতার সাথে তার কোনো মিল নেই। তাই যে মানুষ দৈনন্দিক জীবন বাস্তবতার বন্ধুর পথ পরিক্রমায় সমৃদ্ধ আগামীর সফল পথ রচনা করতে চায়, তার কাছে অবাস্তব কল্পনা বিলাসের চেয়ে বাস্তবের তুচ্ছাতিত্চ্ছু বিষয়ও অনেক বেশি গুরুত্ববহ, অনেক বেশি কাম্য। অধরা সৌন্দর্য যত নান্দনিকই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত মানুষ বাস্তবের সৌন্দর্যকে গুরুত্ব না দিয়ে পারে না। বাস্তববাদী কবি নিজেও জানেন, রোমান্টিক স্বপ্ন চোখে নিয়ে অবাস্তব ও অধরার অপার সৌন্দর্য্যকে ঘিরে হয়তো ক্ষণিকার ভাবালুতায় নিমগ্ন হওয়া যায়, কি›তু বাসÍবের গতিশীল জীবনে তা নিতান্তই অর্থহীন। বরং কখনো তা বাস্তব জীবনকে হতাশায় মুষড়ে দেয়. করে দেয় স্থবির। বাস্তবতার ত্রিসীমায় অকস্থিত বস্তুর যথাযথ মূল্যয়ন করতে পারলে জীবন সার্থক হয়ে উঠে। পক্ষান্তরে, অবাস্তব ও অধরা বস্তুর আকাক্সক্ষায় নিমগ্ন উদাসীন মানুষ একসময় অতৃপ্তি ও হতাশায় ঘোলাজলে হাবুডুবু খেতে খেতে জীবন বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে অস্তিত্ব বিদীর্ন করা চিৎকারে বলে উঠে।
বিকল্প ১
মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী বলে ইন্দ্রধনু তার কাছে বেশ দৃষ্টিনন্দন। প্রত্যেক মানুষই সৌন্দর্যকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ইন্দ্রধনু বা রংধনুতে রয়েছে বিচিত্র রঙের সমাহার। ইন্দ্রধনু মানুষের মনে ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করলেও ইন্দ্রধনুর সাথে আমাদের আকাশ আর মাটির ব্যবধান। বর্ণ সুষমায় ইন্দ্রধনু যতই মনমুগ্ধকর ও নয়ন রঞ্জক হোক না, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। জীবনের বাস্তব ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন। বাস্তবের কঠিন মাটিতে পা ফেলে মানুষকে জীবন চালাতে হয়। বাস্তবকে অপেক্ষা করা মোটেই সম্ভব নয়।
আমরা ভালবাসি প্রজাপতি। আমাদের হাতের কাছেই থাকে এ প্রজাপতি। চিত্র-বিচিত্র পাখা মেলে প্রজাপতি যখন উড়ে যায়, তখন আমাদের মনে আনন্দের দোলা লাগে! আমাদের হাতের নাগালেই প্রজাপতির মত সুন্দর একটি প্রাণী থাকে, আর আমাদের মনোযোগ কিনা ইন্দ্রধনুর দিকে। যাকে পাওয়া যাবে না, দেখা যাবে না, কাছাকাছি ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, তার প্রতি ভালোলাগার অনুভূতি থাকলেও ভালোবাসা কাজ করে না। আমরা তাই ইন্দ্রধনু নয়, প্রজাপতিকেই ভালোবাসি।
ইন্দ্রধনুর চেয়ে প্রজাপতি আকারে ক্ষুদ্র। কিন্তু আমাদের আকর্ষণ এর প্রতিই বেশি। কারণ প্রজাপতিকে আমরা হাতের নাগালেই পায় অথচ ইন্দ্রধনু কে কাছে পাওয়ার যেহেতু কোনো সম্ভাবনা নেই, সেহেতু একে না পেলেও খারাপ লাগবে না আমাদের। কিন্তু প্রজাপতি না দেখলে, কাছে না পেলে আমাদের খারাপ লাগতেই পারে। কাছের বস্তুকে মানুষ ভালবাসবে, এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যেই নিহিত থাকে প্রকৃত প্রেম ও মহত্ব।
প্রজাপতির সৌন্দর্য আমাদের বেশি মুগ্ধ করে ইন্দ্রধনুর চেয়ে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দূরের দুর্লভ বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ দেখিয়ে কাছের সৌন্দর্যকে উপেক্ষা বা অবহেলা করা মোটেও উচিত নয়। অনেক দূরের অনিঃশেষ সৌন্দর্যের চেয়ে নিকটের ক্ষুদ্র সৌন্দর্যই আমাদের কাছে প্রাণবন্ত এবং সুখকর। দূরের সৌন্দর্য সবসময় দূরেই থেকে যায়, দূরের সৌন্দর্যের প্রতি বেশি অনুরাগ প্রকাশ করলে তাকে কাছে না পেয়ে কষ্ট পেতে হয় মানুষকে। প্রজাপতির সৌন্দর্যের অনাবিল উৎস।
সীমার বাইরে কোনো বস্তুই উপভোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না। কল্পনার ভাবালুতা অমৃত চারি করে অনুসরণ করায় তাতে রোমান্টিক ভাবনার হয়তো কিছু খারাপ হতে পারে কিন্তু বাস্তব জীবনে তার প্রয়োজন কতখানি তা ভেবে দেখা দরকার।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।