প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে তিনিই মধ্যম, যিনি চলেন তফাতে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে তিনিই মধ্যম, যিনি চলেন তফাতে ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: জীবনে পূর্ণ প্রতি অর্জনের জন্য সর্বস্তরের মানুষের সাথে মেলামেশা করা প্রয়ােজন। একমাত্র উত্তম ব্যক্তিরাই নিশ্চিন্তে ভাল এবং খারাপ উভয় প্রকার মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন।
সম্প্রসারিত-ভাব : আমাদের এ পৃথিবীতে তিন শ্রেণীর মানুষ দেখা যায়। এরা হচ্ছে উত্তম, মধ্যম এবং অধম। এ তিন শ্রেণীর লােকের মধ্যে একমাত্র উত্তম ব্যক্তিরাই সব গুণে ভূষিত। কারণ, তাদের দৃষ্টিভঙ্গী উদার এবং বিচার শক্তি সঙ্কীর্ণতা মুক্ত। তাই তারা সমাজের উঁচু শ্রেণীর লােক থেকে আরম্ভ করে নীচু শ্রেণীর লােক এমনকি সমাজের ঘৃণ্যতম ব্যক্তির সাথেও অবাধে মেলামেশা করেন। অপরদিকে মধ্যম ব্যক্তিরা সমাজের সর্বস্তরের লােকের সাথে অবাধে মেলামেশা করতে পারে না। কারণ, তাদের চরিত্র দোষে-গুণে মিশ্রিত। তাই তাকে দেখে-শুনে চলতে হয়। অধম ব্যক্তিরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয় বলেই তারা জীবনে সহজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। উত্তম আর অধমের জীবন পথে তেমন সংকট নেই। কিন্তু যে মধ্যম তার সমস্যার জটিলতার অন্ত নেই, তার সংকটও বেশি। নিজের মর্যাদা রক্ষা করে তাকে সচেতনভাবে পথ চলতে হয়। তাই সে সকলের সঙ্গে সমানভাবে মিশতে পারে না।
বিকল্প ১
মূলভাব: উত্তম আর অধম পরস্পরের বিপরীতে অবস্থান নিলেও যিনি মধ্যম তিনি উত্তম আর অধমের বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়সাধন করে জীবনচলার পথে অগ্রসর হতে চান ।
সম্প্রসারিত ভাব: উত্তম কখনো অধম দ্বারা প্রভাবিত হয় না তাই অধমের পাশাপাশি চলতে তার সমস্যা নেই। কিন্তু অধমের প্রভাবে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে মধ্যমের। সেজন্যে তাঁকে সবসময় সচেতনভাবে অধম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হয়। উত্তম স্বভাবতই দৃঢ়চিত্তের অধিকারী। তিনি একই সাথে সজ্জন এবং মর্যাদাবান। যে অধম সে তার কর্মের জন্যই হীন এবং ঘৃণার পাত্র। তার চরিত্রের কোনো সৌন্দর্য নেই। কাজেকর্মে সে সকলেরই অবজ্ঞা আর অবহেলার পাত্র। অন্যদিকে, মধ্যম শ্রেণির লোকজন দৃঢ়চিত্তের অধিকারী হন না। তাঁদের মধ্যে যেমন কিছু ভালো গুণ থাকে, তেমনই থাকে কিছু মন্দ বৈশিষ্ট্য। তাঁরা সবসময় শঙ্কিত থাকেন। উত্তম চরিত্রের মানুষকে দেখে তাঁরা হীনম্মন্যতা এবং অপরাধবোধে ভোগেন। অধমের কাছ থেকে তাঁরা দূরে দূরে থাকেন। তাঁদের মধ্যে এ ভাবনা কাজ করে যে অধমের সংস্পর্শে এলে তাঁরা হয়তো অধম হয়ে যেতে পারেন। এজন্য তাঁরা উত্তম এবং অধম উভয় শ্রেণির লোককেই এড়িয়ে যান। অন্যদিকে যিনি উত্তম তিনি অধমের সাথে মিশতে ভয় পান না। কারণ পাপীর পাপ তাঁকে স্পর্শ ও কলঙ্কিত করতে পারে না। যাঁরা উত্তম তাঁদের মনোবল অনড় ও অটল হৃদয়-বলে তাঁরা বলীয়ান, ধর্মবোধে তাঁরা উজ্জীবিত, পাপ তাঁদের স্পর্শ করতে পারে না। এটি খুব স্বাভাবিক যে, সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ উত্তম, মধ্যম আর অধম এ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। ভালো মানুষ মন্দ লোকের সাথে মিশেও তাঁদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারেন। কারণ ‘ তাঁদের চারিত্রিক দৃঢ়তা, মনোবল প্রশ্নাতীত। উত্তম যিনি, তিনি স্বভাবতই সত্যসন্ধানী। তাই অধমের অন্যায় আর অসত্য, পাপ আর মন্দ কাজ তাঁকে তাঁর অবস্থান থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে না। সব দিক বিবেচনা করলে মধ্যমের সংকটই বেশি। কেননা তিনি সমস্যাগ্রস্ত হবেন আশঙ্কায় সারাক্ষণ তটস্থ থাকেন বলে সকলের সাথে মিশতে ভয় পান । এমনকি তিনি তাঁর অবস্থান নিয়েও শঙ্কিত থাকেন ।
বিকল্প ২
মূলভাব: মৌলিক চরিত্র বিশ্লেষণে মানবসমাজে তিনটি শ্রেণি সুস্পষ্ট লক্ষণীয়— উত্তম, মধ্যম ও অধম । উত্তম হলাে শ্রেষ্ঠ, অধম নিকৃষ্ট।মধ্যম চরিত্রের লােকই সমাজে বেশি, যারা এ উভয় শ্রেণি থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন।
ভাব-সম্প্রসারণ: মহৎ হদয় ও চরিত্রশক্তির অধিকারী যারা, তারাই নিজের সাথে নিজেকে একাত্ম করে নিতে পারে। তাদের হৃদয় বিস্তীর্ণ,বিচারবােধ সংকীর্ণতামুক্ত। তাই ইতর-ভদ্র, উত্তম-অধম সবার সাথেই তারা নির্বিচারে সংযােগ রক্ষা করে থাকে। হীনজনের সংস্পর্শে থাকলেও তাদের মনে কোনাে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না। তাদের শুদ্ধতা, অমলিনতা সতত রক্ষা কবচের মতাে তাদের সাথেই থাকে। হীনজনের সান্নিধ্যে তাদের কোনাে রকম ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা থাকে না। তাই সমাজের সর্বস্তরের, সব ধরনের মানুষের সাথে তারা অকপটে আন্তরিক সম্পর্ক রচনা করে চলেন। আত্মবিশ্বাস আর চারিত্রিক শুদ্ধতার বর্মে আবৃত হৃদয়ে মানব সংসারে সর্বক্ষেত্রে তাদের অবাধ বিচরণ। অন্যদিকে আত্মপ্রত্যয় শুদ্ধতা ও পবিত্রতার পরে যারা সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনে অক্ষম তাদের কথা ভিন্নতর। এদের উত্তম শ্রেণির সমধর্মী মানসিক শক্তি নেই। উত্তম আর অধম শ্রেণির মানুষের মধ্যকার যে সংযােগ সরণি অনায়াসে গড়ে ওঠে, মধ্যবর্তী শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। তারা প্রতি ক্ষণে নিজেদের স্বাতন্ত্র বাঁচিয়ে চলে; অধম হীনজনের সংস্রব থেকে দূরে থাকে, যদি তাদের সংস্রবে যেটুকু তাদের আছে তাও হারাতে হয় সেই আশঙ্কা জাগে মনে। ফলে তাদের মন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জীবনের সর্বস্তরে তারা স্বতন্ত্রভাবে চলতে প্রয়াসী হয়। উত্তমের সাথে বন্ধন রচনার মানসিক শক্তি তাদের নেই, অন্যদিকে অধমের সাহচর্যে থাকতেও তাদের ভয়-ভীতি অপরিমেয়। তাই অতি সতর্কতার কারণে তাদের শেষপর্যন্ত মাঝারি হয়েই থাকতে হয়। তারা এ কারণে জীবনের কোনাে ক্ষেত্রেই পরিপূর্ণ সার্থকতা অর্জন করতে পারে না।
মন্তব্য: মূলত সংকীর্ণতা মধ্যম শ্রেণিকেই বেশি ঘিরে থাকে। উত্তম শ্রেণি ও অধম শ্রেণির এ সংকীর্ণতা প্রবলভাবে কম। আমাদের এ মানসিকতাকে দ্রুত পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে।
বিকল্প ৩
মূলভাব : উত্তম ব্যক্তি ভালাে-মন্দ সবার সাথে চলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু মধ্যম ব্যক্তি উত্তম ও অধমের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে চেষ্টা করেন।
সম্প্রসারিত ভাব : এ জগতে উত্তম, মধ্যম এবং অধম এ তিন ধরনের মানুষ রয়েছে। যারা প্রকৃত মহৎ তারা সমগ্রজীবন ধরে আপামর জনসাধারণের কল্যাণেই নিজেদের সমস্ত শক্তি, কর্ম ও চিন্তা নিয়ােজিত করেন। তারা সকল শ্রেণির লােকের সাথে মেশেন; মন্দদের সাথে মিশতেও কোনােরূপ সংশয় বা কুণ্ঠাবােধ করেন না। উত্তম যারা তারা আত্মশক্তিতেবলীয়ান, চরিত্র মহিমায় দেদীপ্যমান। উত্তম সত্যিকারের জননেতা এবং নতুনের বার্তাবাহী। তাদের চরিত্র মাধুর্যে নরাধমও নরােত্তম হয়ে ওঠে। যেমন- মহানবির (স) সংস্পর্শে এসে ‘‘আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের নরাধম ব্যক্তিরা শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়েছিল। মধ্যমরা নিজেদের ক্ষতি ও পতন সম্বন্ধে আশঙ্কিত। অপরদিকে তাদের বিচারে অধম হীন ও অপাঙক্তেয়। তাদের ভয়, মন্দের সংশ্রবে এলেই বিপদের সম্ভাবনা, মন্দেরা তাদের অনিষ্ট করবে। উত্তম ও অধমের নিকট থেকে মধ্যম একটা ব্যবধান রচনা করে আত্মরক্ষার্থে সদা সচেতন থাকে।
মন্তব্য : উত্তম ব্যক্তি উদার মনের অধিকারী হওয়ায় সবার সাথে মিশতে পারে; কিন্তু মধ্যম ব্যক্তি সংকীর্ণ মনের অধিকারী বলে অধমের সাথে মিশতে ব্যর্থ।
আরো পড়ুন: উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।