প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ
জ্ঞান বা বিবেক না থাকলে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো তফাৎ থাকে না। সৃষ্টির অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করেছে তার বিবেক বা জ্ঞান, যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই জ্ঞান বা বিবেক সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুশীলনের মাধ্যমে তাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। জ্ঞান মানুষকে যোগ্যতা দান করে। নানা বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলে। জ্ঞানের আলোকেই মানুষের জীবন বিকশিত হয়ে ওঠে। তাই মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য জ্ঞানের সহায়তা অপরিহার্য। অন্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য এখানেই। জ্ঞানবান মানুষ কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না। তার বিবেক তাকে খারাপ আচরণ করতে বাধা দেয়। অন্যদিকে জ্ঞানহীন মানুষ পশুর মতো নির্বোধ। পশুর যেমন জ্ঞান নেই। সে ন্যায়-অন্যায় বোঝে না। আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না। জ্ঞানহীন ব্যক্তিরও তেমনি কোনো বিবেক নেই। জ্ঞানের অভাবে তারা আধুনিক জীবনের সম্পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করতে পারে না। তাদের জীবনের সঙ্গে পশুর জীবনের কোনো পার্থক্য নেই। জ্ঞানই মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা টেনে দেয়। জ্ঞান রয়েছে বলেই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এটি মানুষের জীবনে হিরন্ময় শিখার মতো অনন্য মানবীয় গুণ। জ্ঞানই একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে তোলে। পশু যেমন নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুবরণ করে তেমনি জ্ঞানহীন মানুষের ক্ষেত্রেও একই ঘটে। ফলে জ্ঞান নামক মানবীয় গুণের উপস্থিতিই মানুষকে পশু থেকে উন্নত করে তুলেছে। পশুর বিবেক নেই বলেই সে বেঁচে থাকাকেই জীবনের ধর্ম মনে করে। আর বিবেকহীন মানুষেরাও পশুর মতো কুপ্রবৃত্তির দাসত্তে নিমগ্ন থাকে। তাই জ্ঞানহীন মানুষ এবং পশুর মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই।
বিকল্প ১
মূলভাব: জ্ঞান বা শিক্ষাই মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যা মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দেয়। জ্ঞান মানুষকে দান করে সম্মান ও মনুষ্যত্ব।
সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র জীব যার বিবেক-বুদ্ধি আছে। আর বিবেক-বুদ্ধি মানুষকে উপহার দেয় জ্ঞান। জ্ঞানের আলােয় মানুষের হৃদয় আলােকিত হয়। এ আলােকিত হৃদয়ে মানুষের পথ চলা সহজ হয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মানুষ ও পাখির মধ্যে তেমন কোনাে পার্থক্য নেই। কেবল জ্ঞানই মানুষ ও পশু-পাখির মধ্যে পার্থক্যের সৃষ্টি করে, যা মানুষকে প্রাণপণ চেষ্টায় অর্জন করতে হয়। পশু-পাখির জ্ঞানার্জনের চেষ্টা বা আবশ্যকতা কোনােটাই নেই। এজন্য বলা হয়ে থাকে, পশু-পাখি সহজেই পশু-পাখি। কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় মানুষ। মানুষকে তার মনুষ্যত্ব অর্জন করে নিতে হয়। আর জ্ঞানের সাধনা না করলে মনুষ্যত্ব অর্জন করা যায় না। জ্ঞানই মানুষকে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে উন্নীত করে। যতক্ষণ পর্যন্ত মানবিক বিকাশ না ঘটে, ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের আচরণে মহত্ত্বের প্রকাশ ঘটে না। মানবিক বিকাশ যথাযথভাবে ঘটলে বিবেক জাগ্রত হয় এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে অপরের মঙ্গল কামনা করতে শেখে। অপরদিকে, জ্ঞান না থাকলে মেধার বিকাশ ঘটে না। আর মেধার বিকাশ না ঘটলে মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধি লােপ পায়। ফলে তার আচরণ পশুত্বের পর্যায়ে চলে যায়। জ্ঞানী ব্যক্তিরা চিরদিনই জ্ঞানচর্চা করে, জ্ঞানের পিছনে ছুটে বেড়ায়। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়ােজনে চীন দেশেও যেতে বলেছেন। বাস্তবিকই জ্ঞান ছাড়া মানুষ আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না। জ্ঞানহীন মানুষ নিজের ভালাে-মন্দও বুঝতে পারে না। তারা পশুর মতােই রিপুসর্বস্ব হয়ে পড়ে। সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর কোনাে ভূমিকা পালন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তারা সমাজের পার্থিব জঞ্জাল, পশুর চেয়েও অধম।
মন্তব্য: জ্ঞানহীন মানুষ আর পশুর মধ্যে কোনাে পার্থক্য নেই। নির্বোধ ব্যক্তির জীবন পশুর মতােই নিয়ম-শৃঙ্খলাহীন।
বিকল্প ২
মানুষ ও পশু উভয়ই আল্লাহর সৃষ্ট জীব। আপাতদৃষ্টিতে মানুষ ও পশুর মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। উভয়েই প্রকৃতির দাস, রিপুর অধীন। উভয়েই যখন রিপুর তাড়নায় উত্তেজিত হয়ে উঠে, তখন তাদের হিতাহিত কোনো জ্ঞান থাকে না, তখন মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার কোনো উপায় থাকে না। তখন মানুষও পশুতে পরিণত হয়।
মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের জন্য উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ‘বিবেক’। মানুষের মধ্যে বিবেক আছে, কিন্তু পশুর মধ্যে কোনো বিবেক নেই। মানুষের বিবেক তার মধ্যে সুপ্ত থাকে। এই সুপ্ত বিবেককে জাগ্রত বা কার্যকর করার একমাত্র উপায় শিক্ষা বা জ্ঞান। শিক্ষা না থাকলে জ্ঞানের অভাব হয়; আর জ্ঞানের অভাব বা অজ্ঞানতার জন্য মানুষের বিবেক জাগ্রত হতে পারে না। ফলে মানুষ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বিচার করে ঠিক করতে পারে না। তখন মানুষ পশুর মতই অন্যায়-অবিচার করে থাকে পাশবিক বৃত্তির বশবর্তী হয়ে পশুর ন্যায় হিংস্র হয়ে উঠে। জ্ঞানহীন মানুষ ক্রোধান্ধ হয়ে যে কোনো নিচ ও জঘন্য কাজ করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। অপরপক্ষে পশুকে প্রশিক্ষণের দ্বারা বিভিন্ন প্রকার জ্ঞান দান করলে তারা অনেক সময় সুন্দর ও সুশৃঙ্খল আচরণ করে থাকে। একমাত্র শিক্ষালব্ধ জ্ঞানের জন্যই তা সম্ভব হয়ে থাকে। মানুষকে সৃষ্টি সেরা জীব বলা হয়। কিন্তু জ্ঞানহীন মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা যায় না। কারণ সে মানুষের অন্তরে জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয়নি, অজ্ঞানতার অভিশাপ থেকে সে মানুষ মুক্ত হতে পারেনি। মনুষ্যপদবাচ্য হয়েও সে মানুষ পশুতর জীবনযাপন করে। মনুষ্যসমাজ তার নিকট ভালো কিছু আশা করতে পারে না। যার নিজের জীবনই বিকশিত নয়, যে জীবনের সার্থক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারে নি, সে অন্য মানুষের কল্যাণ সাধন করবে কিভাবে? এই সংগ্রামপূর্ণ পৃথিবীতে যোগ্য লোকেরাই টিকে থাকার সুযোগ পায়। সেজন্য জ্ঞান লাভের লক্ষ্যে মানুষের সারাজীবন ব্যয়িত হয় এবং এই জ্ঞানলব্ধ মানুষের অভিজ্ঞতার অবদানে মানব জাতি সমৃদ্ধশালী হয়। যে মানুষের মধ্যে এই জ্ঞান নেই তার বুদ্ধি বিকশিত হয় না, তার যোগ্যতা অর্জিত হয় না। ফলে মানুষের কল্যাণ করা দূরে থাকুক, নিজেকে রক্ষা করার মত যোগ্যতাও সে লাভ করতে পারে না। জ্ঞানের অভাবে সে তখন নির্জীব হয়। এরূপ মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এজন্যই বলা হয়ে থাকে, জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান।
আরো পড়ুন: জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে সে জাতির নাম মানুষ জাতি ত এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।