প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “ আপনারে বড় বলে বড় সেই নয় লােকে যারে বড় বলে বড় সেই হয় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
আপনারে বড় বলে বড় সেই নয় লােকে যারে বড় বলে বড় সেই হয় ভাবসম্প্রসারণ
পৃথিবীতে বিচিত্র লোকের বসবাস। কেউ কেউ নিজেকে প্রচার করতে উন্মুখ। আর কেউ নিজেকে প্রচার করতে বিমুখ। আত্মপ্রচারে লিপ্ত মানুষ নিজেকে বড় বলে জাহির করে বেড়ায়। সে নিজেকে পরোপকারী, উদার, মহান বলে সবার সামনে তুলে ধরে আত্মতুষ্টি লাভ করে। এতে করে তার হীনমন্যতার প্রকাশ পায়। সে আসলে বড় মনের মানুষ নয়। সে সমাজের জন্য যেসব কাজ করে তা লোক দেখানো। লোকে তাকে মর্যাদা দেয় না। জগতে যারা বড় হয়েছেন তারা কেউ আত্মপ্রচার করে বড় হননি। সাধারণ মানুষই তাদেরকে বড় বলে স্বীকার করেছে। যারা পরোপকার করেন, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেন, নিজেদের স্বার্থের চিন্তা না করে অপরের স্বার্থে নিজেদের নিয়োজিত করেন, তারাই সত্যিকারের বড় মানুষ। তারা সমাজের জন্য কাজ করে আনন্দ লাভ করেন। তাদের নিঃস্বার্থ কাজগুলো সমাজে প্রচারিত হোক তারা তা চান না। তারা তাদের কাজ-কর্ম, আচার-ব্যবহার, চাল-চলনে সকলের মনে স্থান লাভ করেন। সবাই তাঁদেরকে সম্মান দেখায় এবং সুনাম করে। তারা আত্মপ্রচার করে এ সম্মান ও সুনাম অর্জন করেন না। আর যারা নিজেদের গুণ প্রকাশ করে বেড়ায়, নিজেদের বড় বলে প্রচার করে, তারা আসলেই গুণী ও বড় মানুষ নয়। আত্মপ্রচার করে কখনও বড় মানুষ হওয়া যায় না। বড় মানুষ হতে হলে অপরের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে, মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে হবে। তাহলেই লোকে বড় মানুষ বলে তার সুনাম করবে। এতেই মানবজীবনের পরম সার্থকতা নিহিত। শিক্ষা: মানবিক সৎগুণাবলী বিদ্যমান থাকলে লোকেই বড় বলে স্বীকৃতি দেয়। নিজেকে বড় বলে প্রচার করতে হয় না। যারা নিজেকে বড় বলে প্রচার করে, তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেদেরকে সমাজে ছোট করে। তাদের জীবনের মাহাত্ম্য বাড়ে না, বরং কমে।
বিকল্প ১
Dante, Convivio – এর মতে , ‘Parlare alcuno dise medesimo pare non lici to’ অর্থাৎ, নিজের বিষয়ে কথা বলাটা সমীচীন নয়। নিজে নিজেকে বড় করে দেখানাে হীন প্রবৃত্তি মাত্র। এভাবে কখনও বড় হওয়া যায় না। বড় হতে গেলে চাই অন্যের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতিলাভ খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
সম্প্রসারিত-ভাব : এ.পৃথিবীতে যারা বড় হয়েছেন তারা সকলে কঠোর পরিশ্রম করে বড় হয়েছেন। এজন্য ছােটবেলা থেকেই কর্মের পথে, সত্যের পথে এগিয়ে যেতে হবে। চেষ্টা করতে হবে হৃদয়ের সুকুমার বৃত্তিগুলাের বিকাশের জন্য, মানবকল্যাডণ হতে হবে প্রয়াসী। তাহলেই সমাজের আর পাঁচজন মানুষের কাছ থেকে তার স্বীকৃতি মিলবে। সে হয়ে দাঁড়াবে দেশ ও দশের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। নিজেকে নিজে বড় বলে যারা জয়ঢাক পেটায় তারা তাে লােকের কাছে বড় হন- ই না, বরং নিজেকে হেয় করে তােলেন। আর তার জন্য চড়া দাম শােধ করতে হয় তাদের। তারা নিশ্চিত বিনাশের লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মিল্টনের বর্ণিত দোর্দণ্ড প্রতাপশালী স্যামসনের মত তাদের স্বগতােক্তি করতে হয়, 0 dark, dark, dark, amid the blaze of noon.
Irrecoverably dark…….
পৃথিবীতে যারা প্রকৃত গুণের অধিকারী, যারা সর্বার্থেই প্রকৃত বড়, তারা বিনয়ী হন এবং স্তুতি, চাটুকারিতা অপছন্দ করেন। পৃথিবীতে স্থায়ী সুখের জন্য নীরবে আত্মত্যাগ করলেই মানুষের জীবন সার্থক হয়। আত্মপ্রচারে বিমুখ দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়ােজিত মানুষকেই মানুষ শ্রদ্ধা করে, গৌরবের আসনে বসায়।
বিকল্প ২
মূলভাব: পৃথিবীতে সকল মানুষই বড়ো বা শ্রেষ্ঠ হতে চায়। তবে বড়ো হওয়ার জন্য যথাযথ চেষ্টা না করে শুধু আত্মপ্রচারের মাধ্যমে বড়ো হওয়া যায় না । বড়ো হওয়ার জন্য মহৎ গুণাবলির প্রয়োজন।
সম্প্রসারিত ভাব: কেউ ধনে বড়ো হতে চান। কেউ চান বিদ্যায় বড়ো হতে। কেউ ত্যাগে বড়ো হতে চান। কেউ চান কর্মে। আবার কেউ বা চান শক্তিতে, সৌকর্যে। এই চাওয়ার কোনো শেষ নেই। তবে এই চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তরিত করার জন্য কেউ কেউ নিজেদের বড়োত্বের ঘোষণা নিজেরাই চারদিকে ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু লোক-সমাজের মতামতের তোয়াক্কা না করে যারা দিনরাত নিজদের বড়োত্বের ঘোষণা ছড়িয়ে বেড়ান, সমাজে তাদের বড়ো বলে মনে করা হয় না। স্বঘোষিত বড়োত্বের মধ্যে একধরনের অহংকার থাকে। থাকে নানা প্রতারণাও। অহংকারী মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। তাই যে অহংকারী মনোবৃত্তি থেকে ব্যক্তি নিজেকে বড়ো বলে প্রচার করে, পরিণামে তা তাকে অন্যের কাছে হেয় করে তোলে।
কেননা বড়োত্ব ঘোষণা বা প্রচারের বিষয় নয়। বড়োত্ব অর্জনের বিষয়। মানুষকে তার মেধা প্রজ্ঞা সততা ন্যায়নিষ্ঠা আন্তরিকতা ত্যাগ সহানুভূতি ও কর্মপ্রয়াসের সাহায্যে এই বড়োত্ব অর্জন করতে হয়। যে মানুষ এসব গুণের অধিকারী হয়, সকলেই তার প্রতি শ্রদ্ধাভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। সকলেই তার গুণের সমাদর করে, কর্মের প্রশংসা করে। আর অপরের এই মুক্তকণ্ঠ প্রশংসার মধ্য দিয়েই একজন মানুষ সমাজে আদরণীয় হয়ে ওঠেন। হয়ে ওঠেন অনেক বড়ো। নিজ মুখে তখন আর তাকে নিজের বড়োত্বের কথা প্রচার করতে হয় না। সমাজের সর্বস্তরের মানুষই তখন সেই দায়িত্ব পালন করে।
মন্তব্য: তাই স্বঘোষণা ও আত্মপ্রচারের মাধ্যমে মানুষ কখনো নিজেকে বড়ো করে তুলতে পারে না। কর্ম, সেবা ও উন্নত আচরণের মধ্যে দিয়েই তাকে বড়ো হতে হয়।
বিকল্প ৩
ভাব – সম্প্রসারণ : যেসব ব্যক্তি নিজেদের গুণকীর্তন করে তারা কখনাে বড় বা মহান হতে পারে না । যারা প্রকৃত বড় বা মহান তারা কখনাে নিজেদের গৌর জীবনের প্রকৃত মর্যাদা নিহিত । নিজেকে যে বড় মনে করে সে অহংকারী । আর অহংকার মানব চরিত্রের একটি বড় দোষ । আমরা জানি অহংকার পতনের মূল । অপরদিকে বিনয়ী ও নম্র ব্যবহারের লােক সবার কাছে প্রশংসা পায় তার গুণের জন্য । মানুষকে তার অহংকার ভুলে যেতে হবে এবং এমন গুণের পরিচয় দিতে হবে যার ফলে সে সবার কাছ থেকে সমাদর লাভ করতে পারে । অপর লােকের কাছে নিজেকে আপন করে তুলতে হবে । যাদের মনে কোন অহংকার নেই তাদের প্রতি লােকের মনােভাব ভালাে থাকে । পরের কাছে নিজের গুণাবলি তুলে ধরতে পারলে সুনাম বৃদ্ধি পায় । লােকের উপকারে আসতে পারলে সবাই প্রশংসা করে । সবার অন্তরে তখন তার স্থান লাভ সম্ভব হয় । এভাবে অপরের কাছে নিজের গৌরব স্বীকৃতি পায় । মুখে মুখে ঢাকঢোল পিটিয়ে কেউ কোনােদিন বড় হতে পারে না । বড় হতে হলে কতকগুলাে সদগুণের অধিকারী হওয়া দরকার । এ যারা বড় বলে খ্যাত হয়েছেন , তাঁদের মধ্যে সৎ ও মহৎ গুণের সমাবেশ ছিল । তারা নিজেরা তাদের বড় বলে প্রকাশ করেননি ; মানুষই তাকে মাথায় সম্মানের মুকুট পরিয়ে দিয়েছে । সমাজে বড় হতে হলে মানুষের মন জয় করতে হয় । প্রথমে , হৃদয় – মন দিয়ে মানুষকে ভালােবাসতে হয় অপরের দুঃখ দেখলে এগিয়ে আসতে হয় । তাহলে মানুষ তাকে সম্মানের আসনে বসায় এবং প্রকৃতই তিনি বড় বলে গণ্য হন । এ পৃথিবীতে শ্রেণির লােক আছে যারা সবসময়ই আত্মপ্রচারে সচেষ্ট । বড় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি । এ প্রবৃত্তি সমাজের সবার মধ্যে প্রবল হলে তা সমাজের পক্ষে মঙ্গল । অহংকার নেই , নিজের গৌরববােধ নেই , পরের উপকার করাই যার জীবনের উদ্দেশ্য এমন মানুষই সমাজে সবার কাছে সমাদর লাভ করে ; বড় মানুষ বলে গৃহীত হয়।
টাগঃ আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয় লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয় ভাবসম্প্রসারণ,আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয় ভাবসম্প্রসারণ
আরো পড়ুন: আলাে ও অন্ধকার পাশাপাশি অবস্থান করে
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।